ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী
লিখেছেন লিখেছেন ানিক ফেনী ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৪৯:০৪ সন্ধ্যা
রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা
মেহেদী হাসান ও শফিকুল ইসলাম
নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে লেখা হয়েছে ‘ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ইতিহাস বইটি ২০১৩ সালের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত।
ইতিহাস বইয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী আখ্যায়িত করায় এ নিয়ে সচেতন শিক্ষক-অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারাও এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ রূপ বিভ্রান্তিকর শিক্ষা দেয়ার অধিকার তাদেরকে দিয়েছে। তাদের মতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামের কোনো বিরোধ ছিল না। ইসলামের বিরোধিতার জন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
এ ছাড়া বইটিতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, তার শাসনামল, দল গঠন এবং তার সে সময়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ পর্যালোচনা করতে গিয়ে আপত্তিকর সব মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে জিয়াউর রহমানকে কখনো জিয়া, কখনো জেনারেল জিয়া সম্বোধন করা হয়েছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে জোট গঠনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার নাম রাশেদ খান মেননেরও নিচে লেখা হয়েছে।
ইতিহাস পর্যালোচনার নামে চরম দলাদলি, হিংসা বিদ্বেষ এবং সঙ্ঘাতকে উসকে দেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা। তারা জানিয়েছেন বইটির ১৯৭৫-১৯৯০ ইতিহাস অধ্যায় পড়ে মনে হয় এটি কোনো পাঠ্যবই নয়, বরং দলীয় পুস্তিকা। কোনো পাঠ্যবইয়ের ভাষা, শব্দচয়ন এবং বাক্য গঠন যে এমন হতে পারে সেটি ভেবে তারা বিস্মিত। এসব পড়ে কোনো শিক্ষার্থী সুস্থ মনমানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ‘সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০) অধ্যায়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় তিন লাইনের একটি বিষয় হলো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। এখানে লেখা হয়েছে ‘জেনারেল এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা করেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করেন। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশে এরশাদ এই সংশোধনী আনেন। বলার অপেক্ষা রাখে না ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।’
বইটির রচনাকারী হিসেবে যাদের নাম লেখা রয়েছে তারা হলেনÑ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম, ড. সুলতানা নিগার চৌধুরী ও অধ্যাপক প্রদ্যুত কুমার ভৌমিক। বইটি সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া : ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী বিষয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নয়া দিগন্তকে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিরাট একটা সুযোগ। ইসলামের বিরোধিতা করে মুক্তিযুদ্ধ হয় না। ইসলাম মানুষের জন্য। আর মুক্তিযুদ্ধও ছিল মানুষের জন্য। দেশের আপামর মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তারা ইসলামবিরোধী ছিলেন না।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, যারা এটি লিখছেন এটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত মত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কখনোই ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। বরং যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস মতেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ ইসলামের শিক্ষা হলো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। কাজেই যারা বলেন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী তাদের সাথে আমি একমত নই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামের কোনো বিরোধ ছিল না। আমরা ইসলামের বিরোধিতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।
মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত মেজর জেনারেল (অব ইব্রাহীম বলেন, যারা পাঠ্যবইয়ে এ কথা লিখেছেন (অর্থাৎ রচনাকারী এবং সম্পাদক) তারা এ জাতীয় মন্তব্য করার আগে কোন জায়গা থেকে রায় নিয়েছেন যে ইসলামকে রাষ্ট্র্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী? সংবিধান সংশোধন এবং অনুমোদন করতে পারে সংসদ। আর সংবিধান রক্ষক হলো সুপ্রিম কোর্ট। তারা তো বলেননি যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী? তাহলে তাদের কে অনুমতি দিলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য? এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পাঠ্যপুস্তক (রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম) : বইটি সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি সবার দ্বিমতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতে চাই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করতে হবে কুরআন এবং হাদিস থেকে কেউ যদি আমাকে দেখাতে পারেন তবে আমি মেনে নেবো। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম পালন করে না। ধর্ম আচরণের বিষয়। ধর্ম পালন করে মানুষ।
কিন্তু ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ কথার মাধ্যমে কেউ যদি অর্থ করে যে, ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাহলে কি তাকে দোষ দেয়া যাবে? এ প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা ভাবা ঠিক হবে না। বরং মুক্তিযুদ্ধ যে ইসলামের বিরুদ্ধে ছিল না সে বিষয়ে আমি অনেক প্রমাণ দিতে পারব। মুক্তিযুদ্ধ যে কতটা ইসলামসম্মত ছিল সে বিষয়ে আমি একটি গবেষণামূলক লেখা তৈরি করার কাজ করছি। ইসলামের শিক্ষা হলো জুলুম অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
জিয়াউর রহমানকে জিয়া বলে সম্বোধন করা বিষয়ে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা ঠিক হয়নি। জাতীয় নেতাদের সম্মান করেই সম্বোধন করা উচিত।
রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা : ইতিহাস বইটির ‘সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০)’ শীর্ষক অধ্যায় সম্পর্কে সচেতন শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন। এখানে বিভিন্ন দল বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শব্দ চয়ন করা হয়েছে যা হিংসা-বিদ্বেষ উসকে দেয়ার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
বইটির ১৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘জিয়া ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, (বিএনপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি নিজেই এই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী, বামপন্থী, ডানপন্থী বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দেয়। মূলত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আশায় জিয়ার আশপাশে অনেক রাজনীতিবিদ ভিড় করেছিলেন। জিয়া তাদেরকে পদ-পদবি দিয়ে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন। জিয়ার আমলে উপদেষ্টা বা মন্ত্রীর একটা বড় অংশ আইয়ুব ও ইয়াহইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। আবার অনেকে স্বাধীনতার বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন। জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।’
১৯৮ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে জিয়া শহরে ও গ্রামে এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তোলেন। এই নব্য ধনিক গোষ্ঠী ছিল জিয়ার সামরিক শাসনের সুবিধাভোগী। ব্যবসায় ও শিল্পের নামে ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকার ঋণের অর্থে অনেকে কোটিপতি বনে যায় রাতারাতি। একসময় এই কোটিপতিরাই ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়। তার আমলে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য জাতীয় সম্পদের বিরাট অংশ নষ্ট হয়েছে। সীমাহীন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।’
১৯৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘জিয়াউর রহমান একজন উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার জনপ্রিয়তা ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন। তাকে ১৯৭২ সালের জুন মাসে সেনাবহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধি প্রদান করেন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে জিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’
‘১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান বলপূর্বক আনুষ্ঠানিকভাকে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে নেন। অবশ্য এর অনেক পূর্বেই সায়েমের সরকার অকার্যকর হয়ে পড়ে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি বিচারপতি সাত্তারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। কিন্তু সাত্তার নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী ছিলেন না, বরং তিনি জেনারেল জিয়াকে ইন্ধন যুগিয়েছেন ক্ষমতা দখলে। প্রতিদান দিতেও জিয়া কার্পণ্য করেননি। সাত্তারকে তিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।’
এ ছাড়া বইটির ১৯৬ পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের গণভোটকে বানোয়াট আখ্যা দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘নানারকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ১৯৭৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। জিয়ার সঙ্গে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওসমানী যে পেরে উঠবেন না এ নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। জিয়া ও তার সমর্থকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে কিভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায়। জিয়া কারচুপির মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৬.৬৩ ভাগ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওসমানীকে দেখানো হয়েছিল মাত্র ২১.৭০ ভাগ ভোট। এ নির্বাচনের পরও সামরিক শাসন থাকায় জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়নি।
১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ক্ষমতা দখলের পর অন্যান্য সামরিক শাসকদের ন্যায় জেনারেল জিয়াও রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করেছেন। আওয়ামী লীগবিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে জিয়ার যাত্রা শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামী, নেজামে, ইসলামী, মুসলিম লীগসহ ধর্মীয় দলগুলো বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকার কারণে স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জিয়া দালাল আইন বাতিল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের সাংবিধানিক অন্তরায় দূর করে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন।’
১৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে লেখা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ নীতির সঙ্গে মিল রেখেই প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের যৌক্তিকতা হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুসলিম পরিচয়কে বড় করে তোলা হয়। যে কারণে জেনারেল জিয়া শুরু থেকেই রুশ-ভারতবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন।’
আরো লেখা হয়েছে, ‘জিয়ার অতিমাত্রায় পাকিস্তানপ্রীতির কারণে স্বল্প সময়ে দুই দেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগ, বিমান ও নৌযোগাযোগ, বাণিজ্য চুক্তি ও উচ্চপর্যায়ের শুভেচ্ছা সফর সম্পন্ন হয়। পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বারবার পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের দাবি তোলে। তারা জাতীয় পতাকা পরিবর্তনসহ ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে প্রচারণা চালায়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালির দৃঢ় মনোভাবের কারণে জেনারেল জিয়া এ সকল বিষয়ে অগ্রসর হননি।’
‘জিয়া সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য জিয়া ১৯৮০ সালে সহযোগিতা সংস্থার প্রস্তাব করেন। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু প্রথম আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি পায়।’
১৯১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাকের স্বল্পকালীন শাসনকালে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় এবং পাকিস্তানের ভাবধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ’
এরপর ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘১৫ আগস্টে হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সহায়তায় জিয়া সেনাপ্রধানের পদ লাভ করেন। তৎকালীন পরিস্থিতিতে জিয়ার নিষ্ক্রিয়তা সেনাবহিনীর মধ্যে অসন্তোষ আরো বাড়িয়ে দেয়।’
১৯৩ নম্বর পৃষ্ঠায় জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লেখা আছে, ‘এ হত্যাকাণ্ড ছিল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত, স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার বাস্তবায়ন। উভয় হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস, দেশকে নেতৃত্বশূন্য এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একই গোষ্ঠী সংঘটিত করে।’
এরপর ১৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে লেখা আছে, ‘জিয়ার সংবিধান সংশোধনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ বা আওয়ামী লীগ বিরোধী দল ও ব্যক্তির সমর্থন লাভ করা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণের পরিচয়ের ওপর ধর্মীয় ছাপ প্রকট করে তোলা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে পাকিস্তানি চেতনাকে ফিরিয়ে এনে জিয়া তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চেয়েছেন।’
এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচি, গ্রাম সরকার এবং গণশিক্ষা কর্মসূচি পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অসফল বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
২০৩ নম্বর পৃষ্ঠায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের বর্ণনায় লেখা আছে, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন জোট গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাম সংগঠনের ৫ দলীয় জোট গড়ে উঠে (যা পরবর্তীতে ১৫ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়)। অন্য দিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট গড়ে উঠে।’
বিষয়: বিবিধ
৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন