সংশয় ও অপনোদন: প্রসঙ্গ নামায, পর্ব- ২
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:০৭:৪৭ সকাল
২। ইসলামের সার্বজনীনতা: ইসলামী শরীয়া আল্লাহর তা’আলার পক্ষ থেকে একটি সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। কেননা এটিই বিশ্বস্রষ্টার পক্ষ থেকে বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ। কিয়ামত পর্যন্ত এটিই অক্ষতভাবে বহাল থাকবে এবং বিশ্বমানবতাকে স্থান কাল নির্বিশেষে মুক্তির দিশা দিয়ে যাবে।
কুরআনের বিধান, মূলনীতি, পরিভাষা, উপযুক্ততা, এর ভাষার আবেদন সবগুলোই ব্যপক এবং সার্বজনীন। কুরআন নাযিলের সময়কাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল স্থান, কাল ও জাতির জন্য উপযুক্ত সমাধান দিতে কুরআন সক্ষম। তবে এ ক্ষেত্রে কুরআন সার্বজনীন হিদায়াত দিতে প্রস্তুত হলেও এটিকে বাস্তবাতায় রূপায়িত করার দায়িত্ব হচ্ছে কুরআনের ধারক বাহকদের। সোনালী তিন যুগের পরেও ক্লাসিকল মুজতাহিদ ও গবেষকগণ তাঁদের ইজতিহাদ ও গবেষণার মাধ্যমে কুরআনের হিদায়াতকে তাদের যুগোপযোগী করে উপস্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমেই সেকালে কুরআনের হিদায়াতের বাস্তবমুখীতা প্রমাণিত হয়েছে। একইভাবে বর্তমান যুগ এবং কিয়ামত পর্যন্ত অন্যান্য সকল যুগের স্কলারদেরও একই দায়িত্ব যে তারা কুরআনের হিদায়াতকে তাদের স্ব স্ব যুগের উপযুক্ত করে উপস্থাপন করবে এবং কুরআনের উপযুক্ততাকে বাস্তবতায় রূপ দিবে। কিন্তু ওসমানী খিলাফতের পতনের মাধ্যমে যখন মুসলিমরা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন থেকে গবেষণার কাজ সংকুচিত হতে থাকে। বর্তমান যুগেও কুরআনের হিদায়াতের সামগ্রিক বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ যুগের স্কলারগনই দায়িত্বশীল।
কিন্তু কুরআনের জ্ঞানকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নে তাদের বর্তমান অক্ষমতাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে তথাকথিত পাশ্চাত্য সভ্যতার দাবিদাররা ইসলামের সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মুসলিমরা যেহেতু আজ পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিতে পারছেনা বরং পরাশক্তির নৃশংস আক্রমণের শিকার সেহেতু এটি প্রমাণ করছে তাদের কুরআন ও ইসলাম তাদেরকে বিজয়ী করতে অক্ষম। (আল্লাহ্ মাফ করুন)। এভাবে কুরআন, ইসলাম, নবী, রাসুল, সাহাবা, রাসূলের স্ত্রীগন, তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ও জ্ঞানের অন্যান্য শাখা, মৌলিক ইবাদতের তথা নামাজ, রোযা, হজ্জ যাকাত ইত্যাদিসহ ইসলামের সকল বিষয়ে তারা নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এর প্রত্যেকটিকে তারা এমন ভাবে উপস্থাপন করে যাতে পরিশেষে এই উপসংহার টানতে পারে যে এটি বর্তমানে ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে একটি একটি করে সকল বিষয়কে তারা আক্রমণ করছে এবং এর মধ্য দিয়ে সেগুলোকে বর্তমান যুগে অচল হিসেবে প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এভাবে তারা তাদের সবচেয়ে বড় দাবি তথা ‘ইসলাম এখনকার আধুনিক বিশ্বে মানবতার মুক্তি দিতে অক্ষম’ তা প্রমাণ করতে চায়। অবশ্য এর আগেই গোটা ইসলামকেও তারা একইভাবে অচল বলে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয নামাজকে তারা আক্রমণ করেছে। নামাজের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে মুসলিমদেরকে নামাজের গুরুত্ব, প্রতিদান, কার্যকরীতা ইত্যাদি সম্পর্কে সন্দিহান করার পায়তারা করছে।
৩। জ্ঞানার্জনে সতর্কতা: তারা তাদের এই অমূলক দাবি প্রমাণের লক্ষ্যে বিশ্ব মানবতা যেটিকে জ্ঞানের মূল এবং সবচেয়ে নিশ্চিত উৎস হিসেবে হিসেবে ব্যবহার করে আজ তারা সেটিকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। মুসলিমদেরকে সরাসরি আক্রমণ করে যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পরাজিত হয়েছে তাই বিকল্প হিসেবে তারা স্নায়ু যুদ্বের পথ বেছে নিয়ে মুসলিমদের জ্ঞানার্জের বিভিন্ন পথে ওৎ পেঁতে বসে আছে। মুসলিমরা কুরআনের সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে যাতে সত্য মিথ্যার ফারাক করতে না পারে এবং অতি সহজেই যাতে বিভ্রান্ত হয় সেজন্য তারা জ্ঞানের মধ্যেই ভেজাল দেয়া শুরু করেছে। আর এই লক্ষ্যেই ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তারা নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা তুলনামূলকভাবে বেশী শিক্ষিত, ভালভাবে প্রশিক্ষিত, সুন্দর উপস্থাপনা করতে সক্ষম, নিজস্ব যুক্তির দাবিদার এবং চরম ধৈর্যশীল। এ সকল বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত হয়েই তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। মুসলিমরা যদি এখনও এতই অসচেতন হয় যে তারা এমন সুক্ষ কারচুপি ধরতে পারেনা বরং বিভ্রান্তির ধুম্রজালে আবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের এমন দূর্ভাগ্যের কবল থেকে কে রক্ষা করবে? মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনতো ওয়াদা করেছেন তিনি ইমানদারদের মাধ্যমেই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের শায়েস্তা করবেন। তার অর্থ হচ্ছে মুসলিমরা এজন্য যত দিন পর্যন্ত প্রস্তুত না হবে ততদিন পর্যন্ত আল্লাহ্ গায়েবী সাহায্যে তাদের উদ্ধার করবেননা। তাঁর আসমানী সাহায্য চির অবধারিত, কিন্তু সেটি তাঁর বেঁধে দেয়া শর্ত সাপেক্ষে।
চ্লবে >>> ভাল লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়তে সহযোগিতা করুন।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন