এরা কি বাংলাদেশের পুলিশ!

লিখেছেন লিখেছেন ানিক ফেনী ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৬:২২ রাত



স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যথেষ্ট পুরনো। তবে অভিযোগের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল নাগরিকদের ওপর পুলিশের পৈশাচিক নির্যাতনের বিষয়টি। কখনও কখনও পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

কিন্তু এখনকার পুলিশ? পিটুনি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ—এগুলো এখন বাসি হতে চলেছে। এখন ‘দেখামাত্র গুলি’ করতে পুলিশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পুলিশের গুলিতে গত দুই মাসে অন্তত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবাদী জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে এরকম মৃত্যু সভ্য দুনিয়ায় তো অচিন্তনীয় ব্যাপার, এমনকি আফ্রিকার জংলি শাসনেও এমন নজির অন্তত সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি।

স্বভাবতই পুলিশের হাতে এরকম মৃত্যুকে দেশের মানুষ গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে। অবশ্য এতে জোর আপত্তি আওয়ামী সরকার ও তাদের সহযোগীদের। নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতাকে গণহারে হত্যাকে ‘দুর্বৃত্তদের মৃত্যু’ বৈ অন্য কিছু বলতে নারাজ তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের দেখামাত্র গুলিতে নিহতরা শুধু নিরস্ত্রই ছিলেন না, আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না। নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ করাটাকে শ্রেয় মনে করেই তারা রাস্তায় নেমেছিলেন।

সেই প্রতিবাদী জনতাই সরকার ও গণমাধ্যমের একাংশের কাছে দুর্বৃত্ত। আর খুনি পুলিশ তাদের কাছে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’।

কিন্তু পুলিশ এত ভয়ঙ্কর হলো কেন? তুচ্ছ কারণে নিজ দেশের জনগণকে গুলি করে গণহারে হত্যা করতে তাদের বুকটা একটুও কাপে না কেন?

এরও বহু কারণ আছে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে এখন একদিকে যেমন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররাই প্রাধান্য পাচ্ছে, তেমনি পুলিশ বাহিনীতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে গোপালগঞ্জসহ তিন-চারটি জেলাকে। বর্তমান সরকার গত কয়েক বছরে যে বিপুলসংখ্যক পুলিশ (প্রায় ৩০ হাজার) নিয়োগ দিয়েছে, তার বড় একটা অংশই ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ছিল। বস্তুত, পেশাদারিত্বের পরিবর্তে গত কয়েক বছরে পুলিশকে রক্ষী বাহিনীর আদলে তৈরি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ২ মার্চ আমার দেশ-এ প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বরেণ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার লিখেছেন, ‘দলীয় ক্যাডারদের পুলিশের সঙ্গে নামিয়ে দেয়ার পর পুলিশ যখন পাল্টা হামলার মুখে পড়ে, তখন তাকে পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ হিসেবে কিছু গণমাধ্যমের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীনরা প্রচার করছে। এতে নাগরিক হিসেবে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আইনের সীমা কারও লঙ্ঘন উচিত নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করছে—সে প্রশ্ন উহ্য রেখে তাদের ওপর বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ বলে যারা নিন্দা করছেন, তাদের সঙ্গে আমরা একমত নই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি জানাতে হবে—পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাডার নয়।’

কথিত এ শৃঙ্খলা বাহিনীর পৈশাচিকতার অন্যতম দৃষ্টান্ত সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে দৃশ্যত কমনীয় জনপদ কক্সবাজারে। ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের হাশেমিয়া মাদরাসাসংলগ্ন প্রধান সড়কে পুলিশের একটি দল নবাব মিয়া নামের এক যুবককে রাস্তা থেকে ধরে বেধড়ক পেটায়। একপর্যায়ে পুলিশের বর্বরতা থেকে বাঁচতে তিনি পাশের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন। পুলিশের তিন সদস্য ওই কক্ষে ঢুকে নিরস্ত্র নবাব মিয়াকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। সেই সময় ওই যুবক নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে থাকেন এবং বাঁচার আকুতি করেই চলেন। কিন্তু নির্মম পুলিশের দলটি যুবকের কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে পেটাতেই থাকেন। একপর্যায়ে যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে এক পুলিশ সদস্য নিজের হাতে থাকা শটগান যুবকের শরীরে ঠেকিয়ে গুলি করেন।

ওই ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মানুষ জানতে পারে, পুলিশের পোশাকের আড়ালে আসলে দায়িত্ব পালন করছে কিছু হায়েনা।

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে, এদের কি পুলিশ বলা যুক্তিসঙ্গত হবে? শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশীদের হেফাজত করা যাদের দায়িত্ব, এই পুলিশ কি সেই পুলিশ?

বিষয়: বিবিধ

৮৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File