ধারাবাহিক প্রকাশনা # মওদূদীবাদেরস্বরূপ # ৮মপর্ব #
লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ১৭ মে, ২০১৪, ০৮:০১:১৪ রাত
সাহাবায়েকিরামের উপর আক্রমণ
মুসলমানদেরবিশ্বাস , সাহাবায়ে কিরাম রাঃ সবাই বেহেশতী । দিনের ব্যাপারে তাঁরা সবাই নির্ভরযোগ্য । তাঁদের প্রতি মুহাব্বাত , ভক্তি শ্রদ্ধা হচ্ছে ইমানের অংশ এবং তাঁদের সাথে বিদ্বেষ পোষন করা হচ্ছে কুফরী ও মুনাফিকী । কিন্তু মওদূদী তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং তাদের প্রতি মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধা নষ্ট করার জন্য তাঁদের উপর মিথ্যা অপবাদের ঝড় তুলেন । নিম্নে তার কিয়দংশ প্রদত্ত হল : ১.মওদূদী বলেন , যে সমাজে ব্যাপকভাবে সুদখোরী প্রচলিত থাকে সেখানে এই সুদখোরীর কারনে দু-প্রকারের নৈতিক ব্যাধি দেখা দেয় । তা হলো সুদ গ্রহণকারিদের মধ্যে লোভ লালসা কার্পণ্য ও স্বার্থপরতা ; আর সুদ দাতাদের মধ্যে-ঘৃণা - বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা । ওহুদের পরাজায়ের পিছনে এ উভয় প্রকার রোগেরেই কিছু -না -কিছু প্রভাব বিদ্যমান ছিল ।" ( তাফহিমুল কুরআন , মুল . আবুল আ লা মওদুদী , অনুবাদ . মুহাম্মাদ আং রাহিম , পৃষ্টা ৬০, ২য় খন্ড , সুরা আলে ইমরান . ৯৯নং টিকা , ১২প্রকাশ . জুন ২০১২, খায়রুন প্রকাশণী ,ঢাকা)
মওদূদীর মতে ,সূদখোরীর কারণে সৃষ্ট নৈতিক রোগ যথা লোভ লালসা , কৃপনতা , স্বার্থপরতা , ঘৃনা বিদ্বেষ , প্রতিহিংসা যা নবী করীম সাঃ এবং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে বিদ্যমান ছিল তার প্রভাবে উহুদেরযুদ্ধে পরাজয় ঘটে । নবী স. এবং সাহাবায়ে কিরামের চরিত্রের উপর এত জঘন্য অপবাদ দেয়ার ধৃষ্টতা কোন ইয়াহুদী খৃষ্টানও কোন দিন করেনি ।
২. উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে মওদূদী লিখেন ,"তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে একের পর এক বিরাট বিরাট পদ দান করতে থাকেন । তিনি তাদেরকে এমন সব সুযোগ-সুবিধা দান করেন ,যা জনগণের মধ্যে সাধারণভাবে সমালোচনার লহ্ম্যবস্তুতে পরিণত হয় ।" ( খেলাফত ও রাজতন্ত্র ,মূলঃ আবুল আ'লা মওদূদী , অনুবাদঃ গোলাম সোবহান সিদ্দিকী ,পৃষ্ঠা-১০৬, ৮ম প্রকাশঃ জুলাই ২০০৮ , আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা )
এটি তৃতীয় খলীফা উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধবাদীদের একটি ষড়যন্ত্র মাত্র ।
৩. ক .ওয়াহী লেখক মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে মওদূদী লিখেন ,হযরত মুয়াবিয়া রাঃ-র শাসনামলে একটি নিকৃষ্টতম বেদআত চালু হয় । তিনি নিজে এবং তার গভর্নরগণ মিম্বারে দাড়িয়ে খুতবায় হযরত আলী রাঃ-র উপর প্রকাশ্যে গাল-মন্দ শুরু করেন । ( খেলাফত ও রাজতন্ত্র , মূলঃ আবুল আ'লা মওদূদী ,অনুবাদঃ গোলাম সোবহান সিদ্দিকী , পৃষ্ঠা-১৭১ ,৮ম প্রকাশঃ জুলাই ২০০৮ ,আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা )
এটি ছিল মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর গভর্নরদের উপর শীয়ার সাজানো একটি জঘন্যতম মিথ্যা অপবাদ ( দ্রষ্টব্যঃ বুখারী শরীফ , বাবু মানাকিবে আলী রাঃ )
খ . তিনি আরো লিখেন , "গনীমতের মাল বন্টনের ব্যাপারেও হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কিতাবুল্লাহ্ এবং সুন্নাতে রাসূলের স্পষ্ট বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করেন ।" ( খেলাফত রাজতন্ত্র , মূলঃ আবুল আ'ল মওদূদী , অনুবাদঃ গোলাম সোবহান সিদ্দিকী , পৃষ্ঠা-১৭২ ,৮ম প্রকাশঃ জুলাই ২০০৮ , আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা )
মওদূদী যে ঘটনার উপর ভিত্তি করে মুয়াবিয়া রাঃ -র উপর এত বড় মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলেন , ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , উক্ত ঘটনায় মুয়াবিয়া রাঃ কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের বিধানকে সমুন্নত করেছেন এবং এটি তাঁর গৌরবোজ্জল কীর্তি হিসাবে গন্য ।
( মুখতাসার তারীখে ইবনে আসাকির ,মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর জীবনী অধ্যায় ) # চলবে।
**মউদুদী মতবাদের যে সকল বন্ধুরা জবাব দিচ্ছেন,তাদেরকে বলবে ওহেতুক পাও ক্যাচাল না করে আমি যা লিখছি শুধু তার উপর ভিত্তি করেই আমার লেখা খন্ডন করুন।
**শুধু মাত্র সঠিক দিনের পথে ফিরে এসে সঠিক দ্বীনের উপর চলার জন্যই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আল্লাহ যাকে বুঝ দেন ,কে তাকে গোমড়া করবে।আর যাকে গোমড়া করেন কে তাকে বুঝ দান করবেন
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিছুটা দ্বিমত; আসলে আশারায়ে মুবাসসারা ব্যতিত কারো ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না যে সে বেহেশতি। তবে আমরা তাদের বেহেশতি হওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি আশাবাদি। (ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া দ্রষ্টব্য)
অনেক ক্ষেত্রেই মরহুম মাওলানা মওদুদী সাহেবের সাথে একমত হলেও এই ক্ষেত্রে হতে পারিনি। হযরত মুআবিয়ার (রাযি.) সম্পর্কে মরহুম মাওলানা মওদুদী সাহেব যে সকল আপত্তি এনেছেন তার উত্তর ইতোমধ্যে পাকিস্তানের মুফতি তাকী উসমানি সাহেব তার একটি কিতাবে দিয়েছেন, যার বাংলা অনুবাদের নাম "ইতিহাসের কাঠগড়ায় আমির মুআবিয়া", আগ্রহীরা বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
কিভাবে বুঝলেন সেটা? একটু দলীল সহ বলবেন?
কিন্তু এই অবস্থায় শয়তান আপনাকে এমন একটা বিপদে ফেলবে যা আনপ্রিসিডেন্টেড, এবং হয়ত আপনার কল্পনার বাইরে। তা হল 'ইলমের অহংকার'। আপনার সাবকনশাস মাইন্ড আপনার মনের অজান্তেই আপনাকে অনেক জ্ঞানী হিসেবে জাজ করবে। অন্য কথায় , আপনি আপনার আশপাশের ইসলামিস্টদের 'এরা কিচ্ছু জানেনা, এদের অনেক পড়াশোনা করা দরকার অথবা 'এরা দালাল, এরা মুনাফিক' এরকম মনে হবে।
খুব ভাল ম্যাথ এনালাইসিস করার যোগ্যতাই ইসলামে 'সবকিছু' নয়। ইসলাম সম্বন্ধেও পর্যাপ্ত ইনফরমেশন মাথার মধ্যে গ্যাদারড অবস্থায় থাকা জরুরী। অতীতের স্কলারদের মত সম্বন্ধেও জানা জরুরী। ইসলামী সভ্যতার ১৫০০ বছরে মুসলিমরা কি কি ভুল করেছে - তার ইতিহাস জানাও জরুরী। শ'খানেক তাফসীর, একমিলিয়ন এর বেশী হাদীস, হাদীসের চেইন,এর উসূল :: এই সবকিছুকে স্কিপ করে শুধু কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখে আর গুগল সার্চ করেই নিজেকে বহুত জ্ঞানী মনে করা এবং অন্যদের মূর্খ মনে করে অবশ্যই অহংবোধ ( আল্ল-হু আলম )। 'পর্যাপ্ত ইনফরমেশন' এর ঘাটতি নিয়ে শুধু এনালাইটিক এবিলিটি দিয়ে জ্ঞানী হওয়া যায়না। বরং এটা বেশী ক্ষতিকর, কারণ আপনার এনালাইটিক এবিলিটি আপনাকে ভুল রেজাল্ট পাবলিশ করাবে এবং মানুষকে সেটা গিলাবেও।
দু:খজনক হলেও অধিকাংশ ফেইসবুক ইসলামী সেলিব্রেটি এই সমস্যায় আক্রান্ত। ঠুস-ঠাস একে ওকে বলতেছে: " আপনার জ্ঞানে ঘাটতি আছে " , " আপনার আরও স্টাডি করা দরকার ( মানে আরও স্টাডি করে আসেন, তার পর আমার সাথে বসার যোগ্যতা অর্জন করবেন, আপনার সাথে কথা বলার সময় 'শাইখ আমি'র নাই " , আমি বহুত ব্যস্ত লোক ), বা '' আরও স্টাডি করার পর আপনি এটা বুঝবেন "( মানি এখনও আপনি আমার স্ট্যাটাসে আসতে পারেননাই, আমি বুঝে গেছি, আপনি বুঝেন নাই )।
সেক্যুলার ইউনিভার্সিটিতে পড়ে মাত্র ২০-২৫ বছরের যুবকরা কিভাবে ইসলামী জ্ঞানে সর্বেসর্বা হয়ে অন্যের (অনেক সময় দ্বীনের স্কলারদের) জ্ঞানের দৈন্যতা কনফিডেন্টলি ধরতে পারে তা আমার জানা নেই। এত অল্প বয়সে তো দ্বীনের 'অ' 'আ' 'ক' 'খ' শিখাও সম্ভব না। কারণ সেক্যুলাই ইউনিভার্সিটির পড়ার চাপ সামলিয়ে দ্বীনের পিছনে খুব বেশী সময় দেয়া তো মহামানব না হলে সম্ভব না।আমার এই স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য এই না যে, সবাইকে বলা : 'আগে স্কলার হও , তারপর ফেইসবুকে আসো' । উদ্দেশ্য এই যে , সব ইসলামিস্টরা যেন নিজের জ্ঞানের দৈন্যতা মাথায় রেখে বিনয়ের সাথে কথা বলেন। নিজের অহংবোধ ঝেড়ে ফেলেন। নিজের মতের বিপরীতে কথা আসলে জবাব দেয়ার সময় 'স্পেস' রেখে কথা বলেন, কাউকে তাচ্ছিল্য না করেন। কারণ , কারও উপর ওয়াহী নাযিল হয়না, যে অমুক ব্যক্তি আমার থেকে অনুত্তম অথবা অমুক ব্যক্তি থেকে আমি উত্তম। তাহলে মত বিনিময় সহজ হবে, এবং ইসলামিস্টরা একমতে পৌঁছুনোর সম্ভাবনা বাড়বে:: আর না হলে মতামত বিনিময় হবে না, প্রত্যেক গ্রুপ নিজেরা নিজেরা একটা কাল্ট তৈরী করবে, এবং একটি কাল্ট আর একটি কাল্ট এর সাথে কনটিনিউয়াস যুদ্ধ করতে থাকবে এবং ডিভাইডেশন বাড়তেই থাকবে। যেটা এখন রিয়ালিটি। পুনশ্চ : ইসলামী জ্ঞান অর্জন এর সহজতম উপায় হল মাদ্রাসায় বা ইসলামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। নিজে নিজে জ্ঞান অর্জন করলে কখনোই 'আদাব' শিখা হবে না, ইলমের টোটাল পিকচার পাওয়া যাবেনা ।এজন্যই মাদ্রাসা আপনাকে ইলম অর্জনের আগে 'আদাব' শিখাবে। এরপর অর্গানাইজড ওয়েতে উস্তাদরা আপনাকে দ্বীন শিখাবেন। নিজে নিজে শিখতে গেলে ইতস্তত: বিক্ষিপ্তভাবে শিখবেন এবং অনেক ল্যাকিংস থেকে যাবে, আর 'বেআদব' হয়ে যাবার ব্যাপক সম্ভাবনা। কারণ 'আদাব' বইয়ে পড়ে শিখা খুব কঠিন।
বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে অজস্র প্রতিষ্ঠান আছে। নিজে নিজে ইলম অর্জন করে মানুষকে ঝাড়ি মারার থেকে উস্তাদের কাছে গিয়ে আদাব শিখে আসা বেশী জরুরী মনে হয় আমার কাছে। কারণ ওই বয়সে আমার নিজের মধ্যেই আদাব এর ব্যাপক ঘাটতি ছিল, এখনও প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি । যার ফলস্বরুপ এই স্ট্যাটাসটা দিলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন