পদত্যাগনামা

লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ১৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৩৮:৩৮ রাত



আর চাকরী করবেনা বলে ঠিক করেছে মদন। তাই পদত্যাগ পত্র লিখে পাঠিয়ে দিলো মদন তার বসের কাছে। বস মদনকে জানালেন তিনি পদত্যাগ পত্র বিশেষজ্ঞ নন। তাই তিনি মদনের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন পদত্যাগপত্র বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশী মন্ত্রীদের কাছে। কিন্তু তাদের একেক জনের একেক মতামতে তিনি আরও বিভ্রান্ত। তিনি তাদের মতামতগুলো মদনের কাছে পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন আসলে মদন নিজে কোন মতামতকে ঠিক মনে করে বা আসলেই কোন কারণে মদন পদত্যাগপত্র দিয়েছে ? মদনের মতামত জানার আগেই তিনি মন্ত্রীদের মতামতের সাথে নিজের মতামতও তুলে ধরেছেন। সেই মতামতগুলো ছিল এমনঃ

মন্ত্রীদের মন্তব্যঃ এই পদত্যাগপত্র তামাশা করে করা হয়েছে। কাজেই এই পদত্যাগপত্র নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। এই পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য নয়।

বসের মন্তব্যঃ এটিতো এপ্রিল মাস নয় যে, এপ্রিল ফুল করা হবে! তাই মদন যদি তামাশা করে তাহলে একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি তার প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের বসের সাথে তামাশা করার জন্য তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও অগ্রহণের কোন প্রশ্ন আসেনা। তাকে তো সরাসরি বহিস্কার করা উচিৎ।

মন্ত্রীর মন্তব্যঃ পদত্যাগপত্র সংবিধান সম্মত হয়নি – ব্যারিষ্টার শফিক (সাবেক আইনমন্ত্রী)

বসের মন্তব্যঃ সে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। সে এই প্রতিষ্ঠানের সংবিধান রচনা ও সংবিধান সংরক্ষনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। তার পত্রই যদি সংবিধান সম্মত না হয়। তাহলে তো সে এই দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য। এই অযোগ্য লোকের পদত্যাগপত্র নিয়ে আবার প্রশ্ন কেন? তাকে তো সরাসরি অযোগ্যতার কারণে পদচ্যুত করা উচিৎ।

মন্ত্রীর মন্তব্যঃ পদত্যাগপত্র সংবিধান সম্মতভাবেই হয়েছে – ইনু (সাবেক তথ্য মন্ত্রী)

বসের মন্তব্যঃ যদি পদত্যাগপত্র সংবিধান সম্মতভাবেই হয়। তাহলে আমার ইচ্ছা,অনিচ্ছা বা গ্রহণ বা গ্রহণ না করার সাথে এখন আর কিভাবে সম্পর্ক থাকতে পারে? যেখানে সংবিধান বলছে, পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার সাথে সাথেই সেই পদটি খালি হয়ে যাবে?

মন্ত্রীর মন্তব্যঃ যেহেতু পদত্যাগ পত্রে কোন তারিখ দেয়া হয়নি, তাই পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য হবেনা – ডঃ রাজ্জাক ( সাবেক খাদ্যমন্ত্রী)

বসের মন্তব্যঃ সে হয়তো তারিখ দিতে ভূলে গেছে, কিন্তু আমাদের কাছে কবে পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছে, সেই তারিখ তো আমাদের জানা আছে। কাজেই তারিখ নিয়ে আমরা এতো চিন্তা করবো কেন ? সে যেই তারিখে জমা দিয়েছে সেই তারিখেই এই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠান ধরে নেবে।

মন্ত্রীর মন্তব্যঃ আসলে পদত্যাগপত্রে এতো বানান ভূল যে, এই পদত্যাগ পত্র কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।

বসের মন্তব্যঃ হারামজাদা ! এক পদত্যাগ পত্রে যদি এতো বানানা ভূল থাকে, তাহলে পাশ করছিস কিভাবে?

মন্ত্রীর মন্তব্যঃ হে হে হে ! তেলের জোড়ে হয়েছি মন্ত্রী আর অস্ত্রের জোড়ে পাশ।

বসের মন্তব্যঃ হে হে হে ! তাহলে তুই পদচ্যুত। দেয়া হলো তোর আছোলা বাশ।

মন্ত্রী ভূল করে মদনের কথা না বলে নিজের কথা বলে ফেলেছে আর বসও মদনকে পদচ্যুতর কথা না বলে মন্ত্রীকেই পদচ্যুতির কথা বলে ফেলেছে। যাই হোক মদনের পদত্যাগের বিষয়টা পরিস্কার করতে মদন নিজেই গেলো বসের কাছে। এখন মদন আর বসের কথোপকোথনঃ

বসঃ আরে আসো আসো। বসো। বলো তোমার পদত্যাগ নিয়ে তোমার কি বলার আছে।

মদনঃ বস আপনি হয়তো ভূলে গেছেন, আমি একা নয়, শুধুমাত্র আপনি বাদে সমস্ত কর্মকর্তা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

বসঃ হুমম... সমস্যা কোথায় ? সবাই পদত্যাগ পত্র দিলে সবার পদই শুন্য হবে অথবা সবাইকেই পদচ্যুত করা হবে।

মদনঃ স্যার কোন কর্মকর্তায় যদি না থাকে তাহলে আপনি কিভাবে প্রধান কর্মকর্তা হবেন ? বিষয়টি কি ভেবে দেখেছেন? আপনি একাই একশ হতে পারেন। অর্থাৎ আপনিই অফিসের কর্মকর্তা আবার আপনিই পিয়ন, আপনিই দারোয়ান, আপনিই সব। আপনি একাই একশ। কিন্তু কোনভাবেই আপনি প্রধান কর্মকর্তা হতে পারেন না ?

বসঃ বিষয়টা তো ভেবে দেখেনি। একটু জটিল মনে হচ্ছে। বিষয়টা কি একটু খুলে বলবা ?

মদনঃ স্যার বিষয়টা একটি ছোট্ট ছেলেও বোঝে, আর আপনি বুঝবেন না ?

বসঃ কিভাবে বলোতো ?

মদনঃ স্যার ! ধরুন কোন একটি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে একটি মাত্র ছাত্র আছে। এটি জানার পর আপনি যদি ওই ছাত্রকে প্রশ্ন করেন, ও তার মানে ওই ক্লাসে তুমিই ফাষ্ট বয় ? তখন কি ওই ছাত্র লজ্জা পাবেনা ? সে কি মনে করবেনা আপনি তাকে অপমান করছেন বা লজ্জা দিচ্ছেন ?

বসঃ হুমম... সে লজ্জা পেতেই পারে। সে মনে করতেই পারে তাকে অপমান করা হচ্ছে।

মদনঃ স্যার। তাহলে যেখানে কোন কর্মকর্তায় নেই, সেখানে আপনাকে প্রধান কর্মকর্তা বললে কি আপনার লজ্জা পাওয়া উচিৎ নয়? আপনাকে প্রধান কর্মকর্তা বলে আপনাকে অপমান করা হচ্ছে বলে আপনার মনে করা উচিৎ না ?

বসঃ কিছুক্ষন লজ্জায় মাথা নিচু করে থেকে...... হুমম আমার লজ্জা পাওয়া উচিৎ। তারপর হঠাত মাথা ঝাড়া দিয়ে বললেন, আচ্ছা মদন ! তাহলে তোমার দেশে যে সকল মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। তারপরও তো তোমাদের প্রধানমন্ত্রী তার পদ আকড়ে ধরে আছেন। তিনি কি লজ্জিত বা অপমানিত হচ্ছেন না ?

মদনঃ স্যার আমরা জানতাম ৭৫ সালে ঘাতকের বুলেট হত্যা করেছে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সকল সদস্যকে। কিন্তু সেই বুলেট প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা, মান সম্মান ও মনুষত্বকেও যে হত্যা করেছে সেটা আমরা জানতামনা। এবারই আমরা জানতে পেরেছি সেই বুলেটে প্রধানমন্ত্রী তার মানবিকতাটুকুও হারিয়েছিলেন।

বসের কাছে নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন বাজে কথা বলার পর মদন নিজেও যেন একটু লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে লজ্জিত ভংগিতে মদন বেরিয়ে আসলো বসের রুম থেকে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File