সংশয় ও অপনোদন: প্রসঙ্গ নামায, পর্ব-৩
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ০৪ মে, ২০১৩, ০৯:০৭:১৪ সকাল
এবার আসুন “নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে” শিরোনামের আলোচনা প্রসঙ্গে। ব্যাপারটি এখানে আমরা ব্যক্তির দিকে না তাকিয়ে আলোচনার কনটেন্ট নিয়ে কিছু পর্যালোচনা করব। যদিও আলোচনাতে কিছু ভুল আছে তবুও বক্তার কোন ভাল উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আমারা তার অন্তরের বিষয় জানিনা। সেটির মালিক স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আবার তার ভাল নিয়ত থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের অজান্তেই এই নতুনন্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। তাই নিয়তকে তার যথাস্থানে বহাল রেখেই আমরা বিষয়বস্তুর পর্যালোচনা করব যাতে কোন ভাবেই ভুল জ্ঞান আমাদের মাঝে প্রবেশ না করে। কারণ আমল ভূল হলে সেটি সংশোধন করা সহজ কিন্তু জ্ঞান ভুল হলে সেটি মহাবিপদ হিসেবে দেখা দেয়। এখানে আরো কিছু বিষয় লক্ষনীয়:
১। মত পার্থক্যের নীতিমালা: ব্যপারটি আসলে মতপার্থক্যের (আদাবুল ইখতিলাফ/ এথিক্স অব ডিসএগ্রিমেন্ট) বিষয় নয় যে, অন্য মতকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত। অন্যজনের দলিল ভিত্তিক ভিন্ন মত থাকতেই পারে, অন্যের উপর নিজের মত চাপিয়ে দেয়া মোটেই উচিত নয়। এসবই মূলতঃ মতপার্থক্যের কিছু নীতি বা আদব। প্রকৃতপক্ষে মতপার্থক্যের বিষয় আসে তখন যখন কোন বিষয়ে কয়েকটি মতামত থাকে এবং প্রত্যেকটি মতের সহীহ দলিল থাকে। তাহলেই এগুলোকে মতপার্থক্যের বিষয় হিসেবে ধরা হবে এবং ভিন্নমতের স্বীকৃতি ও পারস্পরিক সম্মানবোধের অপরিহার্যতা দেখা দিবে। ধরুন একটি ব্যাপারে চারটি মত রয়েছে। এগুলোর তিনটি সহীহ দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত এবং বাকি একটি সহীহ দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। এমতাবস্থায়, সহীহ দলিল সম্বলিত তিনটি মতকেই মতপার্থক্যের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তিনটির যেকোন একটি আপনি মানতে পারেন, আপনার কাছে যেটা ভাল লাগে সেটিকে মেনে অন্য মতকে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যের মতকে সঠিক মনে করতে হবে, তবে আপনি যেটি মেনে সেটিকে আপনার নিজের বিবেচনায় তুলনামূলক অধুক শুদ্ধ কিংবা অধিক উত্তম মনে করেন এবং এটি স্বাভাবিক ও বাঞ্ছনীয়। তাই এখানেই অন্যের মত স্বীকৃতির অপরিহার্যতা আসে। কিন্তু, বাকি যে মতটির সহীহ দলিল নেই সেটিকে মতপার্থক্যের নীতির আওতায় আনা যাবে না এবং এটিকে ভিন্নমত বলে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। কারণ এটি নিতান্তই ভুল। সুতরাং, কোন বিষয়ের ব্যাপারে অনেকগুলো মতামতের একটি মত হিসেবে এটিকে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে মুসলিমদের মাঝে ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণা ও সংশয়ের সৃষ্টি হয় এবং একজন সাধারণ মুসলিমের জন্য এগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর।
২। জ্ঞানার্জনে উৎসাহ প্রদান: এটি আবার উৎসাহ প্রদানের বিষয়ও না, কারণ যারা নতুন করে কোরআন হাদীসের স্টাডি শুরু করেছেন তাদের বক্তব্য প্রতিনিয়তি আমরা মনোযোগের সাথে শুনি। আবার, তাদের বক্তব্য শুনে অনুপ্রাণিতও হই। কখনো কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে সেটিকে বড় করেও দেখি না। বরং, বক্তাকে এপ্রেশিয়েট করার মানসিকতা নিয়ে তার সাথে দেখা করি। যাতে তিনি নিজেও উৎসাহিত হয়ে আরো বেশী স্টাডি করেন। এ ব্যাক্তির আন্তরিকতা স্টাডির পন্থা বিশুদ্ধ তাই, কোন ভুল পরিলক্ষিত হলেও সঠিক পদ্ধতির কারণে এটি একদিন সংশোধিত হয়ে যাবে। কিন্তু, যদি কেউ ভালো স্টাডি করেন এবং পরিকল্পিতভাবেই ভুল ও সংশয়ের অনুপ্রবেশ করান সেটিকে শুধু ভুল হিসেবে নিয়েই এপ্রেসিয়েশন করা যাবে না। বরং, এখানে দেখার বিষয় যে, তার মোটিভেশন কি? মেথড কি? তার প্রতিটি যুক্তি প্রাসঙ্গিক কিনা? এখানেই ইসলামের নির্দেশ “নিশ্চয়ই এই (ইসলামের) জ্ঞান হচ্ছে তোমাদের দ্বীন। সুতরাং লক্ষ্য কর কাদের কাছ থেকে তোমরা তোমাদের দ্বীনকে (জ্ঞান) গ্রহণ করছ?” এখানে তাদের থেকে জ্ঞানার্জন নিষেধ করা হয়েছে যারা জাল হাদীস বানিয়ে রাসূল (সাঃ) থেকে কোট করে এবং যারা বিভিন্ন ভুল কথা এবং সংশয় জ্ঞানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।
৩। আবেগকে মূল্যায়ন করা: এটি কিন্তু আবেগের বিষয়ও না যে, আবেগ দেখে মুখে যা বলছেন তা গ্রহণ করব।বরং আবেগতাড়িত হয়েই মানুষ ভুল করে বসে এবং সঠিক কোনটি তা বুঝতে সক্ষম হয়না। এখানে ব্যাপারটি হচ্ছে জ্ঞানের এবং চিন্তার। মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কোরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান থেকে দূরে থাকা। কোরআন-সুন্নাহ তাদের স্বগৌরবে নিজস্ব মর্যাদায় সমাসীন ও সুরক্ষিত। সমস্যা হচ্ছে মুসলমানদের যারা এগুলোর সঠিক জ্ঞানার্জন করে না এবং সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালায় না। আগেকার দিনের সমস্যা ছিল কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানকে গ্রহণ সঠিকভাবে এর বাস্তবায়ন না করা এবং এ কারণের মুসলমানদের পতনের সূচনা হয়েছে এবং দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলছে। তবে সঠিক জ্ঞান থাকলে তাহলে কোন একদিন এর সঠিক বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব। কিন্তু আধুনিক যুগে আরেকটি সমস্যা যুক্ত হয়েছে। সেটি হচ্ছে, মুসলিম জাতি যাতে সঠিকভাবে জ্ঞান আহরণও না করতে পারে সেজন্য কোরআন হাদীসের জ্ঞান আহরণের পন্থায় বিভিন্ন ভুল পন্থা ও বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দেয়া।
তাহলে ব্যপারটি কি? এখানে মূল ব্যপার হচ্ছে আলোচনার বিভিন্ন ইন্টেলেকচুয়াল ট্রেন্ডগুলো জানা এবং সে অনুযায়ী ইসলাম সম্পর্কিত মন্তব্যকে মূল্যায়ন করা। যে সকল কনসেপ্টের মাধ্যমে আলোচনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে সে কনসেপ্টগুলোর ব্যপারে সঠিক জ্ঞান থাকা। মেথডলজি অব নলেজ জানা থাকা। অহীর জ্ঞানের ও মানবিক জ্ঞানের পদ্ধতির পার্থক্য বুঝা। একই ধরণের উদাহরণ সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবি প্রমাণের জন্য প্রযোজ্য কিনা তা বুঝতে পারা ইত্যাদি। চলবে
>>> আগামী পর্ব থেকে মূল আলোচনা পোষ্ট করব ইনশা আল্লাহ্। ভালো লাগলে শেয়ার করুন প্লিজ।
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন