ওরিয়েন্টালিস্টদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি- পর্ব ১
লিখেছেন লিখেছেন এ টি এম মোনাওয়ার ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:১০:৩০ সকাল
আলোচনা সূচিঃ
ভুমিকা, কনফারেন্সে গৃহীত মূল এজেন্ডা, তাদের শ্রেনীভেদ, তাদের ভিশন, তাদের ফোকাস, ধর্মীয় উদ্দেশ্য, অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক লক্ষ্য, তাদের গবেষণা পদ্ধতি, তাদের প্রকাশনা, তাদের কর্মদ্যোম, তাদের বিস্তৃতি, তথ্যসূত্র।
(লিখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রিয় পাঠকদের লিখাটি বেশী করে শেয়ার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।)
ভুমিকাঃ
ত্রয়োদশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের দিকে যখন ফান্সের রাজা ‘লুয়াইস নবম’ মিশরের মুসলিমদের সাথে সপ্তম ক্রুসেড যুদ্ধ ঘোষনা করে এবং ১২৪৯ সালে মিশর আক্রমণ করে পরাজিত হয় তখন মিশরের মানুষেরা তাকে ‘মানসুরা’ শহরের ‘দারু লোকমান’ নামক স্থানে বন্দী করে। পরবর্তীতে সে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় এবং ফ্রান্সে ফিরে যায়। এখানেই শেষ নয়; বরং সেখানে গিয়ে সে গোটা ইউরোপের জ্ঞানী ও নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কনফারেন্স করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্রের যুদ্ধের পরিবর্তে বিরুদ্ধে স্নায়ু যুদ্ধের ঘোষনা দেয়। সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গোটা ইউরোপের সবচেয়ে মেধাবী কিছু লোক বাচাই করা হয় যারা ওরিয়েন্টাল দেশ বিশেষতঃ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে স্টাডি করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু মিশন নির্ধারণ করে তাদেরকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এদেরকে আরবীতে মুসতাশরিক এবং ইংরেজীতে ওরিয়েন্টালিস্ট বলা হয়। বাংলাতে এদেরকে শাব্দিক অর্থের বিচারে প্রাচ্যবিদ/ প্রাচ্যগভেষক ইত্যাদি বলা যেতে পারে। আর এই গবেষণার কাজকে ইসতিশরাক, ওরিয়েন্টালিজম, প্রাচ্যবিদ্যা/ প্রাচ্যগবেষণা বলা হয়। আল-আলযহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়ের একটি কোর্স পড়ানো হয়। আবার কেউ কেউ তাদের স্পেশলাইজেশনও এ কোর্সে করে থাকেন। ১৮৭৩ সালে পেরিসের কনফারেন্সে তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক আত্নপ্রকাশ হয়। এর আগে ১৩১২ সালে ইউরোপে প্রথম কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা এমন কার্যক্রম শুরু করে। তবে কেউ কেউ বলেন এর আগেও তাদের কার্যক্রম ছিল। তাই ঐতিহাসিকদের মতেও এর সঠিক সময় নির্ণয় করা কঠিন। ইসলামকে গবেষণা করে এর মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তির অনুপ্রবেশ করানো এবং মুসলিমদের দূর্বলতাগুলো খুজে বের করে সে অনুযায়ী তাদেরকে আক্রমণ করার কৌশল নির্ধারণ করতেই এই ওরিয়েন্টাল স্টাডির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
কনফারেন্সে গৃহীত মূল এজেন্ডাঃ
১। আল-কুরআন থেকে মুসলিমদের দূরে সরানো
২। আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান বিতরণে বেঘাত ঘটানো
৩। সাপ্তাহিক জুমআর মিলন এবং বাৎসরিক হজ্জ্বের সম্মেলন থেকে মুসলিমদের বিরত রাখা
৪। মুসলিম যুবকদের চরিত্র নষ্ট করার ব্যবস্থা করা এবং মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসা।
তাদের শ্রেনীভেদঃ
দু’ধরনের ওরিয়েন্টালিস্ট রয়েছে। বেশীর ভাগ হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম দেশকে গবেষণা করে সাম্রাজ্যবাদকে সহযোগিতা করা। আর অল্পকিছু সংখ্যক আছে যারা নিজেদের স্টাডির উদ্দেশ্যে ফেয়ারলি গবেষণা ও লেখালেখি করেন। ওরিয়েন্টালিস্টরা বেশীর ভাগই অমুসলিম। তবে কিছু সংখ্যক মুসলিমও রয়েছে যারা ওরিয়েনটালিস্ট হিসেবে পরিচিত।
তাদের ভিশনঃ
এদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। এজন্য তারা কুরআন, হাদীস, রাসুলুল্লাহর (সাঃ) সীরাহ, সাহাবাদের জীবনী, রাসূলুল্লাহর স্ত্রীগন আরবী ভাষা, মুসলিম কালচার ও সভ্যতা, ইত্যাদি নানা বিষয়ে গবেষণা করে থাকে।
তাদের ফোকাসঃ
- কুরআন স্টাডি, হাদীস ও অন্যান্য ইসলামী রেফারেন্স স্টাডি
- কুরআন হাদীস সহ অন্যান্য বিভিন্ন বইয়ের অনুবাদ (এজন্য অধিকাংশ ভাষায় প্রথম কুরআন অনুবাদ করে এই ধরণের ওরিয়েন্টালিস্টরাই)
- বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে মুসলিম স্কলারদের লিখা যে সকল পাণ্ডুলিপি আছে (তুরাস/ হেরিটেজ) যেগুলো স্বয়ং মুসলিমরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেনা সেগুলোকে গবেষণার মাধ্যমে নিউ স্টাইলে ইনডেক্স সহকারে প্রকাশ করা।
- প্রকাশিত যে সকল বই বর্তমান স্টাইলে সাজানো নয় সেগুলোকে পুনরায় নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করা।
- কনফারেন্স করা, রিসার্স ইন্সটিটিউট করা, স্কলারশিপ দেয়া, ইত্যাদি।
ওরিয়েন্টালিস্টদের উদ্দেশ্যঃ
ধর্মীয় উদ্দেশ্যঃ
- রাসূলুল্লাহর নবুয়তের বিশুদ্ধতায় সন্দেহ তৈরি করা এমন দাবি করে যে, এটি সোনালী তিন যুগের মানুষের বাস্তবমুখী কার্যক্রমের লিখিত রুপ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুসলিমদের সুন্নাহ থেকে এবং এর বাস্তব উদাহরণ থেকে সরানো।
- কুরআনের শব্দচয়ন, ভাষাশৈলী, অন্তর্নিহিত বক্তব্যকে খন্ডিতভাবে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করে এতে সন্দেহ তৈরী করা।
- কুরআনকে রাসুল (সাঃ) ইহুদী নাসারাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে রচনা করেছেন এমন কথা বলা।
- শুধুমাত্র কুরআনকে সরাসরি পড়লেই মানবতা বেশি সমাধান পাবে।
- কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসকে তার প্রাসঙ্গিকতা থেকে আলাদা করে আক্ষরিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংশয় তৈরি করা।
- ইসলামের অতি মৌলিক বিষয় নিয়ে জটিলতা ও সংশয় তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ঈমান, আকীদা, কুরআন, সুন্নাহ নবী-রাসুল, সাহাবী, রাসূলের (সাঃ) স্ত্রীগন, নামাজ, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাতসহ অন্যান্য বিষয়। কারণ সাহাবী ও রাসূলের স্ত্রীগনকে অপবাদ দিতে পারলে হাদীসের প্রামান্যতা শেষ হয়ে যাবে, কেননা সাহাবীরাই হাদীস বর্ণনা করেছেন। সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেন আবু হুয়ায়রা এবং আয়েশা (রাঃ)। তাই তাদের দু’জনের ব্যপারে সংশয় বেশী ছড়ানো হয়েছে।
- ফিকহ ইসলামী রোমান আইন থেকে গৃহীত বলে দাবি করা এবং এর বিভিন্ন মাসআলা নিয়ে সংশয় তৈরি ও কটূক্তি করা।
- বর্তমান আধুনিক যুগে বিশুদ্ধ আরবী ভাষা অগ্রতি করা সম্ভব নয় এবং গবেষণার জন্য তা অচল। এর মাধ্যমে সমাজ সভ্যতার প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। তাই যার যার আঞ্চলিক ভাষা প্রাধান্য দেয়া উচিত। এর মাধ্যমে মানুষকে কুরআন ও হাদীসের ভাষা আরবী এবং চুড়ান্তভাবে কুরআন হাদীস থেকে দূরে সরানই উদ্দেশ্য।
- আবার তারাই বলে কুরআন তাফসীরের জন্য শুধু আরবী ভাষা ভালভাবে জানলেই চলে। হাদীসের প্রয়োজন নেই।
- আবার তারাই বলে কুরআন বুঝার জন্য তাফসীর ও হাদীস প্রয়োজন নাই। এভাবে নিজেদের সুবিধামত মুসলিমদের মাঝে সংশয় ছড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় পারস্পরিক সাংঘর্ষিক অনেক দাবি তারা করে থাকে।
- মুসলিমদের কিভাবে খ্রীষ্টান বানানো যায় তার দিক নির্দেশনা ও স্ট্রেটেজি নির্ধারণ করা। চলবে >>>
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন