ন্যায়পরায়ণ শাসকের গুনাবলী
লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:২১:১০ সকাল
বিশ্বের ইতিহাসে রাসূল (সাঃ) ও তাঁর চার খলিফার পরে যিনি বিশ্বকে ন্যায় শাসনের দ্বারা প্লাবিত করেছিলেন তিনি হলেন উমার ইবনে আব্দুল আযীয(রহ) । সেই উমার ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর সে সময়কার শ্রেষ্ঠ তাবে’য়ী হাসান আল বসরীকে (রহ) একটি পত্র লিখেন ন্যায়পরায়ণ শাসকের বৈশিষ্ট বা গুনাবলী কি তা জানতে চেয়ে। হাসান আল বসরী (রহ) সেই বৈশিষ্ট বা গুনাবলীগুলো তুলে ধরে খলিফার পত্রের জবাব দেন। আমি আজ সেই পত্রটি আপনাদের কাছে তুলে ধরব ইনশাল্লাহ। একজন মুসলিম খলিফার বা একটি মুসলমানদেশের শাসকের কি কি গুনাবলী থাকা উচিত তা আমাদের সকলের জানা উচিৎ। এই চিঠি থেকে আমরা ইনশাল্লাহ সেই বিষয়গুলো জানতে পারব। পত্রটি নিম্নরূপঃ
“হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি জেনে রাখুন, আল্লাহ তা’আলা ন্যায়পরায়ণ শাসককে প্রত্যেক ঝোঁক-প্রবণ মানুষের জন্য অবলম্বন, প্রত্যেক অত্যাচারীর জন্য সত্য-সঠিক পথ, প্রত্যেক বিনষ্ট ও বিকৃত মানুষের জন্য সংশোধন, প্রত্যেক দূর্বলের জন্য শক্তি, প্রত্যেক অত্যাচারিতের জন্য সুবিচার এবং প্রত্যেক দুঃখিতজনের আশ্রয়স্থল করে দিয়েছেন।
“হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক হলেন সেই রাখালের মতো যে তার উটের প্রতি দয়া ও মমতাশীল, উটগুলোকে উৎকৃষ্ট চারণভূমিতে চরায়, বিপজ্জনক চারণভূমি থেকে রক্ষা করে, হিংস্র জীব-জন্তু থেকে আগলে রাখে এবং ঠান্ডা-গরমের কষ্ট থেকে রক্ষা করে।
“হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক হলেন সেই স্নেহপ্রবণ পিতার মতো যিনি তাঁর সন্তানদেরকে শৈশবকালে আদর-স্নেহ দিয়ে লালন-পালন করেন, বড় হলে শিক্ষা দেন, জীবনকালে তাদের জন্য আয় করেন এবং মরণের পরেও তাদের খরচের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যান।
“হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক হলেন সেই স্নেহময়ী পবিত্র মায়ের মতো যিনি তাঁর সন্তানকে পেটে ধারণ ও দুধ পান করানোর কষ্ট স্বীকার করেন, শৈশবে লালন-পালন করেন, সন্তান জেগে থাকলে তিনিও জেগে রাত কাটান, সন্তান ঘুমালে তিনিও ঘুমান, সন্তানকে কখনো দুধ পান করান, কখনো দুধ পান থেকে বিরত রাখেন, সন্তানের সুস্থতায় উৎফুল্ল হন এবং অসুস্থতায় বিমর্ষ হয়ে পড়েন।
হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক হলেন ইয়াতীমদের অসী, গরীব-মিসকীনদেরর ভান্ডার। তিনি তাদের ছোটদের প্রতিপালন করেন, বড়দের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন।
হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক হলেন দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে হৃদপিন্ডের মতো। হৃদপিন্ড সুস্থ থাকলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকে, হৃদপিন্ড অসুস্থ হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
“হে আমীরুল মু’মিনীন! ন্যায়পরায়ণ শাসক আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের মধ্যে দন্ডায়মান। তিনি আল্লাহর কথা শোনেন, বান্দাদের শোনান; আল্লাহকে দেখেন, তাদেরকে দেখান; আল্লাহর আনুগত্য করেন এবং তাদেরকে সে দিকে চালিত করেন।
অতএব, হে আমীরুল মু’মিনীন!আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাকে যা কিছুর অধিকারী করেছেন সেসব বিষয়ে আপনি সেই দাসের মতো হবেন না, যার নিকট তার মনিক কোন কিছু গচ্ছিত রেখেছে, তার অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে, অতঃপর সে অর্থ-সম্পদ আত্নসাৎ করে পরিবার-পরিজনকে বিতাড়িত করেছে। ফলে তারা বিত্তহীন হয়ে পড়েছে।
চলবে......
বিষয়: বিবিধ
২২৭২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন