মালয়েশিয়ায় ‘নারী উদ্যোক্তা কনফারেন্স’: কিছু অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:১৯:৩৭ সকাল
মালয়েশিয়ায় ‘নারী উদ্যোক্তা কনফারেন্স’: কিছু অভিজ্ঞতা
আমার এক আলজেরিয়ান কলিগ তার রিসার্স প্রজেক্টের জন্য বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তার ইন্টারভিউ নিতে হবে। তাই নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত (২৭-২৮ ডিসেম্বর) দুদিন ব্যাপী একটি কনফারেন্সের কথা শুনে এই সুযোগকে সে আর হাত ছাড়া করলনা। তার প্রতিটি ইন্টারভিউর জন্য এটলিস্ট ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগে। অনেকগুলো ইন্টারভিউ অল্প সময়ে একজনের নেয়া সম্ভব নয় তাই আমাকে রিকুয়েস্ট করায় তাকে সহযোগিতা করতে আমিও সাথে গেলাম। অবশ্য আমরা কনফারেন্সের দিত্বীয় দিনে যোগ দেই। এই কনফারেন্সের পারটিসিপেন্ট হচ্ছে সবাই বিধবা মহিলা। তাদের পড়ালেখার যোগ্যতা সেকেন্ডারি কিংবা ডিপ্লোমা। সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এখানে রক্ষণশীল মুসলিম নারী, তথাকথিত আধুনি মুসলিম, এবং অমুসলিম নারীরাও অংশগ্রহণ করে। কনফারেন্সের ভেন্যু ছিল কুয়ালালামপুর সিটিটেল এক্সপ্রেস হোটেলে।
সকালে নিদিষ্ট সময়ের আগেই আমরা হোটেলে পৌঁছালাম। পূর্ব থেকেই একজন নারী উদ্যোক্তার সাথে যোগাযোগ ছিল বিধায় তার অপেক্ষায় ছিলাম আর ভাবছিলাম সে নিচে এসে আমাদেরকে রিসিভ করে নিয়ে যাবে। আমার কলিগ তাকে টেক্সট করল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার দেরী হওয়ায় সরাসরি হোটেলের রিসিপশনে কনফারেন্সের ভেন্যুর কথা জিজ্ঞেস করে দোতলায় উঠে যাই। উপরে গিয়েই সিস্টার শাহিরা (৩৫) নামের উদ্যোক্তার সাথে দেখা হয়ে ভালই হল। সেই আমাদেরকে রিসিভকরা কথা ছিল। শাহিরা আমাদেরকে কনফারেন্সের মূল ভেন্যুতে নিয়ে গেল এবং কনফারেন্সের প্রধান সিস্টার আজিয়ার (৪০) সাথে পরিচয় করিয়ে দিল এবং নারী উদ্যোক্তা কনফারেন্সে আমাদের আসার উদ্দেশ্য তাকে জানাল। সিস্টার আজিয়া একজন ল’ইয়ার এবং মালয়েশিয়ার নারী উদ্যোক্তাদের সরকারী-প্রাইভেট বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে সরকারী একটি সংগঠনের প্রধান। তার সংগঠনের উদ্যেগেই এই কনফারেন্সের আয়োজন।
আজিয়ার সাথে আমাদের সাক্ষাত হল। প্রথমেই তিনি হেন্ডসেক করার জন্য হাত বাড়ালেন আর আমার কলিগ স্বাভাবিকভাবেই হেন্ডসেক করে নেয় তার সাথে। যখন আমার পালা তখন আমি হাতটা নিজের দিকে আমার বক্ষে টাচ করলাম। তিনি বুঝতে পেরে তার হাত ফিরিয়ে আমার মতই করল।
বন্ধুরা, এটি শুধুমাত্র একটি সাক্ষাতের কাহিনী নয় বরং এখানে কিছু চিন্তার বিষয় রয়েছে তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করা। কনফারেন্সে গিয়ে আমার মজার কিছু অভিজ্ঞতা হয় যেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার খুব প্রয়োজন বোধ করছি কিন্তু ব্যস্তময় ক্যরিয়ার এবং দীর্ঘ লিখার কারণে সবগুলো শেয়ার করতে পারছিনা। পরে কখনও সময় পেলে কিস্তিতে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ্। আজ শুধুমাত্র একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই।
গত দু’বছরের মধ্যে ফেইসবুক থেকে অনেকগুলো ছবি কালেক্ট করি। তম্মধ্যে দুইটি ছবি খুবই শিক্ষণীয়। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছবি মনে হলে আমি রীতিমতই সেগুলো সংগ্রহে রাখি যাতে যে কোন সময় কাজে লাগাতে পারি। ঠিক এমন একটি সময় এসে গেল গত ২২ নভেম্বর যখন এফবির চ্যাটালাপে আমার এক ফ্যানের প্রশ্নের জবাবে তাকে কনভিন্স করতে না পেরে ছবি দুটো দিয়েই সফল হয়েছিলাম। চ্যাট হচ্চিল কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছোটভাইয়ের সাথে। আমাদের চ্যাটালাপটি ছিল ঠিক এমন:
Assalamualikum
kemon acen? vaia
valo, wa alaikumussalm
busy naki?
bolun
vaia, women der sathe hand shake ar matter a Islam ar opinion ki?
See : http://www.zaharuddin.net/senarai-lengkap-artikel/38/263-shaking-hands-with-women-an-islamic-perspective.html
vai ato boro!!!!!!!!!! apni aktu bole dan na, halal or haram?
not allowed
assa, vai tahole apnake akti situation boli time hobe ki apnar?
u can shake ur hand only with those old women who have lost their sexual lust because of age, disease or any other cause
likhen ami pore answer dibo
assa,
ami kisu function a amar 1 Dr. ar sathe attain kori, so there onek women ase & tara hand shake ar jonno bariedai, ami try kori avoid korar kintu, jani na soitan ar karone kore feleci kisu bar. amake ki akti valo way bola jai ki kore save korbo, jate amio(also ISLAM) o insult na hoi, & tarao mind na kore.
See Attachment
see these 2 pic
no other ruling, no situation, it depends on your determination and seeking help
from Allah at this situation, Seen Nov 22
প্রিয় পাঠক,জুনিয়র ভাইকে লিখেছিলাম। কিন্তু তাকে যুক্তি ও দলীল দিয়ে কনভিন্স করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের সংগৃহীত দুটি ছবি দিয়ে কনভিন্সিং উত্তর দিতে পেরেছি। তাই আপনিও আপনার ফেসবুক ব্যবহারে কোন টার্গেট রাখতে পারেন এবং অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
অন্যকে বলা সহজ কিন্তু নিজে করাটা অনেক কঠিন। আল্লাহ্ তা’আলার সহযোগিতা না থাকলে এমন পরিস্থিতিতে ভালো বুদ্ধি মাথায়ও আসেনা। বিব্রতকর অবস্থাকে এড়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাঁর কাছেই আমাদের সর্বদা সাহায্য চাওয়া উচিৎ।
ফিরে আসি আজিয়ার প্রসঙ্গে। বন্ধু-বান্ধবী কিংবা অন্যান্য মহলে ছেলে মেয়ের হেন্ডসেক আজকাল একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আই আই ইউ এম ক্যাম্পাসেও ইদানিং এই ফ্যাশন মাঝে মাঝে পরিলক্ষিত হয়। মাস তিনেক আগে একদিন দেখলাম লাইব্রেরির লেভেল টু তে ৫/৭ জন ক্লাসমেটের পারস্পরিক সাক্ষাৎ হল। সাক্ষাতেই ছেলে মেয়ে সবাই একে অপরের সাথে হেন্ডসেক করল। দেখে খুব অবাক হলাম। এমন ফ্যাশনে অবাক হবার কিছু নেই কারণ মানুষগুলো সব পাল্টে গেছে। তবে আমাদের ক্যাম্পাসে দেখে অবাক হলাম। ছেলে মেয়েদের ইসলামী ধ্যান-ধারনা আছে। মেয়েগুলো তথা কথিত ‘আধুনিক হিজাব’ পরা। কিন্তু পারস্পরিক হাত মিলাতে একটুও দ্বিধা করলনা।
নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রধান আজিয়াও কিন্তু একজন আধুনিক, স্যোশাল এক্টিভিস্ট ও মুসলিম নারী। সেও হিজাব করে। মনে হয় ফ্যশন লাইফের প্র্যাকটিসের প্রথম দিকে দ্বিধা সংকোচকে এড়িয়ে পরিস্থিতিকে হয়ত শামাল দিতে পারেনি। কিংবা নিজেকে অন্যদের মত আধুনিক হতে হবে এমন মানসিকতায় গা ভাসিয়ে পুরুষের সাথে হাত মিলাতে মিলাতে সে যে হিজাব ধারী মুসলিম নারী এই অনুভূতিই হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য আধুনিক কিংবা সেমি আধুনিকদের সাথে প্র্যাকটিস করতে করতে রক্ষণশীলদের ক্ষেত্রেও তার কোন অনুভূতি থাকেনা। তাই কারো সাথে সাক্ষাৎ হলেই অনায়াসে হাত বাড়িয়ে দেয়। এভাবে দিন দিন মুসলিম কালচার আর ওয়েস্টের কালচারের মাঝে কোন পার্থক্যই তারা খুজে পায়না।
প্রিয় পাঠক, এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নিজেকে একটু সচেতন রাখলেই নিজেও বাঁচবেন অন্যকেও বাঁচাবেন। অন্যথায় মুসলিম হলেও ফ্যাশনের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার হাতটা যদি আপনার বুকে না লাগিয়ে স্টীল রেখেই দেন তাহলে হয়ত কারো আন্ডারমাইনের শিকার হতে পারেন যদিও এটি প্রকৃতঅর্থে আন্ডারমাইন না। কেউ হয়ত পরিস্থিতির দোহাই দেখাতে পারেন যেমন দেখা গেছে আমার চ্যাটালাপে। তাই আপনি আপনার হাত নিজের বক্ষে টাচ করলে সে বুঝতে পারবে আপনি এ ব্যপারে সচেতন এবং আপনারও একটা কালচার আছে। অধিকন্তু সে আপনার কালচারকে রেস্পেক্ট করতে শিখবে। যেমনটি হয়েছিল আজিয়ার ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে আমাদের সাথে রেস্পেক্ট দেখাতে সে একটুও কমতি করেনি।
এমন সামান্য একটি পরিস্থিতি যদি এড়াতে না পারি তাহলে আমাদের মাঝে আর অন্যদের মাঝে পার্থক্য কোথায়? মনে করুন আপনি একজন ধার্মিক পুরুষ বা নারী, নামায রোযা করেন। আল্লাহকে ভয় করেন বলে দাবী করেন আবার মনেও এমন বিশ্বাস রাখেন। হিজাব করার সাথে সাথে নিজেকে আধুনিক মুসলিমও মনে করেন। কিন্তু আপনি কি আপনার মাঝে আর অমুসলিম কিংবা নামে মাত্র আলট্রামডার্ণ মুসলিমদের মাঝে কোন পার্থক্য খুজে পান? একটু ভেবে দেখুন আপনার অবস্থাটা...
১-তারা নারী-পূরুষ পারস্পরিক হেন্ড সেক করে আপনিও করেন!
২-তারা রাতভর আজে বাজে মুভি দেখে আপনিও দেখেন!
৩-তারা ফ্রি মিক্সিং করে আপনিও করেন এবং ক্লাস ডিসকাশনের নামে দীর্ঘ সময় বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে কাটান!
৪-তাদের সেলেব্রেটি ওয়েস্টার্ন আপনার সেলেব্রিটিও তারা!
৫-তারা ভেলেন্টাইন ডে, এপিল ফুল এবং খ্রিস্টমাস ডে, পুজা ইত্যাদি পালন করে আপনিও করেন!
৬-তারা বয় কিংবা গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে যায় আপনিও হিজাব সহকারেই বের হন আপনার বন্ধুকে নিয়ে! (তার মানে বের হওয়ার সময় হিজাব ফেলে যাবেন তা কিন্তু নয়!!!)
৭-তারা তাদের আওরাহ প্রকাশিত করে নিজেক আধুনিক ভেবে চলে আপনিও এতে পিছিয়ে নেই!!!
এভাবে মুসলিম নাম ধরে ইসলামকে অবমাননা করছেন কেন????????
বন্ধুগণ, হেন্ডসেকসহ অন্যান্য ব্যপারগুলো হয়ত কারো কাছে খুব সিম্পল মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো সিম্পল নয়। হেন্ডসেক প্রসেঙ্গেই একটি হাদিস শুনাই। রাসূল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে মারাত্নক শাস্তির হুশিয়ারী এসেছে।
মা’কাল বিন ইয়াসির বলেন রাসূল (সাঃ) কে বলেছেন: “তোমাদের কেউ অবৈধ নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে তার মাথায় লোহার সুঁই দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া উত্তম”। [তাবারানী, বায়হাকী- সহীহ]
অর্থাৎ- পর নারীকে স্পর্শ করা খুব জঘন্যতম অপরাধ। এর শাস্তি এতই মারাত্নক যে কারো মাথায় লৌহ দন্ড ঢুকিয়ে আঘাত করলে যে কষ্ট হবে তাও স্পর্শ করার শাস্তির চাইতে কম কষ্টকর। এমন শাস্তি কোন নারী পর পুরুষকে স্পর্শ করলে তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আসুন আমরা মুসলিম হিসেবে একটু সচেতন হই। নিজের আইডেন্টিটিকে ভুলে না যাই বরং মুসলিম আইডেন্টিটিকে প্রদর্শন করতে আমরা গর্ববোধ শুরু করি। আমাদের মাঝে আর অন্যদের মাঝে পার্থক্যটা খুজে পাই। তাহলেই হয়ত আমাদের মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকা স্বার্থক হবে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে আধুনিক যুগের এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাওফিক দিন।
লিখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
২৯৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন