হেফাজতের আন্দোলনের পদ্ধতিতে ভুল ছিল
লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ২৪ মে, ২০১৪, ০৭:৪৯:১০ সন্ধ্যা
মাওলানা মুফতি মনসূরুল হক
শায়খুল হাদিস, জামিয়া রাহমানিয়া আলী এন্ড নূর
হেফাজতের এই আন্দোলনে যদি দেশের আরো বিজ্ঞ কিছু আলেমকে শরিক করা যেতো তাহলে আরো ভাল হতো। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন তো অনেকটা চট্রগ্রামকেন্দ্রিক। ঢাকায় এক নূর হোসাইন কাসেমি ছাড়া আর কাউকে তো তৎপর দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যদিও এর কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু আদতে কি বড় বড় আলেমরা এসেছেন এতে? জড়িত হয়েছেন? হেফাজতে ইসলামের পরিচালক কারা? আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের উপদেষ্টা কারা? এগুলো সব অস্পষ্ট। এই বিষয়গুলো আরো ক্লিয়ার করা দরকার ছিল। তাহলে হয়তো এই আন্দোলনটা আরো বেগবান হতো। আমার তো মনে হয় এই সমস্ত শূন্যতা এবং এই অস্পষ্টতা গুলোর কারণেই আন্দোলনের এই ব্যর্থতা এবং এই গতিতেই যদি চলতে থাকে তাহলে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছা ও ফলাফলের আশা করাটা মুশকিলের ব্যপার। এটাকে আরো ঢেলে সাজাতে হবে। সংগঠন বলেন আর আন্দোলন বলেন সবটাকেই আরো ঢেলে সাজাতে হবে। তাদের আন্দোলনের পদ্ধতিতেও ভুল ছিল। তারা ঘোষণা দিল অবরোধের, সেটা হয়ে গেল মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশ থেকে আবার হয়ে গেল অবস্থান। এভাবে মিনিটে মিনিটে সিদ্ধান্ত নিলে আর হুট করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে তো আর আন্দোলন হয় না। আন্দোলন হতে হয় সূচারুরূপে সিদ্ধান্ত নিয়ে। এরপর পরামর্শের ভিত্তিতে যেটুকু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটুকুই পালন করতে হবে এবং এই পরামর্শের পদ্ধতি এবং কমিটিও আরো শক্তিশালী করতে হবে। রাতারাতি তো আর কোনো কিছু হয়ে যায় না। তাড়াহুড়ায় কি আর কামিয়াবি অর্জন করা যায়! ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত নিয়ে এরপর আস্তে আস্তে এগুতে হয়। এটা তো আর একদিনের আন্দোলন না। কারণ কোনো সরকারই এই দাবিগুলো অত সহজে মেনে নিবে না। টুকটাক হয়তো মানতে পারে। কাজেই এই আন্দোলন সব সরকারের সময়ই চলবে। তাই একটা দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের মতো তো এটা এগোয়নি। তাই হুট করে কোনো কিছু করে ফেলার মানসিকতা পরিহার করা উচিত।
এই আন্দোলনে এমন কিছু লোকও ঢুকে গেছে যারা আমাদের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টি করে। তাহলে আপনিই বলেন, আমরা এক থাকবো কীভাবে? এক মঞ্চে বসবো কীভাবে? যার ফলে এদের কারণে সতর্কতার সাথে এগুনো সম্ভবপর হয়নি।
আরো আশ্চর্যের ব্যপার হলো, এত বড় ধাক্কার পরও হেফাজত তাদের সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে বলেও মনে হয় না। এমন কোন আলামত তো আমি দেখছি না। আমি এই কথাগুলো মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমি সাহেবকেও বলেছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি এগুলো নিয়ে ওপর মহলে আলোচনা করবেন। জানি না তিনি কী করেছেন। আমার মনে হয় না যে তিনি তা করেছেন। অথবা খুব সম্ভব আমার কথাগুলো গ্রহণযোগ্যতাই পায়নি। কারণ ওই লোকগুলো শেষ পর্যন্ত সংগঠনে এবং আন্দোলনে বহাল তবিয়তেই আছে।
সুতরাং আমি আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই, এই আন্দোলনটাকে একটা দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন হিসেবে ওইভাবে পরিকল্পনা করে সামনে এগুতে হবে। আমাদের মধ্যে যারা ফাটল সৃষ্টি করে তাদেরকে এতে শরিক করা যাবে না। হ্যাঁ, তারা কর্মী হিসেবে আসলে আসতে পারে; যে কোনো মুসলমানই তো আসতে পারে। কারণ তখন তো এমন অনেক লোকও ছিল যারা দিনে মশওয়ারায় বসেছে আহমদ শফী সাহেবের সাথে আর রাতে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের সাথে। তো এদেরকে নিয়ে আপনি কী আন্দোলন করবেন শুনি? এদের উপস্থিতিতে কি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তা গোপন রেখে কার্যকর করা যাবে?
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সামনে আগাতে পারে তাহলে অনেক ভাল।আর নয় এর খেসারত দিতে হবে আরো অনেক।
শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন