পৃথিবীর বিষ্ময়ঃ মৃত সাগর ! সাগরের পানিতে শুয়ে রোদ পোহাতে পারবেন, পত্রিকা পড়তেও পারবেন।
লিখেছেন লিখেছেন আস্তিক ব্লগার ২২ জুন, ২০১৩, ০৬:১১:৫৪ সন্ধ্যা
এই সাগরকে কেন ডেড সী বা মৃত সাগর বলা হয় ? এর অন্যতম কারণ হলো এই সাগরে কোন মাছ বা জলজ প্রাণী বাঁচেনা। কেবল কিছু ব্যাক্টেরিয়া আর ছত্রাক জাতীয় অনুজিব পাওয়া যায়। এজন্যই একে মৃত সাগর বলা হয়
মজার বিষয় হলো এটিই পৃথিবীর একমাত্র সাগর, যেখানকার পানিতে আপনি কখনোই ডুবে যাবেন না। ফলে মানুষ এখানে এসে বীচে শুয়ে না থেকে এই সাগরের পানির উপর শুয়ে থেকে রোদ পোহাই, আড্ডা দেয় এমনকি পত্রিকা পর্যন্ত পড়ে।
কেন মানুষ ডুবে যায়না জানেন ? কারন হল মৃত সাগরে পানির ঘনত্ত্ব খুব বেশি। পানির ঘনত্ত্ব বেশির কারন হচ্ছে লবন। অন্যান্য মহা সাগরে লবনের পরিমান শতকরা ৫% – ৬%। কিন্তু এ মৃত সাগরে লবনের পরিমান ২৫% – ৩০%। তাছাড়া এর লবনাক্ততা স্বাভাবিক সাগরের থেকে ৮.৬ গুন বেশি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার(১,৩৭৮ ফিট) নিচে এটি পৃথিবীর নিম্নতম স্থলভূমি । সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি লেক যার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,২৪০ ফুট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জর্দান ও ইসরাঈলের মধ্যখানে অবস্থিত।
উল্লেখ্য, এই জায়গায় লুত (আএর জাতি বাস করত। তাদের মাঝে সমকামিতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। লুত (আ তাদেরকে এ জঘন্য কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেও কোন ফল আসে নি। ফলে মহান আল্লাহর হুকুমে তাদের এলাকা উল্টিয়ে দেয়া হয়। এতে সেখানে একটি সাগরের সৃষ্টি হয়। আর এটিই বর্তমানে মৃত সাগর বা Dead Sea বলা হয়।
এই সম্পর্কে আল কোরআনে বর্ণীতঃ ঘটনা কিছু তুলে ধরা হলোঃ
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন! কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। (সূরা হুদঃ ৬৯ – ৭০)
হযরত লূত (আঃ) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ভাতিজা। লুতের কওমকে ধ্বংস করার পূর্বে ফেরেস্তারা সর্বপ্রথম হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে মানুষের ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে মেহমান হিসাবে মনে করে তাদের জন্য বাছুর ভূনা করে মেহমানদারী করতে গেলে ফেরেস্তারা তাদের আসল পরিচয় এবং উদ্দ্যেশ্য প্রকাশ করেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এই শাস্তির কথা জানতে পেরে শাস্তি থেকে লুতের কওমকে বাঁচাতে চাইলে ফেরেস্তারা তাঁকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন, আল্লাহর সিদ্ধান্ত এসে গেছে এখানে আর কোন কথায় চলবেনা। এইভাবে ইব্রাহীম (আঃ) এর সম্মানে আল্লাহ লুত জাতিকে ধ্বংসের আগে তার প্রিয় খলিলকে বিষয়টা অবহিত করেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর প্রিয় খলিলের জন্য সৌজন্যতা দেখানো এবং তার সম্মান দেখানো। এটি আল্লাহর সুন্নত। আল্লাহ তার সমস্ত নবীর জীবণ নেয়ার পূর্বে তাঁর প্রিয় নবীদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার জন্য জান কবজ কারী ফেরেস্তাকে হুকুম দিয়েছিলেন। আল্লাহ সবচেয়ে বড় সৌজন্যতা দেখান এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মানিত করেন। শুধু এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়, আল্লাহ তাঁর প্রিয় খলিল যেন কষ্ট না পায় এজন্য এই ফেরেস্তাদের মাধ্যমেই তাঁকে ও তাঁর নব্বই বছরের বন্ধ্যা বৃদ্ধা স্ত্রীকে পুত্র সন্তান ইসহাকের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন। অতঃপর ফেরেস্তাগণ হযরত লুতের জনপদের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাদের হযরত লুত (আঃ) এর জনপদে যাওয়ার ঘটনাটাও ছিল অদ্ভুত। আল্লাহ আল কোরআনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন ঠিক এভাবে –
অতঃপর যখন প্রেরিতরা লূতের গৃহে পৌছল।তিনি বললেনঃ তোমরা তো অপরিচিত লোক।তারা বললঃ না বরং আমরা আপনার কাছে ঐ বস্তু নিয়ে এসেছি, যে সম্পর্কে তারা বিবাদ করত।এবং আমরা আপনার কাছে সত্য বিষয় নিয়ে এসেছি এবং আমরা সত্যবাদী।অতএব আপনি শেষরাত্রে পরিবারের সকলকে নিয়ে চলে যান এবং আপনি তাদের পশ্চাদনুসরণ করবেন না এবং আপনাদের মধ্যে কেউ যেন পিছন ফিরে না দেখে। আপনারা যেখানে আদেশ প্রাপ্ত হচ্ছেন সেখানে যান।আমি লূতকে এ বিষয় পরিজ্ঞাত করে দেই যে, সকাল হলেই তাদেরকে সমুলে বিনাশ করে দেয়া হবে।শহরবাসীরা আনন্দ-উল্লাস করতে করতে পৌছল।লূত বললেনঃ তারা আমার মেহমান। অতএব আমাকে লাঞ্ছিত করো না।তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার ইযযত নষ্ট করো না।তার বললঃ আমরা কি আপনাকে জগৎদ্বাসীর সমর্থন করতে নিষেধ করিনি।তিনি বললেনঃ যদি তোমরা একান্ত কিছু করতেই চাও, তবে আমার কন্যারা উপস্থিত আছে।আপনার প্রাণের কসম, তারা আপন নেশায় প্রমত্ত ছিল।অতঃপর সুর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচন্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করল।অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম।নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা হিজরঃ ৬১ -৭৫)
আমি আয়াতের অর্থগুলি হুবহু তুলে ধরলাম এজন্য যে, আল কোরআনে ভূল নেই। আমাদের লেখায় ভূল হতে পারে। কিন্তু অনেকের কাছেই আয়াত গুলো থেকে সম্পূর্ণ ইতিহাস বোঝা সম্ভব নাও হতে পারে বলে ইতিহাসের আলোকে একটু ব্যাখ্যা করতে চাই।
মূলতঃ ফেরেশতাগণ যেভাবে ইব্রাহীম (আঃ) এর নিকট মানুষ রূপে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনিভাবে তারা মানুষরূপই উপস্থিত হয়েছিলেন লুতের কওমের কাছে। তাফসীরে এসেছে তারা খুবই সুন্দর চেহারার আকৃতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন লুত (আঃ) এর মেহমান হিসাবে। আর লুত জাতি এতটা অধঃপতনে নেমেছিল যে, সুন্দর কোন মানুষ যদি তাদের কওমে আসতো এমনকি তাদের মেহমান হিসাবেও আসতো তারা তাদেরকেও ছাড়তোনা। তারা জোড় করে সেই নবাগতকে কূকর্ম করতে বাধ্য করতো।
হযরত লূত (আঃ) বিষয়টি জানতেন বলে তিনি তাঁর নবাগত মেহমানদের নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়লে ফেরেস্তাগণ তাঁকে তাদের পরিচয় আর আশার উদ্দ্যেশ্য পরিস্কারভাবে তুলে ধরেন। অতঃপর যখন শহরবাসীরা সেই সুন্দর মেহমানদের ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ছুটে আসলো লুত (আঃ) তাদেরকে উপদেশ দিতে গেলেন। তাঁরা উপদেশ না নিয়ে তাকে উলটো হুমকী ধামকি প্রদান করলো। তিনি তাদেরকে আরবের সর্বকালের ঐতিহ্য মেহমানদের দোহায় দিয়ে মেহমান হিসাবে তাদেরকে সম্মান দিতে বললেন কিন্তু তারা তাতেও পিছপা হলোনা। তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাদের কূকর্ম চরিতার্থ করার চেষ্টা করলো।
তারা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারলনা, তারা কাদের সাথে এই অপকর্মের চিন্তা করছে। তারা জানতেও পারলনা, এটাই তাদের জন্য সঠিক পথে আসার শেষ সুযোগ ছিল। আল্লাহ তাদেরকে সকালে সূর্যদোয়ের সময় সমূলে ধ্বংস করলেন। আর সেই অঞ্চলকে আমাদের জন্য শিক্ষনীয় নিদর্শনে রূপান্তরিত করলেন। আমরা যেন, সেই নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। এবং শেষ সময়ের আগেই যেন আল্লাহ সদয় হয়ে আমাদের যে সুযোগ দেন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবাধ্যদের সারি থেকে নিজেদের সরিয়ে এনে আল্লাহর আযাব থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দিন সেই মহান সত্বার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করার। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন