সংশয় ও অপনোদন: প্রসঙ্গ নামাজ- পর্ব ৬ (সালাতের ব্যর্থতা, কবীরা গুনাহ, সালাতের শিক্ষা, জামাতের সাথে সালাত, মসজিদ নির্মাণ)

লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ০৭ মে, ২০১৩, ০৭:৫৮:৩৫ সকাল

১। “সালাত আজ ব্যর্থ হচ্ছে”। মূলতঃ সালাত ব্যর্থ নয়, মানুষই এর শিক্ষা বাস্তবায়নে অপারগতার পরিচয় দিচ্ছে। বিষয়গুলোকে কোনভাবেই সঠিক হিসেবে মেনে নেয়া যায়না না। কারণ ক্লাসিকল ও আধুনিক নির্ভরযোগ্য সকল স্কলারদের মত হচ্ছে যখনই কোন সিদ্ধান্ত কোরআন হাদীছের স্পষ্ট ভাষ্যের বিরোধী হয় তখনই সেটিকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। অথচ আমরা বিপরীতটাই করতে যাচ্ছি। মুসলমানরা সালাতকে যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এজন্য দায়ভার তাদের, সালাতের নয়। অথচ আমাদের ব্যর্থতার দায়ভারকে কোরআনের বিধান সালাতের উপর চাপিয়ে দিয়ে এ যুগে সালাতের কার্যকারিতাকে অচল হিসেবে দেখানো পাঁয়তারা চলছে। এমন জ্ঞানীদের নিকট প্রশ্ন এবং ব্যাখার দাবি করা হলে কিংবা তাদের যুক্তিকে খন্ডন করা হলে তারা কিছুটা ভুল স্বীকার করেন অন্যথায় সংশয় থেকেই যায় এবং এটিই তাদের মেথড ও স্ট্রেটেজি। [শিক্ষা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা]

২। কবীরা গুনাহ সকল আমল নষ্ট করে ফেলে। এটি ১০০% ভুল। বরং শিরকই একমাত্র গুনাহ যা সকল আমল নষ্ট করে ফেলে আর তাই এটি সবচেয়ে বড় গুনাহ। কিন্তু কবীরা গুনাহ শুধু তওবা করার মাধ্যমেই মাফ হয়ে যায়। এখানে পরিকল্পিতভাবে কবীরা গুনাহকে শিরকের সাথে মিক্স করা হয়েছে। কবীরা গুনাহ প্রসঙ্গে তওবার কথা না এনে আমল নষ্টের ভ্রান্ত কথা বলে আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ হওয়ার পথ খুলে দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বারবার অপরাধের জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছে এবং তাঁর অপার করুণা থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। অপরদিকে শিরক বিন্দুমাত্রও করা যাবে না। তাই, সেটিকে খাটো করে উপস্থাপন করে সাধারণ গুনাহের মত মামুলী ব্যপার হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর ভয়াবহতাকে খাটো করেই এটিকে সবচেয়ে বড় গুনাহ বলা হয় নাই। এটি একটি কবীরা গুনাহর মতই ধরা হয় তাহলে একজন মুমিনের দ্বারাতো করীরা প্রায়ই ঘটে যায়। তার কাজ হচ্ছে বার তাওবা করা। কিন্তু শিরক এতই মারাত্নক যে এটি একবার করলেই একজন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং পুনরায় তাওবা করে ঈমান আনা ছাড়া তাঁর কোন আমলই আল্লাহর কাছে কাজে আসবেনা (আল্লাহ্‌ আমাদের ঈমানকে হেফাযত করুন)।

৩। শিক্ষা বাস্তবায়ন না হলে সালাত আদায়ে কোন রকম সওয়াবই পাওয়া যাবে না। কিবলা পরিবর্তনের আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআনের ক্লিয়ার কাট স্টেইটমেন্ট, শিক্ষা বাস্তবায়ন না হলে সালাত আদায়ে কোনরকম সওয়াবই পাওয়া যাবে না। এটি ১০০% ভুল। প্রথমত, আয়াতটি ছিল কেবলা পরিবর্তনের সময় আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্যে, যারা সকাল সন্ধ্যায় বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরেই তাদের ধর্মীয় উপাসনা পালন করত। আর এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে ঈমানদার হিসেবে দাবি করত। তাই, এ আয়াতে ঈমানের প্রকৃত রূপকে সালাতের বাহিরের বিভিন্ন আদেশ নিষেধ মেনে চলার মধ্যে দেখানো হয়েছে যেখানে সালাতও অন্তর্ভুক্ত আছে। শুধুমাত্র পূর্ব পশ্চিমে মাথা ফিরিয়ে অর্থাৎ উপাসনা করে এবং রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুওয়াতকে অস্বীকার করে ঈমান দাবি করাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সালাতের সওয়াবকে অমূলক করা হয় নি। অথচ, সালাতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের অযোগ্য হিসেবেই দেখানো হচ্ছে যা সালাতসহ বিভিন্ন ইবাদতের অনুপ্রেরণা দানকারী (তারগীব) অনেকগুলো হাদীছের পরিপন্থী। অনেকগুলো কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক এই ভুল যুক্তিকে রাখবেন না ইমামদের কথামত ছুড়ে মারবেন সেটি পাঠকে নিজ দায়িত্ব।

৪। আনুষ্ঠানিক নামায মানে জামাআতের সাথে নামায আদায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর শিক্ষাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ, এটিও ১০০% ভুল। কেননা জামাআতের সালাত থেকেই সকল শিক্ষার সূচনা। এ জামাআতের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) অনেকভাবেই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু, এটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মুসলমানদের আখলাক, তারবিয়্যাহ ও সামাজিক বন্ধনের প্রাণকেন্দ্র মসজিদ থেকে বিমুখ করার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে।

৫। সুন্দর মসজিদ বানিয়ে আনুষ্ঠানিক নামাজ আদায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুন্দর মসজিদ নির্মানে নিরুৎসাহিত প্রদান করা হয়েছে। অথচ অনেকগুলো সহীহ হাদীসে রাসূল (সাঃ) মসজিদ নির্মাণের উৎসাহ দিয়েছেন। এবং মসজিদ নির্মানের সওয়াবকে ব্যক্তির নামাজের শিক্ষা হাসিল কিংবা এধরণের কোন আমলের সাথেও শর্তারোপ করা হয়নি। তাহলে এই অমূলক দাবির ভিত্তি কোথায়? সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মসজিদ পূর্বে, বর্তমানে এবং চিরকালই আখলাক, তারবিয়্যাহ এবং জ্ঞানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। অথচ আমরা এই সঠিক ধারণ থেকে অনেক দূরে সরে যেতে চাচ্ছি। চলবে>>> ভালো লাগলে শেয়ার করুন প্লিজ।

বিষয়: বিবিধ

১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File