চায়ের আড্ডা থেকে . . . . . . .. . . .. !!!
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদ মাহমুদ ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:২২:৪২ রাত
তৌহিদ মাহমুদ
তারিখ ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ |
চারিদিকে সবুজ আর সবুজ । মাঝখানে একটি টংয়ের ছাউনি । এটাই আমাদের টিয়া চাচার চায়ের দোকান । শুক্রবারের অলস বিকেলটা, আমাদের এখানেই কাটে জম্পেস আড্ডার মধ্য দিয়ে ।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, প্রেম-ভালবাসা, সংসার-কর্ম কোন কিছুই বাদ পড়ে না আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তুর তালিকা থেকে ।
দূরথেকে হাটতে হাটতে আসল আমাদের আরেক প্রিয় মানুষ কলিম চাচা। ছন্নছাড়া পোশাক, উস্কো খুস্কো চুল আর মুক্তিযুদ্ধে ডানহাত হারানো আমাদের কলিম চাচাকে দেখতে অনেক বিষন্ন লাগছিল । কলিম চাচাকে চা খেতে বলে জিগ্যেস করলাম, চাচা তোমাকে এত বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন ?
চায়ে চুমুক দিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে কলিম চাচা বলতে শুরু করলেন, মাঝে মাঝে দেশটাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না । কোথায় যাচ্ছি আমরা । রাজনীতি প্রবেশ করেছে আমাদের প্রতিটি রন্দে¦্র রন্দে¦্র , শিরায় শিরায় । সবকিছুতেই রাজনীতিকরণ, এভাবে কি একটি দেশ চলতে পারে ? এর জন্য কি ৭১ এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম ?
৪২ বছর পর যুদ্ধোপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে গিয়ে বস্তুত দেশটাকেই দুই খন্ডে বিভক্ত করার শুরু । অথচ স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্বে স্বাধীনতার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সকল যুদ্ধোপরাধীদের সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন এমন করলেন। তখন তিনি বলেছিলেন কার বিচার করব ? বিরোধীরা কেউ তোমার ভাতিজা, উমুকের চাচা, তমুকের মামা । বিচার করতে গেলে জনগনের মধ্যে বিভাগ জন্মাবে । জনগনকে বিভক্ত করে আর যাই হোক দেশ চালানো যায় না।
অথচ ৪২ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধোপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে গিয়ে পুরো দেশটাকে অশান্ত করে ফেলেছেন । কি হত যদি দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের বিচার করা হত? বস্তুত দেশটাই যেন আজ দুই খন্ডে বিভক্ত । আর এই বিভাজন দেখে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মত বুদ্ধিজীবিরা কিভাবে যে এর পক্ষে বলে বুঝিনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিম চাচা বলতে থাকেন, শাহবাগ এর গনজাগরণ দেখে ভেবেছিলাম নতুন প্রজন্ম বুঝি জেগে উঠেছে, এইবার যদি পরিবর্তন হয়। পরে দেখলাম এর পেছনেও ক্ষমতার শিকারীরা। প্রজন্ম চত্বর থেকে প্রথমদিকে যুদ্ধোপরাধীদের ফাঁসির শ্লোগান নিয়ে আসলেও পরে এটি আর এই একটি মাত্র শ্লোগান এ সীমাবদ্ধ থাকেনি । পরে তা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, হরতাল বিরোধী মিছিল এর মাধ্যমে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে । পরে শুনলাম এর পেছনে নাকি প্রতিবেশী দেশও জড়িত। এদের কতকজনের লেখার উদ্ধত্যতা প্রকাশ পাবার পর হেফাজতে ইসলাম এর আবির্ভাব দৃশ্যত জনগনকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে । একদিকে নাস্তিক শাহবাগ চত্বর অন্যদিকে ইসলাম, দুই ভাগে বিভক্ত দেশ।
বিচার ব্যাবস্থায় বিভাজন অনেকদিনের। তারপরও তার একটি সীমা ছিল । এখন যেন এটি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। উচ্চ আদালতে সিনিয়র বিচারপতি যে রায় দেয়, জুুনিয়র বিচারপতি তার উল্টো রায় দেয় । আইনজীবিদের মধ্যে বিভাজনতো আরও প্রকট। আর এ বিভাজন নির্ধারণ হয় রাজনীতি দিয়ে।
ভলতেয়ার বলেছিলেন, ’’তোমার মতের সাথে আমার মতের মিল নাও থাকতে পারে কিন্তু জীবন দিয়ে হলেও আমি তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করব।” আর এখনকার কথা হল আমার মতের সাথে তোমার মতের মিল না হলে আমি তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াব । হায়রে স্বাধীন দেশ।
সাংবাদিকদের মাঝে কিছু কিছু বিভাজন থাকলেও, সাগর-রুনির হত্যাকান্ড সবাইকে এক ছায়াতলে এনেছিল । সরকার নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারলেন না। আর সরকার নিজের সমালোচনা ব›ধ করার জন্য সাহসী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করল। এর মাধ্যমে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন নিয়ে সাংবাদিকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল । এখানেও রাজনীতিকরণ ।
পিজি হাসপাতালের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ঘোষনা দিয়েছেন, বিএনপিপন্থি সকল ডাক্তারকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিবে, এর মাধ্যমে ডাক্তারদের মধ্যে বিভাজনও শুরু হয়ে গেল। কবে যেন ঘোষনা দেন আর চিকিৎসা নয় এবার মানুষ মারার পালা। হায়রে কপাল ।
এর জন্য কি ৭১ এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম ? স্বপ্ন দেখেছিলাম আমাদের দেশ হবে এক শান্তিময় দেশ । অভাব থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না। কিন্তু কি পেলাম ? পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারী, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, তিস্তার পানি, ফেলানী-বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড, গুম, গনহত্যা এইতো? এর জন্যতো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মানুষের জীবনের আজ কোন দাম নাই । পত্রিকা পড়লে মনে হয় মানুষের জীবনের চেয়ে গাছের জীবনের দাম অনেক বেশী।
আজ এদেশে ঐক্য অনেক প্রয়োজন। কবে যে জাতি বিভাজন ভূলে সামনে তাকাবে । স্বপ্ন দেখবে এক সুন্দর ভবিষ্যতের । এই বিভাজন বন্ধের জন্য একজন মাহাথির এর খুব প্রয়োজন । যার নেতৃত্বে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ।
কলিম চাচার কন্ঠ ভারী হয়ে আসে । মুক্তিযুদ্ধ শেষে ছোট্ট ছেলেটা যখন প্রশ্ন করেছিল, বাবা মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছ? বলেছিলাম বড় হও, দেখবে অনেক সুন্দর এক সোনার বাংলা । দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবি, সুনীলদার মত ছেলেটা না প্রশ্ন করে, বাবা আমি আর কত বড় হব? সেই সোনার বাংলা কবে পাব ? উত্তর জানা নাই।
ততক্ষণে সন্ধা হয়ে আসছে । ঝিরি ঝিরি দক্ষিণা বাতাস বইছে। দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মাগরিবের নামাজেন আযান।
বিষয়: বিবিধ
২০৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন