বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বশীর আহমেদ
লিখেছেন লিখেছেন ানিক ফেনী ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৩০:৫৮ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়। নির্বিচারে হত্যা, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের ভূমিকাসহ বাংলাদেশের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানির মতো প্রভাবশালী দেশগুলো গভীর উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আশঙ্কা। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুসলিম বিশ্বেও ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক ড. মাহাথির মোহাম্মদ ও মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি ড. আহমদ তৈয়েবের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পর সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এমন সহিংসতা বাংলাদেশে আর হয়নি।
বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ান, দ্য ইকোনোমিস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সহিংসতার খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড বাংলাদেশের চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের সমাজে বিভাজনের যে উত্থান শুরু হয়েছে তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সব মানুষের জীবনরক্ষার আহ্বান জানাই। আমরা বিশ্বাস করি সংলাপই যে কোনো মতপার্থক্য দূর করার উত্তম পন্থা।
বিবৃতিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বিগ্ন কানাডা। সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গভীর উদ্বেগের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, এ ধরনের সহিংসতা অবসানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করুন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ একটি মৌলিক অধিকার। এখানে সহিংসতায় জড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সহিংসতায় যারা আহত হয়েছেন এবং যাদের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ জানান। মহাসচিবের এক মুখপাত্র গত ২ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
একই দিনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের চলমান গণহত্যায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, জামায়াতের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি গুলিতে অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংযত হওয়া এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে সরাসরি নির্দেশ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, সহিংসতা বন্ধে সরকার ও জামায়াতকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত ৬ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। ইইউ সব সময় মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী এবং বিশ্ব থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দিতে সবাইকে উত্সাহিত করে।
বাংলাদেশের চলমান সহিংসতার জন্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দায়ী করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিম্নমানের ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের কিনারায় নিয়ে গেছে। ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সহিংসতা এবং মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ওআইসি মহাসচিব একমেলেদ্দিন ইহসানোগলু এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস এবং মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি। সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা বন্ধ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এক বিবৃতিতে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি ব্যাপক প্রাণহানিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আলব্রেট ক্রোনিয়ে চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিপুল সংখ্যক নিরীহ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধাপরাধ মামলার আরও ১০টি রায় এবং ১৩টি আপিলের সিদ্ধান্ত হবে। আপিল বিভাগ যদি মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে তাহলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। এমন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশ কিভাবে টিকে থাকবে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ চলমান সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবিলম্বে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া রায় বাতিল করতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ইমাম ও গ্র্যান্ড মুফতি ড. আহমদ তৈয়েব। এক বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে ইসলামপন্থীদের ওপর হামলা এবং তাদেরকে হত্যা করা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা কোনো অমুসলিম দেশেও ঘটে না।
বিষয়: বিবিধ
৮৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন