ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী এক উন্মাদ শিক্ষক ঢাবির বাহলুল
লিখেছেন লিখেছেন রাতদিন ২৩ জুন, ২০১৩, ০৭:৪৯:৩৮ সন্ধ্যা
ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী এক উন্মাদ শিক্ষক ঢাবির বাহলুল
ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী উন্মাদে পরিণত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাহলুল। তার বিরুদ্ধে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পাঁচ-পাঁচজন ছাত্রীর সম্ভ্রমহানী ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকতার খোলস নিয়ে বিভাগীয় চেম্বারে বসে যৌন বিলাসিতায় বিভোর থাকেন বাহলুল। এ জন্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যতটা না পরিচিত, তার চেয়ে লেডি কিলার হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত। এরই মধ্যে দুই ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শ্লীলতাহানি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিভাগ। পাশাপাশি সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভাগীয় শিক্ষকরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা তার এ দুরাচারকে শিথিল করে দেখার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী বিভাগগুলোর মধ্যে একটি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ। এ বিভাগে শিক্ষক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক শুফী আহম্মেদসহ আরও অনেকে। কিন্তু সম্প্রতি বিভাগের কিছু শিক্ষকের অনৈতিক কার্যকলাপে সেই ঐতিহ্য আজ বিলীন হচ্ছে। নীতি-নৈতিকতাবিচ্যুত ওই শিক্ষকরা আজ ছাত্রছাত্রীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সুযোগ পেলেই ছাত্রীদের সর্বনাশ করতে উদ্যত হন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া কক্ষটিকে যতটা না গবেষণা কাজে ব্যবহার করেন, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন যৌন নির্যাতনে।
এমন শিক্ষকদের একজন হলেন মাহমুদুর রহমান বাহলুল। শিক্ষকসুলভ গণ্ডি ছেড়ে তিনি এখন লেডি কিলারে পরিণত হয়েছেন। ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানিই তার একমাত্র কাজ। অভিনয় করে চলছেন পরিমল ও রসুখা চরিত্রে। ছাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রজাপতির মতো এ ফুল থেকে অন্য ফুলে মধু আহরণ করছেন অনবরত।
বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিভাগের কোনো প্রোগ্রামে বা সেমিনারে শৃঙ্খলার দায়িত্বটা তারা নিজের মনে করে নিয়ে থাকেন। এরপর পছন্দের ছাত্রীকে স্বেচ্ছাসেবক বানিয়ে সখ্য গড়ে তুলে শুরু করেন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্ক। ছাত্রীদের বন্ধুদের বাসা ও অন্যত্র নিয়ে পছন্দমতো সময় কাটান। এভাবে তিনি একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে চরম গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এদের মধ্যে মাস্টার্স ক-শাখার এক ছাত্রী ও চতুর্থ বর্ষের অন্য ছাত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক চরম গভীরতায় উপনীত হয়।
কিন্তু ওই ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এ বছরের শুরুতে মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে বাহলুল বিয়ে চূড়ান্ত করেন। ছাত্রীরা তার এ প্রতারণার কথা জানতে পেরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তার কক্ষে (৩০০৯) এসে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাহলুল তাদের লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে ছাত্রীদের কক্ষে ফেলে চলে যান তিনি। এ সময় ছাত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদের মধ্যে একজন ব্লেড দিয়ে তার হাত কাটতে শুরু করলে অন্য শিক্ষকরা তাকে নিবৃত্ত করেন। এরপর ছাত্রীরা গত ২ মার্চ বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বাহলুলের যৌন কেলেঙ্কারির শাস্তি দাবি করেন। বাহলুলের কাছে সর্বস্ব হারানো ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন পড়াশোনা ছেড়ে বিভাগে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগ। তদন্তে বাহলুলের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারী ও অপরাধের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল বিভাগের একাডেমিক কমিটি তাকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরপর গত ১ জুন বিভাগীয় শিক্ষকরা তার এ স্পর্শকাতর ও জঘন্যতম অপরাধের দায়ে বাহলুলের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু বাহলুল বর্তমান ভিসির এলাকার মেয়ের জামাই ও দলীয় লোক হওয়ায় বিষয়টি শিথিল করে দেখার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, শুধু বাহলুল নন, বিভাগের অন্য দুই শিক্ষক এস এম মফিজুর রহমান ও মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধেও ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এই তিনজন মিলে নতুন ছাত্রীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে যৌন সুবিধা গ্রহণ করেন। যৌন হয়রানির একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন তারা। একজন অন্যজনকে ছাত্রীচরিত্র হরণের পথ সহজ করে দেন। এর আগে যৌন হররানির অভিযোগে মফিজুর রহমানকে বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করা হয়।
তাদের এ নীতি বিচ্যুত ও অবৈধ যৌনাচার সম্পর্কে বিভাগের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, শিক্ষকসুলভ গণ্ডি অতিক্রম করে ছাত্রীদের সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তা নৈতিকতার স্খলন। তার জন্য আমাদের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাহালুলকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী আমরা তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন