চায়ের আড্ডা থেকে-২ . . . . . . .. . . .. !!!! মেহনতি মানুষের মহান মে দিবস...............!!!!
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদ মাহমুদ ০১ মে, ২০১৩, ১২:১৪:০৩ দুপুর
তৌহিদ মাহমুদ
তারিখ ০১ মে ২০১৩
আজ পহেলা মে । ছুটির দিন । তবু আমাদের চা এর আড্ডাটা জমছে না । সকাল থেকে বসে আছি । চা খাচ্ছি একের পর এক কিন্তু কারও কোন খবর নাই । হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে আসল শফিক। জিগ্যেস করতেই বলল মিশিল থেকে আসলাম । আজতো পহেলা মে । মে দিবসের মিশিলেও রাজনীতি ঢুকে গেছেরে। বলতে না বলতেই ছুঠে আসল আমাদের প্রিয় কলিম চাচা ।
হাঁফাতে হাঁফাতে বলতে লাগলেন, তার তথ্যের ভান্ডার খুলে দিয়ে, আজ মহান মে দিবস ।বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২৭ বৎসর পূর্বে আমেরিকার শিকাগো শহরের এক মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তখন তাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও ছিল না। নামমাত্র মজুরিতে তারা মালিকের ইচ্ছামতো কাজ করতে বাধ্য হতো।
১৮৮৬ সালের ৩ মে ঐ মার্কেটে আহূত ধর্মঘটী শ্রমিকদের সমাবেশে পুলিশের হামলায় ছয়জন শ্রমিক নিহত হন। ১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের ঐ মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবীতে শ্রমিকরা ঐ মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলীবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেইদিনও পুলিশের গুলিবর্ষণে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেন। ঐ আন্দোলন গড়ে তুলবার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এইভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিক শ্রেণী কায়েম করে দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের অধিকার।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারি ভাবে পালিত হয়। আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা। আমেরিকার শিকাগো শহরের ঐ মার্কেটের হত্যাকান্ডের পর আমেরিকার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে কোন আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুকে পড়েন।
চায়ে চুমুক দিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে কলিম চাচা বলতে থাকেন, তবে শ্রমকে ভিত্তি করে সভ্যতার সূচনা হলেও শ্রমিকের মর্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে শ্রমজীবীদের দুর্দশা ঘোচে নাই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বায়নের যুগে উদারীকরণ নীতিও শ্রমিক স্বার্থে আঘাত হানছে বলে বিভিন্ন মহলের জোরালো বক্তব্য রয়েছে। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার সংরক্ষণে কী সরকারি, কী বেসরকারি কোন পক্ষই আন্তরিক নয়। মে দিবসের অনুষ্ঠানে কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি শোনা যায়। এসব কারণেই শ্রমজীবীদের ভাগ্য আর বদল হয় না।
১৮৮৬ এর পরে ১২৭ বছর পার হলেও শ্রমিকরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। প্রতি বছরই ভাঙা রেকর্ডের মতে একই গান বাজে, ন্যায্য মজুরী চাই, নির্দিষ্ট কর্ম ঘণ্টা চাই, অতিরিক্ত কাজের মজুরী চাই, নিরাপদ কর্মস্থল চাই। আশা হত ভাগ্য হত শ্রমিকরা শুধু চেয়েই যাচ্ছে কিন্তু প্রাপ্তি সামান্য।
আর এই না পাওয়ার বিরুদ্ধে জীবন প্রদীপ নির্বাপিত পোষাক কন্যার পদাঘাত জাতির প্রতি, বিশ্বের শোষকদের প্রতি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিম চাচা বলতে থাকেন, সাম্প্রতিক রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে হাজার খানেক মানুষে নির্মম মৃত্যু।তাজরিন অগ্নিকান্ড ট্রাজেডি;স্পেকটাম ভবন ধ্বসে ৬৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু তাদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে। তৈরি পোষাক শিল্পে যে সমস্ত নারী শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করেন তার আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা কতটুকুআর জীবনের নিরাপত্তা। তাদের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ কতটুকু?তাদের জীবন যারা বিপর্যস্ত করে তুলেন তাদের অবস্থা কি? তারা থাকেন ধরাছোয়ার বাইরে ।
সরকারি হিসাবে, এখাতে পাঁচবছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫১টি। প্রাণ গেছে ৪৮৮ জনের। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র হিসাবমতে, গত ১৩ বছরে ১৬৬ দুর্ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। এতে নিহত হয়েছেন ২২২ জন শ্রমিক। আর গত ২৩বছরে ভবনধস ও আগুনে প্রাণহানি ঘটেছে ৩৮৮ জন শ্রমিকের। তবে সাভারের এই ভবনধস ছাড়াও গত ২৩বছরে পোশাকশিল্প কারখানায় ২১৭টি দুর্ঘটনা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) হিসাবে, গত পাঁচবছরেই শুধু আগুনে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ শ্রমিকের।
কলিম চাচার চোখে পানি চলে আসে, বলতে থাকেন, এ হিসাব শুধু আমাদের ব্যাথিতই করে না শংকিতও করে ।
ততক্ষণে দুপুর হয়ে আসছে । আমরা এক এক করে উঠতে লাগলাম। কলিম চাচা চা খেতেই আছেন.........!!
তথ্য উৎসঃ
১- মে দিবস এবং আমরা, মোঃ রিয়াজুল ইসলাম
২- দৈনিক পত্রিকাসমুহ
৩- অনলাইন নিউজ
৪- নেট
চায়ের আড্ডা থেকে-১. . . . . . .. . . .. !!!! নিচে লিংক..
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৯৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন