¤*¤ মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পাঠ- ফিকহে হানাফী এর অবস্থান। ¤*¤

লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ২৮ মে, ২০১৪, ০৫:৪৪:৪৭ বিকাল



ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাকোঃ

কোরআনরে আয়াত থেকে

ছূরা আ’রাফের ২০৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লার এরশাদ- واذا قرئ القران

فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون

“ যখন কুরআন পাঠ করা হয় , তখন মনোযোগ সহকারে শ্রবন কর এবং চুপ থাক, হয়ত তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে”।

উক্ত আয়াতে রহমতপ্রত্যাশী কুরআন তিলাওয়াতে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে দু’টি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে-

(১) মনোযোগ সহকারে শ্রবন কর

(২) চুপ থাক।

যে নামাযগুলোতে ইমাম উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করেন এবং ইমামের তিলাওয়াতের শব্দ মুক্তাদীগণের কান পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে উক্ত আয়াতের দু’টি নির্দেশই পালন করা সম্ভব। আর যে সকল নামাযে ইমাম নীরবে তিলাওয়াত করেন অথবা ইমামের তিলাওয়াতের শব্দ মুক্তাদীগণের কান পর্যন্ত না পৌঁছে সে ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় নির্দেশটি পালন করা সম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্ল¬াহ তায়া’লার নির্দেশ পালন করা সম্ভব ততক্ষণ পর্যন্ত তা অমান্য বা প্রত্যাখ্যান করার কোন সুযোগ শরীয়তে নেই। সুতরাং ইমাম যখন নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করেন; সরবে হোক বা নীরবে সর্বাবস্থাতেই মুক্তাদীগণের দায়িত্ব হল নীরব থাকা। ছূরা ফাতিহা বা অন্য কোন ছূরা তিলাওয়াত করার কোন বৈধতা এ আয়াতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

কুরআনের উক্ত স্পষ্ট আয়াতের উপর আমল করতে যদিও কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না, তবুও উক্ত আয়াতে প্রদত্ত নির্দেশ সমর্থন করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে হুকুম জারী করেছেন তা থেকেও আমি কিঞ্চিত আপনাদের খেদমতে তুলে ধরছি।

১ম হাদীসঃ আবু মুসা আশআ’রী (রাঃ) র্বণতি হাদীস

حدثنا يو سف بن موسى

القطان قال حدثنا جرير عن سليمان التيمى عن قتادة عن ابى غلاب عن حطان بن عبدالله

الرقاشى عن ابى موسى الاشعرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا قرأ الامام فانصتوا

হযরত আবু মুসা আশআ’রী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক (ইবনে মাজা : ১/৬১)।

উল্লিখিত হাদীসে বর্ণিত নির্দেশ আর ছূরা আ’রাফে বর্ণিত কুরআনের নির্দেশ হুবহু এক; বরং কুরআনে মনোযোগ সহকারে শ্রবনের নির্দেশটি বেশী থাকায় কেউ কেউ উক্ত আয়াতকে ঐ সকল নামাযের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল যে সকল নামাযে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা হয়। কিন্তু এ হাদীসে মুক্তাদীগণকে শুধু চুপ থাকার নির্দেশ প্রদান করায় কুরআনের উক্ত ব্যাখ্যার পথও রোধ হয়ে গেল। সুতরাং কুরআন-হাদীসের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত এই যে, ইমামের কুরআন পাঠের সময় মুক্তাদীগণ চুপ থাকবে; কোন কিছু পড়বে না।

উল্লি¬খিত হাদীসটি সনদের বিবেচনায় অত্যন্ত উঁচুমানের সহীহ। ইউসুফ বিন মুসা থেকে শুরু করে হযরত আবু মুসা আশআ’রী পর্যন্ত প্রত্যেকজন বর্ণনাকারী বুখারী/মুসলিম অথবা উভয় কিতাবের বর্ণনাকারী, যাদের নির্ভরযোগ্যতা উম্মতের নিকট স্বীকৃত। উপরন্তু এই হাদীসটি হুবহু এই সনদে মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠায়ও বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে আর কারও দ্বিমত থাকবে বলে মনে করি না।

২য় হাদীসঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) র্বণতি হাদীস

حدثنا ابو بكر بن ابى شيبة قال حدثنا ابو خالد الاحمر عن ابن عجلان عن زيد

بن اسلم عن ابى صالح عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انما جعل

الامام ليؤتم به فاذا كبرفكبروا واذا قرأ فانصتو

হযরত আবু হুরায়রা (রা.)হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইমাম বানানো হয়েছে তাকে অনুকরণ করার জন্য। যখন তিনি তাকবীর দেন তোমরাও তাকবীর দিবে। যখন তিনি কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাকবে (ইবনে মাজা : ১/৬১)।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত এ হাদীসটিও ইমামের কুরআন পাঠের সময় মুক্তাদীগণের চুপ থাকার স্পষ্ট নির্দেশ সম্বলিত। এ হাদীসটিও সনদের বিবেচনায় অত্যন্ত উঁচুমানের সহীহ। আবু বকর বিন আবি শায়বা হতে আবু হুরায়রা পর্যন্ত প্রত্যেকজন বর্ণনাকারী বুখারী/মুসলিম অথবা উভয় কিতাবের বর্ণনাকারী, যাদের নির্ভরযোগ্যতা সমগ্র উম্মতের নিকট স্বীকৃত। উপরন্ত হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম মুসলিমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মন্তব্য করেন যে, আমার নিকট হাদীসটি সহীহ (মুসলিম শরীফ : ১/১৭৪)। ইমাম মুসলিম (র.) যে হাদীসকে স্পষ্ট ভাষায় সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন সে হাদীসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না।

মুক্তাদীর কোরআন পাঠ কোরআন নিয়ে ঝগড়া করাঃ

তারপরও এক্ষেত্রে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল কী ছিল তা আমি ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ করার চেষ্টা করছি।

أخبرنا قتيبة عن مالك

عن إبن شهاب عن إبن أكمية الليثى عن أبىهريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم

إنصرف من صلواة جهر فيها بالقرائة فقال هل قرأ معى أحد منكم أنفا قال رجل نعم يا

رسول الله قال إنى أقول مالى أنازع القرآن-

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার এমন নামায থেকে ফারেগ হলেন যে নামাযে তিনি উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করেছেন। অত:পর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আমার সঙ্গে এখন কুরআন পাঠ করেছ ? এক ব্যক্তি বলল, জি হ্যাঁ, আমি পাঠ করেছি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাইতো আমি বলি, আমার হল কী ; কুরআন নিয়ে ঝগড়া করছি কেন ? (নাসায়ী : ১/১০৬)।

উক্ত হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করাকে কুরআন নিয়ে ঝগড়া করা বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ বলতে পারে যে, উক্ত মুক্তাদী হয়ত উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করেছিল তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটাকে ঝগড়া বলেছেন। কিন্তু আসলে বিষয় তা নয়। যদি মুক্তাদী উচ্চস্বরে পাঠ করত তাহলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করতেন যে, আমার সঙ্গে নামাযে কে কুরআন পাঠ করেছে ? কিন্তু তা না করে বরং বললেন যে, ‘তোমাদের কেউ কি আমার সঙ্গে পাঠ করেছ’’? যার অর্থ দাঁড়ায় যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে শোনেননি এবং কুরআন পাঠের বিষয়ে নিশ্চিতও ছিলেন না। তবে যে কোনভাবে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েছেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত এ হাদীসটিও সনদের বিবেচনায় উঁচুমানের সহীহ। কুতায়বা থেকে আবু হুরায়রা পর্যন্ত প্রত্যেকজন বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

আবু বাকরা রাযি এর দৌরে রুকু ধরার সেই হাদীসঃ

عن أبى بكرة أنه إنتهى إلى النبى صلى الله عليه وسلم وهو راكع فركع قبل أن

يصل إلى الصف فذكر ذالك للنبى صلى الله عليه وسلم فقال زادك الله حرصا ولا تعد-

হযরত আবু বকরা (রা.) একবার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন অবস্থায় পৌঁছলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন রুকুতে। তিনি কাতারে শামিল হওয়ার পূর্বেই রুকু করলেন। নামাযের পরে বিষয়টি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানানো হলো। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকরা কে বললেন, ‘‘আল্লাহ তায়া’লা (নামাজের প্রতি) তোমার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিক। তবে এমনটি আর করো না’’। অর্থাৎ, আগে কাতারে শামিল হও। তারপরে রুকু কর (বুখারী : ১/১০৮)।

উক্ত হাদীস থেকে জানা গেল যে, হযরত আবু বকরা (রা.) ইমামের সাথে শরীক হলেন রুকুতে। তিনি ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করতে পারেননি। আবার নামায শেষে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দুআ’ দিলেন এবং একটি উপদেশ দিলেন। কিন্তু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়ার কোন নির্দেশ দিলেন না। ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করা যদি মুক্তাদীগণের আবশ্যকীয় দায়িত্ব হতো তাহলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই হযরত আবু বকরা (রা.) কে উক্ত নামায পুনরায় পড়ার নির্দেশ দিতেন।

উক্ত বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে। হাদীসটি নিম্নরূপঃ

حدثنا محمد بن يحى بن فارس أن سعيد بن الحكم حدثهم قال أخبرنا نافع بن يزيد

قال حدثنى يحى بن أبى سليمان عن زيد بن أبى العتاب وابن المقبرى عن أبى هريرة قال

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا جئتم إلى الصلواة ونحن سجود فاسجدوا ولا

تعدوها شيئا ومن أدرك الركعة فقد أدرك الصلواة

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , আমরা সিজদারত অবস্থায় যদি তোমরা নামাযে আস তাহলে সিজদা কর তবে উহা (রাকাত হিসেবে) গণনা করবে না। যে রুকু পেল সে নামায পেল (আবু দাউদ : ১/১২৯)।

উক্ত হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরও স্পষ্ট ঘোষণা পাওয়া গেল যে, রুকু পেলে সে নামায পাবে। অথচ যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে তার সাথে নামাযে শরীক হয় সে কুরআন পাঠ করতে পারে না। এই হাদীসের সনদে ইয়াহইয়া বিন আবি সুলাইমান রাবীর বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মিশ্র মন্তব্য পাওয়া যায়। হাকেম তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইবনে খুযাইমা তার সহীহ কিতাবে উক্ত রাবীর হাদীস গ্রহণ করেছেন। আবার ইমাম বুখারী তার সমালোচনা করেছেন। অবশিষ্ট সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। উপরন্তু বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা যখন মূল বিষয়টি সমর্থিত তখন এ হাদীসটি কোন ক্রমেই হাসান স্তরের নীচে নয়।

মুক্তাদীগণরে ছূরা ফাতহিা পাঠ না করার পক্ষে বুখারী শরীফ থেকে একটি সহায়ক হাদীসঃ

عن ابى هريرة ان رسول

الله صلى الله عليه وسلم قال اذا قال الامام غير المغضوب عليهم ولاالضالين فقولوا

امين فانه من وافق قوله قول الملائكة غفرله ما تقدم من ذنبه

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , যখন ইমাম غير المغضوب عليهم ولا الضالين বলবেন তখন তোমরা আমীন বল। যার কথা (আমীন বলা) ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার অতীত জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে (বুখারী : ১/১০৮)।

এ হাদীসটি লক্ষ্য করুন! রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্তাদীগণকে আমীন বলার নির্দেশ দিলেন ইমামের ‘গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লী¬ন’ পাঠের পরে এবং বললেন যে, এটা ফেরেশতাদেরও আমীন বলার সময়। কাজেই তোমরা তাদের সঙ্গে আমীন বলা মিলাও। অর্থাৎ, আগে পরে করবে না। যদি ছূরা ফাতিহা পাঠ করা মুক্তাদীগণের জন্য আবশ্যক

হতো তাহলে তারা ইমামের ‘গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লী¬ন’ এর পরে আমীন বলবে কেন ? বরং প্রত্যেকে তাদের নিজেদের ‘গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লী¬ন’ এর পরে আমীন বলবে। আর সকলের পড়ার গতি যেহেতু এক নয় সেহেতু মুক্তাদীগণ ফাতিহা পাঠ করলে কোনক্রমেই সকলের আমীন ইমাম ও ফেরেশতাদের আমীনের সঙ্গে মিলবে না এবং গুনাহ মাফের প্রতিশ্র“তিও পাওয়া যাবে না। এই হাদীসের ভিত্তিতে ইবনে হাজার আসকালানী (র.) এর মতো যুগশ্রেষ্ট মুহাদ্দিসও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে, ইমামের ছূরা ফাতিহা পাঠের সাথে মুক্তাদী ছূরা ফাতিহা পাঠ করবে না।

ইমামরে পছিনে ছূরা ফাতেহাও পাঠরে অনুমতি নেইঃ

حدثنا احمد بن داود

(بن موسى السدوسى) قال حدثنا يوسف بن عدى قال حدثنا عبيد الله بن عمرو عن ايوب عن

ابى قلا بة عن انس قال صلى رسو ل الله صلى الله عليه وسلم ثم اقبل بوجهه فقال

اتقرؤن والامام يقرأ فسكتوا فسألهم ثلاث مرات فقالوا انا لنفعل هذا قال فلا تفعلوا

হযরত আনাছ (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ে ফিরলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, ইমাম কুরআন পাঠরত অবস্থায় কি তোমরাও কুরআন পাঠ কর ? তারা চুপ থাকলেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। অতপর তাঁরা বললেন- জী হ্যাঁ, আমরা এমন করি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , তোমরা এমন করবে না (শরহু মাআ’নিল আছার : ১/১৫৯)।

এ হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্তাদীর জন্য কুরআন পাঠ নিষিদ্ধ করে দিলেন। এমনকি ছূরা ফাতিহা পাঠের কোন ভিন্ন নির্দেশও দিলেন না। সনদের বিবেচনায় হাদীসটি সহীহ। আহমাদ বিন দাউদ থেকে শুরু করে হযরত আনাছ (রা.) পর্যন্ত প্রত্যেকজন রাবী নির্ভরযোগ্য।

সাহাবা রাযিদের মতঃ

এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য এখন নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত সাহাবায়ে কেরামের কিছু মতামত আপনাদের খেদমতে

পেশ করার চেষ্টা করছি।

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)

حدثنا ابن علية عن ايوب عن نافع وانس بن سرين قال قال عمر بن الخطاب تكفيك

قرائة الامام

তিনি বলেন, ইমামের কুরআন পাঠ তোমার জন্য যথেষ্ঠ (মুছান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/৪১২)।

আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)

حدثنا محمد بن سليمان

الاصبهانى عن عبد الرحمن عن ابن ابى ليلى عن على

قال من قرأ خلف الامام فقد اخطأ الفترة

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করল সে নিয়ম লঙ্ঘন করল (ইবনে আবি শায়বা : ১/৪১২)।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)

حدثنا ابو بكرة قال حدثنا ابو داود قال حدثنا ابو نعيم

قال حدثنا

خديج بن معاوية عن ابى اسحاق عن علقمة عن ابن مسعود قال ليت الذى يقرأ خلف

الامام ملئ فوه ترابا

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করে তার মুখ যদি মাটি দ্বারা পূর্ণ করে দেয়া হত! (শরহু মাআ’নিল আছার : ১/১৬০)।

ইবনে আব্বাস (রা.)

حدثنا ابن ابى داود

قال حدثنا ابو صالح الحرانى قال حدثنا حماد بن سلمة عن ابى جمرة قال قلت لابن عباس

اقرأ والامام بين يدى قال لا

আবু জামরা বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, ইমাম আমার সামনে থাকা অবস্থায়ও কি আমি কুরআন পাঠ করব ? জবাবে তিনি বলেন- না। (পাঠ করবে না) (শরহু মাআ’নিল আছার : ১/১৬০)।

সাআ’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)

حدثنا وكيع عن قتادة عن قيس عن ابى نجاد عن سعد قال وددت ان الذى يقرأ خلف

الامام فى فيه جمرة

তিনি বলেন, আমার মন চায় যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করে তার মুখে গরম কয়লা ভরে দেয়া হত! (ইবনে আবি শায়বা : ১/৪১২)।

ইবনে উমর (রা.)

مالك عن نافع ان

عبدالله بن عمركان اذا سئل هل يقرأ احد خلف الامام قال اذا صلى احدكم خلف الامام

فحبسه قرائة الامام واذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبدالله بن عمر لا يقرأ خلف

الامام

হযরত নাফে’ বলেন, ইবনে উমর (রা.) কে যখন জিজ্ঞেস করা হল, কেউ কি ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করবে ? জবাবে তিনি বলেন, কেউ ইমামের পিছনে নামায পড়লে তার জন্য ইমামের কুরআন পাঠই যথেষ্ঠ। আর একাকী পড়লে কুরআন পাঠ করবে। ইবনে উমর নিজেও ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করতেন না (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ২৯)।

যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা.)

عن عطاء بن يسار انه

اخبره انه سأل زيد بن ثابت عن القراءة مع الامام فقال

لا قراءة مع الامام

তিনি বলেন, ইমামের সঙ্গে কোন কুরআন পাঠ নেই (মুসলিম : ১/২১৫)।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

227602
২৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান ভাই।
একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম মাসিক আল কাউসার এ সেটা কোন সংখ্যায় মনে নেই।
আসলে ধোঁকাবাজদের ধোকায় কখন পড়ি আল্লাহ জানে ইয়া আল্লাহ প্রতারক ফিতনাবাজদের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমার রব।
২৮ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪০
174440
অপ্রিয় সত্য কথা লিখেছেন : শুকরিয়া,জাযাকাল্লাহ।এই জন্য আল্লাহর কাছে সব সময় হেদায়েত চেয়ে দোয়া করুন।আমি অধমকেও ভূলবেন না।
আল্লাহ সমস্ত ধোকাবাজদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন।

দেখুন ধোকাবাজেরা কোন উত্তর দিতে আসে না।কারন তারা জানে তারাই আসলেই ধোকাবাজ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File