সংশয় ও অপনোদন: প্রসঙ্গ নামায, পর্ব-৪
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ০৫ মে, ২০১৩, ০৬:৫৫:২৫ সকাল
মূল আলোচনা:
একটি প্রশ্নবিদ্ধ পন্থায় শিরোনামটি দেয়া হয়েছে “সালাত কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে”। এটি এমন হওয়া দরকার যেখানে কোন জটিলতার অবকাশ থাকেনা। এখানে কিছু শব্দচয়ন রয়েছে যেখানে সালাত আদায়কারী মানুষের কথা না বলে সালাতকে আঘাত করা হয়েছে। বলা উচিত, সালাতের শিক্ষা বাস্তবায়নে আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি? এটি যদি মেনে নেয়া যায় তাহলে কি বলা যাবে কোরআনকে সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে? কেননা, কোরআনের বিধানের বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে কি একটি শিরোনাম এমন হতে পারে, কোরআন আজ সকল সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে (আল্লাহ মাফ করুন)? তাহলে কি বলা যাবে রাসূলের সুন্নাহ কেন সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হচ্ছে(আল্লাহ মাফ করুন)? তাহলে কি কোন মুমিন বলতে পারবে, আল্লাহর আইন আজ কেন জমীনে ব্যর্থ হচ্ছে(আল্লাহ মাফ করুন)? এসকল শিরোনাম বাস্তবতার সাথে বেশী মিল, বুঝতে সহজ, উদাহারণ দিয়ে কোরআন বোঝার শামিল আরো কত কি! অথচ, কোরআন-হাদীস তাদের যথাস্থানেই সুরক্ষিত। এগুলো কোন ব্যর্থতা নয় বরং ব্যর্থতা ও সমস্যা হচ্ছে মানবজাতির। তাদেরকেই সমাজের দুরবস্থার জন্য দায়ী করা দরকার। কিন্তু বিপরীতে সুপরিকল্পিত দায়ী করা হচ্ছে কোরআনকে। ব্যর্থ বলা হচ্ছে সালাতকে। এমন ধারণা যাদের অন্তরে গেঁথে যায়, তারা মনে করে ১৪০০ বছর আগের কোন আচার অনুষ্ঠান আজকের আধুনিক যুগের সমাধান দিতে ব্যর্থ। তাহলে বলতে হয় মুসলমানরা একটা মিথ্যা দাবি করে থাকে-সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে আল-কোরআন (আল্লাহ মাফ করুন)।
এটি মূলত পাশ্চাত্যের একটি বিশেষ মহলের কাজ যারা খুব বেশী শিক্ষিত, সুদক্ষভাবে প্রশিক্ষিত এবং তুলনামূলকভাবে কোরআন হাদীছের অধিক জ্ঞান রাখে। এরা অনেক যুক্তি দিয়ে কথা বলে কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিছু অবিতর্কিত বিষয়কে বিতর্কিত পন্থায় উপস্থাপন করে পুরো আলোচনার মৌলিক শিরোনামের মাধ্যমে দ্বীনের বড় বড় এবং নিশ্চিত জানা কিছু বিষয়ে সংশয় তৈরী করা এবং ছোট ছোট অনেকগুলো ভুল কথা কৌশলে মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া। প্রশ্ন করা যেতে পারে, তাদের কথা যৌক্তিক হলে গ্রহণ করতে বাঁধা কিসের, বরং যৌক্তিক কথাকেই গ্রহণ একজন বিবেকবান মানুষের কাজ। ইসলাম একটি যৌক্তিক জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু উপরের কথাগুলো বাহ্যত সঠিক হলেও, এগুলো নিজস্ব কাঠামোতে সঠিক নয়। যে যুক্তি দিয়ে একটি বিষয়কে প্রমাণ করা হচ্ছে, সে যুক্তির অবকাঠামোটি সঠিক নয়। অপরদিকে বিভিন্ন প্রসঙ্গ থেকে কিছু আয়াত ও হাদীস বাছাই করে এগুলোকে তাদের প্রাসঙ্গিকতা থেকে আলাদা করে নিজের ইচ্ছামত একটি যুক্তির কাঠামো দাঁড় করানো এবং এই কাঠামো দিয়ে আরেকটি কনসেপ্টকে প্রমাণ করা মোটেও ঠিক নয়। যুক্তি দিয়েই সবকিছু প্রমাণ করতে হবে, কিন্তু এর আগে ভেবে দেখা দরকার যুক্তিটি নিজের অবকাঠামোতে সঠিক কিনা। যুক্তিটি যদি সঠিক হয়, তাহলে এটি কোন বিষয় প্রমাণের সহকারী দলিল হতে পারে, মূল প্রামাণ্য দলিল নয়। মূল প্রামাণ্য দলিল হচ্ছে কোরআন, হাদীস, ইজমা এবং এ তিনটির কোন একটির ভিত্তিতে অর্জিত কিয়াস। অপরদিকে যদি যুক্তিটি যদি নিজের কাঠামোতেই সঠিক না হয়, তাহলে কি এ যুক্তি দ্বারা কি কোন কনসেপ্ট প্রমাণ করা যাবে?
সালাতের মৌলিক উদ্দেশ্য ও শিক্ষার সাথে রয়েছে অনেক ধরনের ব্যাক্তিগত ও সামাজিক উপকারিতা। তার মধ্যে সামাজিক ভ্রাতৃত্ব, শরীর চর্চা, নেতৃত্ব নির্বাচনের শিক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শরীরচর্চা নিয়েই প্রথমে আলোচনা করা যাক। কৈউ দাবী করেন যদি সালাতে শরীরচর্চাসহ আরো অন্যান্য উপকারিতা থাকে এবং এটা মানুষকে জানানো যায় তাহলে দলে দলে মানুষ ইসলামের দিকে ধাবিত হবে। আমাদের প্রশ্ন তাহলে অমুসলিম পন্ডিত যারা ইসলাম সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান রাখে তারা কেন এসকল শিক্ষা ও উপকারিতায় মোহিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে না? কোন মুসলিম ডাক্তার কেন রোগীকে ব্যায়ামের পরামর্শ না দিয়ে বেশী বেশী নামায আদায়ের পরামর্শ দেন না? বরং তিনি ডাক্তার হয়েও রোগীকে দৈনিক ৪০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার জোরালো পরামর্শ দেন। এটি এজন্য যে, নামাযের অনেকগুলো শিক্ষা ও উপকারিতার মধ্যে শরীরচর্চা একটি হলেও এটি মুখ্য কোন কাজ নয়। তাই দৈনিক পাঁচবার মিলিয়ে চল্লিশ-পয়তাল্লিশ মিনিটের সমান হলেও এর মাধ্যমে ব্যায়ামের চাহিদা পূরণ হয়না বিধায়ই ডাক্তার ব্যায়ামেরই পরামর্শ দেন। কিন্তু, এমন শিক্ষার কথা বলে যদি কোন মুসলিম ইসলামের দিকে কাউকে আহবান করে তাহলে, ঐ মুসলিমকে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। এর বাস্তব দৃষ্টান্ত আজকের ইসলামবিদ্বেষী সকল লেখালেখিতেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরং সালাতের দিকে আহবান করতে হবে মহান স্রষ্টা ও বিধানদাতা আল্লাহর বিধান পালনকে নিশ্চিত করতে। এখানে তুলনা করা যেতে পারে বিশ্বস্রষ্টার আদেশ আর শরীরচর্চা বা ইত্যাকার উপকারিতার কথা বলে মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করার মধ্য দিয়ে। নিশ্চিত করে বলতে হবে যে, উল্লেখিত উপকারের কথা বলে সালাতের দিকে আহবান করলে কেউ সাড়া দিবে না কারণ, এগুলো হচ্ছে মানুষের পার্থিব উপকারিতা আর এরজন্য রয়েছে তাদের আরো উত্তম বিকল্প। তাহলে, অধিকতর উত্তম বিকল্প সত্ত্বে কোন সচেতন মানুষ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কম কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে আসবে না। বরং, সৃষ্টিকর্তার আদেশ, এর পুরষ্কার এবং অবাধ্যতার শাস্তির কথা স্মরণ করালে স্রষ্টার নির্দেশ পালনার্থে একজন মানুষ ইসলামে প্রবেশ করবে এবং সালাতের মত অন্যান্য ইবাদত পালনে সচেষ্ট হবে। স্রষ্টার আদেশ পালনের সাথে সাথে এর অন্তর্নিহিত রহস্যগুলো জানাতে পারলে এবং এগুলোর সুন্দর বাস্তবায়ন দেখাতে পারলে মানুষেরা ইসলামকে ভালোবাসবে এবং বিধিবিধান পালনে সচেষ্ট হবে। বিক্ষিপ্তভাবে সালাতের শিক্ষাগুলোকে বলতে থাকলে সালাতকে তুচ্ছজ্ঞান করার পথ উন্মুক্ত হবে।
সালাত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জামাআতের গুরুত্বই সর্বাধিক এবং প্রধান। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে শিক্ষার কথা বলে জামাআতকে আনুষ্ঠানিক রীতি বলে আক্ষা দিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্বকে তুচ্ছ করা হচ্ছে। পরিণতিতে জামাআতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে বর্ণিত অনেকগুলো সহীহ হাদীছের স্পিরিটের সাথে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করা হয়েছে। অথচ, এর গুরুত্ব অনেক বেশী। জামাআতে সালাত আদায় করতে হামাগুঁড়ি দিয়ে আসার কথাও হাদীছে উল্লেখ রয়েছে। এমনকি, যারা জামাআতে আসে না তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার দৃঢ় মানসিকতাও রাসূল (সাঃ) পোষণ করেছেন। অথচ বিক্ষিপ্তভাবে শিক্ষার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করে জামাআতের সাথে নামাযের আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। মূলত, সালাতসহ যেকোণ ইবাদত সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ ও তাঁর ভালোবাসার দাবি পূরণেই আমরা করে থাকি। তবে প্রথমে তাঁর আদেশ পালনার্থেই করি, কিন্তু সাথে সাথে শিক্ষা, মর্মার্থ ও মৌলিক উদ্দেশ্য হাসিল হলে সেটিতে আত্মতৃপ্তি আসে এবং সেটিই সোনায় সোহাগা। এমনটি করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)। যিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও মৃতকে জীবিত করতে দেখার মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি পেতে চেয়েছেন। আর তাই স্কলারগণ মাক্বাসিদ তথা ইসলামের বিধিবিধানের রহস্য উদঘাটনে অনেক গবেষণা করেছেন। চলবে>>> ভালো লাগলে শেয়ার করুন প্লিজ।
বিষয়: বিবিধ
১২১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন