ভালোবাসা কি ধর্মের চেয়ে বড ?

লিখেছেন লিখেছেন ানিক ফেনী ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:২৫:৫৫ সন্ধ্যা



মাসুদ রহমানের জন্ম মুসলিমধর্ম অভলম্বি পরিবারে।মাসুদ যে গ্রামে বসবাস করত সে গ্রামে মুসলিম পরিবারের সংখ্যা বেশী,প্রায় ১০০টি হিন্দু পরিবারের ও বসবাস ছিল।হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেমিশে বসবাস করত,ধর্মীও অনুষ্ঠান পালনে কোন প্রকার বাঁধা বিপত্তি হতনা উভয়ের মধ্যে।অনেক সময় দেখাযেতো একে অন্যের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগদিতো সুন্দর মনমানসিকতা নিয়ে। তেমনি করে মাসুদদের পরিবারের সঙ্গে একটি হিন্দু পরিবারের ভালো সম্পর্ক ছিল।মাসুদ সবেমাত্র ৮ম শ্রেণীতে পডাশুনা করত এবং স্কুল হতে আসার পথে মাযেমধ্যে মাসুদ ঐ বাডীতে যেতো।ঐ বাডীতে ৫টি পরিবারের বসবাস ছিল।মাসুদের পরিবারের সঙ্গে যে হিন্দু পরিবারের সম্পর্ক তারা নিতান্ত গরিব ছিলও।মাসুদদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ছিলও বলে হিন্দু পরিবারে তাদের সমদার ছিল সম্মানজনক।মাসুদ ঐ বাডীতে গেলে সবাই খুশী হত শুধু একজন ব্যতীত,উনি হলেন পলির ঠাকুর মা।দুখীত আপনাদের সঙ্গে পলিকে পরিচয় করানো হয়নি।মাসুদদের সঙ্গে যে হিন্দু পরিবারের সুসম্পর্ক ছিলও,পলি রানী দাস সে হিন্দু পরিবারের কনিস্ট কন্যা সন্তান।পলির বাবা ও ভাইয়ের গ্রাম্য বাজারে মিষ্টির দোকান ছিলও।মাসুদ ঐ বাডীতে গেলে পলির মা সহ তার বডবোনরা খুব আদর করে দুধ এবং রংবাধামী বিস্কুট খাওয়াতো।তবে ঠাকুর মা বেশ কটকট করে বলত জাত গেলো জাত গেলো,যখন মাসুদ চলে যেতো ঠাকুর মা গোবর দিয়ে সে জায়গাটা মুছে ফেলত।পলি তার বডবোন ও তার স্বামীর সঙ্গে ঢাকাতে থেকে ৫ম শ্রেণীতে পডাশূণা করত।মাসুদ জানত কিন্তু কখনও পলির সাথে তার দেখা হয়নি উৎসাহ তেমন ছিলও না।দুর্গা পুজার ছুটিতে পলি গ্রামের বাডীতে বেডাতে এলো।পুজা দেখতে বন্ধুদের সঙ্গে মাসুদ হিন্দু পল্লীতে গিয়েছে,পুজা শেষে মাসুদের সকল বন্ধুরা বাডী চলে গেলো কিন্তু মাসুদ থেকো গেলো।রাত্রে খাওয়ার ঘরে পলির সাথে প্রথম দেখা মাসুদের,পলির বডবোন মলি মাসুদকে পলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। মাসুদ তাকিয়ে দেখে আর ভাবে ৫ম শ্রেণীতে পডাশুনা করা মেয়ে এতও বড হয় কেমন করে।শাররিক গঠন অনুযায়ী ৭ম কিংবা ৮ম শ্রেণীতে পডার কথা।পডাশুনায় ভালো না তাই হয়তোবা ফেল করে একই শ্রেণীতে পডে রইল হটাৎ মলির ডাকে ভাবনা কেটে যায় মাসুদের।খাওয়ার টেবিলে বসতে পলির পায়ের সাথে মাসুদের পায়ের ধাক্কা লাগে এতে অস্বস্তি বোধ করে পলি।আড চোখে মাযেমধ্যে পলিকে দেখে চোখাচোখি হতেয় মাসুদ চোখ গুরিয়ে ফেলে।দুর্গা পুজার ঐ ছুটিতে প্রায় পলিদের বাডীতে যেতো মাসুদ। পলি ও তার মা,বাবা,ভাইবোনদের সঙ্গে তাদের আত্মীয় বাডীতে বেডাতে যেতো মাসুদ কিন্তু এতও কাছে থেকেও ওদের কথা হতো না।এভাবে একদিন পলি চলে গেলো ঢাকাতে,মাসুদ প্রায় স্কুল ছুটির পর পলিদের বাডীতে যেতো। মাসুদের সহপাঠী রহিম নিয়মিত পলিদের বাডীতে যাওয়া-আশা করত। রহিমের ভাইয়েরা সবাই বিদেশ থাকতো।একা বডীতে ছিলও বলে ভাইদের উপার্জনের টাকা নিজেই ইচ্ছে অনুযায়ী খরচ করতো।অল্পসময়ের মধ্যে রহিম পলিদের পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গডে তুলে।পলির ভাইকে মিষ্টি দোকানের ব্যবসায়ের জন্য টাকা দিতো এবং পলিদের বাডীতে অনেক প্রকার ফলমূল নিয়ে আসতো রহিম।মাসুদ এবং রহিম তখন এস,এস,সি পরীক্ষার্থী হঠাৎ পলির ঝিজাজির চাকুরী চলে যাওয়ায় গ্রামে এসে৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়।মাসুদ এবং রহিম পলিদের বাডী যেতো একসাথে,পলি ওদের দুজনের কারো সঙ্গে কথা বলতো না।রহিম এস,এস,সি পরীক্ষা দিলো না। পডাশুনা বন্ধ করে রাজনীতিতে জডিয়ে পডে রহিম।মাসুদ এস,এস,সি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হলও।কলেজে নিয়মিত যাওয়ার কারনে পলিদের বাডীতে যাওয়া হতো না বেশী মাসুদের কিন্তু পলি মাসুদের বোনের সঙ্গে প্রায় ওদের বাডীতে আসতো।মাসুদের মা ও বোন পলিকে খুব ভালো জানতো,মাযেমধ্যে পলিকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করিয়ে বিয়ে করার জন্য বলত মাসুদকে।মাসুদ ভাবতো মেয়েটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং মুসলমান বানিয়ে বিয়ে করলে তো ভালোই হয়। ঈদুল আযহা উপলক্ষে কলেজ বন্দ হয়ে যাওয়ায় গ্রামে রহিমের সঙ্গে আবার মাসুদের চলাফেরা শুরু হয়।একদিন বিকেলে মাসুদ এবং রহিম দুজনে গেল পলিদের বাডীতে,পলি দরজা খুলে দিয়ে কোন কথা না বলেই চলে গেল ভিতরে।দুজনে বসে রইল বৈঠকখানায় হঠাৎ শুনা গেলো পলির মায়ের আওয়াজ মাসুদ ভিতেরে এসো। মাসুদ ভিতরে গেলে পলির মা বলল অনেক দিন পরে এলে আমাদের বাডীতে ভুলে গেলে নাকি আমাদের,তোমার মলিদি আর উত্তমদার বিয়েতেও এলে না।না মাসীমা কলেজে পডাশুনার চাপ বাডীতে আশা হয় না তাই। এরি মাযে কয়েকবার পলি মাসুদের সামনে দিয়ে যাওয়াআসা করল কোন কথা বলল না এবং কি কেমন আছেন?তাও জানতে চায়নি।পলির মা ও বৌদির সঙ্গে কথা বলে মাসুদ বৈঠকখানায় এসে চা-নাস্তা সেরে বাডীতে চলে আসার জন্য উঠবে এমন সময়,মাসুদ দেখলও একটা ভাঁজ করা কাগজ তার হাতে গুজিয়ে দিয়ে রহিম বলল এই চিঠিখানা টেবিলের কাপডের নীচে রেখে দিবি যখন পলি জানালার পাস দিয়ে যাবে। মাসুদ হতবম্ব হয়ে গেলো ভাবছে ওদের মধ্যে কি ভালোবাসা হয়ে গেছে। যদি পলি রহিমকে ভালোবাসে তাহলে তার বোন অবশ্যই জানতো হঠাৎ রহিমের ধাক্কায় ভাবনা কেটে গেলো কিরে ঐতো আসছে পলি। পলি যখন জানালার ধারে এসে বৈঠকখানার দিকে তাকালও ঠিক তখনি মাসুদ টেবিলের কাপড উলটিয়ে চিঠিখানা রাখলও।মাসুদ চোখের ইশারা দিয়ে বলল চিঠিখানা নিতে পলি মুচকি হেসে চলে গেলো।এরপর মাসুদ এবং রহিম চলে এলো নিজ গ্রামে।রহিম বলল পলির সাথে আমার কথা হয়েছে অনেকবার তাই প্রথম চিঠিটা তোর হাতে দিলাম।পলির মাতো কাল তোকে যেতে বলেছে,গেলে আমার চিঠির উত্তরটা নিয়ে আসিস।রাত্রে অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করল মাসুদ কাজটা কি সে ঠিক করেছে ? যদি ওদের মধ্যে কিছুই না থাকে তাহলে চিঠি রাখার সময় আমার চোখের ইশারায় সে হাসলো কেন ? নানান প্রশ্ন মনের মধ্যে ভিড করছে,কেন জানি এক রকম চাপা কষ্ট মাসুদকে অস্থির করে তুলছে।বন্ধুর ভালোবাসার জন্য সব বন্ধুরাই সহযোগিতার হাত বাডীয়ে দেয় এটা স্বাভাবিক।তবে কি মাসুদের মন পলির প্রতি দুর্বল হয়ে পডেছে ? সকালবেলা মাসুদ পলিদের বাডীতে গিয়েছিলো কারণ গতকাল পলির মা তাকে আসতে বলেছিলও তাই। দরজা নক করতে বৌদি এসে দরজা খুলে চলে গেল,অনেকক্ষণ বসে রইল একাকী।আধ ঘণ্টা পর পলির মা এসে বলল তুমি কক্ষনো এ বাডীতে আসবে না চলে যাও। বিষণ্ণ মন নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে সোজা বাডী চলে এলো মাসুদ। মাসুদের মনের অবস্থা দেখে তার বোন জানতে চাইলো। মাসুদ তার বোনকে সবকিছু খুলে বলল,সঙ্গে সঙ্গে মাসুদের বোন চলে যায় পলিদের বাডীতে। ফিরে এসে মাসুদের বোন বলল,পলি বুজেছিলও মাসুদের চিঠি পডতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সে ভাবতে ও পারেনি মাসুদ রহিমের চিঠির বাহক হবে কারণ পলি মাসুদকে পছন্দ করত। মাসুদের বোন পলিকে বলল মাসুদ তোমাকে বিয়ে করবে তবে তুমি প্রথমে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।পলি বলল আমি মাসুদকে পছন্দ করি তাকে বিয়ে করব কোর্টে,একসাথে থাকবো তবে দুজনেই দুজনার ধর্ম পালন করব।মাসুদ কথাগুলো শুনার পর বোনকে বলল ‘‘ধর্মের চেয়ে কি ভালোবাসার মানুষটি বড ?”

বিষয়: বিবিধ

৩৬৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File