আধুনিকতার সঠিক প্রয়োগ হওয়া কি উচিৎ নয় ?
লিখেছেন লিখেছেন ানিক ফেনী ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০৩:১১:৪৭ রাত
গ্রামের সহজ সরল আলী আকবর ওরফে আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পডাশুনার জন্য গ্রাম ছেডে যেতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছেনা কারণ গ্রাম যে তার প্রিয়। মায়ের কাছ হতে বিদায় নিতে চোখের পানি ঝরঝর করে পরচে আর বাবা বারবার বলছে ট্রেনের সময় হয়ে যাচ্ছে জলদি কর।চোখ পূর্ণতা পানি,মন পূর্ণতা বিষাদ নিয়ে আলী বাবার সঙ্গে হাঁটছে কাঁচা রাস্তা দিয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখছে।বাবা বলতেছে ঠিক ভাবে চলা পরা করিস,ঝগডা-বিবাদ করিস না
ইত্যাদি ইত্যাদি।আলী বাবার কথা গুলো শুনছে কিন্তু তার মনে ভাবনা কি করে ভুলবে সে গ্রামের সৃতিগুলো?বাবার সঙ্গে কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে রিক্সায় উঠলো আলী তখন ও চোখে ঝলঝল পানি মনে কান্নার ঢেউ। বাবা ট্রেন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আলীকে বলে পৌঁছে পত্র লিখিস।বাবার সঙ্গে বিদায় নিয়ে ট্রেনে চডে চলে এলো ঢাকায় আলী। একই উপজিলায় বসবাসকারী নাজমুল ও ফারুকের সঙ্গে মেসে উঠলো আলী। ঢাকাতে আলী নতুন এসেছে তাই নাজমুল ও ফারুকের সাহায্য তার প্রয়োজন।আলীর বাবার মতে রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হোস্টেলের পরিবেশ ভালো নয় তাই আলীকে মেসে থাকতে হলও। আলী খুব ভালো ছাত্র এবং পাশাপাশি ভদ্র ও মিশুক।তাইতো বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেসের অনেকের সঙ্গে অল্পসময়ে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে।আলী সকলের সঙ্গে মিশে মনটাকে ভালো রাখতে চায় কিন্তু পারছে না। আধুনিকতা নামের শহরের এই নগ্নতা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার ফেলে আসা গ্রামের সুন্দর পরিবেশকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দেখতে পায় প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা উডনা বুকে না দিয়ে গলায় পেচিয়ে হাঁটছে। অনেককে দেখা যায় ছোট কাপড পরিধানের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।একে অন্যের সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময় করার কথা কিন্তু কত সহজে বলে যাচ্ছে হাই,হ্যালো।মাযে মাযে ইচ্ছে হতো জানতে এরা কি মুসলিম নাকি হিন্দু,খৃস্টান ধর্ম অভলম্বি বাবার আদেশের কথা মনে হতেই চুপ করে যেতো কেননা যদি জানতে গিয়ে বিবাদ হয়।নাজমুল ও ফারুকের সঙ্গে আলী চিডিয়াখানা দেখতে গিয়েছিলো ফেরার পথে পার্কে কপোত কপোতীদের অবস্থান দেখে মনে মনে ভাবছে আর হাসছে এরা বোধ হয় আধুনিক নরনারী।পথে হঠাৎ শুনতে পেলো কে যেনও বলল “হায়” আলী ফিরে দেখে সহপাঠী রনি,কোথাই গিয়েছিলি? বলল চিডিয়াখানায় তুইতো মুসলিম ইচ্ছে করলে সালাম বিনিময় করতে পারতি।রনি হেসে বলে তোকে আবার সালাম গেঁয়ো ভুত কোথাকার মন খারাপ হয়নি আলীর কারণ এ শব্দটি প্রায় সে শুনতে পায়।গ্রামের পথে কিংবা হাটে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হলে মুসলমানেরা সালাম,হিন্দুরা নমস্কার বলে তাহলে কি তারা ভুত মানুষ নয়,আর শহরের আধুনিক সভ্যতায় গডে উঠা রনিরাই মানুষ।কলেজ ছুটিতে আলী গ্রামে ফিরে যেতো ছুটির দিনগুলো আনন্দের মাযে কাটিয়ে আসার জন্য।গ্রামে ফেরার পথে কাঁচা রাস্তার সবটুকু পথ হেঁটে যেতো খালি পায়ে অনুভব করতো মাটির সঙ্গে নিজের অস্তিতের টান।ধান ক্ষেতের পাস কাটতে ধান গাছের ডগায় আলত করে হাতের পরস ভুলিয়ে নিতে ভুলত না।মাযপথে পুরানো সেই বটবৃক্ষের ছায়া তলে বসে ভাবতও এই শীতল মিষ্টি হাওয়া শহরের পার্কে কখন অনুভুব করেনি।দূরে দেখা যায় কৃষক ধান কাটছে,কাঁটা ধানের গুচ্ছ বহন করে আনন্দে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে নিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ চোখে পরল একটা সাপ ছোট্ট ভেংটিকে ধীরেধীরে গিলে খাচ্ছে এভাবে সমাজের কিছু শক্তিবান মানুষ দরিদ্র মানুষগুলোর সম্বল গিলে খেয়ে আরও শক্তিবান হচ্ছে।এরপর আবার হাঁটতে শুরু করে আলী পথে ছোট বড সবার সঙ্গে সালাম/আদাফ বিনিময় এবং কি কৌশল বিনিময় করছে।সবাই জানতে চায় ঢাকা শহরের কথা আলী কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করে। বাডী এসে মা বাবাকে সালাম করে ভাই বোনদের দেখে বুকে টেনে নেয় কখন যে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে খেয়াল করেনি। অনেকক্ষণ গল্প করার পর মা বলল গোসল সেরে খেতে আয়।ভাই বোনদের নিয়ে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে আনন্দে আত্যহারা হয়ে উঠে আলী।অনেক দিন যাবত হাত পা চুডে নিজের শরীরকে পানির উপর ভাসিয়ে,ডূবো ডূবী খেলা হয়নি। শহরের টেপের পানিতে গোসলে মোটেই আনন্দ পেত না আলী।মায়ের হাতের স্বাভাবিক তরকারী রান্না যেন অমৃত স্বাদে পরিনত হয়।খেতে বসে আলী যখন গামিয়ে যেতো মা তার আঁচল দিয়ে মুখখানি মুছে দিতো।মায়ের মমতা বাবার স্নেহ ভাইবোনদের ভালোবাসা এবং গ্রামের সেই অপরূপ সৌন্দর্য সবসময়য় আলীকে গ্রামের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলে।রাতে গুমাতে গেলে শুনতে পায় ঝিঁঝিঁ ফোঁকার ছন্দময় সুর,ভেডার ফাঁকে আসা চাঁদের আলো এবং উঠোনে সদ্য ফোটা হাসনাহেনার সুগন্দে মুখরিত শয়নকক্ষ।ভেডার ফাঁকে আসা মৃদু বাতাস শীতল পাঠিতে শায়িত দেহটিকে অচেতন করে গভীর নিদ্রায় নিয়ে যায়। শহরে গুমাতে আলীর খুব কষ্ট হতো কেননা সারা রাত্রি মেসে মানুষের আনাগোনা,গাডির হর্ন,উষ্ণ বাস্পয়িত বায়ু। ভোরবেলা গুম ভেঙ্গে উঠানে দাডাতেই ফুরফুরে ভেজালমুক্ত বাতাস দেহটাকে সতেজ করে তুলে।পিছন হতে মায়ের ডাক আলী জলদি হাতমুখ ধুয়ে নে পিঠা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।আলী যে কয়েক দিন বাডী থাকে প্রতিদিন মায়ের ভিন্ন রকমের পিঠা যেমন ভাফা পিথা,তিলের পিঠা,পাটিসাপটা পিঠা,পাপন পিঠা আরও অনেক।মা বলে খেতে থাক শহরে কোথায় পাবি সকাল হলে চা,বিস্কিট না হয় ফাউরুটি। বিকেল বেলা কাঁদামাক্ত মাঠে ফুটবল খেলা,খেলা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় বাডী ফিরে ভাইবোনদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মেরে পডতে বসা। আলীর গ্রামের এই সাদাসিদে জীবন শহরের আধুনিক সভ্যতা নামের জীবন হতে অনেক ভালো। আলীর মাযে মাযে ভয় হয় শহরে এই আধুনিকতার চোঁয়া কখন এসে পরে গ্রামে,হারিয়ে যাবে গ্রামের মানুষের সরলতা হারিয়ে যাবে ধানের ও খেলার মাঠ
বিলুপ্ত হয়ে যাবে পরিবেশ রক্ষাকারী ফুল ফল ও কাঠের গাছালি।
আধুনিকতা মানে উগ্রতা,অর্ধনগ্নতা,অস্বাভাবিক আচারন করা নয়।
গ্রামে এখনও অনেক পরিবার আছে যারা বুডো মা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে অল্প রোজগারে সুখে দুখে একসাথে থাকতে চায়, শহরের আধুনিক সভ্যতার মানুষ গুলো বূডো মা বাবার জন্য বৃদ্বাশ্রম শ্রেয় মনে করে।আমার লিখাগুলো শহরের সে সব মানুষের উদ্দেশে যারা আধুনিকতার নামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজকে কুলসিত করছে।
গ্রামের মানুষগুলো ধর্মভীরু তাইতো তারা পরিবেশগত ভাবে অনেক ভালো আছে।না বললে ও নয়, আমরা অনেকে দেখেছি মুসলিমনারী বাহিরে কোথাও যেতে বোরখার সঙ্গে ছাতা নিতে ভুলত না,আজ বোরখা পরতে ভুলে যায়।রিকশায় বসে চারপাশে কাপড দিয়ে চডতো কেননা পরপুরুষ দেখলে নিজেরই পাপা হবে জেনে, আজ হয়তোবা তা স্বপ্নের চিত্র। শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে নয় পুরুষরাও আধুনিক সভ্যতার নামে আত্ম অহংকার,নারীদের অসম্মান,নিজেদের সুবিধার্থে তৈরি সামাজিক ব্যবস্থাপনা চালু করেছে।সমাজে আধুনিকতার নিয়মনীতি এরকম হওয়া উচিৎ যে সমাজের ছোট বড,ধনী গরিব,নর নারী একে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।নারীদের যেমনি কর্তব্য পালন করতে হবে তেমনি পুরুষদের ক্ষেত্রেও যেন কর্তব্য পালনে ভেগাত না ঘটে।আমাদের সকলের কাম্যও তাই...।।
বিষয়: সাহিত্য
১৪২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন