ওরিয়েন্টালিস্টদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি- পর্ব ২
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩৯:১৯ সকাল
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যঃ
ওরিয়েন্টালিস্টরা অনেক বড় বড় ইন্সটিটিউট, কোম্পানী এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে এসকল রিসার্সের বিনিময়ে। তারাও লাভবান হয় প্রাচ্যের ইসলাম, জনশক্তি, শক্তির দিকসমূহ, দুর্বলতার দিকসমূহ, অর্থনৈতিক অবস্থা, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে পরবরতীতে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালাতে প্রস্তুতি নেয়। যেটি আমরা আজ আক্রান্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও আরব দেশের দিকে তাকালে বুঝতে বাকি থাকেনা।
রাজনৈতিক লক্ষ্যঃ
- যে কোন কৌশলে মুসলিমদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি ধবংসের নিমিত্তে কাজ করা এবং তাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করে রাখা।
- আঞ্চলিক ভাষা শিখা এবং এর মাধ্যমে মুলিমদের আভ্যন্তরীণ বিষয় জেনে সেখানে অনুপ্রবেশ করে সামাজিক ব্যবস্থাকে ব্যহত করা।
- বিভিন্ন দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রথা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা জেনে রিপোর্ট করা। এজন্য তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা শিখা।
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজ করে যাতে করে মুসলিমদের সকল তথ্য জেনে দেশের বাম শক্তিকে পরামর্শ দিতে পারে এবং তাদের প্রভুদেরকে প্রকৃত রিপোর্ট দিতে পারে।
তাদের গবেষণা পদ্ধতিঃ
- এরা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতকে তাদের শানে নুযুল থেকে আলাদা করে কিংবা আংশিক কোট করে এবং হাদীসকে তার প্রাসঙ্গিকতা থেকে আলাদা করে কিংবা আংশিক কেটে বিভিন্ন ধরণের পারস্পরিক দ্বন্দ তৈরি করে উপস্থাপন করে এবং তারা দাবি করে কুরআন হাদীসের মধ্যে অনেক গড়মিল আছে এমনকি কুরআন ও হাদীসের নিজ নিজ আয়াত ও হাদীসের মধ্যই দ্বন্দ রয়েছে।
- আবার কখনো কুরআন হাদীসের এমন দেখিয়ে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেগুলো কুরআনের স্পষ্ট ভাষ্য এবং অনেকগুলো সহীহ হাদীসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
- তারা নিজেদের সুবিধা মত যে সকল পদ্ধতিতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া যাবে সেভাবেই মনগড়া কিছু মেথড, হাইপোথেসিস বা কাঠামো দাঁড়করায় এবং এর বিভিন্ন অংশকে কুরআন হাদীসের আংশিক ভাষ্য, বিতর্কিত অর্থ কিংবা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করতে চায়। এরপর এই মেথড দিয়ে সম্পূর্ণ ভুল আরেকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং এটিকে যৌক্তিক বলে দাবি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মেথডটি স্বয়ং নিজের কাঠামোতেই সঠিক নয়। তাই এর মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণ করতে চাইলে অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে।
- তারা আগের যুগের কাফির মুশরিকদের থেকে বিভিন্ন দাবি নকল করে এর পিছনে কিছু যুক্তি দাঁড়করিয়ে নিজেদের গবেষণা বলে চালিয়ে দেয়।
- তারা হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন সত্য ঘটনাকে মিথ্যা, মিথ্যা ঘটনাকে সত্য, দূর্বল বর্ণনাকে সহীহ এবং সহীহ বর্ণনাকে দূর্বল বলে দাবি করে এর মাধ্যমে অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত প্রচার করে।
- তারা কোন ধরণের সঠিক প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে জেনারেলাইজ করে থাকে যেটি কুরআনের অনেক আয়াত এবং অনেক সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক।
- অধিকাংশ সময় তারা কুরআনের মাধুর্য ও ভাষাশৈলী না বুঝার কারণে কুরআনের অর্থই বুঝেনা।
- তারা তাফসীর বিশারদ, হাদীস বিশারদ, ফিকহ বিশারদের পদ্ধতি থেকে বিচ্যুত হয়ে তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন পদ্ধতির আংশিক কেটে উদ্দেশ্য হাসিল হবে এমন একটি পদ্ধতি দাঁড় করিয়ে ভুল কিছু প্রমান করতে চায়।
- তারা কুরআনকে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য ও বিকৃত কিতাবের সাথে তুলনা করে সেগুলোর পদ্ধতিতে কুরআনকে মূল্যায়ন এবং সমালোচনা করে।
- তারা প্রায় সময়ই একই বিষয়ে একবার যা বলে অন্যস্থানে তার বিপরীত বলে থাকে। তাই তাদের লিখনীতে অনেক ধরণের গড়মিল পাওয়া যায়।
- তারা অনেক ধরণের অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ, দৃশ্যাপট এবং ভুল হাইপোথেসিস দাঁড় করিয়ে এগুলোকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়ে অন্য ভুল বিষয়কে প্রমান করে। অথচ এমন দৃশ্যাপট, উদাহরণ এবং হাইপোথেসিসের অধিকাংশই সাময়িক ধরে নেয়া তাও আবার ভুলভাবে।
- তারা তাদের যুক্তি ও মেথডের জন্য অনেকগুলো এজাম্পশনকে (ধরে নেয়া/ কল্পনা করা) প্রেমিস (ভিত্তি/ দলীল) হিসেবে ব্যবহার করে নিজস্ব একটি মেথড দাঁড় করায়। এরপর এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়ে এগুলোকে যৌক্তিক বলে দাবি করে। মূলতঃ তাদের এজাম্পশন ও প্রেমিসগুলোই সঠিক নয়। তাই তারা এগুলোর মাধ্যমে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
- তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানের শিক্ষা, উপকারিতা, গুঢ়তত্ত্ব, হিকমাহ কিংবা মাকাসীদের কথা বলে কুরআন হাদীসের নসকে বাদ দিয়ে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল কিংবা মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে নিজের মত করে বিভিন্ন বিষয়ের হুকুম দিয়ে থাকে যেগুলো দ্বীনের অকাট্য জ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক।
- তারা এ ধরণের ভুল মেথড ও মাকাসীদ দাবীর মাধ্যমে ইসলাম গবেষনার চাবিকাঠি উসূলুল ফিকহকে বর্তমান যুগে গবেষনার জন্য অচল বলে দাবি করে। অথচ এটি ইসলামের গবেষনার ক্ষেত্রে সর্বকালেই কার্যকর। এই ধরনের দাবি খুবই প্রসিদ্ধ।
তাদের প্রকাশনাঃ
- আরবী সাহিত্যের ইতিহাস
- আরব ইসলামী বিশ্বকোষ (ইংলিশ, ফ্র্যান্স ও জার্মান ভাষায় এটি অনুদিত হয়)
- সিহাহ সিত্তার ইনডেক্স (চারটি দেশ এর স্পন্সর করে)
- এছাড়া তারা কুরআনের ভাষা, তাফসীর, উলুমুল কুরআন, হাদীস, উলুমুল হাদীস, ফিকহ, ফিকহের সংকলন, মাকাসীদ, সীরাহ, ইতিহাস, অভিধান, সাহাবাদের জীবনী, রাসূলুল্লাহর স্ত্রীগণের জীবনী, ইনডেক্স, তাহকীক (পর্যালোচনামূলক স্টাডি) ইত্যাদি বিষয়ে প্রকাশনা করে থাকে।
- উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ষাট হাজারের বেশী প্রকাশনা তারা করেছে শুধু মাত্র ইসলামের ক্ষতি সাধনকল্পে। এর বাহিরে অনেক কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে যা হিসেবে আসেনা।
তাদের কর্মদ্যোমঃ
তারা অনেক অর্থের বিনিময়ে তাদের পুরো জীবন ব্যয় করে এমন গবেষণায়। দৈনিক ১২, ১৬, ১৮ ঘণ্টাও তারা কাজ করেন। একজন ওরিয়েন্টালিস্ট দৈনিক ১৮ ঘণ্টা করে একটানা ১৮ বৎসর কাজ করে একটি অভিধান লিখেছেন। এভাবেই তারা শ্রম দেয় তাদের মিশন সাকসেজ করতে। (আমরা কোথায়???)
তাদের বিস্তৃতিঃ
তাদের বিস্তৃতি সকল মুসলিম দেশেই রয়েছে। মিশরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি তারাই প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি সবার কাছে জানা। আলআযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে এদের একটি বড় লাইব্রেরীও রয়েছে। মুসলিম গবেষকরাও দূর্লভ গ্রন্থগুলো পেতে এই লাইব্রেরিতে মাঝে মাঝে যেতে হয়।
কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ওরিয়েন্টালিস্ট:
August Ferdinand – Mehren, August Fischer, August Muller, A. W. T. Juynboll, Etienne Dinet, Etienne - Marc Quatremere, Ignaz Goldziher, R. Blachere, Von Kremer, Adrian Barthelmy, Adam Mez, Edward Pococke, Edward Glaser, Edward Granvill Brown, Edward Henry Palmer, Edward William Lane, Adolf Wahrmund, Arthur J. Arberrv, Triton, A. S, Armand Pierre Caussin de Perceval, Arend Jan Wensinck, I. J. Kratchkovsky, Ignazio Guidi, Albertus Schultens, Alfred Octave Bel, Alfred Von Kremer etc.
তথ্যসূত্রঃ
الاتجاهـــات الحديثـــة للمستشرقين ومن تابعهـــم في تفســـير القـــرآن الكـــــريم، د. محمد بن سعيد عبدالله السرحاني
دراسة القرآن الكريم عند المستشرقين في ضوء علم نقد ((الكتاب المقدس))، أ.د. محمد خليفة حسن
مناهج المستشرقين فى دراسة القرآن الكريم، Oleh Achmad Muhlis
منهج المستشرقين في دراسة الحديث النبوي، أحمد نصري.
منهج المستشرقين التأويلي في تفسير النص القرآني، د. زكريا إبراهيم الزميلي
معجم أسماء المستشرقين، لـ يحيى مراد ،الدكتور، دار الكتب العلمية للنشر والتوزيع (2003)
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন