টিকফা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ও শৃঙ্খল ...।

লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদ মাহমুদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:০২:০৯ বিকাল

টিকফা চুক্তি কতটা স্বার্থবিরোধী তা জানা ও বুঝার জন্য জনাব আনু মুহাম্মদ স্যার এর লেখাটা শেয়ার করলাম।

"জনগণের সম্মতি না নিয়ে, নির্বাচিত সংস্থায় কোনো আলোচনা না করে, উত্থাপিত কোনো প্রশ্নের মীমাংসা না করে, নির্বাচনকালীন সরকারের স্বঘোষিত কর্তব্যপরিধি লংঘন করে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা স্বাক্ষর করল। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গিয়ে সরকার বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ও শৃঙ্খলে ঠেলে দিল। কেন, সে বিষয়টিই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।

টিকফা বা ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট’ নামের চুক্তি এত দিন টিফা বা ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশেও টিফা নামে ২০০২ সালে কথাবার্তা শুরু হয়ে টিকফা নামে তা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে বিষয়বস্তু অভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ, চাপ ও খসড়া দিয়েই চুক্তিটি হয়েছে। বাংলাদেশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন— এতে বাংলাদেশের লাভ হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে। বলা হচ্ছে এ চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বিশেষ সুবিধা পেতে বাংলাদেশ অনুরোধ করতে পারবে। কিন্তু এগুলোর জন্য এ চুক্তিই কেন সই করতে হলো, তা বাণিজ্যমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট কারো কথায় পরিষ্কার হয়নি।

বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনার জন্য আমাদের তাই চারটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। এগুলো হল (১) যুক্তরাষ্ট্র কেন এ চুক্তি স্বাক্ষরে এত আগ্রহী? (২) যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে প্রথম সারিতে তারা কি টিফা বা টিকফা স্বাক্ষর করেছে? (৩) যারা এ চুক্তি করেছে, তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা কী? এবং (৪) বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন কোন বিষয় ফয়সালা করা দরকার?

বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে যেখানে বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’ (ডব্লিউটিও) আছে, সেটাকে পাশ কাটিয়ে এ বিশ্বব্যবস্থারই কেন্দ্রশক্তি যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে বরাবরই আগ্রহী। কারণ দুর্বল দেশের বিশেষত যেসব দেশের শাসকরা গলা বাড়িয়ে ফাঁস পরতে উন্মুখ, তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে পারলে আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের বাইরে নিজেদের বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা তাদের জন্য সহজ হয়। শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক সামরিক আধিপত্যেও এটা খুব কার্যকর। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বহু দেশ এর দৃষ্টান্ত। এ দুই অঞ্চলেই টিফা চুক্তিতে আবদ্ধ দেশের সংখ্যা বেশি।

যে ১০টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য সেগুলো হলো যথাক্রমে কানাডা, চীন, মেক্সিকো, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, সৌদি আরব ও ফ্রান্স। তালিকায় ভারত ত্রয়োদশ। এর পরই ভেনিজুয়েলা, ইতালি। এসবগুলো দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের টিফা চুক্তি আছে শুধু সৌদি আরবের সঙ্গে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষর হয়েছে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এটা নিয়ে কয়েক বছর দেনদরবার হওয়ার পর চূড়ান্ত স্বাক্ষরের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, ‘এতে মার্কিন ব্যবসার উল্লেখযোগ্য লাভ হবে। সেসব বাণিজ্য চুক্তিই আমি স্বাক্ষর করতে সম্মত, যেগুলো আমেরিকান স্বার্থ নিশ্চিত করে।’ (http://www.ustr.gov/uskoreaFTA)

টিকফা ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরে বোধগম্য কারণেই, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দেশ পেয়েছে তার অনুগত অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়। আফ্রিকায় টিফা চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অগ্রগণ্য নাইজেরিয়া। ২০০০ সালে তারা টিফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া আছে ঘানা, অ্যাঙ্গোলা, রুয়ান্ডা। এ দেশগুলোর অনুন্নয়ন চক্র আর রাজনৈতিক সংঘাতের খবর আমরা জানি। মধ্যপ্রাচ্যে চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আছে বাহরাইন, মিসর, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব। এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়ায় চুক্তি আছে আফগানিস্তান, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকার সঙ্গে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে, তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো টিফা বা টিকফা নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে টিফা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ২০০৩ সালে। সেখানকার উন্নয়ন ও রাজনীতির জাল আমাদের জানা আছে। এখন সেখানে নিয়মিত মার্কিন ড্রোন বোমা হামলা চালাচ্ছে। এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য চীন ও জাপানের সঙ্গে, তাদের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি নেই। তাহলে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের মধ্যে এ চুক্তি কীভাবে জরুরি?

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বেশি ও তার সঙ্গে বাণিজ্য বেশি থাকা মানেই কি তা জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে? কোনো বিদেশী বিনিয়োগ জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে কিনা, তা নির্ভর করে কী শর্তে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হচ্ছে তার ওপর। টিফা চুক্তি আছে— এ রকম দুটো দেশ নাইজেরিয়া ও সৌদি আরব, উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ দুটো দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে। আমরা এও জানি, মধ্যপ্রাচ্যে সব অশান্তি সৃষ্টিতে ইসরাইলের পাশাপাশি সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাত হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি সৌদি আরব বৃহত্তম অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র তার অনুগত অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রি করার ক্ষেত্র তৈরিতে সবসময়ই সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে নাইজেরিয়া তেল ও গ্যাসসম্পদে আফ্রিকার অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। সেখানে মার্কিন বিনিয়োগ এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার, পুরোটাই খনিজ সম্পদে। আবার এ মার্কিন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে নাইজেরিয়ার তেল রফতানি হয়, যার বার্ষিক পরিমাণ ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে তেল রফতানি চলছে বহু বছর ধরে। অথচ নাইজেরিয়ার পরিণতি হলো সেখানে শিক্ষা ও চিকিত্সা খাতে ব্যয়ের জন্য রাষ্ট্রের অর্থ নেই, লোডশেডিং এখনো বড় সমস্যা, শিল্পায়নে পশ্চাত্পদ। নাইজেরিয়ার সম্পদ ও সেখানে বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি, কিন্তু উন্নয়ন ধরন এমন চক্রে পড়েছে যে, সেখানে দারিদ্র্যের হার এখনো বাংলাদেশের দ্বিগুণ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে করণীয় আসলে কী? যুুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ রফতানির তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশের ১ ভাগ, মাত্র ৫০ কোটি ডলার। রফতানি প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় সুতা, কাপড়, যন্ত্রপাতি, স্টিল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং কিছু গমসহ খাদ্যশস্য। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যায় প্রধানত তৈরি পোশাক। এর বাইরে সিরামিকসহ কিছু সামগ্রী। আমদানি পণ্যগুলোর বেশির ভাগ আসলে গার্মেন্ট রফতানির সঙ্গে সম্পর্কিত। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের অস্ত্র ছাড়া আমদানি বাড়ানোর সুযোগ খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ অনেক। তৈরি পোশাক রফতানি আরো অনেক বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া খাদ্যশস্যসহ আরো অনেক পণ্য রফতানি সম্ভব। কিন্তু তার পথে বাধা কী? বাধা যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বৈষম্যমূলক সংরক্ষণশীল শুল্ক কাঠামো।

আইএমএফের হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি শুল্ক যেখানে ১ শতাংশের মতো, সেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টের ওপর শুল্ক গড়ে ১৫ শতাংশ, কোনো কোনো পণ্যে আরো বেশি। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গার্মেন্ট রফতানির প্রায় ২৩ শতাংশ গেছে, সে হিসাবে গত বছরও বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক বাবদই যুক্তরাষ্ট্র আয় করেছে কমপক্ষে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের জন্য জিএসপি বা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে একটা কৃত্রিম হাহাকার ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্ট কোনো জিএসপি সুবিধা কখনই পায়নি। বরং বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বহু রকম বৈষম্যের শিকার, সে দেশই ‘মুক্তবাজার নীতিমালা’ ভঙ্গ করে বাংলাদেশের গার্মেন্টের ওপর বৈষম্যমূলক শুল্কারোপ করে রেখেছে! সেজন্য বিশেষ কোনো সুবিধা বা অনুগ্রহের দরকার নেই, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের পণ্যের ওপর তাদের গড় শুল্কহার আরোপ করে, অর্থাত্ অন্যান্য দেশের পণ্য যে শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করে, সে শুল্কই দেয়, তাহলেই বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের রফতানি আরো বাড়ানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের দাম তাহলে অনেক কমে আসবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে এটাই যুক্তিযুক্ত পথ। এ শুল্কহারের বিষয়টি টিকফার মধ্যে নেই, সেখানে বলা আছে অশুল্ক বাধার কথা।

টিকফা অনুযায়ী আরেকটি আক্রমণ আসবে মেধাস্বত্ব দিয়ে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী, বাংলাদেশে মেধা স্বত্বাধিকার প্রয়োগের চাপ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে। ওষুধ শিল্প তারই সুবিধাভোগী, কম্পিউটার ও আইটির বিস্তারও আন্তর্জাতিক এ যৌক্তিক বিধিমালার কারণেই ঘটতে পেরেছে। এখন টিকফা স্বাক্ষর হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত ছাড় গুঁড়িয়ে দিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চেপে বসতে পারবে। এতে প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওষুধ শিল্প এবং আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। জনগণের জন্য ফলাফল: এসব ক্ষেত্রের সবকিছুর দাম অনেক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রেও বহুবিধ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ জানে না কত কত বীজ ফসল গাছ ফল ফুল মেধাস্বত্ব জালে কোন কোন কোম্পানির মালিকানায় চলে গেছে। সে জাল টানতেই টিকফা যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসার জন্য জরুরি।

মার্কিন বিনিয়োগ বাড়লেই কি তা বাংলাদেশের স্বার্থ নিশ্চিত করবে? বাংলাদেশে গ্যাস খাতে মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগ আছে। শেভরনের কাছ থেকে কয়েক বছরে যে পরিমাণ গ্যাস ১৬ হাজার কোটি টাকায় কিনতে হয়েছে, তা দেশী সংস্থার মাধ্যমে করালে ২ হাজার কোটি টাকায় পাওয়া সম্ভব ছিল। সমুদ্রে ১ হাজার কোটি টাকা পাঁচ বছরে বিনিয়োগ করছে আরেক মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস; এর বদলে দুই ব্লকের গ্যাস সম্পদের শতকরা ৮০ ভাগের কর্তৃত্ব তাদের হাতে, রফতানির অধিকারও তাদের। বঙ্গোপসাগরের আরো গ্যাসব্লক এ কনোকোফিলিপসকে দেয়ার আয়োজন এখন সম্পন্ন। এজন্য ক’দিন আগেই পিএসসি ২০১২ সংশোধন করে তাদের জন্য সুবিধা আগের চেয়েও অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে। এখান থেকে প্রাপ্ত গ্যাস তাদের কাছ থেকে কেনার দাম বাড়ানো হয়েছে, তাদের ইচ্ছামতো দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নিজের গ্যাস কিনতে যা খরচ পড়বে, তার তুলনায় অন্য দেশের কাছ থেকে গ্যাস আমদানি করাই বেশি লাভজনক হবে! বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদ বাংলাদেশের হাতছাড়া হবে।

সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উন্নতির জন্য দরকার ছিল টিকফা স্বাক্ষর নয়, বরং কতগুলো বিষয় সমাধান করা। প্রথমত. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চরম বৈষম্যমূলক ও সংরক্ষণবাদী শুল্কনীতি, যাতে যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তন করে তার জন্য দাবি উত্থাপন। দ্বিতীয়ত. যেসব অসম বিনিয়োগ চুক্তি বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তার সংশোধন বা বাতিল। তৃতীয়ত. মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছে মাগুরছড়ার গ্যাসসম্পদের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশের পাওনা ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়। চতুর্থত. গোপন সব সামরিক বেসামরিক চুক্তি কী তা জনগণের কাছে প্রকাশ করা। পঞ্চমত. জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি।

বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থ নিশ্চিত করতে অনেক সতর্ক থাকা দরকার। কেননা বিশ্ববাণিজ্য এখনো নিয়ন্ত্রণ করে কতিপয় শক্তিধর রাষ্ট্র ও বৃহত্ বহুজাতিক সংস্থা। এসব রাষ্ট্র বা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থেকে কোনো দেশ টেকসই উন্নয়ন করতে পারে না; কোনো দেশের বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটলেও তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালনের বদলে দীর্ঘস্থায়ী অনুন্নয়নের চক্র তৈরি করতে পারে। ভারসাম্যহীন উন্নয়নের ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

দেশে নির্বাচন নিয়ে নানা খেলা চলছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে তুষ্ট করার জন্য প্রধান দুই পক্ষই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুন্দরবন, বঙ্গোপসাগরসহ সমগ্র দেশ এ প্রতিযোগিতার বলি। জনগণের স্বার্থের কথা বলে সরকার যখন চুক্তি করার কথা বলছে, তখন জনগণের কাছে এসব বিষয় খোলাসা করতে সরকার সাংবিধানিকভাবেই বাধ্য। সেজন্য জনগণের সম্মতি ছাড়া তাদের নামে কোনো সরকারেরই টিকফা নামের এ দাসত্বের চুক্তি স্বাক্ষরের নৈতিক অধিকার নেই। বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকার আইনগতভাবেই তা করতে পারে না। অতএব এ চুক্তি জাতীয় স্বার্থবিরোধী আরেকটি দলিল, অনৈতিক ও অবৈধ। এ চুক্তির অর্থ গলা বাড়িয়ে ফাঁস নেয়া, হাত মুচড়ানোর শিকার হওয়া, আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব বিপন্ন করা। সরকারের এ আত্মসমর্পণমূলক চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি আরো কঠিন শৃঙ্খল, আর্থিক ক্ষতি ও বাধ্যবাধকতার মধ্য নিয়ে যাবে।"

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File