বর্তমান পৃথিবীর সব মায়েদের সবচেয়ে জটিল সমস্যা............"বাচ্চাকে খাওয়ানো"
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদ মাহমুদ ২৭ মে, ২০১৩, ০৪:৩০:৪৩ বিকাল
একটা সময় ছিল, বাচ্চারা খাবার এর জন্য মায়ের পেছন পেছন ঘুরঘুর করত। এটা ওটা আবদার করত তারা মায়ের কাছে। কিন্তু
সেই দিন কি আর আছে ? দিন বদলাইছে না ?
হ্যাঁ । দিন বদলেছে । এখনকার বাচ্চারা খাবার খেতে চায়না। বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানো এখনকার মায়েদের এক কঠিন কাজ। বাচ্চা না খাওয়ার দুশ্চিন্তায় এখনকার মায়েরা প্রতিনিয়ত ডাক্তার এর পেছন পেছন ছুটছে। আসলেই কি তাই ? বলছি শুনুন..!!
ঘটনা এক
জয়নাল আবেদীন আর তার স্ত্রী তাদের বাচ্চাকে নিয়ে পড়েছেন ভীষন বিপদে। কিছুই খায় না। বাচ্চার মা সারাদিন বাচ্চার পেছন পেছন ছুটেন খাবার প্লেট নিয়ে। কে শুনে কার কথা। অবশেষে তারা গেলেন ডাক্তার এর কাছে তাদের বাচ্চাকে নিয়ে।
ডাক্তারঃ কি সমস্যা?
বাবা-মাঃ বাচ্চা কিছুই খায় না।
ডাক্তারঃ বাচ্চার কিছুদিনের মধ্যে কোনপ্রকার জ্বর হয়েছে?
বাবা-মাঃ না।
ডাক্তারঃ বাচ্চা কি কান্না কাটি করে?
বাবা-মাঃ না।
ডাক্তারঃ বাচ্চা কি না খেয়ে দূর্বল হয়েছে বলে মনে হয়েছে?
বাবা-মাঃ না।
ডাক্তারঃ (সব চেকআপ করার পর) আপনাদের কি সুখে থাকতে মনে চায় না? সুখে থাকলে কি ভুতে কিলায় ? সুস্থ্য বা্চ্চাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছেন কেন ?
ঘটনা দুই
আহমেদ জুবায়ের, উদিয়মান ব্যাংকার, তার বাচ্চাটিকে নিয়ে ভীষন উদ্বিগ্ন । বেশ কিছুদিন যাবৎ তার বাচ্চাটি কিছুই খাচ্ছে না বলে তার মনে হচ্ছে। কি আর করা, অবশেষে ডাক্তার এর স্বরণাপন্ন হলেন। বেছে বেছে সবচেয়ে ভাল ডাক্তার এর কাছে গেলেন। চাইল্ড স্পেশালিষ্ট প্রফেসর । ভিজিট দুইহাজার টাকা।
ডাক্তারঃ (সব চেকআপ করার পর) বাচ্চা সুস্থ্য কোন সমস্যা নাই। বাচ্চাকে দই খাওয়াবেন।
জুবায়েরঃ আর মেডিসিন?
ডাক্তারঃ কোন মেডিসিন লাগবে না।
আহমেদ জুবায়েরতো টাস্কি খাইলেন। জীবনে দু-এক পয়সা সহকারে জেনারেল লেজার মিলিয়েছেন কিন্তু দুইহাজার টাকা
ভিজিট দিয়ে বাচ্চাকে দই খাওয়ানোর পরামর্শ নেয়ার হিসাব মেলাতে পারছেন না।
ঘটনা তিন
চায়ের আড্ডা থেকে স্ত্রীর ফোন পেয়ে বের হলেন শিবলী নোমান, সচিবালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা । কি হয়েছে জিগ্যেস করতেই সে পুরোনো কথা বাচ্চা কিছু খাচ্ছে না। যথারীতি আবার ডাক্তার এর নিকট গমন। এ নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার এলেন দেশের বিশিষ্ট এ ডাক্তার এর কাছে। এবার ডাক্তার দিলেন এক অদ্ভুদ পরামর্শ।
ডাক্তারঃ আপনার বাচ্চাটিকে কিছুদিনের জন্য কারো নিকট পালক দেন। (পরামর্শ শুনেতো নোমান সাহেবের মাথায় হাত)
শিবলী নোমানঃ কি বলছেন?
ডাক্তারঃ ঠিকই শুনেছেন। ভাবীকে ডাকুন। ( নোমান সাহেবের স্ত্রী আসার পর তাকে বললে উনি মাথা নিচু করে রইলেন)
যথেষ্ট অর্থের অধিকারী হওয়ার পরও তিনি নিলেন এক সাহসী ভুমিকা। তার ছেলেটাকে কিছুদিনের জন্য পালক দিলেন তার এক নিকট আত্মীয়ের কাছে।
অল্প কিছুদিন পর তিনি দেখলেন তার পিচ্চি ছেলে ওই বাড়িতে মাঠে কাজ করা শ্রমিকদের সাথে মোটা চালের ভাত খাচ্ছে। অদ্ভুদ .................!!!
সত্যিই অদ্ভুদ । কিন্তু
আসলেই কি দিন বদলেছে নাকি আমরা ?
আমরা কি বাচ্চাদের ক্ষুধা লাগার পূর্বেই খাওয়াচ্ছি না?
আমরা কি একবারও ভেবেছি খাবার অপচয় হবার কথা?
আমরা কি একবারও ভেবেছি অনেক ক্ষুধার্ত বাচ্চাদের কথা যারা খাবার পায় না?
এখন ভাববার সময় এসেছে। আসুন একটি বার চিন্তা করি দরদী মন নিয়ে।
বিষয়: বিবিধ
২৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন