যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো ইমাম আবু হানিফা রহ.কে
লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ২৭ জুলাই, ২০১৫, ০২:৩৬:১৮ দুপুর
যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব ইসলামের সেবা করে অমর হয়ে আছেন। ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা (রহ.) তাদেরই একজন। তিনি ইসলামের জ্ঞান ভান্ডারে যে অবদান রেখে গেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ তার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
ইমাম আজমের পূর্ব পুরুষরা আদিতে কাবুলের অধিবাসী হলেও ব্যবসায়িক সূত্রে তারা কুফাতে নিবাস গড়েন। তার পিতা সাবিত ছিলেন একজন তাবেয়ি। প্রসিদ্ধ মতানুসারে তিনি ৬৯৯ ঈসায়ি সালের ৫ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ৮০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল নাম ছিল নোমান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আবু হানিফা উপনামে সুখ্যাতি লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন
বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ইমামে আজম ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। লেখাপড়ার প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৯ বা ২০ বছরের দিকে ইমাম শাবীর (রহ.) নজরে পড়েন তিনি। ইমাম শাবী (রহ.) তাকে ডেকে দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করেন। শাবীর ক্ষণিকের সান্নিধ্য তার জীবনের মোড় বদলে দেয়। তিনি জ্ঞানার্জনের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে উঠেন। ব্যবসার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে জন্মভূমি কুফার বড় বড় শায়েখদের থেকে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন। তিনি বিশেষভাবে ইমাম হাম্মাদের শিষ্যত্ব বরণ করেন। ইমাম হাম্মাদ হলেন ইবরাহিম নখঈ’র প্রিয় ছাত্র। আর ইবরাহিম ইবনে নখঈ (রহ.) হাদিস শাস্ত্র ও ইলমে শরিয়ত শিক্ষা লাভ করেছিলেন হজরত আলী (রা.) এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে।
ইমাম হাম্মাদ একাধারে বিশ বছর পরম যত্নের সঙ্গে মেহনত করে নোমান ইবনে সাবিতকে ইমামে আজমরূপে গড়ে তোলেন। ইমাম আজম শুধু কুফার প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস ও ফকিহদের জ্ঞানভান্ডারের ওপর সন্তুষ্ট না থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য হারামাইন শরিফাইন ভ্রমণ করেন। ১৩০ হিজরি থেকে ১৩৬ হিজরি পর্যন্ত একটানা ৬ বছর হারামাইন শরিফাইনে অবস্থান করে সেখানকার বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিস আহরণ করেন। ঐতিহাসিকদেরর মতে তিনি প্রায় চার হাজার মুহাদ্দিস থেকে হাদিস শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
কর্মজীবন
১২০ হিজরিতে উস্তাদ হাম্মাদের ইন্তেকালের পর তিনি উস্তাদের মাদ্রারাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাঠদানের পাশাপশি পৈতৃক কাপড়ের ব্যবসাও ধরে রেখেছিলেন।
#তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন
ইমামে আজম (রহ.) আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সান্নিধ্য ধন্য বেশ কয়েকজন সাহাবির সঙ্গলাভ করে তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. (৯৩ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আউফা রা. (৮৭ হি.), হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. (৮৮ হি.) হজরত আবু তুফাইল রা. (১১০ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইদি রা. (৯৯ হি.), হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. (৯৪ হি.) ও হজরত ওয়াসেনা ইবনে আসকি রা. (৮৫ হি.)।
#জীবনচিত্র
আল্লাহতায়ালা ইমাম আবু হানিফাকে অতুলনীয় জ্ঞান দান করেছিলেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তিনি প্রায় ৫৫ বার হজব্রত পালন করেন। আদায় করেন অসংখ্য ওমরা। প্রতি রমজানে অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন। কথিত আছে, তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর এশার নামাজের অজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছিলেন।
ব্যবসায়ী কার্যক্রমে কোনো লেনদেনের ব্যপারে সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলে সে লেনদেনের সম্পূর্ণ অর্থ দান করে দিতেন। সততা ও নৈতিকতা ছিল তার ব্যবসার মূলভিত্তি। উপার্জিত সম্পদের বৃহৎ একটি অংশ জনসেবায় খরচ করতেন।
#অবদান
পাঠদানের দীর্ঘ জীবনে অসংখ্যা ছাত্রকে ফকিহরূপে তৈরি করেছেন। তদানীন্তন সময়ের বিশাল মুসলিম স¤্রাজ্যের প্রায় সব শহরের বিচারপতির আসন তার ছাত্ররা অলঙ্কৃত করেছিলেন। তার প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ছিলেন
#প্রধান বিচারপতি।
ইমাম আবু হানিফার রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুসনাদে আবু হানিফা, আল ফিকহুল আকবার, ওয়াসিয়াতু আবু হানিফা ও কিতাবুল আসার।
গবেষকদের মতে তিনি চল্লিশ হাজার হাদিস থেকে বাছাই করে কিতাবুল আসার সঙ্কলন করেছিলেন। তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো কোরআন ও হাদিস থেকে জনসাধারণের আমল উপযোগী মাসয়ালা বের করার মূলনীতি দাঁড় করানো। তার সম্পাদিত এ শাস্ত্রের নাম উসূলুল ফিক্হ। এ কাজের জন্যই তিনি ইমামে আজম খ্যাতি লাভ করেন। তার প্রণীত ফিকাহ আমাদের কাছে ফিকহে হানাফি নামে পরিচিত।
#মৃত্যু
খলিফা মনসুর তাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জালেম শাসকের সমর্থনের দায় এড়ানোর জন্য এ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এতে অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে বন্দী করেন। প্রতিদিন তাকে কারাগার থেকে বের করে প্রকাশ্যে দশটি করে চাবুক মারা হতো। চাবুকের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত বের হতো। সে রক্তে কুফার মাটি রঞ্জিত হতো। পানাহেরর কষ্টসহ বিভিন্নভাবে সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ ইমামকে নির্যাতন করা হয়। অবশেষে জোর করে বিষ পান করানো হয়। ৭৬৭ ঈসায়ি সালের ১৪ জুন মোতাবেক ১৫০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের নিয়ামত দানে ধন্য করুন। তার রেখে যাওয়া আদর্শের ওপর আমাদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুক। আমিন।
#জীবন_বিলিয়ে_দিতেন_তবুও_আদর্শকে_জলাঞ্জলী_দিতেন_না_তাঁরা ,আর আজ আমাদের কথিত ইসলামী দল ,তাদের নেতা ও আলেমদের কি দশা !!!
বিষয়: বিবিধ
৪২০৫ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর লিখিত কিতাবগুলো কোথাও পাওয়া যাবে কি?
এ চারটি কিতাব আমার খুবই প্রয়োজন, যদি সন্ধায় দিতে পারেন, কৃতজ্ঞ থাকবো।
জাযাকাল্লাহ খাইর
ঐ সকল আলেমদের উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে ,তার হাজার ভাগের একভাগ নির্যাতনও যদি আমাদের কথিত আলেমদের উপর হতো ,তাহলে হয়তো তারা নিজেদের ধর্ম বিসজর্ন দিয়ে দিতো।
তবে আপনার লেখার শেষে মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামাত নেতাদের সাথে খালেদা জিয়ার জয়েন বেঞ্চার ছবি দিয়ে যেভাবে প্রমাণ হাজির করলেন তাতে আপনার অন্তরের খুলুসিয়ত ও নিরপেক্ষতা প্রমাণিত না হয়ে অন্ধ জামাত বিদ্বেষীটাই ফুটিয়ে তুলেছেন মনে হচ্ছে।
ফাসিঁর রশ্মি গলায় ঝুলানোর অপেক্ষায় ছয় সাত বছর ধরে কারাগারে বন্ধী যেসব জামাত নেতা-কেতার আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়েছে বলে বেজায় নাখোশ হয়েছেন তাদের পাশাপাশি যদি ফেহাজত ইসলামের মহা সচীব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগী অল্প কিছুদিন পুলিশী রিমান্ডে থেকে কোন জাদুর মন্ত্রে জামিনে মুক্তি পেয়ে নিরাপদে মাদ্রসায় পুনরায় কোরআন হাদিসের দরস দিচ্ছে? অথবা মুফতি জোনায়েদ আল হাবিবের মতো আওয়ামী জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্ততৃ দিয়ে মাঠ গরমকারী কোন রহস্যের কারণে আওয়ামী পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়ায়? অথবা
অথবা আমিরুল মু'মিনিন আল্লাম আহমদ শফী সাহেবের সাথে শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠকের ছবিটাও যদি এড করে দিতেন তাহলে কতই না আনপনার লেখাটা নিরাপেক্ষ হতো!!!
চরমোনাইয়ের পীরদের কথা না হয় নাই বা বললেন!!
এখানে আরো একটা মজার কথা যে, আবু হানীফা জেলে গেছে কুফুরী মতবাদে না যাওয়ার কারনে, আর জামাআতে ইসলামীর আমীরগণ জেলে গেছে কুফুরী মতবাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করার কারনে। বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। অন্য দলের কথা বাদ দিলাম। আপনি যদি বলেন যে, না জামাআতে ইসলামীর আমীরগণ শুধুমাত্র ইসলামী দল হওয়ার করনেই জেলে গেছে, তাহলে আমি বলব, বিএনপি কোন ইসলামী দল যে, এতগুলো নেতাকে জেলে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত মুতু্বরণ করতে হবে?ধন্যবাদ।
আবু হানীফার জীবনী লিখতে এসে শেষ ছবি গুলো দেখে মজনূঁর মত লায়লা পাগল লেখক হিসেবে গুলিয়ে ফেললেন নিজকে।
লিখার সাথে ছবি কয়টি আসলেই অপ্রাসংগিক হয়েছে, লিখার স্ট্রেংথ ও এ্যাপিল নষ্ট করেছে এবং খাপছাড়া লিখা মনে হয়েছে।
লিখক চাইলে ছবি গুলো সরিয়ে নিয়ে এ লিখাটির এ্যাপিল ঠিক রাখতে পারেন
আর ছবি নিয়ে কিছু বলতে চাইলে আর একটি ভিন্ন পোষ্ট ছবিগুলো সহযোগে দিতে পারেন। আশা করি তাতে লিখক ও পাঠক উভয়ের জন্য কল্যানকর কিছু একটা হবে।
আমার প্রশ্ন হল ,ছবি গুলি দেখতে যদি এতই খারাপ লাগে ,তাহলে এই অপকর্ম গুলি অবশ্যই খারাপ।
আর ইসলামের নামে এই অপকর্ম করতে যাদের লজ্জা লাগে না,তাদের পক্ষে ওকালাতি যারা করে তারা যে জাহালাতে লিপ্ত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন