ব্লগার “নাস্তিকের ধর্মকথা”-র “ধর্মে বিজ্ঞান: নিম গাছে আমের সন্ধান” এর জোচ্চুরী:

লিখেছেন লিখেছেন ফিজিও রন্জু ১৩ মার্চ, ২০১৩, ১২:৫৯:০৩ দুপুর

আসসালামুআলাইকুম। প্রথমেই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এ ধরনের একটা নেতিবাচক শিরোনাম ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু কি করব বলুন কথাটা আসলে আমার না, উল্লিখিত ব্লগারের। ধরুন তিনজন ব্যক্তি “ক” “খ” আর “গ” এবং “গ” অন্ধ। ধরুন তাদের সকলের সামনেই করিম কোন এক ভিক্ষুখকে টাকা প্রদান করল। এখন “খ” এর অনুপস্থিতিতে “ক”, “গ” এর নিকট যেয়ে বলল- দেখ “খ” কত বড় মিথ্যুক, সে বলছে যে করিম ভিক্ষুখকে টাকা দিয়েছে, কিন্তু আসলে করিম তো কোন টাকাই দেয় নি। তাহলে এখনে “ক” “খ” কে মিথ্যুক বলল, কিন্তু “গ” আসলে অন্ধ হওয়ায় কিছু বুঝতে পারল না। এখন নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে বা করিম “গ” কে সত্য কথাটা বলে দিলে আমরা সকলেই কিন্তু তখন “ক” কেই মিথ্যুক বলব। এখানে “ক” কে কখনই মিথ্যাবাদী বলা হত না যদি না সে মিথ্য বলত। কাজেই “ক” মিথ্যা বলতে গিয়ে নিজেই মিথ্যাবাদীতে পরিনত হয়েছে। ঠিক একই ভাবে এখানে জোচ্চুরী শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও ভাই “নাস্তিকের ধর্মকথা” যদি এর দ্বারা মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করে দেবেন, আশা করছি।

আসুন প্রথমেই কোরআনের একটা আয়াত দ্বারা শুরু করা যাক -

“বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা তো সদা অন্তর্ধানশীল।” (Al-Israa: 81)

ব্লগার “নাস্তিকের ধর্মকথা”- তার “নিম গাছে আমের সন্ধান” নামক এক লেখাতে কুরআন নিয়ে যে সব আপত্তির কথা লিখেছেন সেগুলোর পয়েন্টগুলো হল অনুবাদগত বিচ্যুতি, ব্যাখ্যাগত বিচ্যুতি আর বিজ্ঞন বনাম কোরান । আসুন আমরা একেএকে এগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করে দেখি। এখানে আগেই বলে রাখি আমি যা বলছি অথবা ব্লগার নাস্তিকের ধর্মকথা যা বলছেন – সেটাই যে সঠিক হবে, এমনটি নয়। বরং আমরা সেটাকেই সঠিক বলে মেনে নিব যেটা যুক্তি, তথ্য আর উপযুক্ত প্রমান সাপেক্ষে পাওয়া যাবে।

অনুবাদগত বিচ্যুতি নিয়ে বিশ্লেষন:

“নাস্তিকের ধর্মকথা” বলেছেন -





ব্লগার “নাস্তিকের ধর্মকথা”-র আপত্তি: এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি বলতে চেয়েছেন প্রথম অনুবাদটি বিকৃত এবং মুসলমানদের বানানো অনুবাদ, যার সঠিক অনুবাদ হিসেবে তিনি রেফারেন্স টেনেছেন জহরুল হক, YUSUFALI, PICKTHAL আর SHAKIR এর অনুবাদ।

এখানে তিনি যে আপত্তিমূলক ১ম অনুবাদগুলো উপস্থাপন করেছেন সেটা কে বা কারা কখন করেছে তা উল্লেখ করেন নি। নাকি এটা তার নিজেরই মনগড়া অনুবাদ। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে – আমাদের সে সকল অনুবাদই গ্রহন করা উচিত যেগুলো শুধু সর্বজনন স্বীকৃতই নয়, যেগুলো অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন ইসলামি স্কলারেরা/ভাষা সম্পর্কে যার ভাল ধারনা আছে (অমুসলিমও হতে পারেন, তবে স্বচ্ছতা আবশ্যক)। এগুলোর মধ্যেও অনেকের যে ভূল হবে না তা নয় (কেননা মানুষ ভূলের উর্ধে নয়), এজন্য প্রতিদিনই এই অনুবাদ নিয়েই গবেষনা আর রিসার্চ হয়ে চলেছে এবং এ জন্য বহু অনুবাদের মধ্যে কতগুলো অনুবাদ গ্রীহীত হয়েছে আর কতগুলো অনুবাদ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারপরও আমরা জানি কোন অনুবাদই কখনও আপনাকে ১০০% একেবারে অনুরুপ অনুভুতি প্রকাশ করতে পারবে না। এখানে তার যুক্তিটা অনেকটা এরকম – “নিম গাছে নিম ধরে আছে, আর আম গাছে আম ধরে আছে। সুতরাং এটাই প্রমান হয় যে নিম গাছে কখনও আম ধরতে পারে না।” এটা সবাই জানে, সুতরাং নিম গাছে যে আম ধরে না সেটা প্রমানের প্রয়োজন পড়ে না। কেউ যদি কখনও বলত যে - নিম গাছে যে ফল ধরে আছে সেটা আসলে নিম নয় সেটা হল আম, তাহলে কেবল তখন-ই এ ধরনের প্রমানের প্রয়োজন হয়। নিশ্চয় আমরা জানি যেটা নেই সেটা প্রমানের দরকারও নেই । কেবল যদি সেটা থাকে বা কেউ দাবী করে কেবল তখনই সেটার বাতিলযোগ্যতা প্রমান করতে হয়। যেটা কেউ কখনও বলেই নি, সেটা তিনি নিজেই বলে আবার প্রমানের চেষ্টা যে -সেটা ঠিক না – এটা একধরনের স্ববিরোধিতার সামিল। আর এটা নিশ্চই সর্বসাধারনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তিতে ফেলার কৌশল মাত্র।

নোট:

• তিনি ১ম অনুবাদ গুলোর ক্ষেত্রে বলেছেন অনুবাদ করা হয়েছে, কিন্তু কে বা কারা আসলে কখন অনুবাদ করেছে সেটার রেফারেন্স তিনি দেন নি।

• তিনি ২য় অনুবাদ থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন, কিন্তু রেফারেন্স ভিত্তিক অনুবাদের সাথে রেফারেন্সবীহিন অনুবাদের (১ম অনুবাদ) (সঠিক যদিও হয়) তুলনা কখনই হতে পারে না (যেটা আপনি করেছেন) ।

• পরের রেফারেন্স ভত্তিক অনুবাদগুলোর ক্ষেত্রে এমন বহি:প্রকাশ করা হয়েছে যেন তিনি সেগুলো অনুমোদন দিলেন। আসলে কোন রেফারেন্স সঠিক সেটা আমার বা আপনার অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল নয়, রেফারেন্স কতটুকু সঠিক তা নির্ভর করে বিভিন্ন রিসার্চ, প্রমান, গবেষনা আর গ্রহনযোগ্যতা দ্বারা। কাজেই পক্ষে হোক আর বিপক্ষেই হোক উপযুক্ত রেফারন্সে উপস্থাপন করাটাই জরুরী।

ব্যাখ্যাগত বিচ্যুতি:

“নাস্তিকের ধর্মকথা” বলেছেন -



কোরইনের ৮১:১৫ নং আয়াতের বিশ্লেষন:

এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ৮১:১৫ নং আয়াতেটি হল: “গ্রহ-নক্ষত্ররা চলে ও অদৃশ্য হয়”

আসুন দেখি আয়াতটি আসলে কি, আর আয়াতটির দ্বারা আসলে কি বুঝানো হয়েছে:

১৫ নং আয়াতটি বলছে: فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ

ইহার বিভিন্ন সর্বোতকৃষ্ট অনুবাদগুলো হল –

বাংলায় –

• আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়। (মুহিউদ্দিন)

• কাজেই না, আমি সাক্ষী মানছি গ্রহ-নক্ষত্রদের -- (জহরুল হক)

ইংরেজিতে –

• So verily I call to witness the planets - that recede, (yusufali, Saudi Rev. 1985)

• So verily I call to witness the planets - that recede, (yusufali, Orig. 1938)

• So I swear by the retreating stars – (Sahih International)

• Oh, but I call to witness the planets, (pickthall)

• BUT NAY! I call to witness the revolving stars, (Muhammad Asad)

• So verily, I swear by the planets that recede (i.e. disappear during the day and appear during the night). (Hilali & Khan, approved by saudi government)

• So, I swear by those (stars) that recede (Muhammad Shameem, Mohammad Wali Raazi and Muhammad Taqi Usmani)

ইংরেজিতে প্রখ্যাত অমুসলিমদের দ্বারা অনুবাদ:

• No! I swear by the slinkers, (Arthur John Arberry)

• I need not swear by the stars that slink back, (Edward Henry Palmer)

• Verily I swear by the stars which are retrograde, (George Sale)

• It needs not that I swear by the stars of retrograde motions (John Medows Rodwell)

• I swear by the turning planets, (N J Dawood (draft)

এখানে এটা স্পষ্ট যে তার মনগড়া অনুবাদের সাথে কোরআনের এই অনুবাদের কোনই মিল নেই, সুতরাং তার অনুবাদ ভূল। কাজেই তিনি কি এখানে জোচ্চুরী খাটিয়েছেন, নাকি বিভ্রান্তিতে ফেলার চেষ্টা করেছেন, নাকি তিনি নিজেই নিম গাছে আমের সন্ধান পেয়েছেন? উপরোক্ত অনুবাবাদ গুলো থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে তিনি নিজেই আসলে কোরআনের ব্যাখ্যাগত বিচ্যুতি ঘটিয়েছেন। তিনি এখানে চরম গোজামিল দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ১৬ নং আয়াতকে ১৫ নং হিসেবে চালিয়েছেন, যেখনে ১৫ নং আয়াত উপস্থাপন করেন নি। আবার ১৬ নং এর ব্যাখ্যা হিসেবে ১৫ নংকে ব্যবহার করেছেন, আর বলেছেন কোরআনে সেটা নেই। হা হা হা ... । পাঠকদেরকে ভালভাবে বোঝার জন্য ফটো আকারে দেয়া তার উপরের লেখাটি আরেকবার দেখার অনুরোধ করা হচ্ছে।

“নাস্তিকের ধর্মকথা”-র ১ম বিচ্যুতিটিই একটা বড় বিভ্রান্তি, আর জোচ্চুরি। আর তার লেখা যে একটা মিথ্যা এটা আর প্রমানের প্রশ্নই উঠে না। ১মমেই যেখানে তিনি গোজামিল দেয়ার চেষ্টা করেছেন সেটাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে তার লেখাটি উদ্দেশ্যমূলক, অপরিপক্ক, রিসার্চবিহীন।

আর তাই পরের টপকি গুলো নিয়ে লেখা নিতান্তই সময়ের অপচয় বলে মনে হয়, তাই এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ন অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করব বলে মনে করছি।

“নাস্তিকের ধর্মকথা”-র প্রতি: আসুন আমরা সঠিকভাবে স্টাডি করি, সত্য জানি ও মানি। গোঁজামিল বাদ দিয়ে আপনি আপনার প্রশ্নগুলো স্পষ্ট করূন। পরবর্তীতে সময় পেলে সেগুলোরও উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হবে, ইনশাল্লাহ। কোনটা পড়ে আপনার হাসি আবার কোনটা পড়ে আপনার কান্না পেতেই পরে, তার মানে আপনি এগুলো নিয়ে ভালভাবে স্টাডি করেন নি বিধায় বুঝতেও হয়ত বা পারেন নি আর সভাবতই আপনি উপযুক্ত যুক্তিমূলক প্রশ্নও উথাপন করতে পারেন নি।

ধন্যবাদ।

লেখার উদ্দেশ্য কখনই কাউকে আঘাত করা নয়, উদ্দেশ্য সত্য জানা ও অপপ্রচার রোধ করা। সমস্ত অযৌক্তিক, উষকানিমূলক ও গালিগালাজযুক্ত মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। পরামর্শ গ্রহনযোগ্য।

লেখাটি ভাল লাগলে আপনি শেয়ার করতে পারেন, হয়ত বা এর মাধ্যমে আপনার ও আমার আরও একজন ভাই বা বোন এই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে পারবেন। কমেন্ট দিয়ে উতসাহিত করুন। জাযাকাল্লাহ্.

লিখেছেন – Md Gausul Azam (Ranju)

আগের একটি লিখা : শহীদ! একটি গবেষনামূলক বিশ্লেষন: (ব্লগার রাজীব কি সত্যিই শহীদ হয়েছেন?)

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File