শহীদ! একটি গবেষনামূলক বিশ্লেষন: (ব্লগার রাজীব কি সত্যিই শহীদ হয়েছেন?)
লিখেছেন লিখেছেন ফিজিও রন্জু ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৩৩:০৬ রাত
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে। এখানে আমি বর্তমান সময়ের আলোচিত নিহত/শহীদ ব্লগার রাজীবের বিষয়ে কথা বলব আর প্রমান করার চেষ্টা করব আসলেই তিনি কি শহীদ হয়েছেন বা শহীদ উপাধিটি তার নামের আগে বলা বা লিখাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত। আগেই বলে রাখি এখানে আপনি বা আমি কি বলছি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, আমরা সেটাই মেনে নেব যেটা যুক্তি, প্রমান আর উপযুক্ত রেফারেন্সের আলোকে আমরা পাব। আরেকটি কথা অনেকের এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে (ভাল কথা), আপনি উপযুক্ত যুক্তি, প্রমান আর রেফারেন্সের আলোকে কমেন্ট করুন আমি নির্দিধায় মেনে নেব নতুবা আপনাকে আমারটা মেনে নিতে হবে। সমস্ত গালি-গালাজ, উষকানিমূলক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। তাহলে আসুন আমরা মূল লেখায় যায় ………………………………
০১. ব্লগার রাজীব কি সত্যিই নাস্তিক ছিলেন?
আমরা যারা অনলাইনে থাকি অন্ততপক্ষে তারা নিশ্চিতভাবে জানি যে রাজিব আসলেই নাস্তিক ছিলেন। যদি আপনারা এটাও প্রমান করতে বলেন তবে ইনশাল্লাহ পরে কোন এক পোষ্টে এটা প্রমান করব, তবে আজকের আলোচনার বিষয় আসলেই সে শহীদ কিনা। আবারও বলে নিচ্ছি রাজীব একজন নাস্তিক, তাহলে লেখার বিষয়বস্তু দাঁড়াল নাস্তিক কি কখনও শহীদ হতে পারে?
০২. শহীদ শব্দের অর্থ ও তার উতপত্তি (শব্দটা কি কারও ধর্মীয় সম্পত্তি? আসুন বর্তমান বিভিন্ন রিসার্চ আর রেফারেন্স দ্বারা পরীক্ষা করে দেখি):
উইকিপিডিয়া অনুসারে:
শহীদ শব্দটি হল একটি আ্যরাবিক শব্দ, ইহা এসেছে কুরআনিক আ্যারাবিক শব্দ হিসেবে। ইহার অর্থ হল সাক্ষ্য দানকারী। এই সম্মানসূচক শব্দটা কেবল সে সব মুসলমানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যারা তাদের জীবন সম্পূর্নরুপে ধর্মীয় নির্দেশনার (যারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মহানবী স: আল্লাহর একমাত্র রসূল) কাজে উতসর্গ করেছেন অথবা তাদের দেশ অথবা পরিবারের জন্য জীবন দিয়েছেন।
এখানে আরও বলা হয়েছে শহীদ কথাটা দ্বারা witness (অর্থাত সাক্ষ্যদানকারী – যারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মহানবী স: আল্লাহর একমাত্র রসূল এবং এই সাক্ষ্য রক্ষার্থেই নিহত হয়) বুঝায়, কিন্তু এটা কখনই martyr সূচিত করে না। কিন্তু পরবর্তীতে আরব খ্রীষ্টান, সাউথ এশিয়ান হিন্দু আর শিখরা তাদের martyr দের চিহ্নিত করতে আর সম্মআনসূচক কোন শব্দ না পেয়ে তারাও শহীদ বা 'shaheed শব্দের ব্যবহার শুরু করে।
[এখানে আরও বলে রাখা দরকার শহীদ শব্দটা নিজস্ব অলংকারিক আরবী শব্দ, ইহার ব্যকরনগত তাতপরয আমাদের বুঝতে হবে। শহীদ শব্দকে বুঝাতে witness আর martyr শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হয়। শহীদ শব্দটা কখনই এই শব্দদ্বয় থেকে আসে নি বরং এই শব্দ দুটিই শহীদের তাতপর্য বুঝাতে ব্যবহার করা হয় (যদিও এই দুটি শব্দ দ্বারাও পুরোপুরি তাতপরয প্রকাশ পায় না {দি ফার্ষ্ট এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম}) ।]
নোট – সুতরাং,
**শহীদ হল কুরআনিক আ্যারাবিক শব্দ – তাই এটাতে মুসলমানদেরই স্বত্তাধিকারিই বেশী বলা চলে।
**খ্রীষ্টান, সাউথ এশিয়ান হিন্দু আর শিখরা এই শব্দ ব্যবহার করেন সমমানের শব্দ খুজে না পেয়ে। তাহলে তারা কুরআনিক শব্দ ব্যবহার করছেন।
অক্সফোর্ড অনলাইন ডিকশনারি অনুসারে:
এখানেও বলা হয়েছে শহীদ শব্দটি এসেছে আ্যরাবিক শব্দ থেকে যার অর্থ a Muslim martyr (অন্য কোন ধর্মের নয়)।
নোট – সুতরাং,
**শব্দটা আরব থেকে এসেছে এবং মুসলমানদের জন্যই প্রযোয্য।
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে:
এখানে বলা হয়েছে এটা একটা ইসলামিক পদমরযাদা। আরও বলা হয়েছে শহীদ শব্দটার অর্থ সাক্ষ্যপ্রদানকারীর মৃত্যু যার ব্যাখ্যা কুরআনে না থাকলেও হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে পরবর্তীতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নোট – সুতরাং,
**শব্দটা মুসলমানদের জন্যই প্রজোয্য।
দি ফার্ষ্ট এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম, ভলিউম-০৭, পৃষ্টা – ২৫৯, ২৬০:
এখানে বলা হয়েছে শহীদ শব্দটা প্রায়ই কুরআনে ব্যবহার করা হয়। এই বইয়ে ইহার অর্থ প্রকাশের জন্য witness আর martyr ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আবার বলা হয়েছে যে martyr দ্বারা এ শব্দের অনুরুপ বা সম্ন্তরাল কোন অর্থ প্রকাশ পায় না।
নোট – সুতরাং,
**শব্দটা মুসলমানদের জন্যই প্রজোয্য।
উপরের তথ্য-প্রমান আর রেফারেন্সের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে শহীদ শব্দটা কেবল মুসলমানদের জন্যই প্রযোয্য। উপরে যে সব রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে তার বেশীর ভাগই অমুসলিমদের তৈরীকৃত। যেহেতু মুসলমানরাই শহীদ শব্টার স্বত্তাধিকারী এবং মুসলমানরা যেহেতু কুরআন-সুন্নহ-হাদীস মেনে চলে সেহেতু কুরআন আর হাদিস যদি বলে নাস্তিকদের শহীদ বলা যাবে তাহলে আমরা তাকে শহীদ বলব আর কুরআন-হাদীস যদি বলে নাস্তিকদের শহীদ বলা যাবে না তাহলে আমরা তাই মেনে নিব। আসুন এবার কুরআনিক আর হাদিসের মাধ্যম বিশ্লেষন করি আসলেই তিনি শহীদ কিনা (অন্য সকল ধর্ম বাদ)।
কুরআন বলছে:
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। (Al-Hadid: 19)
আমরা জানি রাজীবের নাস্তিকতা মানেই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাস, সুতরাং সে কোনভাবেই শহীদ বলে বিবেচিত হবে না।
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (Sura 3 (Al-i-Imran), Ayat 169)
আল্লাহর রাহে যারা নিহত হন তাদের শহীদ বলা যায়, নীচের হাদিসটি তার প্রমান –
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ননা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন : শহদি ৫ প্রকারের (১) আকষ্মিক দুরযোগে মৃত্যুবরনকারী, (২) পেটের রোগে মৃত্যুবরনকারী, (৩) পানিতে ডুবে মৃত্যুবরনকারী, (৪) দেয়ালের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরনকারী, (৫) এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী । (বুখারী ও মুসলিম)
ব্লগার রাজীব আল্লাহর রাহে নিহত হন নি, সুতরাং তিনি শহীদ হন নি।
.
যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা। (Surah 22 (Al-Hajj), Ayah 58)
এখানেও দেখা যায় ব্লগার রাজীব আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেন নি, সুতরাং তিনি শহীদ নন।
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (Al-Baqara: 154)
ব্লগার রাজীব আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন নি , সুতরাং তিনি শহীদ হন নি।
নিখুঁত বর্ননা:
পরবর্তীতে আরব খ্রীষ্টান, সাউথ এশিয়ান হিন্দু আর শিখরা তাদের তাদের martyr দের চিহ্নিত করতে আর সম্মআনসূচক কোন শব্দ না পেয়ে তারাও শহীদ বা 'shaheed শব্দের ব্যবহার শুরু করে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস্ (রা) বর্ননা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজের ধন মালের কারনে নিহত হয়েছে, সে শহীদ। (বুখারী ও মুসলিম)
উপরের উইকিপিডিয়ার উক্তি আর হাদিসের আলোকে কি রাজীবকে শহীদ বলা যায়? আসুন দেখি কি বলা যায় –
১ নং পয়েন্টের ভিত্তিতে রাজীবকে যদি শহিদ বলা হয় তাহলে মানতে হয় যে মুসলমান হিসেবে নয় বরং অন্যান্যদের মত অমুসলিম হিসেবে এই শব্দের ব্যবহার তার ক্ষেত্রে করা হয়েছে। অমুসলিম হিসেবে যদি শহীদ ব্যবহার করা হয় তাহলে তার জানাযার নামাজ পড়া অযৌক্তিক। আসলে তিনি মুসলিম না অমুসলিম? তিনি নাস্তিক । সুতরাং তারই ইথিকস অনুযায়ী জানাযার নামায পড়া আর শহীদ শব্দের ব্যবহার করা তার জন্য অপমানজনক।
২ নং পয়েন্টের হাদিসের আলোকে যদি বলা হয় তিনি নিজের ধন মালের তথা সম্পদ তথা দেশের রক্ষার (যদিও দেশ রক্ষার কাজে নিহত হন নি) কারনে নিহত হয়েছেন সুতরাং শহীদ, তাহলে আসুন নীচের আয়াত গুলো দেখি -
বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। (At-Tawba: 24)
যারা কাফের, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ এবং তৎসহ আরও তদনুরূপ সম্পদ থাকে আর এগুলো বিনিময়ে দিয়ে কিয়ামতের শাস্তি থেকে পরিত্রান পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। (Al-Maaida: 36)
তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। (As-Saff: 11)
সুতরাং তার নামের আগে শহীদ বলা কখনই ইসলাম সম্মত নয়।
- Md Gausul Azam (Ranju)
পূর্বে প্রকাশিত
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন