“ মওদূদী পরিচিতি ”
লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:১৪:০১ দুপুর
১৩২১ হিজরী মোতাবেক ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ আওরঙ্গবাদ শহরের আইন ব্যবসায়ী আহমদ হাসান মওদূদীর গৃহে জন্ম লাভ করেন 'আবুল আলা'। মওদূদ বংশে জন্মলাভ করার কারণে তাকে মওদূদী বলা হয়। আবুল আলার পিতার অন্তরের কামনা ছিলো তাকে আলেম বানাবার। তবে ইলম হলো আল্লাহ তাআ'লার মহা অনুগ্রহ। যাকে ইচ্ছা কেবল তাকেই আল্লাহ তাআ'লা তা দান করে থাকেন। বালক আবুল আলার ভাগ্যে তা জুটল না।
মওদূদী সাহেবের ইলমের পরিধি তার একান্ত্ ভক্ত জনাব আব্বাস আলী খান রচিত বই থেকে তুলে ধরা হলো- নয় বছর বয়স পর্যন্ত্ নিজ বাড়িতেই বালক মওদূদীর বিদ্যাচর্চা চলতে থাকে। এ সময়ে সে আরবী ব্যাকরণ সাহিত্য এবং ফিকাহ শাস্ত্রের প্রাথমিক কিতাবই শেষ করেন। তারপর আওরঙ্গবাদের ফাওকানিয়া মাদরাসায় ভর্তি করনো হয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার ছয় মাস পর পরিক্ষায় অকৃতকার্য হন। ১৯১৪ খ্রিষ্টব্দে মেট্টিক মানের পরিক্ষা এবং অংকে কাচা থাকার ধরুন উত্তীর্ণ ছাত্রদের মাঝে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন। ১৯১৬ সালে হায়দারাবাদ দারুল উলূম (ডিগ্রি কলেজ) মওদূদীকে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর কিছু দিন যেতে না যেতেই তার পিতার ইন্তেকাল হয়। সে কারণে তার ভাগ্যে আর পড়া-লেখা জুটেনি। মওদূদী সাহেব নিজেই বলেছেন, উলামায়ে কিরামের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত হবার সৌভাগ্য আমার হয়নি। রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রকাশিত দৈনিক 'জঙ্গ' পত্রিকায় ১৯-৯-১৯৭৯ ইংরেজী সংখ্যায় স্বীয় আত্মজীবনীর এক পর্যায়ে লিখেছেন যে, "মূল কথা হলো এ সমস্ত্ম কারণে সিদ্ধান্ত্ম নিলাম যে, কলমকেই জীবন নির্বাহের মাধ্যম বানাতে হবে"। প্রাথমিক অবস্থায় টাকার বিনিময়ে যথাক্রমে মদীনা তাজ, মুসলিম, আল জমিয়ত ও তরজুমানুল কুরআনে লেখালেখির কারণে তার অনুপম বর্ণশৈলি ও সাহিত্য প্রতিভার শুনাম যখন কিছুটা ছড়িয়ে পড়ে, তখন দুঃখজনক ভাবে তার কলমের মোড় ঘুরে যায় অন্য পথে। যে কলম তিলে তিলে মানব হৃদয়ে গড়ে তুলতে পারত অনাবিল তাওহীদি বিশ্বাস। সে কলমের আঘাতে করলেন তিনি বিশ্বাসীদের আকীদা বিনাশ। যে পূণ্যাত্মা সাহাবেয়ে কেরামের নিষ্কলুষতার উপর স্থাপিত হয়েছে দীন ইসলামের বুনিয়াদ, সে বুনিয়াদের উপর তিনি হানলেন তিখ্ন কলমের শানিত আঘাত। ইসলাম এর শত্রুদের রচিত ইতিহাসকে পুজি করে সাহাবায়ে কেরামের পূতঃপবিত্রতায় আরোপ করলেন, কলঙ্কের অপবাদ। প্রথম দিকে জনাব মওদূদী সাহেব তরজুমানুল কুরআন পত্রিকায় আধুনিক যুগের আলোকে ইসলাম এর বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন ও পাশ্চাত্য সভ্যতায় সৃষ্ট বিভিন্ন সংশয় নিরসনে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন।
তার খুরদার লিখনীর প্রতি শুরম্নর দিকে মাওলানা মনজুর নু'মানী ও সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীসহ বেশ কিছু উলামায়ে কিরাম মুগ্ধ হয়ে উঠেন। এ কারণে উলেস্নখিত দু'বিখ্যাত আলেম মওদূদী প্রতিষ্ঠিত 'জামায়াতে ইসলামী'তে যোগ দান করেন। পরবর্তিতে উলামায়ে কিরাম উপলদ্ধি করলেন যে, মওদূদী সাহেবের মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জন করা। এ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা অর্জন করার জন্যে ধর্মহীন রাজনৈতিক দলের ন্যায় তিনি যখন যে নীতি গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেন তখনই তা গ্রহণ করেন। যদিও তা ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী মৌল নীতির সঙ্গে যতই সাংঘর্ষিক হোক না কেন, তবুও অবলীলায় তিনি তা গ্রহণ করেন এবং ইসলামের নামে গ্রহণ করেন। প্রয়োজন হলে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী মৌল নীতিমালার স্ব-কল্পিত ব্যাখ্যা দেন। এভাবে ধর্মকে তিনি রাজনীতি সর্বস্ব করে তুলেন। ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলোর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান শুরম্ন করেন। তিনি বলেন, 'ইলাহ' অর্থ শাসক। 'আল্লাহ' অর্থও তাই। 'দীন' হলো রাষ্ট্র সরকার। আর 'শরীয়ত' হলো রাষ্ট্রের আইন কানুন। তিনি বলেন- নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধি-বিধান পালন করার নাম ইবাদত নয় বরং ইবাদত হলো রাষ্ট্রের আইন মান্য করার নাম। তার এ সব ব্যাখ্যা 'খুতবাত' গ্রন্থে বিদ্যমান ।
(ধারাবাহিক পোষ্ট, লেখক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক)
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৪ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
----------
ধর্মহীন পন্থা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেন নাই।
==================================
ব্যক্তিগতভাবে আমি মাওলানা মওদূদী (রহঃ) এর ভক্ত। তিনি কিছু ভুল করতেই পারেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তার ভুলগুলি নয় সঠিক গুলিকে ধারণ করা।
==========================
না পরে কমেন্ট করে কি লাভ?
শুকরিয়া।
মওদুদী সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা করেছেন - সারা জীবন তার এ একটা ভুলই ধরতে পারছেন? তা ও কোনো রেফারেন্স ছাড়া। মওদুদী তো একজন মানুষ বৈ আর কিছু নয়। তিনিতো নিজেকে কখনো ভুলের উর্ধে্ব দাবি করেননি। একটি ভুলের জন্য তার দ্বীনের প্রতি সকল খেদমত কি বাতিল হয়ে যাবে?
একাডেমিক শিক্ষা কি একমাত্র শিক্ষা? অনেক বিখ্যাত আলেম ও প্রসিদ্ধ চার ইমাম - এদের কারোই একাডেমিক শিক্ষা ছিলনা। তা বলে কি তাঁরা আলেম নন?
আর যারা প্রতিনিয়ত শিরকীতে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে কেন কলম চলেনা আপনাদের?
মওদূদী (রহঃ)এর সাহাবাদের সমালোচনার বিষয়ে প্রতিউত্তর ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছে। সত্য হচ্ছে, মওদূদী (রহ) এর বিরোধীতাকারীরা ঐ সব প্রতি উত্তরের কোন উত্তর না দিয়ে সেই পুরানো গীতই গেয়ে চলছেন।
হার ঈমামের শানে আপনার মন্তব্য অজ্ঞতার প্রমান করলেন।
১। বর্তমান যুগে যেভাবে স্কুল-মাদ্রাসায় লিখাপড়া করা হয়, আড়াইশত বছর আগেও এই পদ্ধতি ছিলনা। বৃটিশেরা সিলেবাসের মাধ্যমে পাঠ দান পদ্ধতি চালু করে, পরে দুনিয়াতে তা প্রসার লাভ করে। আগে ইলম সংগ্রহ করতে হলে, নিজের উদ্দ্যেগে গিয়ে বিভিন্ন আলেম থেকে কিংবা কোথাও আলেম জোগাড় করে শিক্ষা অর্জন করা হত।
২। মওদূদী বাল্যকালে কোন মাদ্রাসায় পড়া লেখা করেন নাই বলে বলেছেন। ঈমাম আবু হানিফা ও ঈমাম বুখারীর মত জগত বিখ্যাত ব্যক্তিরাও কোন মাদ্রাসায় লিখাপড়া করেন নাই। যেখানে জ্ঞানের সন্ধান পেতেন তারা নিজ উদ্যোগে তা আহরণ করেছেন। এদের পদ্ধতি যদি ভুল না হয় তাহলে মওদূদী কেন বিতর্কিত হবেন, বুঝলাম না।
৩। ইসলাম অবশ্যই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে, কানযুল উম্মালের লম্বা হাদিস আছে, 'ইসলাম রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যতীত অসহায়, যেভাবে দাড়োয়ান ব্যতীত একটি রাজ প্রসাদ..।'
৪। মূসা (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ), মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে যত লড়াই হয়েছে তার মূল কেন্দ্রই ছিল ইসলাম। সেভাবে আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী (রাঃ) রাষ্ট্রপতি ছিলেন আবার ইসলামের ইমাম ছিলেন। হুসাইন (রাঃ) তার পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন এই রাষ্ট্রের কতৃত্ব নিয়ে। সেখানে মুওদূদী রাষ্ট্রক্ষমতা চাইতেন এটাতো তিনি গোপনে বলতেন না প্রকাশ্যে বই পুস্তকে লিখেছেন। ভারতের এতবড় আলেমেরা তার দলে ঢুকতে হল, কিছুদিন সাথে থাকার পর বুঝলেন মওদূদী রাজনীতি করছেন। এত বড় আলেমদের এই ছোট্ট কথাটি বুঝতে এত দেরী হল কেন, এই তথ্য কাকে ছোট করলেন কাকে বড় করলেন বুঝলাম না।
৫। রাজনীতি করব, রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিব। এটা বলতে বুকের পাঠা বিশাল আকৃতির হতে হয়। কেননা এখানে জুলুম আছে, নির্যাতন আছে তারপর ক্ষমতায় যাবার সুযোগ মিলে। যেটা নবীরাও করেছেন।
৬। যেসব হুজুর বলে ইসলামে রাজনীতি নাই, তারা ফিতরা জাকাত খেয়ে মানসিক হীনমন্য হয়ে পড়েছে। হাত পাতে এমন ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতি হবে দূরের কথা, এলাকার মেম্বার ও হতে পারেনা। সুতরাং বর্তমানের প্রশাসনিক নেতৃত্ব ব্যতীত বিরাট আলেমের মর্যাদা ওমরের যুগের একজন সীপাহীর চেয়েও কম।
তবে মনগড়া কতগুলি প্রশ্ন করলেন দেখে হাসি পেলো।তার পরে জবাব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
খুব সত্যি কথা বলেছেন। আল্লাহপাক যদি আপনাকে এই বিষয়গুলো বুঝার তাওফীক না দেন সেজন্য মাওলানা মওদূদীকে দায়ী করবেন কেন? বরং রাসূল (সাঃ) এর ২৩ বছরের জীবন ভালমতো অধ্যায়ন করুন, যদি আল্লাহপাক চোখ খুলে দেন।
কোন কিছুর সমালচনা করার আগে সেটা ভালমতো জানাই জ্ঞানির কাজ। ভুলবশতঃ বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, নাকি মানুষকে বিভ্রান্ত করার মিশন নিয়েই লিখছেন?
আল্লাহপাক হেদায়াত দিন।
মূলত এসব ব্যক্তিরা এর সবই বুঝে, ঝুঁকি নিতে সাহস করেনা বলেই, এড়িয়ে চলে আর এড়িয়ে চলতে গেলেই একটা গ্রহনযোগ্য ব্যাখা দাড় করাতে হয়। সচেতন মানুষের কাছে এসব ব্যাখা গ্রহনযোগ্য হবেনা। তাই যারা এর স্বপক্ষে কথা বলে, তার মুখ বন্ধ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এটা তারই ফলশ্রুতি। অনেক ধন্যবাদ।
আার কতগুলি চুনা-পুটি ইলেম কালাম বিহীন একতরাফা মউদুদীর সাফাই গায় আপনাদের মত।
বুঝি না আলেমরা এত অজ্ঞান কেন????
কত বড় কপাল পোড়া!
মুনাফিকি,সুবিধাবাদি হয় না যারা।
আল্লাহ শ্রেস্ঠ বিচারক।
কে যে পথভ্রষ্ঠ কে সৎপথপ্রাপ্ত তা জানার জন্য খুব বেশী অপেক্ষা করতে হবে না;মাত্রতো মৃতু্র পর্যন্ত বাকী। কিন্তু ভুল প্রমাণিত হলে ফিরে আসার কোন পথ নাই মনে রাখবেন। আমিও মনে রাখছি।
আল্লাহপাক সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর অটুট রাখুন।
আপনি ঠিকই বলেছেন।এজন্য আমাদের উচিত আহলে হক্ব আলেমদের কাছ থেকে প্রকৃত সত্য জেনে তার অনুসরন করা।আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক রাস্তা পরিচালনা করুন।
মনগড়া তাফসীর পড়া করা থেকে বিরত থাকুন।১৪০০ বছরের ইতিহাসে ইসলামের এতবড় অপব্যাখ্যা কেউ করে নাই যে রকম করেছে মউদুদী।এব্যাপারে আরো সতর্ক হউন।
মনে রাখবেন - ওয়ান ওয়ে রাস্তা - End.
এ দুনিয়ায় আর কোন সমস্যা নাই? মওদুদীই কি একমাত্র সমস্যা?
মওদুদীর বিরুদ্ধে ৫০ বছর ধরে লেখা হচ্ছে, তাতে মওদুদীর জামায়াত কি কমছে না বাড়ছে?
আজ বিশ্বে মুসলমানরা অস্তত্বেের সংকটে ভুগছে । কাফের, মোনাফেক, মোশরেক সব আজ একাট্টা হয়েছে মুসলমানদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে । কিন্তু এ চক্ষুষ্মান অন্ধরা তা দেখছেনা । ওদের জন্যই কি আল্লাহ নাযিল করেছের এ আয়াত
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।(সূরা আরাফ-১৭৯)
বাসায় মধ্যে যে মুনাফিক ঘাপটি মেরে আছে ,তাকে রেখে সারা দুনিয়ার মুনাফিকদের কিভাবে মুকাবিল করা যায়।
মউদুদীর ব্যাপারে আপনাদের এত এ্যনার্জি কেন? তার অপব্যাখা মূলক লেখা গুলি পরিহাহার করলে সমস্যা কোথায়? কাদেরকে খুশি করার জন্য এগুলো প্রচার প্রসার করা হয়?
মন্তব্য করতে লগইন করুন