আমরা বাঙ্গালিজাতি
লিখেছেন লিখেছেন মানিক ফেনী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:৩৪:৪৫ রাত
বাসে ক্রমাগত হিন্দী গান বেজেই চলেছে। কজন যাত্রীর অনুরোধে গাইড গানের শব্দটা বাড়িয়ে দিতেই অপর যাত্রি আজগর আলীর শান্তির ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে একটু আগে। হিন্দী গানের আওয়াজ কিনা তার খুবই অপছন্দ। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী সেই বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু এখনো অতিক্রম করেনি। অনেক পথ যে এখনো তাই বাকী। তাই ইশারায় গাইডকে কাছে ডাকলেন তিনি। বললেন- “দেখুন ভাই একটু বাংলা গান শুনতে চাচ্ছি।” গাইড বিব্রতই হলো। বাংলা গান এখন বেশীর ভাগ যাত্রীই অপছন্দ করবে। কারন যাত্রাপথে ধুম-ধারাক্কা গান শুনেই তারা সময় পার করতে চান।কিছু বলার নেই। তবুও তিনি বললেন- “আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়লে একটু ডেকে দিবেন। আর হিন্দী গানটার আওয়াজটা এখন তবে কমান।” একাকী পরিবেশে আজগর আলী সাধারনত কিছু ভাবেন। সন্ত্রাসীদের জ্বালায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামে পালাচ্ছেন তিনি। মনে তাই বিষাদ।রেল, স্টীমের কিংবা বাসে সহযাত্রীর সাথে এখন কেউ গল্প করেন না। কারন অজ্ঞান পার্টীর ভয়। যদিওবা সহযাত্রী ভালোমানুষ হয়,পরিচিতিরাও অনেক সময় কোনো কথাই বলে না। আজগর আলী চোখ বন্ধ করে ভাবছেন,সুদুর অতীতে ভারতের সমান্তবাদী সমাজের আঞ্চলিক মোড়ল দিল্লির সম্রাটকে সকল সামন্ত প্রভুরা নতজানু হয়ে তোয়াজ করছেন। কিন্তু বাঙ্গালী ঈশা খাঁ তা করেন নি। বাঙ্গালীর সেই নির্ভীকতা ও জাতিয়তাবোধ যে বর্তমান বাংলাদেশে নেই।প্রাক্তন বাংলার বারো ভূইয়াদের ঐক্য আজকের রাজনৈতিক দল গুলোর সাধারন সম্পাদক রূপী অমুক তমুক ভূইয়ারা দেখাতে পারছেন না।তাদের পরস্পর কথা বলার ঘটনাটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসাবে স্বীকৃতি পাবার দাবী রাখে।ওদিকে প্রতিদন্দ্বী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাই পরস্পরকে এড়িয়ে চলেন যাতে কথা বলতে না হয়।অনেকে আবার গোপনে একসাথে ব্যবসা করেন কিন্তু প্রকাশ্যে কথা বলেন না। মঞ্চে উঠলে পরস্পরকে গালাগালিও করে থাকেন তারা। এসব হালচাল অবশ্য সকল মানুষেরই জানার কথা। যার কারন দুটি দলের ঈর্ষাপরায়নতা। দুই দলের কেউ অপরের কাছে পরাজিত হবেন তা ভাবতেই পারেন না। দেশ, জনগন, কিংবা রাজনীতির বিজয় নয় বরং নিজের বিজয়ই শুধু তারা চান। ফলে ঈর্ষাপরায়ন লড়াই বেড়েই চলেছে দিন দিন। দেশের প্রকৃত মালিক জনগনের অবস্থা যে তাই এখন ভীষন ভাবে কাহিল। বাসটি গর্তে পডাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আজগর আলীর।তখনও বাসে চলছে হিন্দি গানের আওয়াজ,মনে মনে ভাবছে আজগর আলী হায়রে বাঙ্গালী জাতী স্বদেশী সঙ্গীত ভুলে গিয়ে পরদেশী সঙ্গীতে পূর্তি করছে।মুখে বলে মা,মাতৃভাষা,মাতৃভূমী আমার গর্ব কিন্তু কাজে তার বিপরীত।আমরা কখনো কি বাঙ্গালিজাতির পরিবর্তন দেখতে পাবো না ?
কেউ কি বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক সাধারণ মানুষগুলিকে শান্তিতে দু মুঠো ভাত খেতে পারে এই পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারবে ????????????????????????
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন