দোয়ায়ে কুনুতে নাজে’লা
লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ২১ মার্চ, ২০১৩, ০১:৫৯:৪০ দুপুর
সমস্ত বিশেষজ্ঞ একমত বাংলাদেশ এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সমস্ত দেশ যেন আজ দুইভাগে বিভক্ত। খবর গুলো যেন হলিউডের একশন মুভিগুলোকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি বাড়িতে যদি একটু জোড়ে ভলিউম দিয়ে একসাথে খবর দেখা হয়, তাহলে যে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে তা একাত্তরের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক এক ভিতিকর অবস্থায় যেন গোটা বাংলাদেশ আজ পর্যবসিত। প্রতিটি রাতেই প্রতিটি চ্যানেলেই টক শো গুলোতে চলছে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষন। উপস্থিত হচ্ছেন দেশের সেরা বুদ্ধিজিবি, রাজনীতিবিদ, অর্থনিতিবিদ,ব্যাবসায়ী, আইনজীবি সহ সুশীল সমাজের সব ধরণের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। কিন্তু কোনভাবেই যেন বের করা যাচ্ছেনা সমাধানের উপায়। আস্তে আস্তে যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সকল সমাধানের দরজাগুলো। সাধারণ জনগণ আজ অসহায় ও নিরুপায়। এ ধরণের পরিস্থিতিগুলোতে রাসূল (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদাগণ বিশেষভাবে যে দোয়া করতেন, যে দোয়াতে সাহাবী ও উম্মতের মনে স্থিরতা এনে দিতো, চিত্ত প্রশান্ত হতো, সেই স্পেশাল দোয়াকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় দোয়ায়ে কুনুতে নাজে’লা। ইনশাল্লাহ আজ আমি আপনাদের সামনে সেই দোয়া গুলোই তুলে ধরবো যা সকলের মনে এনে দেবে এক স্বর্গীয় প্রসান্তি।
উবাইদ ইবনু রিফাআ আযযুরাকী বলেন, উহুদের যুদ্ধে যখন মুশরিকরা ফিরে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াও। তারপর আল্লাহর প্রশংসা করা হলো এবং সাহাবীগন রাসূল (সাঃ) এর পিছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাড়ালেন। তখন তিনি এক আবেগময় দোয়া করলেনঃ
হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা। হে আল্লাহ! তুমি যা উন্মুক্ত কর তা কেউ বন্ধকারী নেই আর যা তুমি বন্ধ কর তার উন্মুক্তকারী নেই। আর তুমি যাকে হেদায়াত দিয়েছ তাকে কেউ পথ ভ্রষ্ট করতে পারেনা। আর তুমি যাকে পথহারা করেছো তাকে কেউ পথের দিশা দেতে পারেনা। তুমি যা বারণ রেখেছো তা কেউ দিতে পারেনা। আর তুমি যা দিয়েছো তা কেউ নিষেধ করতে পারেনা। তুমি যাকে দূরে রেখেছো তাকে কেউ নিকটবর্তী করতে পারেনা। আর তুমি যাকে নিকটে রেখেছো তাকে কেউ দূর করতে পারেনা। হে আল্লাহ! তুমি তোমার প্রচুর বরকত, রহমত, অনুগ্রহ ও রিযিক আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ! আমি তোমার স্থায়ী নেয়ামত প্রার্থনা করছি, যা কখনো শেষ বা পরিবর্তন হবেনা। হে আল্লাহ ! আমি অভাবপূর্ণ দিনগুলিতে তোমার নেয়ামত কামনা করছি এবং ভয়ের দিনে তোমার নিকট নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যা দান করেছো এবং যা দান করোনি তার মধ্যকার সকল অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ঈমানের প্রতি ভালবাসা দান করো এবং তা আমাদের অঙ্গুরে সৌন্দর্যমন্ডিত করে দাও। এবং তুমি কুফুরী, ফাসেকী ও অবাধ্যতাকে আমাদের অন্তরে ঘৃণার উদ্রেক করে দিয়ে আমাদেরকে হেদায়াত প্রাপ্তদের দলভূক্ত করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে বাঁচিয়ে রেখো এবং মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করো। এবং লাঞ্ছনা ও ফিতনায় না ফেলে সৎ ব্যাক্তিদের দলভূক্ত করো। হে আল্লাহ! তুমি কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দাও যারা তোমার রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ও তোমার পথে বাধা দান করে। আর তাদের ওপর তোমার শাস্তি ও আযাব পতিত করো। হে আল্লাহ! তুমি ঐ সকল কাফেরদেরকেও ধ্বংস করো যাদেরকে সত্য উপাস্যের পক্ষ থেকে কিতাব দেয়া হয়েছিল।
মুসনাদে আহমেদঃ ১৫৪৯২
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের পূর্বে দু’রাকাত সালাতে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেনঃ
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াতকারী ও হেদায়াতপ্রাপ্ত হিসাবে গ্রহণ করো। আমাকে পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী বানিও না। তুমি আমাকে তোমার ওলীদের সাথে সন্ধিকারী ও তোমার দুশমনদের সাথে যুদ্ধকারী করো। তোমার ভালোবাসার কারণে মানুষকে ভালোবাসি। তোমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে যারা তোমার বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের প্রতি তোমার শত্রুতার কারণে আমরা শত্রুতা পোষন করি।
তাবরানীঃ ৪৮২
আবু বুরদাহ বলেন, রাসূল (সাঃ) কোন সম্প্রদায়কে ভয় করলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেনঃ
হে আল্লাহ! আমরা তাদেরকে দমন করার জন্য তোমাকে ন্যাস্ত করলাম এবং তাদের অনিষ্ট হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। সুনান ই আবু দাউদঃ ১৫৩৭
উবাইদ ইবনু উমাইর বলেন, ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) রুকুর পর দোয়ায়ে কুনুত হিসাবে নীচের দোয়াটি পড়তেনঃ
হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করো। মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদের ক্ষমা করো। মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীদের ক্ষমা করো। তাদের মধ্যে তাদের পরস্পরের অন্তরসমূহকে একত্রিত করে দাও। তাদের পরস্পরের মাঝে মীমাংসা করে দাও। নিজের ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করো। হে আল্লাহ! আহলে কিতাবদের সেই অস্বীকারকারীদের ওপর অভিশাপ বর্ষন করো যারা তোমার পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, তোমার রাসূলগণকে অস্বীকার করে ও তোমার ঘনিষ্টদের হত্যা করে। হে আল্লাহ! তাদের কর্মসূচীর মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে দাও। তাদের সংগঠনকে ছিন্নভিন্ন করে দাও, তাদের পা গুলো কাঁপিয়ে দাও এবং তাদের বাহিনী সমূহকে পর্যদুস্ত করে দাও। তাদের অন্তরসমূহে ভিতি সঞ্চার করে দাও। হে আল্লাহ! তাদের চরমতম শত্রুর মাধ্যমে তুমি তাদের পাকড়াও করার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও। তাদেরকে তুমি আটক করো যেভাবে একজন মহাপরাক্রমশালী সর্ব শক্তিমান গ্রেফতার করে। হে আল্লাহ! মুসলিম সৈনিকদের সাহায্য করো। দূর্বলদের নাযাত দাও এবং কাফেরদের মধ্যে যারাই এদের সাথে লড়তে আসে তাদের তুমি শক্তহাতে ধরে ফেলো। এবং তাদের উপর তুমি সেই সব আযাব নাযিল করো যে আযাব তুমি অপরাধী জাতিসমূহের উপর হতে ফিরিয়ে নেওনা। হে আল্লাহ! আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রহমত নাযিল করো। সুনান ই বায়হাকীঃ ৩২৬৮
আসুন আমরা এই দোয়ায়ে কুনুতে নাজে’লা পড়তে থাকি এবং সকল কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে থাকি। নিশ্চয়ই তিনি সকল সাহায্যকারী থেকে শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। নিশ্চয়ই তিনি সকল শ্রবণকারী থেকে শ্রেষ্ঠ শ্রবণকারী। নিশ্চয়ই তিনি সকল সমাধানকারী থেকে শ্রেষ্ঠ সমাধানকারী। আসুন সকল সুসময় এবং দূসময়ে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যার্পন করি। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন