বাংলাদেশী দালালের আজ বড় প্রয়োজন

লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০১:৫৩:২৪ দুপুর

আজ আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের জাতিকে কোথায় নিয়ে চলেছেন? সেটা নিয়ে শুধু সাধারণ জনগণই নয়, দেশের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীও সন্দেহে নিপতিত হয়েছে। একদিকে যেমন বিরোধী দলকে পাকিস্থানের দালাল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী দলকে ভারতীয় দালাল বলে গলা ফাটানো হচ্ছে। আরেকটি দলকে তো সরাসরি একথায় বলা হচ্ছে যে, তারা না’কি বাংলাদেশকেই স্বীকার করেনা। যেখানে ভারতীয় দালাল আর পাকিস্তানি দালালে দেশ ভরে যাচ্ছে, সেখানে সারা বিশ্ব খুজে একটিও বাংলাদেশী দালাল খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এটা কি আমাদের দেশের জন্য দূর্ভাগ্যজনক বিষয় নয়? যেখানে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল গুলো তোমাকেই খুজছে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলার আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা গায়ক,গায়িকা, নায়ক,নায়িকা, নর্তক,নর্তকী আর খেলোয়াড় খুজে বের করছে। আজ তারাও কি অনুভব করছেনা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে বেশী জরুরী হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের দালাল খুজে বের করা! আজ জাতির নেতৃত্বের জন্য পাকিস্তানী বা ভারতীয় নয় বাংলাদেশী দালালের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

তবে নতুন এই উদ্যোগের আগেই এই অভিযোগগুলো একটু তলিয়ে দেখা দরকার। প্রথমেই যাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের বিষয়টিই একটু খতিয়ে দেখা যাক। ঐ দলটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তারা না’কি বাংলাদেশকেই স্বীকার করেনা। এমন অভিযোগে অভিযুক্ত একটি দল কিভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিবন্ধিত দল হিসাবে বহাল তবিয়তে পরিচালিত হয় সেটাই এক বিষ্ময় বটে! তাহলে কি নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে, তাদের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে দেশ বিরোধি একটি দলকে নিবন্ধন করিয়েছে? যদি সেটাই হয় তাহলে তো ঐ দলটির চেয়েও বেশী প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমাদের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে এমন একটি কাজ তারা বৈধভাবে করেছে কি’না সেটাই তখন প্রথম প্রশ্ন হয়ে উঠা উচিত। যদি তারা আইনসিদ্ধভাবেই এই কাজ করে থাকে, তাহলে এই অধ্যায়টি চলে যায় আদালতের উপর। কারণ আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রদ্রোহীদের কঠোরতম শাস্তির বিধান রয়েছে। আর এই বিষয়টি তো রাষ্ট্রদ্রোহীতারই সামিল। এমন একটি গুরুতর অভিযোগের সমাধান যদি আমাদের মাননীয় আদালত দিতে সক্ষম না হয় তাহলে তো আদালতও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়!

এমন একটি অবস্থা একটি স্বাধীন দেশের জন্য কাম্য হতে পারেনা। একটি স্বাধীন দেশের স্তম্ভগুলোই হলো তার সংবিধান, আদালত, নির্বাচন কমিশন, দূর্নিতি দমন কমিশন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীর ন্যায় জাতীয় প্রতিষ্ঠন গুলো। এই প্রতিষ্ঠান গুলোকে সকল প্রশ্নের উর্ধে রাখা আমাদের জন্য একটি পবিত্র দায়িত্ব।এই প্রতিষ্ঠান বা সংবিধান যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তাহলে জাতীর অস্তিত্ব হুমকীর মুখে পড়ে যায়। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আমাদের এই সংবিধান বা জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করব না’কি যারা এই অভিযোগগুলো করছে তাদেরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করব?

একইভাবে প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। এটিও তো একটি মারাত্বক অভিযোগ।এমন একটি অভিযোগকেও তো আমরা হেলায় উড়িয়ে দিতে পারিনা। এমন একটি অভিযোগ যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে তো তিনি রাজনীতি করার যোগ্যতায় হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হবেন। এমন একটি মহা সুযোগ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন গ্রহণ করলেন না সেটিও তো একটি বিষ্ময় ! তাহলে এখানেও কি অভিযুক্ত নয় বরং অভিযোগকারীই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে? যদি তাই হয় তাহলে এমন জাতীয় স্বার্থের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরবে তাদের বিরুদ্ধে কি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে এই বিষয়গুলোকে খেল তামাশায় পরিনত করা হতে রক্ষা করাও আমাদের পবিত্র দায়িত্ব নয়?

আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তারা না’কি ভারতীয় দালাল। যদি সেটাই সত্য হয় তাহলে বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় ছিল কেন তারা সে সময় এই বিষয় নিয়ে আদালতে যায়নি? কেন তারা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে তদন্ত করে দেশবিরোধী কার্যক্রমগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরেনি ? শোনা যায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। তারা কেন এই পত্রিকা গুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করে সত্যটি মানুষের সামনে তুলে ধরিনি? কেন তারা দেশদ্রোহী ঐসব পত্রিকাগুলোকে নিষিদ্ধ করিনি?

তাহলে কি আমাদের ধরে নিতে হবে দূর্নীতিতে যেমন প্রধান দুই দল সব সময় একটা সমঝোতা করে চলে বলে বাজার একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। দেশদ্রোহীতার ব্যাপারেও কি তারা একই রকম আপোষ করে চলছে? যদি সেটাই সত্যি হয় তাহলে আমাদের জাতির জন্য সেটা সত্যিই দূর্ভাগ্য বয়ে আনবে। এভাবে চলতে থাকলে জাতি এক সময় এই উভয় দলকে পরিত্যাগ করে তৃতীয় কোন দলকে নেতৃত্বের জন্য বেছে নেবে। এ ব্যাপারে এখনই প্রধান দুই দলের ভেবে দেখা উচিত।

ইতিমধ্যেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিভাবান ছাত্র নেতা এখন বিলুপ্ত প্রজাতীর ন্যায় বিলুপ্তির পথে। একারণেই যখন শাহাবাগের তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিবিদদের বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল তখন এই আন্দোলন এই দেশের তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু যখনই তারা তাদের এই নীতি থেকে সরে দাড়িয়েছে তখনই এটা বাম, রাম আর আওয়ামী লীগের নোংরা রাজনীতি হিসাবেই রূপান্তরিত হয়ে সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। বিরোধী দল এই আন্দোলনকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছে। প্রথমদিকে অধিকাংশ টিভি চ্যানেল ও বুদ্ধিজীবিগণ এটির পক্ষে এমনভাবে কথা বলেছেন যে, যারা এটি পছন্দ করছেন না তারা পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহী বা দেশদ্রোহী হবার ভয়ে মুখ খুলেননি । এমনকি প্রচারণা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে, বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন বলে অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন। তবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আবারও আপসহীন নেতৃত্বের জন্য বিএনপি এমন একটি ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে জাতিকে আবারও এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

এটি যে একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ভারতের বহুল প্রচলিত পত্রিকা “ইন্ডিয়ান টাইমস এর প্রতিবেদন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এই আন্দোলনের পিছনে ভারতের হাত রয়েছে এবং রয়েছে শক্ত সমর্থন।” আজ ঐতিহাসিকভাবে একথা প্রমাণিত যে, বাংলাদেশের বাম ও নাস্তিকরা ধর্মপ্রাণ আপামর বাংলাদেশী জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যক্ত হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার হীন প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত রেখেছে। আমাদের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে এই বামপন্থীরা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চারপাশে ঘিরে ছিল বলেই তিনি ইসলামপন্থী কোন দল বা দেশকে এই মহান আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হননি। যদিও শুধুমাত্র জামায়াত ই ইসলামীকেই দায়ী করা হয় তারপরও ঐতিহাসিক সত্য হলো এই যে, সে সময়ের কোন ইসলামী দলকেই এই স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলাদেশের পক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মূলতঃ এই বামপন্থী কুচক্রী মহলের অপতৎপরতার জন্যই স্বয়ং শেখ মুজিবর রহমান এই মহান আন্দোলনে ইসলামপন্থী দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যার্থ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে জাতির সংস্কৃতির সাথে ইসলামকে প্রতিপক্ষ করার একটা অপচেষ্টা এই অপশক্তিই চালিয়ে আসছে।

সর্বশেষ শাহবাগের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই জাতিকে আবারও বিভক্ত করে ফেলতে তারা প্রায় সক্ষম হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আপোষহীন ও দৃঢ় চেতা নেত্রী বলে পরিচিত দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জাতির উদ্দ্যেশ্যে দেয়া আপোষহীন বক্তব্য তাদের স্বপ্নকে যখন ধুলিষ্যাত করে দিয়েছে তখন তারা সেই দেশনেত্রীকে হত্যার হুমকী দিতেও দ্বীধা করিনি। একইভাবে দেশের সমস্ত মিডিয়া যখন একই সুরে সুর মিলিয়ে শাহবাগকে দ্বীতিয় মুক্তিযুদ্ধ বলে ঘোষনা দিতেও দ্বীধা করিনি। তখন একমাত্র ব্যাতিক্রম আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানের ব্যাতিক্রমী অবস্থান এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল বলে এই অপশক্তি আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানকে প্রকাশ্যে হুমকী দিতেও পিছপা হয়নি।

দেশনেত্রীর বক্তব্যের পরপরই যেন বাংলাদেশের মিডিয়াতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। যে শাহবাগের বিরুদ্ধে কোন কথা বা রিপোর্ট করতে যেখানে এইসব চ্যানেলদের ছিল ঘোর আপত্তি। আজ সেই মিডিয়াগুলোও মুখর হয়েছে শাহবাগের সমালোচনায়। টকশোতেও দেখা যাচ্ছে আলোচকদের হঠাত শাহবাগের সমালোচনায় মুখর হতে। আজ সকলের মুখেই যেন এক কথা, বিচারকে প্রভাবিত করে ফাঁসীর রায় নিশ্চিত করার জন্যই মঞ্চস্থ করা হয়েছিল এই শাহবাগের নাটক।

তবে এটিকে নাটক বলতে আমার রয়েছে ঘোর আপত্তি। কারণ বাংলাদেশের নাটকে সাধারণতঃ ক্রেণ ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয় না। একটি ছোট্ট ঘটনাকে অনেক বড় করে এবং আকর্ষনীয় করে দেখানোর জন্য একসাথে একাধিক ক্যামেরা ও ক্রেন ব্যাবহার করা হয় বড় বাজেটের ছবিগুলোতে। আজ শাহবাগেও ব্যাবহার করা হয়েছে ক্রেণ ক্যামেরা। এতো বেশী ক্যামেরার ব্যাবহার করা হয়েছে যে, একটি বড় বাজেটের ছবিতেও এতো ক্যামেরা ব্যাবহার করা সম্ভব হয়না। তাই আমি বলবো এটি সাজানো নাটক নয় এটি একটি সাজানো সিনেমা। যার পিছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সমর্থন যুগিয়েছে দেশী ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল। যারা বাংলাদেশকে পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের ন্যায় একটি ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

এই ষঢ়যন্ত্র থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য যেমন প্রয়োজন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ন্যায় একজন আপোষহীন নেত্রীর। তেমনি প্রয়োজন মাহমুদুর রহমানের ন্যায় একজন নির্ভিক দেশপ্রেমিক সম্পাদকের। ঠিক তেমনিভাবেই প্রয়োজন ইসলামী মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত আপামর জনগণের ঐক্য। তারচেয়েও যেন বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে পাকিস্থানী বা ভারতীয় দালালদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশী দালালদের। তবে আক্ষেপের সাথে আমি তাদেরকে বাংলাদেশী দালাল বললেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস জনগণ তাদেরকে দালাল না বলে জাতীর বীর, শ্রেষ্ঠ সন্তান, দেশের সুসন্তান বলে সম্বোধন করেই তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাবে।

বিষয়: রাজনীতি

১২১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File