কুরবানী রিফলেকশন
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৪৮:০৪ সন্ধ্যা
কিছু মুসলিম তরুণ অতি দর্শণের আবেগে আপ্লুত হয়ে ফেবুতে খুব করেই স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন আর শেয়ার করছেন যাতে নজরটা আটকে যায়। সেটি হচ্ছে- ‘পশু নয়, মনের পশুর কুরবানী হোক’। তাই এই রিফলেকশনটি পোষ্ট করলাম। এই উক্তিটির মাধ্যমে মানব ইতিহাসে বিশ্বস্রষ্টার উদ্দেশ্য সৃষ্টির (নবী ইব্রাহীম ও নবী ইসমাঈল আঃ) সর্বোচ্চ ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের মেসেজ মানুষের কাছে না পৌঁছে বরং এর বিপরীতটাই ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এই উক্তিটির মধ্যে কিছু ফাঁকফোকর (Loophole) রয়েছে যা আধুনিক প্রাচ্যবিদের (Orientalist) ইসলামের ছিদ্রান্বেষের খোরাক তৈরি করে। তাদের কিছু উক্তি হচ্ছে- কুরবানীর লক্ষ্য হচ্ছে আত্নত্যাগ ও মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করা। আজ সমাজে এই শিক্ষার বাস্তবায়ন নাই তাই পশু কুরবানী অর্থহীন। যতক্ষন পর্যন্ত কুরবানীর শিক্ষা কিঊ বাস্তবায়ন করতে না পারবে তার কুরবানী করা জরুরী নয়। এমন আরো অনেক মন্তব্য তারা করে থাকে দূর্বল ইমানের মানুষদেরকে সংশয়ে ফেলার জন্য এবং ইসলামের ইমেজকে কুলষিত করার জন্য। মূলত এটি ইসলামের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক বিদ্বেষের একটি অংশ। তাই বুদ্ধিমান মুমিনের কখনো তার অভিব্যক্তির মাধ্যমে অন্যের জন্য কোন ছিদ্র রাখা উচিৎ নয়।
মূলত পাশবিকতাকে মন থেকে নির্মূল করে মনুষ্যত্ব ও ত্যাগের শিক্ষাদানের জন্যই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা দান-সদকা, কুরবানীসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ মানুষের উপর আরোপ করেছেন। এসব কিছুর মাধ্যমেই আমরা আমাদের মনের পাশবিকতাকে ধবংস করে মনুষ্যত্বসহ অন্যান্য ভালোগুণগুলো অর্জন করি। এখানে একটি সংশয় সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত এসব হলো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। এগুলোর শিক্ষা অর্জনই মূললক্ষ্য। তাই ওরিয়েন্লিটাস্টরা বলে থাকে নামাজের শিক্ষা আজ আর সমাজে নাই। তাই নামাজের জামাত, মসজিদ নির্মান গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। গুরুত্বপূর্ণ হল নামাজ যে শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে জন্য ফরয করা হয়েছে সেই শিক্ষা সমাজে বাস্তবায়ন করাই মূল কাজ। এই বলে তারা মসজিদ নির্মান থেকে নিরৎসাহিত করে। ঠিক একিভাবে তারা বলে থাকে- যে ব্যক্তি মনের পশু এখনো কুরবানী করতে পারেনি তার কুরবানী করার মূল্য কী? এক্ষেত্রে তারা মুসলিম লেখকদের অসতর্কতামূলক কিছু লিখনী দারা দলীল পেশ করে থাকে।
আচ্ছা কেউ যদি মনের পশু কুরবানী করতে না পারে তাহলে সে কি কুরবানী করবেনা? অবশ্যই তাকে কুরবানী করতে হবে। আমাদের কুরবানী উদ্দেশ্য হচ্ছে মনের কৃপণতা, লোভ, নিষ্ঠুরতা, নির্দয়তা ও পাশবিকতাকে বিলীন করে বঞ্চিত মানবতার কল্যাণে আমাদের অন্তরে বদান্যতা, উদারতা, অনুকম্পা, ভালবাসা ও মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা। কিন্তু এটি কুরবানীর প্রাসঙ্গিক উদ্দেশ্য হলেও একজন অনুগত মুসলিম এটিকে সর্বপ্রথম বিশ্বস্রষ্টার নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তার ইবাদত হিসেবে বিশ্বাস করে। তাই মানুষের মানবীয় দূর্বলতার কারণের কুরবানীসহ যে কোন ইবাদতের উদ্দেশ্য বা শিক্ষা সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাস্তবে রুপ না নিলেও এগুলোর প্রথম ধাপ তথা ইবাদত কনসেপ্টকে অবজ্ঞা করা যাবেনা। এগুলোর আত্নিক, দৌহিক, সামাজিক, ধর্মীয় (বিশ্বস্রষ্টার নির্দেশ পালন ও তার সন্তুষ্টি অর্জন) এবং আরো বিভিন্নমূখী লক্ষ্য ও কল্যাণকে সাধন করার জন্য ইসলামের সকল ইবাদত ও কার্যাদি প্রবর্তন করা হয়েছে। তাই সামাজিক কিংবা অন্য যে কোন শিক্ষার বাস্তবায়ন আমাদের মাঝে প্রতিফলিত না হলেও কোন ইবাদত কিংবা ধর্মীয় নিদর্শনকে (শিড়ার/ সিম্বলিক) অবজ্ঞা কিংবা বর্জন করা যাবেনা।
কুরবানীর ক্ষেত্রেও তাই। মানুষের মানবিক দূর্বলতার কারণে এর আত্নিক উন্নতি ও সামাজিক কল্যাণ বাস্তবে পরিদ্রষ্ট না হলেও এটিকে অবজ্ঞা কিংবা বর্জন করা যাবেনা। বরং মুসলিম হিসেবে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত হিসেবে কুরবানীর প্রথম ধাপের কাজ করতেই হবে। সাথে সাথে কুরবানীর মাধ্যমেই মনের কৃপণতা, লোভ, নিষ্ঠুরতা, নির্দয়তা ও পাশবিকতাকে বিলীন করে বঞ্চিত মানবতার কল্যাণে আমাদের অন্তরে বদান্যতা, উদারতা, অনুকম্পা, ভালবাসা ও মনুষ্যত্ববোধ মনে জাগ্রত করতে হবে। এজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে কুরবানীসহ অন্যান্য ইবাদতের সঠিক পন্থা এবং এসব বিধানের আত্নিক, দৌহিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং আরো বিভিন্নমূখী লক্ষ্য ও কল্যাণের ব্যপারে শিক্ষাদান এবং গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মুসলিম সমাজের যুবকসহ সচেতন মানুষদের অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে। তবেই আমাদের সমাজের মানুষেরা আল্লাহর আনুগত্য করতে উৎসাহিত হবে এবং এগুলোর শিক্ষা আমাদের সমাজের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
তাই ‘পশু নয়, মনের পশুর কুরবানী হোক’ এমন উক্তি করা থেকে একজন মুসলিমকে বিরত থাকতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কুরবানী মূল শিক্ষার ব্যপারে আমাদের সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমরা বলতে পারি ‘শুধু পশু নয়, বরং পশুর সাথে মনের পশুর কুরবানীও হোক’। এভাবেই মূলত একজন ইন্টেলেকচ্যুয়াল মুমিনকে সঠিক কথা সুন্দরভাবে ব্যক্ত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তার দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৭৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন