"মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার প্রপাগান্ডা এবং বাংলাদেশ"

লিখেছেন লিখেছেন নূরা রাজাকার ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০১:৪৯:৫১ রাত



হলিউডের সিনেমাগুলোতে আরব ও মুসলমানদের ‘Stereotype’ করে রেখেছে। ১৮৯৬ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্তও একই প্রক্রিয়া চলছে। দেখানো হয়েছে, আরব পুরুষ মানেই মূর্খ, কুৎসিত, কালো, গর্দভ, প্রচন্ড নারী আসক্ত, এবং মানবিকতাহীন পশু। তাদেরকে বানানো হয়েছে ভাঁড়/কমিডিয়ান হিসেবে। আর আরব নারীদের দেখানো হয়েছে, পেট বের করে কোমর দুলিয়ে নেচে চলেছে, পরনে আছে স্বচ্ছ পাতলা কাপড় যা দিয়ে প্রায় সবই দেখা যায়, আলি বাবার মর্জিনা টাইপের পোষাক কিন্তু পেট কোমর বের করে নেচে চলেছে, অবিরাম বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি লোকদের। আবার তাদের দেখানো হয়েছে তারা বোরকা পরা অবস্থায়, যেন তারা কিছুই জানে না, মূর্খ, অশিক্ষিত, নিবোর্ধ। ১০০ বছর ধরে এই প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে, ফলে মানুষ আরব মানেই মনে করে যে তারা শয়তান, ভিলেন, সমাজের কীট, পশুর চেয়েও অধম। এগুলোর ফলে যদি আরবরা ইসরাইলের সন্ত্রাসী হামলায় মারা যায়, আহত হয়, বাচ্চা/নারীরা ধর্ষিত হয় মানুষের তাদের প্রতি কোন মায়া হয়না, কারন, তারা সিনেমা, সোপ-অপেরা, মিউজিক ভিডিওতে আরবদের নিকৃষ্ট হিসেবেই দেখে এসেছে এবং সেটাকেই বাস্তব মনে করেছে। ফলে যদি একজন আরব পশ্চিমা বা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের হাতেও মারা যায় তাহলে তারা মনে করবে, যাক, একজন সন্ত্রাসী, একজন সমাজের কীট কমলো!! পৃথিবী ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে বেচে গেল!!

তারা কিছুতেই আরব বিশ্বের বাস্তবতাটা জানতে পারেনা অথবা চায় না। অনেক আরব দেশে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষার হার অনেক বেশি!! উদহারণ হিসেবে কুয়েতের কথা বলা যায়, কারন সেখানে পুরুষ এবং মেয়েদের শিক্ষার হারের অনুপাত ১:৬!!!! একথা পশ্চিমা মিডিয়াতে কখনোই বলা হয় না যে, আরবদের একটা বড় অংশ সেক্যুলার, তারা নাচ-গান করে, পার্টিতে যায়, শার্ট-প্যান্ট পরে, অভিনয় করে, মডেলিং করে পশ্চিমাদের মতই, গান গায়। তারা চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, লেখক, কবি, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, রাজনীতি প্রায় সব ধরনের পেশার সাথেই যুক্ত!!! পশ্চিমারা তাদেরকে শুধু খারাপ দৃষ্টিতেই দেখতে চায় এবং বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায়!!

আমাদের পাশবর্তী দেশ ভারতেও একই অবস্থা!! বলিউড(হিন্দি), টালিউড(বাংলা), টলিউড (তেলেগু) কলিউড(তামিল), মলিউড (মালায়লাম) ও অন্য সোপ-অপেরাগুলোতেও মুসলমানদের সন্ত্রাসী, ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়। মেয়ে চরিত্রগুলো যেগুলো ভিলেন খারাপ (বেশ্যা) চরিত্র করে তাদের নাম আয়িশা/ফাতিমা/খাদিজা/মরিয়ম ইত্যাদি নাম রাখা হয়!!! কেন??? ভেবে দেখেছেন???

একইভাবে আমাদের বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতেও যারা টুপি দাড়ি রাখে তাদের ভিলেন হিসেবে দেখানো হচ্ছে!!! কেন??? আপনার নানা, দাদা, চাচা, বাবা, প্রতিবেশি মুরুব্বিরাওতো দাড়ি রাখে তাদের কতজনের চরিত্র আপনি নাটক/সিনেমা/সোপ-অপেরার ভিলেনের মত দেখতে পান??? যদিও হয় তা খুবই সামান্যই হবে। অনেক ইয়াং ছেলে/মেয়েও ঠিকই ভিলেন হয়!!!

বর্তমানে মিডিয়াতে জামাত-শিবিরকে ভিলেন হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তাদেরকে সমাজের কীট হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আপনি আপনার পরিচিত যে জামাত-শিবিরের ছেলে/মেয়েদের কি দেখেছেন এরকম ভিলেনি ভুমিকায় অংশ নিতে। তাদের দিয়ে খারাপ কাজ হওয়া সম্ভব এরকম কি মিডিয়ার প্রোপাগান্ডার আগে আপনার মনে হয়েছিল???? কেউ আপনার কোন ক্ষতি কি করেছে (ডিরেক্টলি/ইনডিরিক্টলি)???

এসকল ছেলে/মেয়েগুলো সমাজের সবচেয়ে ভদ্র ছেলে বা মেয়েগুলোর অন্যতম। তবে কেন এই অপপ্রচার???? কার স্বার্থে এই অপপ্রচার??? আমাদের মিডিয়াগুলো কি ইহুদি/খৃষ্টান/মুশরিকদের কাছ থেকে উপদেশ/প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজ করা শুরু করেছে।

আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুর’আনে বলেন,

“মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।” (সুরা-আল-ইমরান; আয়াত-২৮)

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” (সুরা-আল-ইমরান; আয়াত-১১৮)

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?” (সুরা-নিসা; আয়াত-১৪৪)

“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” (সুরা-মা’য়িদা; আয়াত-৫১)

“হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও।” (সুরা-মা’য়িদা; আয়াত-৫৭)

আপনি ভাল করেই জানের আপনার এলাকায় সন্ত্রাসী, দূর্ণীতি, হত্যা, ধর্ষণ, গুম ইত্যাদি কাজের সাথে কে বা কারা (কোন রাজনৈতিক দলের লোক) জড়িত। তবে কেন অপপ্রচারে কান দিবেন??? আপনার নিজের বুদ্ধি বিবেকের উপর কি আপনার আস্থা নেই, আপনার নিজের কি বিশ্লেষণী ক্ষমতা নেই??? একজন আপনাকে পুতুল নাচের মত কলকাঠি নাড়াবে আর আপনি অমনি নড়তে থাকবেন???

আপনার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করুন, ব্যবহার না করার দরুন মরিচা পড়ে গেছে। ব্যবহার করুন তাহলেই বুঝবেন কারা দেশের বন্ধু আর কারা শত্রু!!!

বিষয়: বিবিধ

১৩০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File