যে খবর পত্রিকা বা মিডিয়াতে আসবে না!

লিখেছেন লিখেছেন প্রেমিক পোলা ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:১২:৪৫ সন্ধ্যা



বুধবার সারা দিন প্রচন্ড ভিড় থাকায় রাত বার'টা দিকে রানা প্লাজার দিকে রওনা হই। গাবতলীতে ভয়াবহ জ্যামে গাড়ি থেকে নেমে হেটে আমিন বাজার যাই। সেখান থেকে সিএনজিতে রানা প্লাজা। ঢুকার আগে পুলিশি বাধা কার্ড দেখানোতে দূর হয়ে যায়। চলে যাই রানা প্লাজার সামনে। লোকজন খুব বেশি না। রাত ১.৩০ মিনিটের কথা বলছি। প্রথমে খবর নিতে চেষ্টা করি কি পরিমান লোক কাজ করতো ভবনটিতে। জানতে পারি ৬ থেকে ৭ হাজার লোক হবে। ৪ তলা থেকে ৯ তলা পর্যন্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী। প্রতিটা ফ্লোরে কম করে হলেও কাজ করে ১০০০ জন মানুষ। দখল করা এই জায়গাটা এতই বড়। যুবলীগের মহান এই নেতা রবীন্দ্রনাথ সাহা নামের একজন হিন্দু লোকের এই বিশাল জায়গাটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে দখল করেন ৯৮ সালে।

যা হোক বিশাল এই ভবন ফাটল ধরায়, ব্রাক ব্যাংকসহ এক থেকে তিন তলার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ ছিল নিচের দোকানগুলোও। আগরে দিন বেলা দশটায় ভবন ফাটল দেখা দিলে গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরে, ঘটনার দিন গার্মেন্টস মালিকরা ফাটল বিষয়ে রানার সাথে একমত হন। লীগ নেতা দখলদারী সূত্রে মালিক, সোহেল রানার সাথে কথা বলেন। ফাটলে কোন সমস্যা নাই বলে রানা ঘোষণা দেন। অফিস জোরসে চলবে বলে ঘোষণা দেন মালিক পক্ষ। ভাড়া খাটা এক ইন্জিনিয়ার ঘোষণা করেন এই ভবন ১০০ বছরেও কিছু হবে না! এই ঘোষণার এক ঘন্টার মধ্যেই ধসে পড়ে রানা প্লাজা। কত লোক ছিল, ৫টি ফ্লোরে তো সব শ্রমিকই প্রায় ছিলেন। শ্রমিরা ফাটলের আতংঙ্গে অফিসে ঢুকতে চাইছিল না। তখন হুমকি দেওয়া হয় অফিসে না ঢুকলে চাকরী ও বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য এই ঘোষণার পরেও ১০০ খানেক লোক বেরিয়ে যান। তারা ভাগ্যবান সন্দেহ নাই।

কিন্তু যারা বেতন ও চাকরী হারানোর হুমকির কাছে পরাজিত হলেন তারাই পরাজিত হলেন জীবনের কাছে। বাধ্য হলেন মালিক প্রযোজিত মৃত্যু কে মেনে নিতে। এত ব্যাপক লোক কে ডেকে এনে মৃত্যু মেনে নিতে বাধ্য করা হল। এবার বলি, উদ্ধার কাজ নিয়া। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা আমরা যা দেখেছি তা জনসাধারণের দিক থেকেই মূলত হয়েছে। বিভিন্ন ভলেনটিয়্যার ও মধ্যবিত্ত মানুষ পানি , সেলাই, ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংস স্তুপের মধ্যে ঢুকছে স্থানীয় লোক জন। তারাও বেশির ভাগ শ্রমিক। আর দুর্দান্ত সাহসের সাথে কাজ করছে এমন লোকেরা যাদের পশ্চাতপদ, জঙ্গি, মৌলবাদি বলে, সেই সব মাদরাসার ছাত্ররা। প্রশাসনকে আমার মনে হয়েছে দর্শকের ভূমিকাতেই আছেন। পুলিশ, র্যা ব, সেনাবাহিনী বন্ধুক উচায়া পুরা জায়গাটায় বেহুদা তাফালিং করছে। উদ্ধার কাজে এত বন্ধুক সহ ফোর্স কি কাজে লাগবে এই প্রশ্ন জনগনের মনে জেগেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় শ্রমিক ও হুজুর ছেলেরা মিলেই মূল কাজ করছে।

সেনাবাহিনী আছে কিন্তু তার ভূমিকায় স্থানীয় একটা মাসুম বাচ্চও সত্তুষ্ট না। কিছু মধ্যবিত্ত নাদুস নুদুস পুলাপান (জাগো ফাউন্ডেশন থেকে গেছে) কইল তারা পানি, সেলাইন নিয়া ব্যস্ত। তারা লাশ গাড়িতে তুলতেছে, সেনাবাহিনীর লোক এসে নাকি তাদের বলছে, তোমাদের মধ্যে সাহসী কে আছো, কে ভিতরে ঢুকতে পারবে? তাদের মধ্যে একজন জবাব দিল, আমরা তো সিভিলিয়ান, কোন ট্রেনিং তো নাই। আমরা ভিতরে কেমনে ঢুকব? আপনে তো ট্রেনিং নিয়েছেন, বন্ধুক রেখে ঢুকে পড়েন আমরা আছি, ভয় পাবেন না। এই হল সেনারবাহিনীর তৎপরতার নমুনা। ভেতরে এখনও ৪ হাজার লোক আটকে আছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। এর মধ্যে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। ভবনটা পড়েছে সেন্ডুইচের মত হয়ে। একটা ছাদের সাথে আর একটা ছাদ বসে গেছে। নয়তলা ভবন পরিণত হয়েছে বিশ ফিটের একটা সেন্ডুইচে। এর মধ্যে লোক বেশির ভাগই মরে গেছে। যারা বেঁচে আছে তারা আরও ব্যাপক কষ্ট পেয়ে মারা যাচ্ছে, ভেতরে আলো বাতাস তো দূরের কথা ধম বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাস নেয়া যায় না। যারা ভেতরে ঢুকেছে তারও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অন্য দিকে যাদের কেটে বের করা যেত, তাদের ব্যাপারে মেডিকেল টিম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কেটে বের করার জন্য ভেতরে ঢুকার মত অবস্থা এখনও করতে পারেনি। ফলে মৃত্যু এখানে খুব স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর কমান্ডিং সমস্যাতো আছেই, এমন বিপদের দিনে সমন্বয়ের এমন দূরাবস্থা দেখব চিন্তাও করি নাই। সেনা, সহ অন্য সদস্যরা যে তৎপরতা দেখাচ্ছে তা স্থানীয় মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করছে। সেনা -জনতা মারামারি হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

অন্য দিকে আমাদের দেশের উদ্ধার যন্ত্রপাতি দেখে গোটা দেশকে অসহায় মনে হচ্ছে। সরকার কেন বিদেশি সাহায্য চাইল না। সে তো বিচারবহির্ভূত ভাবে লোক মারার জন্য বিদেশি সাহাহ্য চায়। লোক বাঁচাতে চাইতে এত সরম লাগে কেন- এই প্রশ্নও কমন। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর কথা মত ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা খেলা-পাতি সহ পুরা এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। উদ্ধারে তাদের তাদের আগ্রহ নাই। তারা আছে দেশ রক্ষার দ্বায়িত্ব নিয়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে। পুলিশ ট্রাক ভরে ব্যারিকেট আনে, কাদানে গ্যাস আনছে, ভেতরে চাপাপড়া লোক চিৎকার করতে করতে মারা যাচ্ছে। আমাদের যন্ত্র- পাতিনাই সে তো জানা কথা। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে যে ক্ষিপ্রতা দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক ছিল তা দেখা যায় নি। কেন এমনটা হয়েছে তা পাবলিক জানে না। পাবলিক বলতেছে এরা আকাইম্যা। শেষ করি, লাশ নিয়া চোরপুলিশ খেলা খেলে লাভ নাই। জীবিত লোকের সংখ্যা খুব কমই । যাও আছে তারা বিভিন্ন বাহিনীর চোখের সামনে মরছে। পাবলিক সাধ্যে যা কুলায় সব করছে। যে হুজুররা আসছে এরা বেশির ভাগ আসছে তাদের আপন লোকজন এখানে কাজ করে বলেই। তাদের বামপন্থি ভলেনটিয়ার ভাবার দরকার নাই। তারা রাজনীতির মওকা নিয়াও আসে নাই। যা হোক লাশ ছাড়া আর কিছু এখন আর আমাদের পাওয়ার নাই।

বিষয়: বিবিধ

২১৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File