প্রসঙ্গ জামায়াত শিবিরের অভিনন্দনঃ জবাবের জবাব এবং তার পাল্টা জবাব

লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৭:৪৩ সকাল

প্রথমেই আমার যে বন্ধুরা আমার আর্টিক্যালটি পড়েছেন এবং যে বন্ধুরা আমার আর্টিক্যালটি নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন তাদের সকলকে আমি আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। যারা আগের আর্টিক্যালটি পড়েন নি তাদে্র প্রতি অনুরোধ আগের আর্টিক্যাল এবং মতামতগুলো পড়ার জন্য। আর্টিক্যালটি নিয়ে লেখা কিছু মতামত এতো লম্বা যে, সেগুলোর প্রতি মন্তব্য না করে আরেকটি আর্টিক্যাল লেখাই যুক্তি সঙ্গত বলে মনে হলো। তাই এই অবতারণা।

আমি প্রতিটি মতামত অত্যন্ত যত্নের সাথে পড়ার চেষ্টা করেছি এবং আমার মতামতের বিপক্ষের মতামতগুলো গভীরভাবে বোঝার এবং নিজের ভুল আছে কি’না সেগুলো জানারও চেষ্টা করেছি। পক্ষের মতামতগুলো থেকেও বোঝার চেষ্টা করেছি আমাদের মতামত বেশী শক্ত না বিপক্ষের মতামত?

এই চেষ্টা করতে যেয়ে আমাদের একটি সাধারণ প্রবণতা আমার কাছে প্রবল হয়ে উঠেছে। আমরা কোন মতামতকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করার ধৈর্য্য খুবই কম রাখি এবং অন্যের মতামতের উপর নিজের মতামতকে খুব দ্রুত চাপিয়ে দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা করি। এই কারণে আমাদের দেশে যিনি বিএনপিকে সমর্থন করেন তিনি আওয়ামিলীগের মধ্যকার কোন ভালো গুনই খুজে পাননা। আবার আওয়ামিলীগার বিএনপি যা করে সবই ভুল এবং খারাপ বলেই বিশ্বাস করেন।

আর এখানে জামায়াতের অবস্থা তো আরও কোনঠাসা। কোন বিদ্বান ব্যক্তি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে যদি জামায়াতের কোন একটি বিষয়কে ভালো মনে করেন এবং বলেন,তাহলেই হয়েছে! গোটা দেশ যেন তাকে রাজাকার, আল বদর বানাতে লেগে যায়। বুয়েটের একজন স্বনামধন্য শিক্ষকের ছোট্ট একটি মন্তব্য যেভাবে তাঁকে নাজেহাল করেছিল তাতেই বোঝা যায়, আমরা বিপক্ষের মতামতকে সম্মান করতে খুব কমই শিখেছি, আমরা কতোটা সভ্য! সেটাই হয়ে যায় প্রশ্নবিদ্ধ।

আজ মতামতের জবাব দিতে যেয়ে বেশ কিছুদিন আগের একটি আর্টিক্যালের কথা মনে পড়ছে। হাভার্ড বিজনেজ রিভিউ এ নিকোলাস কার একটি আর্টিক্যাল লিখেছিলেন। আর্টিক্যালটির হেডিং ছিলঃ “আইটি ডাজন্ট মেটার”। এই আর্টিক্যালটি তখন আইটি জগতে ঝড় তুলেছিল। এই আর্টিক্যালের জবাব এবং পালটা জবাবে তখন জড়িয়ে পড়েছিলেন আইটি জগতের সকল রথি মহা রথিরা। বিল গ্যাটস, ষ্টিব জবস পর্যন্ত এই আর্টিক্যালকে কেন্দ্র করে আর্টিক্যাল লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই আর্টিক্যালের জবাব গুলোর পর আবারও তার জবাব নিয়ে লিখেছিলেন নিকোলাস কার। সেই লেখা ও তার জবাব এতোই যুক্তিপূর্ণ এবং এতোটাই উচ্চমানের তথ্য সম্মৃদ্ধ যে, এখনও বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এই আর্টিক্যালগুলো পড়ানো হয় এবং গবেষণা করা হয়।

সেই মান হয়তো আমরা আনতে হয়তো পারবোনা। কিন্তু চেষ্টা তো করা যেতে পারে। আমরা সেই চেষ্টা করারও চেষ্টা কি করছি? আমরাও কি পারিনা, অন্ধ আক্রমণ না করে তথ্য নির্ভর, যুক্তি নির্ভর আলোচনা করতে। আমার এই জবাব ই শেষ কথা তা আমি মনে করিনা। বরং আমি চাই আমার এই জবাবের আরও পালটা জবাব আসুক এবং তা আসুক আমার জবাব থেকেও শক্ত জবাব। যা থেকে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার মতামত পরিবর্তন করব। আমি চাই আমার পক্ষের মতামতও আসুক আরও সুন্দর যুক্তির মাধ্যমে যা থেকে আমি আরও কিছু শিখতে পারব।

এই ধরনের জবাবের জন্য দরকার ধৈর্য্য এবং বিষয়টা গভীরভাবে উপলব্ধি করা। কিছু কিছু লম্বা জবাব আমার পোষ্টের সাথে সাথেই এসেছে। এ থেকেই আমি অনুমান করতে পারি এগুলো অনেক চিন্তা নির্ভর জবাব নয় বরং চায়ের কাপে ঝড় তোলা যুক্তির পালটা যুক্তির মতো। আমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে, বিষয়ের গভীরে যেয়ে চিন্তা করে জবাব দিতে সক্ষম হই তাহলে আশা করা যায় যে, আমাদের আর্টিক্যাল গুলো এক সময় সম্মৃদ্ধ হয়ে উঠবে। আমরা নিজেরাও এগুলো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব এবং যারা আমাদের ব্লগে ভিজিট করবেন তারাও এক দূর্নিবার আকর্ষণে আমাদের আর্টিক্যাল গুলোর জন্য অপেক্ষা করবেন।

আমার আর্টিক্যালের জবাবে একজন বন্ধু লিখেছেন, আমি মন গড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছি। অথচ কোন অংশটা মন গড়া তা বলার কোন লক্ষণ আমি দেখিনি। অন্যদিকে তিনি নিজেই শুভেচ্ছার যে ব্যাখ্যা করছেন সেই ব্যাখ্যা কোন কিতাবের রেফারেন্স থেকে তা আমার বোধগম্য নই। যখন অন্যের যুক্তিকে মনগড়া বলছেন, তখন নিজের মত যেন মনগড়া না হয়, সেদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া উচিৎ ছিল নয় কি?

অন্য এক বন্ধু ফিতনার হাদিসকে টেনে এনে তার সাথে আমার তুলনা করেছেন। অথচ উনি জানেন না আমি যুবক না বৃদ্ধ। উনি এটাও জানেন না আমি আলেম না জালেম না অন্যকিছু। তাহলে এই হাদিস টানা কেন? সেটাও আমার বোধগম্য নয়। হাদীসের নম্বর উল্ল্যেখ করেছেন কিন্তু বাংলাদেশে প্রকাশিত হাদিসের নম্বর গুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত বা সৌদি থেকে প্রকাশিত বুখারী অথবা মুসলিমের হাদিসের নম্বরগুলোর যে কোন মিল নেই সেই বিষয়ে নিশ্চয় উনি অবগত। তবে উনি যে যুক্তি দিয়েছেন সেই যুক্তি নিয়ে তাকেই চিন্তা করতে বলব।

মুসলিম বিশ্ব আজ দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধদের নেতৃত্বের জন্যই আরও দূর্বল হয়ে পড়ছে। মুসলিম বিশ্বে তরুণদের নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবী। এমন একটি সময়ে হাদীসের প্রেক্ষাপট না জেনে সব জায়গায় যেকোন হাদীসকে টেনে এনে যুক্তি দেয়াটা সঠিক নয় বলেই মনে করি। যদি একান্তই মনে করেন, তাহলে এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আসকালানী বা আরও যারা হাদীস ব্যাখ্যাকারী হিসাবে মুসলিম দুনিয়ায় সুপরিচিত তাদের ব্যাখ্যা আনা জরুরী। আপনার যুক্তির উত্তরে আরও একটি কথা বলতে চাই, তা হলো আমরা যদি এখন থেকেই তরুণদের যোগ্যতাকে খাটো করতে থাকি বা মেনে নিতে কষ্ট পাই তাহলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) যিনি মাত্র ৩৩ বছরের তরুণ হিসাবে আবির্ভূত হবেন এবং সারা বিশ্ব বিজয়ে আমাদেরকে নেতৃত্ব দিবেন তাকে মেনে নিতেও আমাদের সমস্যা হয়ে দাড়াতে পারে।

কিছু কিছু বন্ধু কোরআনের আয়াত এনে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি জানিনা সেই সব বন্ধুদের মধ্যে ইসলামের কোন ফকীহ আছেন কি’না। তবে আয়াত থেকে উপসংহার বা আইন টেনে আনা দেখে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা যে, উনারা ফকীহ নন। আমাদের সমাজে কথায় কথায় আলেম কি’না জিজ্ঞাসা করা হয়? অথচ আমি কেন ফকীহ এর পর্যায়ে গেলাম তার একটু ব্যাখ্যা দিই। এই বিষয়টি আমাদের পরিস্কার জানা থাকা দরকার।

ইসলামী পন্ডিতদেরকে তিনটি ভাগে সাধারণতঃ ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণী হলো মুফাসসীরুল কোরআন যারা কোরআনের ব্যাখ্যায় পারদর্শী। এরপরের ভাগ হলো মুহাদ্দীস, যারা হাদীসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে উস্তাদ, অবশ্য মুহাদ্দেসুনের অনেক বড় ব্যাখ্যা আছে আমি সেদিকে না যেয়ে সাধারণভাবে যে ব্যাখ্যা করা হয় সেইভাবেই উল্ল্যেখ করলাম। এবং আরেকটি পর্যায় হলো ফকীহ যারা কোরআন ও হাদীসের আলোকে সমসাময়িক সময়ের জন্য বা পরিস্থিতির জন্য আইন প্রণয়ন করেন বা আইন ই ব্যাখা দেন।

এর মধ্যে ফকীহ হলো সবচেয়ে কঠিনতম পর্যায়। অসাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ সহায়তা ছাড়া ফকীহ হওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে তুলনা মূলক সহজ হলো মুফাসসীর। এর কারণ হলো, কোরআনের আয়াত অপরিবর্তীত এবং নির্ধারিত। আল কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা আল কোরআন নিজেই অনেক ক্ষেত্রে করেছে। সেই সাথে রাসূল (সাঃ) এর হাদীস, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেঈনদের কমেন্টস পাওয়া যায় কোরআনের ব্যাখ্যার জন্য। অন্যদিকে হাদীস সহীহ কি’না এটার জন্যই বিশাল গবেষণার প্রয়োজন হয় তাই মুফাসসীর থেকে মুহাদ্দীস হওয়া অনেক কঠিন। সেই সাথে মুহাদ্দীস হওয়ার জন্য মুফাসসীর হওয়াও অপরিহার্য। কারণ হাদীস সহীহ প্রমাণের জন্য কোরআনের জ্ঞানটি অপরিহার্য হয়ে যায়। অন্যদিকে ফকীহ হতে হলে শুধুমাত্র কোরআন এবং হাদীসই নয় সেই সাথে ইসলামের ইতিহাস, পরিবর্তীত যুগের ইতিহাস, বর্তমান প্রেক্ষাপটসহ তথ্যের চুল চেরা বিশ্লেষন ও উপস্থাপনের অসাধারণ যোগ্যতা থাকতে হয়। এই বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়েই প্রসঙ্গ শেষ করব।

উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইমামদের একজন ইমাম মালিকের কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য তৎকালীন মুসলিম খলিফা হারুনুর রশীদ আবেদন করলে ইমাম মালিক পরের দিন তাকে সময় দিতে সম্মত হন। পরদিন খলিফা মদীনা সফরকালীন সময়ের যে দরবার, সেখানে অপেক্ষা করেন কিন্তু ইমামের আসার কোন খবর নেই। তিনি লোক পাঠালে ইমাম তাকে বলেন, শিক্ষা এসে নেয়ার জিনিষ, যেয়ে দেয়ার জিনিষ নয়। খলিফা ইমামের জবাব শুনে লজ্জিত হয়ে ছুটে যান ইমামের দরবারে। দরবারের মধ্যে একটু উচু এবং ইমামের খুব নিকটে তিনি বসে পড়েন। ইমাম বিষয়টি দেখতে পেয়ে একটু হাসি দিয়ে বলেন, আমিরুল মু’মিনুন শিক্ষার জন্য বিনয়ের খুব প্রয়োজন। খলিফা আবারও লজ্জিত হয়ে উচু স্থান থেকে নেমে ছাত্রদের সাথে এক কাতারে সামিল হন। এই ধরণের পরিবেশ যে ইমামের শিক্ষা কেন্দ্রে, সেই শিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্ররাই একদিন অবাক হয়ে দেখলেন একজন ব্যাক্তি তাদের শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার জন্য আসলে তাদের ইমাম তার জন্য নিজের চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন। অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তার সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন এবং কন্ঠস্বর যথা সম্ভব নিচু রাখছেন। ব্যাক্তিটি চলে গেলে ছাত্ররা বিষ্ময়ের সাথে ইমামের দিকে তাকালে তিনি মৃদু হেসে বললেন, উনি এমন একজন ব্যাক্তি যিনি তোমাদের এই বাশের খুটি গুলো যদি সোনার তৈরী বলেন এবং যুক্তি দেন তাহলে তোমরা এটা যে সোনার না তা প্রমাণ করতে অক্ষম হবে। উনি হলেন ইরাকের আবু হানিফা। একইভাবে ইমাম মালিক তার এক ছাত্র ইমাম শফি’কে মাত্র ২০ বছর বয়সেই ফতোয়া দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন তার অসাধারণ যুক্তি ও তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণের অসাধারণ যোগ্যতা দেখে। এরাই হলেন ফকীহ। এরাই হলেন আমাদের ইমাম। মুসলিম বিশ্ব কোরআন হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যার জন্য এখনও এই সকল মহান মনিষীদের মতামতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তাই আমি সবিনয়ে অনুরোধ করব, যারা কোরআন হাদীসের প্রমান সামনে এনে যুক্তি দিতে চান, তাদের অবশ্যই কোরআন ও হাদীসের ঐ নির্দিষ্ট অংশের ব্যাখ্যায় আমাদের ক্লাসিক স্কলারগণ কি ব্যাখ্যা করেছেন তা সামনে আনতে হবে। তা না হলে আপনাদের যুক্তি খোড়া বা কানা যুক্তি হয়ে যাবে। সেই যুক্তির প্রমাণ হিসাবে কোরআন এবং হাদীসের উদাহরণ টেনে আনা সত্যিই কষ্টদায়ক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, একজন বন্ধু কোরআনের একটি আয়াত কে রেফারেন্স এনেছেন যেখানে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, “তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না।“ অথচ রাসূল (সাঃ) ইহুদীদের সাথে চুক্তি করেছেন, তাদের বিভিন্ন বিচার আচারে অংশগ্রহণ করতেন, তাদের দাওয়াত কবুল করতেন। এমন একটি দাওয়াতের খাবার থেকেই তাঁকে বিষ মাখানো খাবার খাওয়ানো হয় এবং রাসূল (সাঃ) এর উপর এই বিষের মারাত্বক প্রতিক্রিয়াও হয়েছিল। খৃষ্টানদের একটি প্রতিনিধি দল তাদের মধ্যকার বিচার শালিসের জন্য রাসূল (সাঃ) এর কাছে প্রতিনিধি চাইলে রাসূল (সাঃ) আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) কে পাঠিয়েছিলেন। এই কাজগুলোকে আপনি কিভাবে বিবেচনা করবেন? তাহলে রাসূল (সাঃ) এই আয়াতকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং কিভাবে পালন করেছেন সেটাই আমাদের দেখতে হবে। সেভাবেই এই আয়াতের ব্যাখ্যা নিতে হবে। আমরা আমাদের মতো ব্যাখ্যা নিতে গেলেই আমাদের গোমরাহীর সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যাবে।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। আমার একজন বন্ধু নিজেকে জামায়াতের নয় বরং ইসলামের গোড়া সমর্থক বলেছেন। এখন গোড়া বলতে সাধারণতঃ অন্ধত্ব কে বোঝানো হয়। উনি যদি সেই অন্ধ সমর্থক হন তাহলে তো কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু ইসলাম কে যদি জেনে বুঝে মানেন তাহলে ভিন্ন কথা। যাই হোক অনেকে মনে করছেন জামায়াত অন্য ধর্মালম্বিদের ধর্মীয় উৎসবের জন্য যে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন তা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম পরিপন্থী। যদি বিষয়টা সত্যিই হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলবো এক্ষেত্রে তার জামায়াতের সমালোচনার চেয়ে আমাদের দেশের আলেম সমাজকেই প্রথম সমালোচনা করা উচিৎ। কারণ জামায়াত এমন একটি দল যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে দাবী করে। তারা যদি ইসলাম পরিপন্থী কাজ করে তাহলে আলেম সমাজের এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু কোন আলেমকেই এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

আমরা একথাটি খুব ভালো করেই জানি আমাদের সমাজে আলেমদের একটি বড় দল জামায়াতকে অপছন্দ করেন। আপনি কি মনে করেন, তারা জামায়াতের এতো বড় একটা ইসলাম পরিপন্থী কাজকে জামায়াতের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করতো না? এমনকি আওয়ামিলীগ এবং বিএনপিও জামায়াতের কোন ইসলাম পরিপন্থী কাজ পেলে জামায়াতকে ধুয়ে ছেড়ে দিত। আর মিডিয়ার কথা না হয়, না বললাম। এখন আপনি যদি একজন আলেম হন তাহলে আপনার উচিৎ আলেম সম্প্রদায়ের সকলকে নিয়ে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করা আর যদি আলেম না হন, তাহলে আলেমরা যে বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেনা সে বিষয়ে আপনার মতামতকে পরিহার করা।

এবার আসা যাক দ্বীতিয় বিষয়ে। আমি নিজেও আমার আর্টিক্যাল এ জামায়াতের সমালোচনা করেছি। জামায়াতের প্রতি অন্ধভক্ত হওয়ার কথা অন্তত আমার এই আর্টিক্যাল থেকে কারও চিন্তা করার কথা নয়। জামায়াতের কোন একটি কাজকে সমর্থন করলেই রাজাকার, আল বদর ও জামায়াতের অন্ধভক্ত বলে চিৎকার দেয়ার যে প্রবণতা আছে সেই প্রবণতা থেকে বললে ভিন্ন কথা। আমি জামায়াতের অন্যান্ন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানানোকে স্বাগত জানিয়েছি এবং সমর্থন করেছি। এর কারণ হিসাবে বলেছি, ইসলাম যেহেতু সকলের জন্য রহমত বয়ে আনবে এই বিষয়টি বিধর্মীদের মনেও বদ্ধমূল করে দেয়ার অবশ্যই কোন পথ আমাদের বের করতে হবে। মুসলমানগণ যখন সিরিয়ার বিভিন্ন শহর দখল করেছিলেন এবং প্রয়োজনের তাগিদে যখন সেই শহরগুলো ত্যাগ করেছিলেন তখন অন্যান্ন ধর্মালম্বীরা মুসলিমদেরকে বলেছিল আমরা তোমাদেরকে স্বাগত জানাব। কারণ প্রমাণ হয়েছে তোমরাই আমাদের জন্য কল্যাণকর। খালিদ বিন ওয়ালিদ বিভিন্ন শহরকে চুক্তির মাধ্যমে পদানত করতে পেরেছিলেন তার কারণ বিধর্মীদের কাছে মুসলমানগণ অসাধারণ ন্যায়পরায় ছিলেন, এই কথাটি সকলের কানে কানে পৌছে গিয়েছিল। ইসলামের বিজয়ের জন্য এই আস্থা অর্জনটা অপরিহার্য।

রাসূল (সাঃ) এই নীতিই অবলম্বন করেছেন। এই বিষয়ে কোন একজন সাহাবীর একটি নেতিবাচক কথায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন, মনে রেখ তোমরা সবাই এক সময় কাফের ছিলে। আজ যদি আমরা জোড় দিয়ে বলি, আমরা কখনও কাফের ছিলাম না। তাহলেও আমি বলবো, আমাদের ধর্মের শ্রেষ্টতম মানুষগুলো প্রথমে কাফের ছিলেন। আমরা নিশ্চয় তাদের চেয়ে বড় নই। সুতরাং বিধর্মীদের কাছে ইসলামের সঠিক ধারণা পৌছানোর অবশ্যই আমাদের কোন মাধ্যম বের করতে হবে। যদি বের করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিধর্মীরা আমাদের সম্পর্কে যে ভুল ধারনা করবেন তা অপসারণ করতে না পারার জন্য আল্লাহর কাছে মুসলিম হিসাবে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হবে।

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সমাজের সংখ্যালঘুরা এখনও কোন ইসলামী দল বা গ্রুপকে তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করেনা। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এটাই চলতে দিতে থাকবো না’কি ইসলাম সম্পর্কে তাদের এই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে চাইব। যদি ভাঙ্গতে চাই তাহলে কি বাস্তব পদক্ষেপ আমাদের ইসলামী দলগুলো নিয়েছে বা নিতে পেরেছে। আলেম সমাজ ই বা কি ভুমিকা রাখছে। তাদের কাছে পৌছানোর জন্য জামায়াত এই প্রথম একটি বাস্তব সম্মত পন্থা গ্রহণ করেছে। এগুলোকে কেউ কেউ ভোটের রাজনীতি বলছেন। ইসলামকে শক্তিশালী করার জন্য অমুসলিমদের মন জয় করার জন্য বায়তুল মালের একটি অংশ রাসূল (সাঃ) ব্যবহার করতেন। তাহলে সেই ব্যয়কে আপনি কিভাবে ব্যাখা করবেন। এই বিষয়গুলো বোঝার জন্য ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য রাসূল (সাঃ) কি কি নীতি অবলম্বন করেছিলেন সেই সম্পর্কে আমাদের সাম্যক ধারণা রাখা খুবই জরুরী।

কি পরিস্থিতিতে রাসূল (সাঃ) ইহুদের সাথে চুক্তি করেছিলেন? কেন তিনি মুশরিকদের অধিকাংশ দাবী মেনে নিয়ে হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছিলেন? কেন তিনি এক বছরের সমস্ত খেজুর দিয়ে বিপক্ষ একটি শক্তিকে পক্ষে আনার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন? কোন পরিস্থিতে একজন সাহাবাকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন? সম্মুখ যুদ্ধ ছাড়া হত্যা না করার নীতিতে অটল থাকলেও কেন তিনি গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে একজন ইহুদী নেতাকে হত্যা করেছিলেন? কেন আলী (রাঃ), যুবায়ের (রাঃ) এর মতো মহান সাহাবারা একজন মহিলাকে প্রয়োজনে কাপড় খুলে সার্চ করার হুমকি দিয়েছিলেন? এই বিষয়গুলোর গভীরতা অনেকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব হতে নাও পারে। এজন্যও এ বিষয়গুলো নীতি নির্ধারক বা আলেমদের উচ্চ শ্রেণীর উপর ছেড়ে দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ না?

সর্বশেষ আরেকটি বিষয়ের উপর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। যারা আমেরিকা প্রবাসী তারা জানেন ১/১১ এর ঘটনার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন মুসলমানদের রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা দিয়েছিলেন, সেই শুভেচ্ছা মুসলিম সম্প্রদায়কে কতোটা প্রশান্তি দিয়েছিল। আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশ যেখানে মুসলিমগণ সংখ্যালঘু সেই সব দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ, সরকারী দল বা বিরোধী দল থেকে যখন মুসলমানদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হয়, তখন সেই শুভেচ্ছার অর্থ কি আমরা এটা মনে করি যে, তারা মুসলমান হয়ে গেছেন? যদি তাদের এই শুভেচ্ছাকে আমরা স্বাগত জানাই, তাহলে মুসলিম প্রধান দেশে যারা সংখ্যালঘু আছেন তাদের স্বাগত জানাতে সমস্যা কোথায়? বিশেষ করে জামায়াত যে শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছে তার মধ্যে শিরক কোথায় আছে দয়া করে আমাকে দেখিয়ে দিন। তাদের সেই শুভেচ্ছাবাণী আমি হুবহু তুলে ধরলামঃ

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমি আমাদের দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

নিজ নিজ ধর্মকর্ম স্বাধীনভাবে পালন করা দেশের সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা সকলের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের জনগণ আবহমানকাল থেকে সকলেই নিজ নিজ ধর্ম কর্ম নিয়ে সুখ-শান্তিতে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশে সম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে সকলেই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

হিন্দু সম্প্রদায় যাতে আসন্ন দুর্গাপূজা শান্তি-শৃক্সখলা ও পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা ইতিপূর্বে বিবৃতি দিয়েছি।”

এই শুভেচ্ছার মধ্যে যারা শিরক খুজে বের করছেন, তাদের বলতে চাই যারা অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন, সেই নাগরিকত্বের মধ্যে এর চেয়েও বেশী শিরক লুকিয়ে আছে। সেই শিরক গুলো নিয়ে চিন্তা করুন। বর্তমান বিশ্বে ইসলামী খেলাফত না থাকায় অনেক ইসলামী আইন ই সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব নয়। অথচ যারা এগুলো নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামান তারা কি একবারও নিজেদের দিকে তাকান? যারা সুদ নিয়ে কারবার করেন, সুদ ব্যাংকে লেনদেন করেন তারাই ইসলামী ব্যাংক সম্পূর্ণ সুদমুক্ত কি’না তা নিয়ে তর্কের তুফান তুলেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের এমডি আফজাল যে কি’না সরকারী কর্মচারী হিসাবে সোনালী ব্যাংক থেকে বেতন তুলেন, সেই আফজাল বলেন, ইসলামী ব্যাংক এ একাউন্ট খোলা হারাম। পরবর্তীতে দেখা গেল ইসলামী ব্যাংকে তিনি নিজেই বহু আগে একাউন্ট খুলে বসে আছেন। যে হিযবুত তাহেরী গণতন্ত্র হারাম বলে গলা ফাটায় তাদেরই দেখা যায় গণতন্ত্রের এজেন্ট বলে পরিচিত ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়ার ভিসা নেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশী দৌড়াইতে। যারা শুভেচ্ছার মধ্যে শিরক খুজে বেড়াচ্ছেন দেখা যাবে অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকার সিটিজেন নেয়ার দৌড়ে তারাই সবার অগ্রগামী।

আর এগুলো নিয়ে যদি কথায় কথায় ফতোয়া দেয়া শুরু করি তাহলে দেখা যাবে ৯৯% মুসলিম ই এখন কোন না কোনভাবে ইসলাম পরিপন্থি কাজ করছেন। আর এই ফতোয়াগুলি মুসলিমদেরকেই অমুসলিম করে ফেলবে। কোন অমুসলিমকে মুসলিম বানাবেনা। ফতোয়া দেয়ার আগে আমাদের এই বিষয়গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।

এভাবে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে আমরা ইসলামের যে তাত্বিক বিতর্ক চালাচ্ছি তার মধ্য দিয়ে আর যাই হোক ইসলামের কোন সুফল বয়ে আনতে পারছিনা। তাই আসুন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করি এবং সেইগুলো বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করি। বাস্তব পদক্ষেপ যারা নেয়, সেই পদক্ষেপ গুলোকে স্বাগত জানাই। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348888
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৫৮
ফারদিন ইসলাম লিখেছেন : সহমত ।
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২০
289652
আস্তিক ব্লগার লিখেছেন : ধন্যবাদ।
348903
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৭
আয়নাশাহ লিখেছেন : সুন্দর উপস্থাপনা। ধন্যবাদ।
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২০
289653
আস্তিক ব্লগার লিখেছেন : ধন্যবাদ। উৎসাহ দেয়ার জন্য মোবারকবাদ।
348907
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

গভীর মনযোগ দিয়ে পড়লাম, যথার্থ বলেছেন, খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, সহমত

শুধু আচরণেরই নয়, চিন্তার উগ্রতাও আমাদের এক বিরাট সমস্যা!!
যাঁরা চিন্তার উগ্রতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের মাঝে "আলিম, মুহাদ্দিস, ফকীহ" পরিচয়ের মানুষও আছেন! তবে তাঁরা নিজেরা সরাসরি কম বলেন, শিষ্যরাই(আলিম নন) বেশী ততপর ও উগ্র!!
০৯ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৫৩
289689
আস্তিক ব্লগার লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া জান্নাতু। ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মতামতের জন্য।
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১৩
289710
আবু সাইফ লিখেছেন : সালামের জবাবে "বারাকাতুহ" এর পরে আর কোন বৃদ্ধি বৈধ নয়!

তবে পৃথক বাক্যে যত খুশী দোয়া করা যায়- কোন নিষেধ নেই!!
১১ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
289952
আস্তিক ব্লগার লিখেছেন : একটি হাদীস আমার জানা যার বিষয় হচ্ছে এমন, তোমরা সালামের জবাব উত্তমরূপে দাও। না পারলে অন্তত যেমন সালাম দেয়া হয়েছে তেমন উত্তর দাও।

এই হাদীস থেকে বড় উত্তর দেয়া যায় বলেই আমি মনে করি। অন্য কোন হাদীস থাকলে জানালে খুশী হব।
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০১
289954
আবু সাইফ লিখেছেন : "তোমরা সালামের জবাব উত্তমরূপে দাও। না পারলে অন্তত যেমন সালাম দেয়া হয়েছে তেমন উত্তর দাও।" এটি আলকুরআনের আয়াত (৪সূরা আননিসা আয়াত৮৬), হাদীস নয়


তিনজন ফেরেস্তার আগমন দিয়ে যে হাদীসে সালামের নিয়ম শেখানো হয়েছে সেখানেই বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে-
যখন ১ম ফেরেস্তা আঃ বললেন-
আসসালামু আলাইকুম
রসূলুল্লাহﷺ জবাব দিলেন-
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ

যখন ২য় ফেরেস্তা আঃ বললেন-
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
রসূলুল্লাহﷺ জবাব দিলেন-
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

যখন ৩য় ফেরেস্তা আঃ বললেন-
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
রসূলুল্লাহﷺ জবাব দিলেন-
ওয়া আলাইকুম

যদি আরো বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকতো তবে তিনি অবশ্যই তা করতেন!

অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে-
"(সালামে)তিনের পরে আর কোন বৃদ্ধি নেই"
সেটি কার [রসূলুল্লাহﷺ নাকি রাবী] কথা স্মরণ করতে পারছিনা
349121
০৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন বিশ্লেষন আমার পক্ষে সম্ভবতো নয়ই বরং আর্টিক্যালটি বুঝতেও ঘাম বেরোবার উপক্রম, তাই সিম্পলি বলব 'সহমত রইল'৷ ধন্যবাদ৷
349360
১১ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
আস্তিক ব্লগার লিখেছেন : কষ্ট করে পড়া এবং বোঝার জন্য ধন্যবাদ।
349996
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৪৭
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
350496
২০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:৫২
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আপনি লিখার ভূমিকাংশের কোন এক জায়গায় বললেন, 'আমরাও কি পারিনা, অন্ধ আক্রমণ না করে তথ্য নির্ভর, যুক্তি নির্ভর আলোচনা করতে। -- -- --- যা থেকে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার মতামত পরিবর্তন করব। আমি চাই আমার পক্ষের মতামতও আসুক আরও সুন্দর যুক্তির মাধ্যমে যা থেকে আমি আরও কিছু শিখতে পারব।

যা সত্যিই উত্তম একটা চাওয়া।

তারপর আপনি মুফাসসীরুল কোরআন, মুহাদ্দীস, ফকীহ প্রসংগ এনে যা বললেন - তার মানে একজন পাঠকের কাছে এমনটাই প্রতিভাত হবে যে - যদি তিনি আপনার সাথে দ্বিমত করে কোন 'ফ্যাক্টস বা তথ্য দিতে চান (যা স্বভাবতঃ কোরান কিংবা হাদীস ই হবে) তবে ওনাকে নিজে উপরোক্ত কোন ক্যাটাগরীর হতে হবে।

তারপর আপনি অসংখ্য বিষয়ের অবতারনা করেছেন - কিন্তু আমি কোন একটি বিষয়কে ও ঠিক ঠিক পাইনি - যা দিয়ে আপনি জাস্টিফাই করছেন, প্রমান করছেন যে - ''শারদীয় পুজা (দেবী দূর্গা কে উপাশনা) উপলক্ষে মুশরিকদেরকে শুভেচ্ছা জানানো মুসলমানের জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোন হতে জায়েজ, বৈধ।

আমি নিঃসন্দেহে আপনার সাথে এটা সহমত পোষন করছি ও স্বীকার করছি যে, 'বুশ, ওবামা কিংবা অমন কেউ মুসলিমদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালে মুসলিম মাত্ররই ভাল লাগে। এবং সেই যুক্তিতে মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বিকে তাদের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানালে তা ভীন ধর্মাবলম্বিদের ও ভাল লাগবে।

কিন্তু এ যুক্তির আলোকে আমি এ্যাক্ট করলে তা তো মোহাম্মদ সঃ এর ফলোয়ার হিসাবে যথার্থ হবে না, বরং বুশ কিংবা ওবামার ফলোয়ার হিসাবে যথার্থ হবে। তবে এ যুক্তি ইসলামে আসলো কোথা থেকে?

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ প্রদত্ত বিবৃতিতে 'শিরক' আছে কিংবা তিনি শিরক করেছেন - এমন মতামত আমার চোখে সরাসরি পড়েনি।

আমার মনে হয়েছে - মানুষ যেটা বলতে চেয়েছে - জামায়াতের বিবৃতিটি ইটসেলফ 'ইসলাম' এর যে মূল শিক্ষা ও ডিউটি তথা নিজে 'শিরক' মুক্ত থাকা এবং অন্যকে 'শিরক' এর ভয়াবহতা হতে বের করে আনার প্রচেষ্টা চালানো - এর সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে।

মানুষ যেহেতু জামায়াতকে মুসলিম একটি সংগঠন মনে করে সেহেতু বিবৃতিটি মুসলমানের রাডার বেশী বেজেছে। তারা বলতে চেয়েছে শিরক এ লিপ্ত হিন্দু মতাবলম্বিদেরকে সচেতন তো করবেই না - বরং তাদের শিরক সমৃদ্ধ মতবাদটিকে ধর্মের মর্যাদা দেবে, তারা শিরক সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে না। অনুরূপভাবে দূর্বল ঈমানের মুসলিম ভাই বোনরা হিন্দুদের পূজা মন্ডপে পূজা করা, পূজার প্রাসাদ গ্রহন করা, পূজায় যোগ দেওয়া ইত্যাদিকে ফান হিসাবে গ্রহন করতে উদ্ভুদ্ধ হবে যেহেতু জামায়াত তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে - এমন ই ইংগিত করেছে।

কিন্তু বিবৃতিটিকে নিছক রাজনৈতিক - ধর্মীয় নয় - এটা যদি জামায়াতে ইসলামী তার বিবৃতিতে বলতো - তবে হয়তো এটা নিয়ে সমালোচনা অনেক কম হত। এটা আমার মনে হয়েছে।

আর আপনি যদি জামায়াতের কাজটিকে ইসলাম দিয়ে বৈধতা না দিতে যেতেন - তবে হয়তো অনেকের বিপক্ষে কথা বলতে হত না।

সব শেষে আমি দুঃখ পেয়েছি আপনার ঐ সব অভিযোগে যেমন পাসপোর্ট নেওয়া, সুদি ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি এনে - ইসলামের ফ্যাক্টসচুয়াল বিষয়ের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা দেখে। এটা তো দিনের আলোর মতই পরিষ্কার আমাদের মধ্যস্থিত ৯৯% এর ও বেশী ইসলাম হতে অনেক দুরে সরে গেছি। এর মধ্যেও সত্য কথা জানলে ও বুঝলে ১ কিংবা ২ জন সংশোধন হতে পারে, নিজের ভুল এর একটি দুটি শোধরাতে পারে। কিন্তু আপনি ওনাদেরকে আক্রমন করে কি এটা বলতে চাইছেন - যেহেতু ওনারা ভুলের দিকে দৌড়াচ্ছে - সেহেতু জামায়াতের কোন ভুল থাকলে কিংবা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ওনাদের অসাধুতা?

যাই হোক আমি ব্যাক্তিগতভাবে আপনার লিখা পড়ে উপকৃত হয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ।

ভাল থাকবেন সব সময়।
353134
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:১২
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমার মতো কিছু না জানা মানুষের কাছে সত্যি ভালো লেগেছে। প্রতিটি কথাই খুব সুন্দর যুক্তিযুক্ত!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File