হেফাজাতের ভিতরে থাকা যে আলেমদের ব্যাপারে সচেতন আলেমদের অভিযোগ ছিল শুরু থেকে

লিখেছেন লিখেছেন অপ্রিয় সত্য কথা ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৪:১৫ দুপুর

হেফজাতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন। যখন বাংলাদেশের আলেম-ওলামা এবং ইসলামী দল গুলো অভ্যন্তরিন কোন্দল আর প্রতি হিংসার কারনে নিজেদেরকে এক প্লাট ফর্মে এনে নিজেদের ঐক্যবদ্ব্য ভাবে দ্বীনের স্বার্থে কাজ করতে ব্যার্থ।তখন বাংলাদেশের আকাশে হেফাজাতে ইসলাম সংগঠনটি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য একটি আশার প্রদীপ হিসাবে ফুটে উঠেছিল।

কিন্তু শুরু থেকেই কিছু স্বার্থন্বেষী মহল এই মহান সংগঠনটিকে নিজেদের হীন স্বার্থে ব্যাবহারের জন্য আধা-জ্বল খেয়ে নিলর্জ্জ ভাবে অন্য ইসলাম বিদ্বেষী সংগঠনের দালালি করে চলছে।

হেফাজাতের যে সকল মহান ব্যাক্তিগন হেফাজাতকে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল সা. এর শান রক্ষার্তে জানা-মাল কুরবান করার প্লাট ফর্ম তৈরি করেছিল , তারা এখন সুবিধাবাদী দালালদের এই হীন কার্জ উপলব্দি করতে পেরে তাদের ব্যাপারে দ্রত পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করছে।

http://www.banglamail24.com/index.php?ref=ZGV0YWlscy0yMDEzXzA4XzIwLTY0LTUwMzc3

এবার হেফাজতের দুই যুগ্ম-মহাসচিবের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আধিপত্য বিস্তার, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার অভিযোগ এ দুই নেতার বিরুদ্ধে। দু'জনকেই হেফাজত থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি উঠেছে।

আলোচিত এ দুই যুগ্ম-মহাসচিবের একজন মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং অপরজন হচ্ছেন মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী। দু’জনেই খেলাফতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে যুক্ত। এরমধ্যে মুফতি ফয়জুল্লাহ খেলাফতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব এবং মাওলানা রুহী খেলাফতে ইসলামীর যুগ্ম-মহসচিব, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব।

বাংলামেইলে মুফতি ফয়জুল্লাহর সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ফোন করে তারা ফয়জুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের অভিযোগের তীর মাওলানা রুহীর দিকেও। তারা দাবি করেন, এ দুই নেতাকে সংগঠন থেকে সরিয়ে দিলে হেফাজতকে আর কোনো অনাকঙ্খিত অবস্থায় পড়তে হবে না।

হেফাজতের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও চট্টগ্রাম মহানগরের একাধিক নেতাও এই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তবে আলেমদের ঐক্যের কথা বিবেচনায় এনে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির পরে শাপলা চত্বরে রাতে অবস্থানের বিষয়ে সংগঠনের আমির আল্লামা শফীকে ভুল বুঝিয়েছেন ফয়জুল্লাহ ও রুহী। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা আমিরকে না জানিয়ে বিএনপির কাছ থেকে ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে রাতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত আদায় করে নেন তারা। অথচ এ সিদ্ধান্তে সংগঠনের বেশিরভাগ নেতারই মত ছিল না। পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সংগঠনের প্রায় সব নেতাই সন্ধ্যার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে দেয়ার মতামত জানিয়েছিলেন। তারপরও সবার মতামতকে উপেক্ষা করে আমিরকে ভুল বুঝিয়ে রাতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত আদায় নেন এ দু’জনেই। এমনকি এ সময় আমিরের কাছে নিজেদের আশির্বাদপুষ্ট লালবাগকেন্দ্রিক এক দুইজন নেতা ছাড়া অন্য কাউকে এ দু’নেতা ঘেঁষতে দেননি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

৫ মের কয়েকদিন আগ থেকেই হেফাজতের আভ্যন্তরীণ বৈঠকগুলোতে এই দুই যুগ্ম-মহাসচিবের সঙ্গে অন্যান্য নেতাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তারাও সবাইকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অন্যদেরকে আমিরের সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না। দু’জনেই এক দলের হওয়ায় এবং আঠারো দলের শরিক দলে থাকায় তারা হেফাজতের নামে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ। আমিরের কাছ থেকে নিজেদের মতো করে সব ধরনের সিদ্ধান্ত আদায়েও তারা দু’জনই তৎপর ছিলেন বলে জানা গেছে।

শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর কাছে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রায় সব নেতা। কেন্দ্রীয় নায়েবে আমিরদের কয়েকজনও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন। আমির এসব অভিযোগের সঙ্গে ফয়জুল্লাহ ও রুহী সম্পৃক্ত বলেও মন্তব্য করেছেন এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও অন্য নেতাদের জানান।

এ বিষয়ে হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত ছিল ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান না করার পক্ষে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই সমাবেশ শেষ করে দেয়ার মত আমি দিয়েছিলাম। সন্ধ্যার একটু আগে আমিও সমাবেশ থেকে চলে গেছি। সেদিন অবস্থান না করলে হেফাজতের পরিস্থিতি এমন হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক ঘটনা আছে। বহুলোক নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক সমস্যা হয়। তবে সেদিন কারা মোনাফেকের ভূমিকা পালন করেছে, সেটা উন্মোচিত হয়ে যাবে।’

হেফাজতের এ নায়েবে আমির প্রকাশ্যে ফয়জুল্লাহ ও রুহীর বিরুদ্ধে কিছু না বললেও তার একাধিক অনুসারী ফয়জুল্লাহ ও রুহীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলেন, ‘ফয়জুল্লাহ ও রুহী এখন নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করেছেন। হেফাজতের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নিজের আসন পোক্ত করার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন। কে শহীদ হলো আর কে আহত হলো, এ নিয়ে ফয়জুল্লাহদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। হেফাজত থেকে এসব নেতাদের বহিষ্কার করা উচিৎ।’

এদিকে ঢাকা মহানগর হেফাজতকেও এই দুইজন নিজেদের আয়ত্তে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্যই ঢাকা মহানগর হেফাজতের বেশিরভাগ সভা নিজেদের মতো করে লালবাগেই আয়োজন করেন। এসব সভায় মহানগর হেফাজতের দায়িত্বশীল অনেককেই না জানিয়ে পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে সেরে ফেলেন। এমনকি হেফাজতের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় দপ্তরও এ বিষয়ে কিছুই জানে না অভিযোগ এসেছে।

ঢাকা মহানগর হেফাজতের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বাংলামেইলকে বলেন, ‘মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা রুহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অচিরেই বসা হচ্ছে। ফয়জুল্লাহ সাহেবের রাষ্ট্রগঠন নিয়ে কয়েকটি বক্তব্য আছে। এগুলো সাংগঠনিক বক্তব্য না, সাংগঠনিক বিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের হেফাজতের মিটিংয়ের খবর জানি না। তারা তাদের মতো করে মিটিং করেন।’

ঢাকা মহানগর হেফাজতের প্রচার সেলের সদস্য মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর হেফাজতে প্রচার সেলের প্রধান বলে কোনো পদ নেই। এখানে সাত সদস্যের একটি প্রচার কমিটি করা হয়েছে। অথচ মুফতি ফয়জুল্লাহর লোক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল নিজেকে প্রচার সেলের প্রধান দাবি করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা হেফাজতকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে চাইছে, তারা রাজনৈতিক অভিভাবক শূন্য। এজন্য তারা এখন মুফতি ওয়াক্কাসসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। এমমনকি ঢাকা মহানগরের সভাগুলো তারা তাদের মতো করে পত্রিকায় পাঠিয়ে দেয়। অনেকসময় সভা না করে বিভিন্নজনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এটা সাংগঠনিক নিয়ম না।’

চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলামেইলকে বলেন, ‘ফয়জুল্লাহ ও রুহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখন আর হেফাজতকে যাতে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সেসব ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফয়জুল্লাহরা যাতে আর এ ধরনের স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা এখন নমিনেশন বাণিজ্য করছে। হেফাজতের ব্যানারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে। তবে এ সুযোগ আর থাকবে না। বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলোকে এ বিষয়ে আমরা অবগত করবো। হেফাজতের মেইনস্ট্রিম ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবে যাতে কিছু করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব বাংলামেইলকে বলেন, ‘সে রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত আমির কয়েকজনের বুদ্ধিতে দিয়েছেন। এ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব পদ থেকে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকেও সরিয়ে মুফতি ফয়জুল্লাহ সে পদ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানা গেছে। ৫ মে’র আগে এক সভায় তিনি নিজেকে সে পদের উপযুক্ত বলে দাবি করলেও অন্যদের তোপের মুখে তার অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।

জানা গেছে, এ দুই নেতাকে হেফাজত থেকে বহিষ্কারের জন্য সংগঠনের ভেতরে বড় একটি অংশ সরব হয়ে উঠেছে। তারা সংগঠনের আমিরের কাছে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগও করেছে। যেহেতু ৫ মে’র পরে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি, তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানান অনেকে।

তবে সব অভিযোগ খণ্ডন করে যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলামেইলকে বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এসব আওয়ামী লীগের চক্রান্ত। আমাকে বিতর্কিত ও বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই আওয়ামী লীগের লাভ। হেফাজত একটি ঈমানী আন্দোলন, সে আন্দোলনের জন্য আমি সব ধরনের অপবাদ সইতে রাজি আছি। তবুও এ আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File