ঐতিহাসিক ভূমিকায় আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) - ১

লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১০:২৪:০৮ রাত

উম্মতে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মধ্যে যিনি সবচেয়ে সফলভাবে ফিতনা মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছেন তিনি হলেন খলিফাতুর রাসূল(সাঃ) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)। রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পর মূহুর্ত থেকেই তিনি অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন প্রতিটি পরিস্থিতির। সেই পরিস্থিতি গুলোর এক একটি থেকে অসংখ্য ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার আশংকাকে তিনি অংকুরেই বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সেই অসম্ভব সফল পরিস্থিতি মোকাবেলার দৃষ্টান্তগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুপম শিক্ষার উপকরণ হিসাবে কেয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।তাঁর সেই পদক্ষেপগুলো থেকে যেমন উম্মাতে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের নেতৃত্বের যোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে কাজে লাগাতে পারেন।তেমনিভাবে সকল সাধারণ মুসলমানগণও ইসলামের সঠিক ধারণা লাভের জন্য এই পদক্ষেপগুলো পরিপূর্ণভাবে অধ্যায়ন করে নিজেদের জীবণকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হবেন। একারণেই ইসলামের ইতিহাসের সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।

রাসূল (সাঃ) এর ইন্তেকালে সাহাবীদের মনে দারুণ উত্তেজনা,উন্মাদোনার সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা হতবাক,নির্বাক ও দিশেহার হয়ে পড়েছিলেন এবং এটাই ছিল স্বাভাবিক। আমরা আমাদের ক্লাসিক্যাল সিরাতের রেফারেন্সগুলো থেকে পরিস্থিতির যে বর্ণনা পায় তা হলো এই যে, হযরত ওমর (রাঃ) খোলা তরবারী নিয়ে দাড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং বলছিলেন, যে বলবে রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব। রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করেন নাই বরং মূসা (আঃ) এর মতো আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছেন। কোন কোন বর্ণনা মতে তিনি একথাও বলছিলেন যে, মুনাফেকদের উৎখাত না করে তিনি ইন্তেকাল করতে পারেন না। হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) শোকে পাথর হয়ে নিজের ঘরে আত্নগোপন করেছিলেন। বড় বড় সাহাবীগণ মসজিদের মধ্যে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ মন্তব্য করছিলেন,তিনি ইন্তেকাল করেন নাই বরং অহী আসার বিভিন্ন অবস্থাসমূহের এটিও একটি অন্যতম রূপ। কেউ কেউ এটাও বলে বসেছিলেন যে,মৃত্যু নবুওয়তের বিরোধী। নবীর কখনো মৃত্যু হতে পারেনা। সব মিলিয়ে একটি দিশেহারা ভাব বিরাজ করছিল সেই সময়ে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) এ সময়ে মদীনা শরীফে ছিলেন না। মদীনার বাইরের কোন গ্রামে গিয়েছিলেন এবং প্রত্যাবর্তন করতেই সংবাদ পেয়ে সোজাসুজি হযরত আয়েশা (রাঃ) এর হুজুরায় প্রবেশ করলেন। রাসূল (সাঃ) এর চেহারা মোবারক তখন চাদর দ্বারা আবৃত ছিল। তিনি চাদর সরিয়ে তাঁর ললাটে চুম্বন করলেন এবং বললেনঃ ”আমার পিতা, মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক,আপনার জীবনও পবিত্র ছিল,আপনার মৃত্যুও পবিত্র। অতঃপর তিনি অশ্রু মুছতে মুছতে হযরত ওমর (রাঃ) এর খোঁজে বের হলেন। এবং উপরে বর্ণিত পরিস্থিতিতে ওমর (রাঃ) কে দেখতে পেলেন।

তিনি ওমর (রাঃ) কে বললেনঃ জ্ঞানী লোকের মত কথা বল। রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। তুমি কি এই আয়াতটি শ্রবণ কর নাই যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ “আপনার মরতে হবে এবং তারাও মরবে।আর আমি কোন মানুষকে আপনার পূর্বে অনন্ত জীবন দান করিনি।অতএব, আপনার যদি মৃত্যু হয়, তবে তারা কি চিরঞ্জীব থাকবে?

অতঃপর তিনি মসজিদে নববীর মিম্বরে আরোহন করে উপস্থিত হতবিহবল সাহাবী ও মদীনাবাসীদের উদ্দ্যেশ্যে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিন্তু সময়োপযোগী ও মর্মস্পর্শী ভাষণ দিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহপাকের প্রশংসা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ হে লোকগণ! যদি মুহাম্মদ (সাঃ) তোমাদের মা’বুদ হয়ে থাকেন, তবে জেনে রাখ যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তোমাদের মা’বুদ আর ইহজগতে নেই। আর যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মা’বুদ হয়ে থাকেন, তবে তিনি মরেন নাই, কখনো মরবেন না। তিনি অনন্ত অসীম। অতঃপর সূরা ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতটি পড়ে নেমে আসলেন।

এবং মুহাম্মদ রাসূল ব্যাতীত কিছুই নয়,নিশ্চয়ই তাঁর পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়েছে।অনন্তর যদি তাঁর মৃত্যু হয় অথবা সে নিহত হয়,তবে কি তোমরা পশ্চাদপদে ফিরে যাবে? এবং যে কেউ পশ্চাদপদে ফিরে যায়,তাতে সে আল্লাহর কোনই অনিষ্ট করবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞগণকে পুরস্কার প্রদান করেন। সূরা আল ইমরান ১৪৪

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, “এই ভাষণের পূর্বে আমাদের অন্তরের উপর পর্দা ছিল।সিদ্দীকে আকবরের ভাষণে তা দূর হয়ে গেল।“ তাঁর এই ভাষণে মুসলমানগণ শান্ত হলেন আর মুনাফেকদের প্রাণে প্রদাহ শুরু হয়ে গেল।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবু বকর (রাঃ),আব্বাস (রাঃ),আলী (রাঃ) সহ রাসূল (সাঃ) এর পরিবারের লোকেরা দাফন কাফনে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।ওমর (রাঃ) ও আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) মসজিদে নববীতে বসে ছিলেন।সাহাবীগণ যার যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলাপ আলোচনায় মত্ত ছিলেন।এমন সময় একজন মসজিদে নববীতে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন এবং মুহাজিরদের নেতাদের খোঁজ শুরু করলেন। তিনি হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) কে মসজিদের মধ্যে আলাপরত অবস্থায় পেলে তাঁদেরকে জানালেন সাকীফায়ে বনু সায়েদা নামক স্থানে আনসারগণ একত্রিত হয়েছেন খেলাফত প্রসংগে আলোচনার জন্য এবং তাদের বরেণ্য নেতা সা’দ ইবনে ওবাদা (রাঃ) কে খলিফা নির্বাচনের জন্য তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন।

খবরটি জানামাত্রই এই দুই মহান নেতা নিজেদের মধ্যে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই ছুটলেন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর কাছে।খবর পাঠানো হলে আবু বকর (রাঃ) জানালেন, অত্যন্ত জরুরীকাজে তিনি ব্যাস্ত তাই আসতে পারবেন না।ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) আবারও খবর পাঠালেন এই বলে যে, আপনার জরুরীকাজ থেকেও জরুরী একটি বিষয়ে আপনাকে প্রয়োজন। কিছুটা বিরক্ত হয়েই আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বের হয়ে আসলেন এবং ওমর (রাঃ) কে বললেন, রাসূল (সাঃ) এর দাফন কাফনের চাইতেও জরুরী আর কি কাজ এখন থাকতে পারে? ওমর (রাঃ) খবরটি জানালে তিনিও বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন এবং সাকীফায়ের দিকে রওনা হতে উদ্দত হলেন।ওমর (রাঃ) বললেন, এভাবে আমাদের সেখানে যাওয়া ঠিক হবে কি’না? তিনি দ্বীধাহীন চিত্তে বললেন,এভাবেই আমাদেরকে এবং এখনই সেখানে যেতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা তিনজনই এর সমাধানে যথেষ্ট হব।

এই পর্যায়ে আমি আপনাদের কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। যে ব্যাক্তি এই খবরটি পৌছে দিলেন আমরা যদি তাঁর দিকে নজর দেই তাহলে দেখি যে, ইতিহাসে তাঁর নাম পর্যন্ত আসিনি।অর্থাৎ তিনি এই ইসলামি আন্দোলনের কোন নেতা ছিলেন না। নিতান্তই একজন কর্মী ছিলেন।সেই নিতান্ত একজন কর্মীই যুগ যুগ ধরে চলে আসা এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা দিয়ে গেলেন। ইসলামী আন্দোলনের শৃংখলা রক্ষার এক অনন্য উপায় তিনি আমাদের দেখিয়ে দিলেন।

চিন্তা করে দেখুন সেই সময়ে এই খবরটির গুরুত্ব কেমন ছিল!এই খবরটি প্রচার করলে,তিনি সমস্ত মানুষের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যেতে পারতেন।অন্যদিকে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশংকাও ছিল।এমন অবস্থায় এই নগন্য কর্মীটি এমন দায়িত্বের পরিচয় দিলেন যা অন্য সমাজের একজন দায়িত্ববান নেতার কাছেও আশা করা যায় না।তিনি নিজেকে ফুটিয়ে তোলার পরিবর্তে খবরটি সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়াকেই তাঁর একমাত্র দায়িত্ব মনে করলেন।তিনি ছুটে গেলেন এই আন্দোলেনের সদর দফতর মসজিদে নববীতে।খুঁজে ফিরলেন মুহাজিরদের নেতাদের।যখন ওমর ইবনে খাত্তাব ও আবূ উবায়দার মতো মুহাজির নেতাদেরকে পেলেন তখনই তিনি খবরটি প্রকাশ করলেন। শুধু তাই নয়, তিনি গর্বকরে এই খবরটি প্রচারও করে বেরালেন না। আবার নিজেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না।তিনি মনে করলেন এই খবরটি পৌছে দেয়ায় তার কাজ এবং পরবর্তী কাজের দায়িত্ব নেতাদের।তাইতো তিনি খবরটি পৌছে দিয়ে চুপ করে গেলেন।

যারা মনে করেন এই খবরটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল তারা ভূল মনে করেন। এর কারণ হযরত আলী (রাঃ) এর অভিযোগ। তিনি আবু বকর (রাঃ) এর হাতে বাইয়াত নিতে দেরী করার কারণ হিসাবে আবু বকর (রাঃ) কে বলেছিলেন,আমার অভিযোগ এই যে আপনারা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসলেন অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। উত্তরে আবু বকর (রাঃ) বলেন যে, আমরা এমনভাবে সেখানে পৌছেছিলাম যে, কাউকে জানানোর মতো কোন অবস্থা তখন ছিলনা। সুতরাং বিষয়টি পরে সকলের কাছে পৌছালেও সেই সময়ে সকলে জানতেন না বলেই আমরা মনে করি। তারপরও যদি কেউ বলেন খবরটি সকলে জানতো,তাহলে তাদের ভেবে দেখা উচিত,এই খবরটি জানার পর মুহাজিরদের অন্যান্ন নেতাগণ যেমনঃ হযরত আলী (রাঃ),হযরত উসমান (রাঃ),হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ সহ আরও অনেকেই সেখানে পৌছে যেতেন এবং কেউ তাদের বাধা দিতে পারতোনা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে,সেই বৈঠকে আনসারদের সকলে এবং মুহাজিরদের এই তিন নেতা ছাড়া আর কেউই উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি যদি সকলে জেনে যেতেন এবং আনসার ও মুহাজিরগণ যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যেতেন,তাহলে এই সমস্যার সমাধান আরও জটিল হয়ে পড়তো। হয়তো আনসার ও মুহাজির নেতাদের পক্ষে যুদ্ধ এড়ানোই কঠিন হয়ে পড়তো । সুতরাং একজন নগন্য কর্মীর দায়িত্বশীল ভূমিকা মুসলিম সমাজকে কতবড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিল ভেবে দেখুন। এখানে আরও একটি শিক্ষনীয় বিষয় হলো এই যে, কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকা, অহেতুক অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে না নিয়ে থেমে যাওয়াও একটি বড় কাজ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে,যা এই কর্মীটির মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম। তিনি যদি খবর পৌছে দেয়া ছাড়াও আরও দায়িত্ব পালন করতে যেতেন অর্থাৎ এই খবরটি প্রচার করে বেড়াতেন,মুহাজিরদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করতেন,তাহলে সেই কাজটি মুসলিম সমাজের উপকারের চেয়ে ক্ষতিকর বলেই বিবেচিত হতো। সুতরাং একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর বৈশিষ্ট হবে এই কর্মীর মতো। তারা একদম হাত পা গুটিয়ে বসেও থাকবেনা আবার এমন অতিরিক্ত দায়িত্বও চাপিয়ে নেবেনা যা ইসলামী আন্দোলনের ক্ষতি করতে পারে।

আবার দেখুন এই খবর যাদের কাছে পৌছানো হলো তারা কতোটা দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন।তারা দুইজনই শুধু মুহাজিরদের নন গোটা মুসলিম সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা। তাদের একজনকে রাসূল (সাঃ) ফারূক ও অপরজনকে উম্মতের আমিন বলে ঘোষনা করেছিলেন।আর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এতোটা পারদর্শী ছিলেন যে,স্বয়ং আল্লাহ সুবহানু তায়ালা তাঁর মতামতের উপর নয় নয়বার সমর্থন জানিয়েছেন। তারপরও তারা নিজেরা কোন সিদ্ধান্তে না গিয়ে,কোন আলোচনা না করে এই স্পর্শকাতর বিষয়টিকে তাদের চাইতেও যিনি উত্তম,যিনি রাসূল (সাঃ) এর সব সময়ের সাথী বলে বিবেচিত সেই মহান নেতা আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে সর্বপ্রথম জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন।তাঁরা ছুটে গেলেন আবু বকর (রাঃ) এর কাছে। এবং এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘটনাতে তাদের ভূমিকা ছিল আবু বকর (রাঃ) কে অনুসরণ করা একজন নিষ্ঠাবান কর্মীর মতো।

এরপর দেখুন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর ভূমিকা। তাঁর মতো রাসূল (সাঃ) কে বেশী ভালোবাসতে আর কে পেরেছেন! স্বয়ং রাসূল (সাঃ) বলেছেন,আমি তোমাদের সবার হক আদায় করেছি কিন্তু আবু বকর ছাড়া। আল্লাহই তাঁকে তাঁর উত্তম প্রতিদান দিবেন। সেই আবু বকর (রাঃ)ও রাসূল (সাঃ) এর দাফন কাফনের চেয়ে খেলাফতের সমস্যার সমাধানকে বেশী জরুরী মনে করলেন।ইসলাম সঙ্ঘবদ্ধ থাকা এবং নেতা নির্বাচন করাকে কতোটা জরুরী মনে করে আমরা এই মহান ব্যাক্তিদের ঐ সময়ে এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া থেকেই উপলব্ধি করতে পারি। যারা ইসলামে রাজনীতি হারাম বা নেই বলে মনে করেন, ইসলামী আন্দোলনকে যারা ক্ষমতা দখলের পায়তারা বলে অভিহিত করেন, তাদের ভেবে দেখা উচিত সাহাবীরা কেন রাসূল (সাঃ) এর দাফনের চাইতেও খেলাফতের উত্তরাধীকার মনোয়নকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন? ইসলামে খেলাফতের কনসেপ্ট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ! কোরআন হাদীস থেকে সেটাও তাদের জেনে নেয়া উচিত।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় তা হলো আবু বকর (রাঃ) এর পরিস্থিতি সরাসরি মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতির নাজুকতা সম্পর্কে তিনি খুব ভালো করেই জানতেন। ওমর (রাঃ) এভাবে যাওয়া ঠিক হবে কি’না সে বিষয়ে তাঁকে সতর্কও করে দিয়েছিলেন। তিনি তখন মুহাজিরদের নিয়ে আলোচনায় বসে যেতে পারতেন অথবা আবু উবায়দাকে সমস্ত মুহাজিরদেরকে একত্রিত করার নির্দেশ দিয়ে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) কে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হতে পারতেন।কিন্তু তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে পিছন দিক থেকে ষড়যন্ত্র করা কখনই ঠিক মনে করেননি। তাইতো জীবনের ঝুকি থাকা সত্ত্বেও তিনি সরাসরি আনসারদের সাথে কথা বলার পক্ষেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি মুহাজিরদেরকে সতর্ক করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগও তিনি গ্রহণ করলেন না।

চলবে....।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File