মিডিয়ার দায়: একটি জাতীয় দৈনিকের পাঠক-প্রতারণার নমুনা
লিখেছেন লিখেছেন রাতদিন ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:০৮:০৪ রাত
মুহিববুল্লাহ জামী
মিডিয়ার দায়
সাংবাদিকতা ও সংবাদ-বিজ্ঞান সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ না হয়েও সরল বুঝ, স্বাধীন চিšতা ও সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, মিডিয়া বা গণমাধ্যম হবে জনগণ ও জনস্বার্থের প্রতিনিধি। একটি জাতীয় গণমাধ্যম হবে সংশ্লিষ্ট জাতির হৃদয়ের আবেগ ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রতিধ্বনি। সত্যের উচ্চারণ নয় শুধু, তার উদঘাটন এবং প্রতিপালনও তার দায়িত্বের ভেতরে পড়ে। গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় গণমাধ্যম গণতন্ত্রের বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সেজন্যে তাকে সরকারের শুভ উদ্যোগকে যেমন উৎসাহিত করতে হয়, তেমনি সরকারের অবাঞ্ছিত আচরণেরও যথার্থ ও গঠনমূলক সমালোচনা করতে হয়। আর রাষ্ট্রক্ষমতা যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীনদেরকে খানিকটা বা অনেকটা স্বেচ্ছাচারী করে ফেলে, সেহেতু গণমাধ্যমকে তখন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরকারকে হুঁশিয়ার করতে হয়, বা¯তবতা এবং উচিত কর্তব্যের দিকে দৃষ্টি-আকর্ষণ করতে হয়। অন্য কথায়, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা গণমাধ্যমের মৌলিক দায়িত্বের অšতর্ভুক্ত।
এই অর্থে শতভাগ উত্তীর্ণ কোন গণমাধ্যম বাংলাদেশে আছে কি-না, জানি না। তবে যারা সত্যের পিপাসা নিয়ে মিডিয়া-জগতে নজর দিয়েছেন, তাদের কাছে এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে, দেশের কম করে হলেও ৭০ ভাগ গণমাধ্যম এই নীতিমালার চর্চা থেকে দূরে নয় শুধু, এর বিপরীত নীতিকে সজ্ঞান সাধনার বিষয়ে পরিণত করেছেন। মিডিয়া যেন এখন জ্ঞানপাপীদের সংঘবদ্ধ আ¯তানা। এখানে বলে রাখি, মিডিয়াও মানুষেরই তৎপরতা। মানুষ হিসেবে তারও একটা রাজনৈতিক মত-অমত যৌক্তিক নয় শুধু, অবশ্যম্ভাবী। রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে কখনও কখনও আবেগের পদস্খলনও মানবিক, এ পথের পথিক হিসেবে তারও হোঁচট খাওয়ার অধিকার আছে, আছে শিথিল-গতিশীল হওয়ার প্রাকৃতিক বাস্তবতা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, মিথ্যাচারকে সে আরাধ্য শিল্পে পরিণত করবে। জাতীয় ঐক্য ধবংশ করে হলেও মতলববাজির অবৈধ খায়েশ পূরণে মত্ত হাতীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। অসত্য আর অন্যায় অভিসন্ধিকে হাতিয়ার করে মিডিয়া তার পাঠক-দর্শক-শ্রোতাকে নিয়ে যে কত নির্লজ্জ রং-তামাশা করে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণের জন্য আলাদা গবেষণা-প্রতিষ্ঠান দরকার হবে। আমরা এখানে মাত্র কয়েকদিনের কয়েকটি অন্যায়ের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব ‘প্রথম আলো’ নামের ঐ জাতীয় দৈনিকটির, জাতিকে প্রতারিত করে এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলমানের স্বার্থ-বিরোধী তৎপরতাই যার আত্মার খাদ্য। যার চটকদার বিজ্ঞাপনের মধুর ভাষা ছিল এ রকমÑ “প্রতিদিন ৬০ লাখ লোক প্রথম আলো পড়ছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ হবেই।” আসুন, আমরা প্রথম আলো’র প্রতিবাদ-চেতনা নিয়েই একটি প্রতিবাদী হই।
প্রথম আলো’র কিছু আপত্তিকর স্বভাব ও স্বকীয়তাÑ
ইসলামী দর্শন ও বিধানকে হেয় করা
প্রথম আলো’র জন্মই হয়েছে সুকৌশলে মুসলমানের এই দেশে ইসলাম, ইসলামী চেতনা এবং আলেম-ওলামা ও ইসলামী দর্শনকে হেয় প্রতিপন্ন করে নিজেদের গোপন এজেন্ডা ও বিদেশী স্বার্থ বা¯তবায়নের জন্য। তাদের কর্ম ও তৎপরতা থেকে এই সন্দেহ বলিষ্ঠভাবেই করা যায়। আমার পঠন-পাঠন ও অভিজ্ঞতা থেকে বক্তব্যের সপক্ষে কিছু প্রমাণ দিই। এরা কুরআন-নির্ধারিত শা¯িত বেত্রাঘাত বা দোর্রাকে বিতর্কিত করতে এবং এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী নয়, বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের জন্য বিভিন্ন সময় দোর্রার বিরুদ্ধে দোর্রা শিরোনাম বা উপশিরোনামে সিরিজ রিপোর্ট করে আসছে। কিছুকাল আগে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে শরীয়াতপুরের কিশোরী হেনার মৃত্যুর ঘটনায়ও তারা এ কাজটি করেছিল। সেখানে দোর্রাকে তারা একটি অসভ্য ও মানবতাবিরোধী দণ্ড হিসেবে প্রমাণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কোন দেশের অমুসলিমরা কোন বাজে ও আক্রমণাত্মক মšতব্য করেছে, তারও একটি সংকলন তুলে ধরেছিল পত্রিকাটি। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছেÑ ইসলাম মানব-বংশ ও মানব-সভ্যতার পবিত্রতা নষ্টকারী দু’-একটি অপরাধের জন্য এই কঠোরতা করেছে, মানবতার কল্যাণকে ঝুকিমুক্ত করার জন্যই। দ্বিতীয়ত, এই শা¯িত প্রয়োগ করার ক্ষমতা ইসলাম রাষ্ট্রশক্তি এবং রাষ্ট্র অনুমোদিত বৈধ মাহকামায়ে কাযা বা শরীয়া বোর্ড ছাড়া আর কাউকে দেয়নি, হোক সে ইমাম, খতীব, আলেম বা ধর্মীয় চিšতাবিদ। তৃতীয়ত, এই শা¯িত প্রমাণ করার জন্য ইসলাম শা¯িতর কঠোরতার চেয়েও প্রমাণের পথকে আরো কঠোর করেছে। চতুর্থত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন নিরুপায় অবস্থা বা পরিস্থিতির শিকার ছিল কি-না, তাও মাথায় রাখতে বলেছে। আমার এ দাবির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য যে কোন হাদীস বা ফতোয়ার কিতাব অথবা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে ‘ফাতাওয়া ও মাসাইল’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ড দেখা যেতে পারে। এসব বিবেচনায় নিলে এই দণ্ডের অপপ্রয়োগ তো বটেই, বৈধ প্রয়োগও কঠিন হয়ে যাবে। এত কিছুর কোনটিকেই বিবেচনায় না নিয়ে অন্ধের মত দোর্রা-বিরোধী ডামাডোল বাজিয়ে যাচ্ছে পত্রিকাটি।
এদেশের কোন বড় আলেমই এই দণ্ডের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয়ার প্রমাণ নেই। কখনো-কখনো সমাজে এধরনের শা¯িতর ঘটনা গ্রামাঞ্চলে ঘটে থাকে, যেই ঘটনার নেপথ্যে থাকে পূর্ববর্তী এক বা একাধিক সামাজিক, রাজনৈতিক বা স্থানীয় কোন্দলের ঘটনা-দুর্ঘটনা। সে কারণে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী সমাজপতি বা প্রভাবশালীরা একজন ইসলামের ব্যাপক এবং গভীর জ্ঞান-বঞ্চিত ছা-পোষা কোন ইমামকে ব্যবহার করে, মসজিদে যার মাসিক বেতন ৫০০ থেকে দু’হাজার বা তিন হাজার টাকা মাত্র। আর অমনি ‘প্রথম আলো’ পেয়ে যায় খোরাকÑ ইসলামের মুখপাত্র ও সমকালীন আলেমদের প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দাঁড় করিয়ে বিচিত্র ভাষা ও ভঙ্গিতে ইসলামকে হেয় করার নৈতিক কাজটি সেরে নেয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য নব্বই শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে দায়ী স্থানীয় কোন্দল, বিদ্বেষ ও ভূমি-বিরোধ। আরও প্রমাণ সামনে আসবে।
ফতোয়াকে বিতর্কিত করতে তথ্য গোপন করা
পত্রিকাটি (প্রথম আলো) বিভিন্ন সময়ে ফতোয়া-বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এ দুরভিসন্ধি বা¯তবায়নে নারী-দোর্রার (ফৌজদারি দণ্ড) সাথে জড়িত ছা-পোষা ইমামকে ইসলামের মুখপাত্র বানিয়ে গোটা আলেম সমাজ ও আলেমদের ফতোয়া (কুরআন-হাদীসের সিদ্ধাšত)-কে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যার নগ্ন আশ্রয় নেয়। যেমন, মেয়েটির আপত্তিকর ভূমিকা গোপন করে। উদাহরণত, তাদের দোর্রা-বিরোধী প্রপাগান্ডা দেখে আমি হেনা-ট্রাজেডি-সংশ্লিষ্ট প্রথম আলোর সবগুলো কিংবা প্রায় সবগুলো সংখ্যা সংগ্রহ করে দেখলাম, সংশ্লিষ্ট পুরুষটির যত দোষের তালিকা, কিশোরী হেনা’র দোষ করার কোন লক্ষণই তাতে নেই। ‘বিন্দু-বিসর্গ অপরাধ ছাড়াই কিশোরীটির ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন অতঃপর মৃত্যু?’Ñ আমার মনে জটিলতা তৈরি হওয়ায় একদিন দৈনিক ‘সমকাল’ এবং দৈনিক ‘কালের কণ্ঠে’র দু’টি সংখ্যা কিনলাম। পড়ে দেখি, দু’টি পত্রিকাই নির্যাতনের শিকার হেনাকে সংশ্লিষ্ট পুরুষটির দীর্ঘদিনের পরকীয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে। তখন ধরা পড়ল প্রথম আলো’র সত্যগোপনের প্রতারণা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। এছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে নারী-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মুসলিম নারী বিশেষত শিক্ষিত যুবতীদেরকে বোরকা, হিজাব, পর্দা প্রভৃতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলার বহুমুখী অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।
সংখ্যাগুরুর বোধ-বিশ্বাসকে উপেক্ষা : ধর্মীয় পাতার অনুপস্থিতি
‘প্রথম আলো’ কর্তৃপক্ষ এদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানের ধর্ম অথবা ধর্মীয় আবেগ কোনটিরই প্রতিনিধিত্ব করে না। ফলে এদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধেয় আলেম, ইমাম, খতীব, মাদরাসা-শিক্ষক, বলতে গেলে এদের কারুর ওপর তাদের আংশিক আস্থাও নেই। অন্য সব পত্রিকায় সব অধর্মের মধ্যেও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করার যে সুযোগ আছে, তা এখানে অনুপস্থিত। প্রিয় পাঠক, আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, প্রথম আলো-কর্তৃপক্ষ অন্যান্য বিষয়ের মত ধর্মীয় পাতা বরাদ্দ রাখেনি। সপ্তাহের শুক্রবারে সম্পাদকীয়র নিচে একটি লেখা ছাপে বটে কিন্তু সেখানে নাম-না জানা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান বাদে আর কেউ ঠাঁই পান না; লক্ষ-লক্ষ আলেম-ওলামার দেশে এটি কি জাতীয় বেঈমানী নয়? এদেশের মানুষ গণমানুষ কি আলেম-ওলামার পেছনে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ছে না? তারা কি সাড়ে চার-পাঁচ লাখ মসজিদ এবং হাজার-হাজার মাদরাসাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে লালন করছে না? তাহলে পত্রিকাটির ঐ আচরণের তাৎপর্য কি?
ইসলামী মূল্যবোধ ও শরীয়াত পরিপন্থী সংবাদ চর্চা
প্রথম আলো পত্রিকাটি রীতিমতই ইসলামী শরীয়াত (অনুশাসন), শালীনতা ও ইসলামী কালচার-বোধকে তার পাঠকদের মগজ থেকে নির্মূল করতে চায়। এমন অভিযোগের যৌক্তিক কারণ আছে। তারা আšতর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, যার মালিক, পরিচালক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই সাথে অমুসলিম এবং ওপেন সেক্স-এ বিশ্বাসী, তাদের পরিবেশিত সংবাদকে বক্স-এ আটকে গুরুত্ব সহকারে এবং এমন শিরোনাম ও ভাষাভঙ্গি দিয়ে ছাপে, যাতে মনে হবে যে, আবহমান কাল থেকে এদেশের মানুষ যেন ওদের ধ্যান-ধারণাকেই লালন করে আসছে, বাংলাদেশের মানুষ যেন ওদের মত অবাধ যৌন মেলামেশায় বিশ্বাসী, তাদের যেন নিজস্ব কোন কালচার নেই। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশিত প্রথম আলো’র দু’টি সংবাদের প্রয়োজনীয় অংশ তুলে ধরা হলÑ
গত ১ মার্চ পত্রিকাটির ৮ম পৃষ্ঠায় ‘ধর্ষণের শিকার কিশোরী দণ্ডিত!’ শিরোনামে লিখা হয়েছে, “(মালদ্বীপের) আদালতের কর্মকর্তারা গত বুধবার জানান, ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী তার সৎবাবার হাতে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তদšত কর্মকর্তারা প্রমাণ পান, কিশোরীটি আগে আরেকজনের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত যৌনমিলন করেছে। তার সম্মতিতেই ওই যৌনমিলন ঘটে। কিশোরীটি আদালতে এ বিষয়ে স্বীকৃতি দেয়। এরপর আদালত তাকে ১০০টি বেত্রাঘাত ও আট মাস গৃহবন্দী করে রাখার আদেশ দিয়েছেন। অবশ্য ... ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যšত তাকে বেত্রাঘাত করা হবে না। মালদ্বীপে কঠোর শরিয়া আইন চালু রয়েছে। সেখানে বিবাহবহির্ভূতভাবে যৌনসংসর্গে লিপ্ত হওয়া অবৈধ।” বার্তাসংস্থা এএফপির বরাতে প্রথম আলো ১ মার্চ ২০১৩ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৮। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এই ধরনের সংবাদ ছেপে প্রথম আলো তার পাঠককে, এদেশের মানুষকে কি খোরাক দিতে চাচ্ছে? এদেশের মুসলমান কেন, অমুসলিমরাও কি এই কালচারের সাথে পরিচিত? এই কালচার কি এদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর চাহিদা?
গত ১৩ মার্চ একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘চাভেজের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বিপাকে আহমাদিনেজাদ’। সংবাদের ভেতরে লিখা হয়েছে, “ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বিপ্লবী হুগো চাভেজ সম্প্রতি মারা যান। তাঁর অšেত্যষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে কারাকাসে যান আহমাদিনেজাদ। এ সময় চাভেজের মা এলেনা ফ্রিয়াসকে আলিঙ্গন করে সান্ত্বনা দেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। পরে এই দৃশ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ইরানের ধর্মীয় নেতারা এ দৃশ্য দেখে বেজায় চটেছেন। ইরানে কঠোর ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করা হয় এবং কোনো পুরুষের পক্ষে অন্য নারীকে আলিঙ্গন করা পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধর্মীয় নেতাদের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ওই ঘটনাকে ‘নিষিদ্ধ’, ‘অশোভনীয়’, ও ‘অমার্জিত’ আচরণ বলে উল্লেখ করা হয়।” Ñবার্তাসংস্থা এপি’র বরাতে প্রথম আলো, ১৩ মার্চ ২০১৩ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৭।
প্রশ্ন হচ্ছে, এদেশের মানুষের কাছে কি বেগানা নর-নারী’র কোলাকুলি সিদ্ধ? শোভনীয়? কিংবা মার্জনীয়? আর এ দেশে তো কঠোর ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করা হয় না; তারপরও কি এদেশের আপামর জনতার কাছে সান্ত্বনা দেয়ার ওই পদ্ধতি পুণ্যের কাজ কিংবা গ্রহণযোগ্য? প্রথম আলো’র সম্পাদকের স্ত্রীর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য? তার বা তার সাংবাদিকদের পরিবারে কি ওই কালচারের চর্চা আছে? যদি না থাকে, তাহলে কেন ওই অখাদ্য আমদানি ও বিপণনের চেষ্টা এই দেশে? এই মিশনারী সাংবাদিকতা কি গোপন কোন উদ্দেশ্যকে ব্যক্ত করে না? এটি কি অবাধ যৌন মেলামেশার সংস্কৃতি প্রচলনের অসৎ চেষ্টা নয়?
মুসলমানের ইসলাম কি ওই কালচারের অনুমতি দেয়? আল্লাহ বলেছেন, “হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা প্রধানত নিজেদের ঘরেই অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের মত নিজেদেরকে দেখিয়ে বেড়াবে না।” Ñ(আল-কুরআন, সূরা আহ্যাব ৩৩:৩৩)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, মেয়েদেরকে এবং মুমিনদের নারীমহলকে বল, তারা যেন তাদের চাঁদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত (ইভটিজিং) করা হবে না।” Ñ(সূরা আহ্যাব ৩৩:৫৯)। পাঠকের এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে যাওয়ার কথা যে, প্রথম আলো কুরআন বিরোধী এক তৎপরতার এক পরিষ্কার উদাহরণ।
ইসলামপন্থী লেখক-বুদ্ধিজীবীদের সাথে বিমাতা-সুলভ আচরণ
শুধু আলেম-ওলামা নয়, ইসলাম নিয়ে যে দু’কলম লেখে, এমন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, তিনি ব্যক্তিজীবনে যদি ইসলামকে প্রায়-নির্বাসিতও রাখেন, প্রথম আলো নিতাšত নাচার বা পরিস্থিতির শিকার না হলে তাকে সাধ্যমত এড়িয়ে চলে। প্রমাণস্বরূপ বলতে চাই, পত্রিকাটি চল্লিশ দশকের সেরা কবিপ্রতিভা বা সেরা সারির প্রতিভা ফররুখ আহমাদের জন্ম, মৃত্যু, সৃষ্টি কোনটিকেই তারা পাত্তা দেয় না। তারা মুক্তিযুদ্ধের আšতর্জাকি সংগঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, বাংলাবিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, ভাইস চ্যান্সেলর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী-কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় অধ্যাপক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী জ্ঞানসাধক মনীষী সৈয়ধ আলী আহসানকে তারা আদৌ কেয়ার করে না বললেই চলে।
সদ্যবিগত ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, যিনি বাংলা একাডেমীর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ধ্বনিতত্ত্বে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এরকম একজন মনীষীর মৃত্যুসংবাদটা পর্যšত ছাপেনি। তারা ছাপেনি হাসন রাজার নাতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক, দার্শনিক, মনীষী, জাতীয় কবি নজরুল-বিশেষজ্ঞ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের কীর্তি কিংবা মৃত্যুসংবাদটি পর্যšত। পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা বাংলা সাহিত্যের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ নজরুল-গবেষক’, ফররুখ-গবেষক, জীবনানন্দ দাশ-গবেষক, কবি ও সমালোচক শাহাবুদ্দীন আহমদ-এর নাম উচ্চারণের দায়টুকু পর্যšত তারা সারে না। এসবের একমাত্র কারণ, লোকগুলোর ইসলামের প্রতি দরদ ছিল আর প্রথম আলোর রয়েছে ইসলামের প্রতি জাতক্রোধ। রয়েছে এদেশের সংখ্যাগুরুর ধর্মের বিনাশচেতনা। আল্লাহর ভাষায়, “তারা (অবিচারকারী জালিমরা) তাদের কাছে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে শুধু এই কারণে যে, তারা ঈমান এনেছে পরাক্রমশালী এবং প্রশংসার্হ আল্লাহর প্রতি। Ñ(সূরা বুরূজ ৮৫:৮)। আমাদের এই দাবি আরো অকাট্য হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, প্রথম আলো মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও বাকস্বাধীনতার নামে তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, হুমায়ূন আজাদ-এর মত স্বঘোষিত না¯িতক-আধা না¯িতক এবং খতমে নবুয়তকে অস্বীকারকারী কাদিয়ানী ফেরকাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যায়।
জাতীয় কবিকে খাট করে, খণ্ডিত করে দেখা
বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করা গেছে, পত্রিকাটি (প্রথম আলো) জাতীয় কবির কীর্তি চর্চায় খুব একটা আবেগ বা উৎসাহ খুঁজে পান না। অন্যদিকে রবীন্দ্রচর্চায় একদম দেওয়ানা, যদিও রবীন্দ্রনাথ এদেশের সংখ্যাগুরুকে নিয়ে কোন তাগাদা অনুভব করতেন না। একবার আবুল ফজল দুঃখ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লিখেছিলেন, যে রবি গোটা পৃথিবীকে আলোকিত করল, তার আলো থেকে বঞ্চিত থাকল এই বঙ্গবাসী মুসলমান। উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, আসলে মুসলমানের জীবন নিয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। আর নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলিম-খৃস্টান-ইহুদী-পতিতা-বারাঙ্গনা-জারজ-শোষিত-বঞ্চিত-নিচু-উঁচু সবশ্রেণীকে তাঁর কাব্য ও কথায় একাকার করে নিয়েছিলেন। সবকিছুর ওপরে এ দেশের হতভাগা মুসলমানের বোধ-বিশ্বাস, হৃদয়ের আবেগ, জীবনাচারের জয়ধ্বজাকে উড্ডীন করে যেতে যে ভাবাবেগ ও ধ্যানের ব্যবহার করেছিলেন, তার ঋণ এক কথায় অপ্রতিশোধ্য। নজরুলের অসংখ্য ইসলামী গান, কবিতা, অভিভাষণ, প্রবন্ধ, সম্পাদনার মূল সুরের সাথে এদেশের সংখ্যাগুরুর জীবনচেতনা জড়িয়ে আছে পরম মমতায়। তিনি পরম নিষ্ঠা নিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, “আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি ভয়/ আমার নবী মোহাম্মদ, যার তারীফ জগতময়।/ ইসলাম আমার ধর্ম/ কুরআন আমার বর্ম/ ...।” “আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ,/ সেই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত।/ পয়জার তার লাগতো এসে/ আমার কঠিন বুকে,/ আমি, ঝরনা হয়ে গলে যেতাম/ অমনি পরম সুখে।/ সেই চিহ্ণ বুকে পুরে/ পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে,/ সেথা, দিবানিশি করতাম তার/ কদম জিয়ারত।” যে শেষ চাহিদার ওপর তিনি জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন, তাও এদেশের চিরায়ত আবেগের জায়গাÑ “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।” অথচ প্রথম আলো বা তাদের অন্য কোন প্রকাশনা যখন নজরুলকে নিয়ে কথা বলে, কবির এই চূড়াšত আত্মপরিচয়কে একরকম আড়াল করেই রাখে, যা কোনভাবেই কবির চরিত্র বা জাতীয় চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শেষকথা হচ্ছে, মুসলমানের জীবন ও জাতীয়তা নিয়ে নজরুল, ফররুখ, গোলাম মো¯তফা, তালীম হোসেন, বেনজির আহমেদ, রওশন ইজদানী, মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মুন্সী মেহেরুল্লাহ, ইসমাঈল হোসেন সিরাজী প্রমুখই লিখেছেন। অতএব, আমাদের জীবন ও জাতীয় স্বার্থেই আমাদেরকে এঁদের কাছে ধরনা দিতে হবে। নিজের মা কুৎসিত হলেও যে কোন সুন্দরী মহিলার চেয়ে কাম্য ও কাক্সিক্ষত। প্রথম আলো’র কমিটমেন্ট এ রকম বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। কি এক রহস্যময় কারণে এদেশের সিরাজীর চেয়ে ওদেশের বঙ্কিম, এখানের ফররুখ আহমদের চেয়ে ওখানের শক্তি চট্টপাধ্যায় কিংবা এপাড়ের সৈয়দ আলী আহসানের চেয়ে ওপাড়ের পবিত্র সরকার তাদের কাছে অনেক বেশি আবেগের।
পক্ষপাত, প্রতিহিংসা ও একচোখা আচরণ
২৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৩, বৃহস্পতিবার। বহু দুর্বলতা নিয়ে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়। সঙ্গত কারণেই রায় ঘোষণার পরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার জনগণের টাকায় লালিত পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগকে হিংস্র ড্রাকুলার ভূমিকায় অবতীর্ণ করে। নিহত হয় অসংখ্য জামায়াত-শিবিরকর্মী এবং সাধারণ জনগণ। অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবিরের হাতেও ৪/৫ জন পুলিশ এবং দু’জন আওয়ামীলীগ কর্মী নিহত হয়। পরের দিন ১ মার্চ আমার দেশ, নয়াদিগšত ডজন-ডজন লাশ এবং ঝাক বেঁধে পুলিশের বৃষ্টির মত গুলি করার দৃশ্য ছাপে প্রথম পৃষ্ঠায়। আšতর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। এদেশের প্রায় সব মিডিয়া একযোগে এ নিয়ে তখন মিথ্যাচার ও লুকোচুরি শুরু করে। ইতিহাসে রেকর্ডসৃষ্টিকারী এই গণহত্যাকে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব বলে চালিয়ে দেয়। তাদের এই মিথ্যাচারের পক্ষে অবশ্য একটি ছবিও সংযুক্ত করতে পারেনি। দ্বিমুখী নীতি হিসেবে আবার জামাত-শিবিরের (?) এই তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা ধামাচাপা দেয়ার নগ্ন সাধনায় লিপ্ত হয়। নয়াদিগšেত এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬৬। আমার দেশ উল্লেখ করেছে ৫৬। সুদূর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে ৪০। অনলাইন পত্রিকা ‘নতুন বার্তা ডটকম’ রাত ১০ টার মধ্যেই ৬২ জন নিহতের খবর দেয়। পরের দিন প্রথম আলো’র কয়েকটি শিরোনাম ছিল এরকমÑ পৃষ্ঠা ১: ‘সাঈদীর ফাঁসি, সহিংসতায় নিহত ৩৭ : দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব : চার পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, ...বগুড়ায় পুলিশের অস্ত্র লুট’/ পৃষ্ঠা ২৪: ‘সহিংস জামায়াত, পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ : পুলিশসহ ৪৩৭ জন আহত, আটক ৯৭’/ ‘বাঁশখালী ও নোয়াখালীতে হিন্দু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ : কুমিল্লায় প্রতিমা ভাংচুর’/ জামায়াত-শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা, শহরজুড়ে আতঙ্ক : হরতালে জনজীবন ব্যাহত’/ ‘প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বিদ্যুৎ কার্যালয় ও সাবস্টেশনে আগুন : চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব : জেলা শহর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি, ৫০ টি বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট’।
সংবাদ-পরিবেশনে বৈষম্য ও সত্যগোপনের বিবরণ আমার দেশ দিয়েছে এভাবে, “লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, (প্রথম আলো থেকে) উদ্ধৃত প্রতিটা জায়গায় জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত কয়েকজনের ক্ষেত্রে ‘হত্যা করেছে’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, ‘পিটিয়ে হত্যা করেছে জামায়াত-শিবির’, ‘এক প্রকৌশলীকে হত্যা করে জামায়াত-শিবির’ ইত্যাদি। অথচ জামায়াত-শিবির-যুবদল-ছাত্রদলের কর্মীদের হত্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ‘পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে’ নিহত হয়েছেন। কোথাও বলা হয়েছে, ‘গুলিতে নিহত হয়েছেন’। কিন্তু গুলিটা কে করেছে, পুলিশ না-কি জামায়াত-শিবির-যুবদল, তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে নগ্নভাবে।
“বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্র“য়ারি) প্রথম আলো অনলাইনে প্রাসঙ্গিকভাবেই ট্রাইব্যুনাল ও সাঈদীসংক্রাšত গুরুত্বপূর্ণ থেকে খুঁটিনাটি সংবাদের ছিল ছড়াছড়ি। তবে এসব সংবাদ এত গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করলেও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গণহত্যার শিকার হওয়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সংবাদ পরিাবেশনে তাদের অনীহা মারাত্মকভাবে চোখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার পরও তারা সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা লিখেছে ৩৫। সংবাদটির শিরোনাম ছিল, ‘গাইবান্ধায় তিন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা : দেশব্যাপী জামায়াতের ব্যাপক সহিংসতা, নিহত ৩৫’। পরের দিনের (১ মার্চ) পত্রিকায় একই সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব : সাঈদীর ফাঁসি, সহিংসতায় নিহত ৩৭’। সংবাদের ভেতরের খবর কেমন তা আগই উল্লেখ করা হয়েছে। অনলাইন ও হার্ডকপি, দুই সংস্করণেই নিহতদের সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার (৬২) চেয়ে কম দেখিয়েছে প্রথম আলো।
“তবে দেশের ভেতরে গণহত্যার শিকার হওয়া জামায়াতের লোকজনের খোঁজ-খবর পত্রিকাটি ঠিকমত না রাখলেও বিশ্বের আনাচে-কানাচে কোথায় সাঈদীর রায়ের পর উল্লাস হয়েছে, সেসব সংবাদ অত্যšত যতœসহ সংগ্রহ করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। এরকম কয়েকটি সংবাদের শিরোনাম হলোÑ ‘সাঈদীর সাজায় উল্লসিত ইউরোপের প্রবাসীরা’, ‘আনন্দে উদ্বেল শাহবাগ, কাল সমাবেশ’, ‘সাঈদীর রায়ে পিরোজপুরে আনন্দ মিছিল।” Ñ(দৈনিক আমার দেশ, ২ মার্চ শনিবার, পৃষ্ঠা ১ ও ১৫)।
প্রথম আলো জামায়াতকে ন্যূনতম মানুষের মর্যাদা তো দূরের কথা, একটা ইতর প্রাণীর মর্যাদা দেয় না। তারা নিজেদেরকে পরম বৃক্ষপ্রেমিক এবং চরম শিবিরবিদ্বেষী হায়েনা হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে। তাদের যুগপৎ প্রেম এবং বিদ্বেষের নমুনা দেখুনÑ ‘জামায়াত-শিবিরের নির্মমতায় প্রাণ হারাল ১০ হাজার গাছ!’ Ñ(দৈনিক প্রথম আলো, ৫ মার্চ, পৃ. ৩)। নিরাপদে ১০ হাজার গাছ কাটার সুযোগ পেয়ে থাকলে দেশে সরকার ও প্রশাসন নেই অথবা প্রশাসনের সহায়তায়ই কাজটি হয়েছে অথবা জনতার সহযোগিতা ও গণরোষের কাছে সরকার ও প্রশাসনের নৈতিক ও বা¯তব অর্থের পরাজয় হয়েছে; সুতরাং জনগণের সম্পদ রক্ষার এত বড় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারেরই পদত্যাগ করা উচিত। আর প্রথম আলো এ ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে রিপোর্ট না করায় তার নৈতিক মৃৃত্যু হয়েছে ধরে নিতে হবে।
আšতর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ-সংস্থা’র খবর নিয়ে লুকোচুরি
‘প্রথম আলো’ পরিবেশিত আšতর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ পড়ে যে কোন পাঠকের মনে হবে যে, মিডিয়াগুলো বোধ হয় সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আল-জাজিরা’র কথা বাদ দিলেও অন্যান্য গণমাধ্যম এবং বার্তাসংস্থা ট্রাইব্যুনাল গঠনে অস্বচ্ছতা, নানা কারণে ট্রাইব্যুনালের বিতর্কিত হওয়া, স্কাইপে সংলাপে সাবেক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক-এর পদত্যাগ, সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক, মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ সমালোচকদের সমালোচনা, সর্বোপরি রায়কে বিএনপি, জামায়াত, সাঈদীর আইনজীবী-কর্তৃক সর্বাত্মক প্রত্যাখ্যান এবং দেশব্যাপী ক্ষোভ-সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে মুহুর্মুহু প্রাণদান-এর প্রসঙ্গটি কোথাও শিথিল, কোথাও কঠোর ভঙ্গিতে উচ্চারিত হয়েছে। ‘প্রথম আলো’ প্রায় সবগুলো প্রসঙ্গ এড়িয়ে দেশ-বিদেশের ক্ষুদ্র-বৃহৎ উল্লাসের সংবাদকেই একমাত্র বানিয়ে ফেলেছে। নিচের ছকটি ‘প্রথম আলো’র চরিত্র বুঝতে সামান্য সহযোগিতা করবে বলে মনে হয়Ñ
পত্রিকার নাম প্রথম আলো আমার দেশ নয়া দিগšত
শিরোনাম
[১ মার্চ ২০১৩
শুক্রবার] আšতর্জাতিক গণমাধ্যমে সাঈদীর ফাঁসির খবর : রায় ঘোষণার পর আনন্দে মেতে ওঠেন মানুষ Ñপ্রথম আলো ডেস্ক/ পৃ. ২ আšতর্জাতিক মিডিয়ায় মাওলানা সাঈদীর রায়ের খবর : বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নবিদ্ধ বিচার Ñস্টাফ রিপোর্টার/ পৃ. ১ ও ১৫
আšতর্জাতিক মিডিয়ায় সাঈদীর রায় : সেকুলার বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ Ñনিজস্ব প্রতিবেদক/ পৃ. ১৬ ও ১৫
বিবিসি বিবিসির খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল এ পর্যšত তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন।
বিবিসি লিখেছে, বাংলাদেশের একটি ট্রাইব্যুনাল সে-দেশের অন্যতম ইসলামপন্থী নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১৯৭১ সালে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে আরও বলেছে, ‘কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, আšতর্জাতিক মানদণ্ডে এ ট্রাইব্যুনাল উত্তীর্ণ নয়। এছাড়া দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী অভিযোগ করেছে, বর্তমান সরকার এর মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বা¯তবায়ন করছে।’
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ ও জামায়াত-কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গতকাল বিকাল পর্যšত ১৫ জন নিহত ও দু’শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিবিসি ও রয়টার্স তাদের খবরে উল্লেখ করে। বিবিসির খবরে সাঈদী ও অন্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করা হয়।
এতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দাবি করে বুধবার রাজধানীতে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের কথাও উল্লেখ করা হয়।
বিবিসির খবরে আরো বলা হয়, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের এটা তৃতীয় রায় প্রদান। এই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের ৯ জন এবং বিএনপির দুইজনের বিচার করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারকাজ নিয়ে ঢাকায় সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, এই ঘটনায় অনেক লোক নিহত হয়েছে।
এতে বলা হয় মানবাধিকার গ্র“পগুলো বলছে, ট্রাইব্যুনালটি আšতর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গঠন করা হয়নি। জামায়াত ও বিএনপি অভিযোগ করেছে, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।
আল-জাজিরা
[কাতারভিত্তিক/
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক টিভি-চ্যানেল] কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণে দেওয়া প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়, ‘বাংলাদেশে জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড’।
‘বাংলাদেশ জামায়াত লিডার সেন্টেন্সড টু ডেথ’ শিরোনামে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের আšতর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো আšতর্জাতিক বৈশিষ্ট্য নেই। এ ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। রায়দানকালে বিবাদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আদালতে বলেছেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। বিচারপতিরা তাদের অšতর থেকে এ রায় দেননি।
আল-জাজিরা আরও জানায়, ‘এ ট্রাইব্যুনাল যথাযথ পদ্ধতিতে আšতর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বারা সমালোচিত হয়েছে।
এছাড়াও তারা জানিয়েছে, রায় ঘোষণার পরপর রাজধানীর শাহবাগে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের ‘সর্বোচ্চ শা¯িত’র দাবিতে অবস্থান করা ট্রাইব্যুনালের সমর্থকরা আনন্দে ফেটে পড়েন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় বলা হয়, আšতর্জাতিক কোনো তদারকি ছাড়াই কেবল দেশীয় বিচারালয় হিসেবে বিচারকাজ সম্পন্ন করে। ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে কেবল বিরোধীদলের লোকজনকে টার্গেট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই রায় দেয়া উপলক্ষে রাজধানীতে ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরকার সহিংসতা প্রতিহত করতে বিজিবিও মোতায়েন করে। জামায়াতে ইসলামী হরতাল আহ্বান করার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ থাকে, শহরের রা¯তাগুলো ছিল ফাঁকা।
এতে বলা হয়, ফেব্র“য়ারিতে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে ইসলামপন্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় ১৬ জন নিহত হয়। ওই রায়ের পর সেক্যুলার বিক্ষোভকারীরা একে ‘হালকা সাজা’ অভিহিত করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দাবি করতে থাকে।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’
[যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী দৈনিক] যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস ‘বাংলাদেশে ইসলামি নেতার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বেশ কয়েকটি অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন একটি বিশেষ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর ঢাকায় হাজার-হাজার লোক আনন্দ-উল্লাসে যোগ দেন।
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‘উজ্জ্বল লাল শ্মশ্র“মণ্ডিত মাওলানা সাঈদী একজন প্রখ্যাত বক্তা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশটির পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন।’
নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের প্রসঙ্গ টেনে বলেছে, বিচার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের দায়ে এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
বাংলাদেশী মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সুলতানা কামাল মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে আমেরিকার সর্বাধিক জনপ্রিয় এই দৈনিকটি জানিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসেও বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল নিয়ে বিভক্তির কথা তুলে ধরা হয়। এতে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ফাঁসির দাবির কথাও উল্লেখ করা হয়। এতে বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানানোতে তিনি লজ্জিত। তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধাপরাধীদের যুগের পর যুগ শা¯িত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
সুলতানা কামাল বলেন, তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দাবিটি আমাদের গ্রহণ করতে সমস্যা আছে। তবে তাদের দেশের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শা¯িত দেয়া না হলে এসব লোক আবার ফিরে আসবে।
‘রয়টার্স’
[আšতর্জাতিক বার্তাসংস্থা] বার্তাসংস্থা রয়টার্সের খবরের শিরোনাম ছিল, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতার মৃত্যুদণ্ড’ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় জ্যেষ্ঠ নেতা সাঈদীকে বাংলাদেশের একটি ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ ঘটনায় শাহবাগে হাজার-হাজার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েন।
‘ইসলামী নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় বাংলাদেশে ১৫ বিক্ষোভকারী নিহত’ / ‘ফিফটিন ডাই ইন প্রটেস্ট অ্যাট বাংলদেশ ইসলামিস্ট’স ডেথ সেনটেন্স’ শিরোনামে লন্ডনভিত্তিক আšতর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে এক ইসলামী নেতাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অšতত ১৫ বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
খবরে এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার সময় দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে কাঠগড়ায় শাšত ও স্বাভাবিক দেখা গিয়েছিল। রায় ঘোষণার পর সাঈদী কোন ধরনের অপরাধ না করার দাবি করে বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিচারকরা তাদের মন থেকে রায় দেননি। তারা শাহবাগের অত্যধিক চাপ থেকে রায় দিয়েছেন।’
প্রসিকিউটর হায়দার আলী রায়ে তার সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘(রায়ে) পুরোপুরিভাবে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটেছে।’ অন্যদিকে আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক রায়কে ‘পলিটিক্যালি মটিভেটেড’ (রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) বলে মšতব্য করে বলেন, ‘তিনি (সাঈদী) পুরোপুরি ‘ইনজাস্টিসের’ (অবিচার) শিকার। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে সহিংসতা শুরু হলে ‘রয়টার্স’ শিরোনাম করেÑ ‘বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতাকে মৃত্যুদণ্ড : সহিংসতায় ১৫ জন নিহত।’ সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি আদালত ইসলামপন্থী দলের এক নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে তার সমর্থকরা দেশব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তাতে কমপক্ষে ১৫ জন (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে আটটা) নিহত হন। জামায়াতে ইসলামী দলের ৭৩ বছর বয়সী এই নেতাকে গণহত্যা, ধর্ষণ, নিষ্ঠুরতা, লুট ও জোরপূর্বক ধর্মাšতকরণের অভিযোগে দোষী সাব্য¯ত করা হয়। কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে দেশটির স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি এসব অপরাধ করেন। এই রায় ঘোষণার দিন ইসলামি দলটি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমগুলো বলছে, রায় ঘোষণার পর এক ডজনের বেশি জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা দেশটির নোয়াখালী জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উপাসনালয় ও কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলায় একটি থানায় হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রায় ঘোষণার সময় সাঈদী আদালতের কাঠগড়ায় স্পর্ধিত ভঙ্গিতে শাšতভাবে বসা ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতকে সাঈদী বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। বিচারকরা তাদের বিবেক থেকে এ রায় দিতে পারেননি। তারা শাহবাগের আন্দোলনকারীদের চাপে প্রভাবিত হয়ে এ রায় দিয়েছেন।’ সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার দণ্ড রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। রয়টার্সের খবরে আরো বলা হয়, এই ট্রাইব্যুনালের মান নিয়ে মানবাধিকার গ্র“পগুলো সবসময় সমালোচনা করে আসছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ, সাক্ষী ও তদšত কর্মকর্তারা হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রধান দু’টি বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া এই ট্রাইব্যুনালকে ‘প্রহসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে হাসিনার দল কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়ার এই মুসলিম দেশটি আগামী জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগে আরো অনেক সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। জামায়াত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির একটি বড় মিত্র এবং একটি বড় ভোটব্যাংক। দেশটি এক সময় পূর্ব পাবি¯তান নামে পরিচিত ছিল এবং ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে পশ্চিম পাকি¯তান থেকে পৃথক হয়ে যায়। জামায়াতসহ বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশ সে সময় পাকি¯তান ভাঙার বিরোধিতা করে। তবে জামায়াত নেতারা কোনো প্রকার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
‘গার্ডিয়ান’
[বৃটেনের প্রভাবশালী দৈনিক] যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। এ রায়ের পর দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সাঈদীর আইনজীবীরা এ বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে রায়ের সময় ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেন। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দি গার্ডিয়ান’ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে মাওলানা সাঈদীর সাক্ষীকে সরকারি বাহিনীর গুম করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছে, এ রায়ের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা লিখেছে, আšতর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সাঈদীর সাক্ষীকে গুম করে ফেলার কথা উল্লেখ করে এ বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ দিকে গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের সিদ্ধাšেত বাংলাদেশে সহিংস বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ নিয়ে সৃষ্ট আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তাই প্রকটভাবে দেখা গেল।
সৌদি গেজেট সৌদি গেজেট-এ খবরটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বার্তা ‘বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধ আদালতে ইসলামপন্থী নেতার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হত্যা ও ধর্মাšতরিতকরণের মতো অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিরোধীদলীয় ইসলামপন্থী নেতা সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। ‘আমার দেশ’ সৌদি গেজেট-এর কোন সংবাদ পরিবেশন করেনি। সৌদি গেজেট তার অনলাইনে শিরোনাম করেছেÑ ‘বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতে ইসলামপন্থীকে মৃত্যুদণ্ড।’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে ওই সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ আদালত একজন সিনিয়র ইসলামপন্থী বিরোধী নেতাকে ১৯৭১ সালে পাকি¯তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও জোরপূর্বক ধর্মাšতকরণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যথেষ্ট বিতর্কিত অভ্যšতরীণ এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্য¯ত হওয়া দ্বিতীয় রাজনীতিবিদ।
সংখ্যালঘু নিয়ে দেশবিরোধী রাজনীতি
সংখ্যাগুরুর সাথে দুর্ব্যবহার, নির্যাতনমূলক আচরণ কিংবা ধর্মীয় কারণে তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ কিছুতেই কাম্য নয়। কিন্তু হিন্দু বা কোন সংখ্যালঘুর প্রতি প্রথম আলোর অন্যায় প্রেম যে-কোন ধার্মিক মুসলমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। জামায়াত-শিবির বা রাজনৈতিক কর্মী নয়, পুলিশ ও লীগের অত্যাচারে নিহত এমন মুসলমান পাবলিক নিয়ে ক্ষমাহীন নীরবতা অবলম্বল করলেও তাদের সীমাহীন সংখ্যালঘুপ্রীতির প্রকাশ ঘটাতে তারা এই দেশকে বাইরের যে কোন শত্র“রদেশের খাদ্য বানাতেও রাজি; বরং এটিকে তারা নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব বানিয়ে নিয়েছে। গণহত্যা ও জামায়াত-শিবির হত্যাকে তারা শুধু বৈধতাই দেয়নি, উপরন্তু মসজিদ-আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ চাপা দিলেও সংখ্যালঘু-আক্রান্ত হওয়া ও মন্দীর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে ফলাও করে ডজন-ডজন শিরোনামে প্রকাশ করেছে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ ও ছবি ছাড়াই চোখবুজে এই দায় জামায়াত-শিবিরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের পরিবেশিত সংবাদ পাঠ করে বাইরের যে কোন জনগোষ্ঠী ভাবতে বাধ্য হবে যে, বাংলাদেশ বোধ হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিহীন একটি চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী দেশ আর সেই সন্ত্রাসের জন্মদাতা হচ্ছে ইসলামের অনুসারীরা, বিশেষত জামায়াত-শিবির। কয়েকদিনের সংবাদ শিরোনাম খেয়াল করুনÑ
‘বাঁশখালী ও নোয়াখালীতে হিন্দু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ : কুমিল্লায় প্রতিমা ভাঙচুর/ পৃ. ২৪ (১ মার্চ ২০১৩ শুক্রবার)। জানমাল ও মন্দির রক্ষার্থে পাহারা দিচ্ছেন যুবকেরা / পৃ. ১ (৫ মার্চ)[ছবি সংযুক্ত হয়নি; ৪ মার্চ ছবি ও ক্যাপশনসহ নয়াদিগšেতর সংবাদ এরকম: ‘মন্দিরে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় চৌদ্দগ্রাম উপেেজলার কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান মন্দিরে ছাত্রশিবিরের পাহারা’]। নাগরিক সমাজের আহ্বান : সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংস তৎপরতা রুখে দাঁড়াও/ পৃ. ১ (৫ মার্চ)। ১৪ জেলার বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু পরিবার, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট/ পৃ. ১ (৫ মার্চ)। বাঁশখালীতে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব : ‘তারা এসে পানি চেয়ে খেল, পরে আগুন দিল ঘরে’/ পৃ. ২০ (৫ মার্চ) [এই ‘তারা’ যে কারা, তা কিন্তু আক্রান্তরা একবারের জন্যও নির্দিষ্ট করেনি; প্রতিবেদক প্রণব বল তার রিপোর্টিং সেন্টেন্সে জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন]। সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত বরদাশত করা হবে না : খালেদা/ পৃ. ২ (৫ মার্চ)। সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি : ১৫০০ বাড়িঘর, অর্ধশতাধিক উপাসনালয় ক্ষতিগ্র¯ত/ পৃ. ২ (৫ মার্চ)। সাত জেলায় মন্দিরে আগুন, ভাঙচুর/ পৃ. ২০ (৬ মার্চ)। বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চাপ দিন : ভারত সরকারকে বিজেপি/ পৃ. ২ (৬ মার্চ)। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নৈরার্জ সৃষ্টির নিন্দায় ৭৫ বিশিষ্ট নাগরিক/ পৃ. ২ (৬ মার্চ)। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ/ পৃ. ২ (৬ মার্চ)। (বন্দনা রায় চৌধুরীর রান্নার বিরাট ছবিসহ) বারুদ ছিটিয়ে আগুন, নিমিষেই সব শেষ : ধ্বস¯তূপে খাওয়া-দাওয়া-রাতযাপন/ পৃ. ২০ (৭ মার্চ)। সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, মন্দির ভাঙচুরে অ্যামনেস্টির উদ্বেগ/ পৃ. ২ (৮ মার্চ)।
বাংলাদেশ একটি স্বীকৃত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই শিরোনামগুলো এবং তার ভাষা থেকে কি তা বোঝার উপায় আছে? বাংলদেশের আপামর জনগণ সম্বন্ধেই বা কি ধারণা হবে এসব শিরোনাম থেকে? ১১ মার্চের দৈনিক আমার দেশ সচিত্র প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘আওয়ামী লীগের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে সংখ্যালঘুরা থানায় : চাঁদা দাবি, বৌ ঝিকে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি’। Ñ[১১ মার্চ ’১৩ পৃ. ১ ও ১৫]। প্রথম আলো এ ব্যাপারে নিরব।
প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার বিশ্বজিৎ-প্রসঙ্গ
বিশ্বজিতের মৃত্যু ছিল মাত্রাতিরিক্ত নির্মমতার প্রকাশ। সে হিসেবে বিষয়টি মানুষমাত্রকে নাড়া না দিয়ে পারে না; কিন্তু বিশ্বজিৎ যেদিন মারা গেছেন, সেদিন জামায়াতেরও দু’জন কর্মী মারা গেছেন। বিশ্বজিৎ অমুসলিম হওয়ায় তাকে নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট প্রকাশ করলেও জামায়াতের ঐ দু’জন মুসলমান-এর হত্যা বিষয়ে প্রথম আলো’র কোন বক্তব্য নেই; তারাও তো মানুষ, নয় কি? সাংবাদিকতার নীতি কি এই আচরণ অনুমোদন করে? অথচ বিশ্বজিৎ প্রসঙ্গকে তাজা রাখার ব্যাপারে তাদের কোন ক্লাšিত নেই। একই পত্রিকার দু’রকম নীতির হেতু কি?
বিএনপি’র সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকতা-নীতির লঙ্ঘন
বিএনপি’র দিকে ‘প্রথম আলো’ কতটা নিরপেক্ষ চোখ নিয়ে তাকায়, তা বোঝার জন্য দু’-একদিনের প্রথম আলোই যথেষ্ট। গণহত্যার প্রতিবাদে বিএনপি’র হরতাল ছিল ৫ মার্চ। ৫ তারিখে প্রধান বিরোধী দল কেন, মাঝারি কোন রাজনৈতিক দলের হরতাল ছিল, ৬ তারিখের প্রথম আলো পড়লে তা মনে হওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রধান বিরোধী দলের ব্যাপকভাবে পালিত এই হরতালের কোন ছবি প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপেনি পত্রিকাটি। মাত্র এক কলামে সীমাবদ্ধ ১ম পৃষ্ঠার ছোট্ট শিরোনামটি ছিল, ‘হরতালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর’ Ñ[৬ মার্চ ’১৩, পৃ. ১]। অপরদিকে পাশেই বড় অক্ষরে দুই কলাম বিস্তৃত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাজে প্যাঁচালের সংবাদটির শিরোনাম ছিল এরকমÑ ‘৬৭ জনের মৃত্যুর দায় বিএপি-জামায়াতের : সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি’, যা ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় গিয়ে ৫ কলামে ছড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় গিয়ে হরতালের সংবাদের সাথে মূদ্রিত কয়েকজন দেশী-বিদেশী অস্ত্রধারী ক্যাডারের লম্বা ছবির ক্যাপশনে লিখা হয়েছেÑ ‘কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে অস্ত্রে গুলি ভরার কাজে ব্য¯ত এক কর্মী’। এই কর্মী কোন্ দলের তা কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ কি? প্রথম আলো থেকেই জবাব উদ্ধার করা যাক। শিরোনামের আওতাভুক্ত বিবরণের ভেতরে এক জায়গায় লিখা হয়েছেÑ “দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আলী ম্যানশনের সামনে আওয়ামী লীগের মিছিলের পেছনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর আরও অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হলে এলোপাতাড়ি গুলি চলে (প্রশ্ন হচ্ছে, ককটেল কে/কারা ফাটাল, আর ‘এলোপাতাড়ি গুলি’ কারা চালাল, একটিও কি প্রথম আলো’র সাংবাদিক দেখতে পাননি?)। ওই সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করে কেউ-কেউ গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।” Ñ[৬ মার্চ ’১৩, পৃ. ২]। আর শেষ পৃষ্ঠার শিরোনাম ছিল আরও মজাদার। পৃষ্ঠার ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কলাম জোড়া জামায়াত-বিরোধী সংবাদ শিরোনামেরর বামপাশে ১ম কলামের শুরুতে ছোট অক্ষরে লিখা ছিল, ‘রাজধানীতে ঢিলেঢালা হরতাল, ভাঙচুর, আগুন’ Ñ[৬ মার্চ ’১৩, পৃ. ২০]। অর্থাৎ বিএনপি/ ছাত্রদল আগুন দিয়ে পিকেটিং করেও হরতাল জমাতে পারেনি।
বিতর্কিত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সাফাই
৫ ফেব্র“য়ারি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা’র যাবজ্জীবন দণ্ডকে ফাঁসির দণ্ডে পরিণত করার দাবি অতঃপর হুমকি নিয়ে জমানো হয় জাগরণমঞ্চ। তথাকথিত এই গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন আছে। যেমন, এটির আয়োজনে কারা? চালাচ্ছে কারা? নেপথ্যে কারা? অর্থায়ন করছে কারা? সরকারের প্রমাণীত দুর্নীতিসমূহের ব্যাপারে নীরব কেন? নেতৃত্বদাতা ইমরান এইচ সরকার-এর অনৈতিক উচ্চবাচ্চ ও হুমকির উৎস কোথায়? ইত্যাদি। তাছাড়া এদের উদ্দেশ্যের সাধুতা যে কোন বিচারে প্রশ্নবিদ্ধ; এরা প্রথমে বলেছে, ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’। পরে একে-একে বহু দাবিই করেছে। যেমন, ‘সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি না নিয়ে ঘরে ফিরব না’, ‘ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ কর’, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল কর’ ইত্যাদি। বিভিন্ন সময় তাদের স্লোগান ও উচ্চারণের ভাষা ছিল, ‘একটা-একটা শিবির ধর, ধইরা-ধইরা জবাই কর’, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি ছাড়া বিচার নাই’, ‘মাহমুদুর রহমান রাজাকার’, ‘কাদের সিদ্দিকী নব্য রাজাকার’ বা ‘বঙ্গরাজাকার’, ‘আমার দেশ বন্ধ কর’, ‘মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার কর’। এনিয়ে তারা শেষ পর্যšত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পর্যšত দিয়েছে। কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, তোরা রাজাকার-বিরোধের দাবিদার হয়ে স্মারকলিপি দিলি একজন রাজাকার মন্ত্রীর কাছে! তারা স্মারকলিপিটি প্রতিমন্ত্রীর কাছে দিতে পারত। এই মঞ্চ থেকে আমার দেশ, নয়াদিগšতসহ ৬টি গণমাধ্যম বন্ধের অন্যায় দাবি করা হয়েছে, এদের অফিসে হামলা করার হুমকি দেয়া হয়েছে, লগি-বৈঠার চিহ্ণিত খুনি বাপ্পাদিত্য’রা মাহমুদুর রহমানসহ কয়েকজনকে খতম করে দেয়ারও রণহুংকার দিয়েছে। অথচ এই মঞ্চের প্রধান নেতা ডা. ইমরান এইচ সম্বন্ধে ‘আমার দেশ’ জানিয়েছে, ‘রাজাকার খয়ের উদ্দিনের নাতি শাহবাগি ইমরান : মুক্তিযোদ্ধারা ’৭১ সালে তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল’। Ñ[আমার দেশ, ৪ মার্চ’১৩, পৃ. ১ ও ১৩]।
এতদিনে নেপথ্যে ভারতের গুপ্ত তৎপরতার বিষয়টিও উন্মোচনের পথে। ভারতের রাষ্ট্রপতির বরাতে সে দেশের পত্রিকা জানিয়েছে, ‘শাহবাগের বিজয় দেখতে চান প্রণব’, ‘শাহবাগের পক্ষে মাঠে নেমেছে কলকাতার ব্লগাররা’, ইন্ডিয়ান টাইমস সংবাদ-শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশস্থ শাহবাগের প্রতিবাদীরা ইন্ডিয়ার মদদপ্রাপ্ত’ (দচৎড়ঃবংঃবৎ ধঃ ঝযধযনধময রহ ইধহমষধফবংয নধপশবফ নু ওহফরধ’)। শিরোনামের আওতায় বলা হয়েছে, “শিবশঙ্কর মেনন শুক্রবার বলেছেন, ‘বাংলাদেশী মুক্তমনা তরুণরা শাহবাগে বিক্ষোভ করছে। তারা উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মৌলিক মূল্যবোধকে সমর্থন দিচ্ছে।” দৈনিক আমার দেশ আরো জানিয়েছে, “শাহবাগের আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন সংগঠনও সক্রিয় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে ‘ভারত ছাত্র ফেডারেশন’। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী সুমনও শাহবাগের সমর্থনে গান গেয়েছেন। কলকাতার ব্লগাররাও শাহবাগের আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে।” Ñদৈনিক আমার দেশ, ২৭ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ বুধবার, পৃষ্ঠা ১ ও ২। তাছাড়া এই মঞ্চের উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই না¯িতক মর্মে অভিযোগ এবং কতকের ক্ষেত্রে পরিষ্কার প্রমাণ রয়েছে। অথচ এই তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে এ পর্যায়েও প্রথম আলো’র শিশুসুলভ আবেগের শেষ নেই। ওপরের বা¯তবতার সাথে তাদের শিরোনামগুলো মিলিয়ে দেখুনÑ
‘ফাঁসির খবরে উদ্বেলিত শাহবাগ : আজ সমাবেশ, শহীদদের জন্য মসজিদে-মসজিদে দোয়া/ পৃ. ১ (১ মার্চ ২০১৩ শুক্রবার)। জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে হরতাল প্রতিরোধের ডাক/ পৃ. ২০ (৫ মার্চ)। যাত্রাবাড়ীতে গণজাগরণ সমাবেশ : আন্দোলন বিভ্রাšত করতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা না চালানোর আহ্বান/ পৃ. ২০ (৬ মার্চ)। গণজাগরণ মঞ্চের ৩০ দিন পূর্ণ : আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ/ পৃ. ২ (৭ মার্চ)। গণজাগরণ মঞ্চের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ (বড় ছবি ও ক্যাপশনসহ)/ পৃ. ২০ (৮ মার্চ শুক্রবার)। লেখালেখির কারণে ব্লগার সানিউরের ওপর হামলা : পুলিশের ধারণা/২০ (৯ মার্চ)। গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ আজ উত্তরায়/ পৃ. ২০ (১০ মার্চ)।
স্বঘোষিত না¯িতক ব্লগার রাজীব হায়দার
শাহবাগ-আন্দোলনের নেতৃবর্গ এবং না¯িতক ব্লগারদের পরিচয় এখন একাকার হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান-এর লেখার একাংশ উদ্ধৃত করছি, “শাহবাগ থেকে আমার সহকর্মী ফটোসাংবাদিক মো¯তফা এক ভয়াবহ ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, টুটি মাথায় এক তরুণ রাজাকার সেজে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর হাস্যোজ্জ্বল এক বালিকা তার মাথায় জুতো দিয়ে পেটাচ্ছে! ছবিটা দেখে অনেকক্ষণ নির্বাক হয়ে নিজের চেয়ারে বসে থাকলাম। ধর্মের প্রতি এ কেমন ঘৃণার বীজ শিশুর কোমল মনে বপণ করা হচ্ছে? কাদের ইশারায় হচ্ছে এসব? শাহবাগের না¯িতকদের বিষয়ে আমার অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। এদের যত আক্রোশ কেবল ইসলাম ধর্মের প্রতি কেন? বিতর্কিত ব্লগগুলোতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী ধর্মকে আক্রমণ করে কোন পোস্ট তো লেখা হচ্ছে না। আজান, নামাজ এদের চক্ষুশূল হলে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোতে এত উৎসাহ কেন? ইসলাম নিয়ে সমালোচনার ভাষাই-বা এত অশ্লীল, এত কুরুচিপূর্ণ হয় কি করে? যেসব ব্লগার এই অপকর্ম করছে, তারা কি সব মানুষরূপী শয়তান? এদের পিতা-মাতার পরিচয়ই-বা কি? সেসব পিতা-মাতা পুত্র-কন্যাদের এই বিকৃত মানসিকতা সম্পর্কে কি অবহিত? তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাইয়ের কাজে কোন বিশেষ বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সংযোগ আছে কি-না, সেই রহস্যের উদ্ঘাটনই-বা কে করবে? ঝড়সবযিবৎবরহনষড়ম নামে যে ব্লগে অশ্লীল ইসলামবিরোধী প্রচারণা চলছে, তার মালিকানায় বিদেশী অ¯িতত্বের সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে এখনই বিশদভাবে তদšত করা দরকার। কিন্তু, বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে?” Ñমাহমুদুর রহমান, ‘না¯িতকতার আবরণে ইসলাম-বিদ্বেষ’, সূত্র ঃ দৈনিক আমার দেশ, ২৪ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ রোববার, পৃ. ৭।
নিহত ব্লোগার রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে,
টুইনটাওয়ার হামলা ৯/১১ ও ঈদ ঃ “১০ হাজার মানুষ হত্যার প্রামাণ্য অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাবার্ষিকীকে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পালন কতটা মানবিক?” [সম্ভবত দিনটি মুসলমানদের ঈদের দিন ছিল]। Ñ[১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে লিখা]। হজ্জ ঃ “সবাই তারেক-কোকো আর হাসিনা-খালেদার বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় করে ফেলছে.. এদিকে প্রতি বছর সবার চোখের সামনে দিয়ে কয়েক লাখ হাজী যে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা সৌদি আরবে ঢেলে দিয়ে আসছে, সেটা কেউ টু শব্দটা করে না...!!” Ñ[২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০] মুসলিম জাতি ঃ “মুসলিমদেরকে ‘টেররিস্ট’ আখ্যা দেয়া অন্যায়, তাদের জন্য উপযুক্ত নাম হলো ‘সিরিয়াল কিলার’!” Ñ[২০১১ সাল]। স্রষ্টা ও সৃষ্টিতত্ত্ব ঃ “আমরা ঈশ্বর নামক কারও জারজ না... আমাদের বাবা-মায়েরা নিজেদের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে আমাদের জন্ম দিয়েছে! আমার স্রষ্টা আমার জেনেটিক বাবা-মা, আমি তাদের সৃষ্টি। আবার আমি আমার সšতানদের স্রষ্টা... তারা আমার সৃষ্টি!!! আর এই পুরো প্রকৃয়াটিতে বাবা-মায়ের বাইরে যদি কাউকে ধন্যবাদ দিতে হয়, সে হলো ধাত্রী অথবা ডাক্তার ও নার্স!” Ñ[২৮ অক্টোবর ২০১২]। মোহাম্মাদ (স.) ও সিজদা ঃ “মোহাম্মক (মোহাম্মদ+আহাম্মক) তাহার ইয়ার দো¯ত লইয়া প্রায়শই কাবা প্রাঙ্গণে আরবি খাইয়া (মদ বিশেষ) পড়িয়া থাকিত। মোহাম্মদ যখন বেহুঁশ হইয়া পড়িয়া রহিত, তখন তাহার ইয়ার দো¯তরা এই গোল্ডেন অপরচুনিটি মিস করিবে কেন? সবার তো আর উম্মেহানী নেই। ইয়ার-দো¯তদিগের গোল্ডেন অপরচুনিটির শিকার হইয়া সুবে-সাদিকের সময় ঘুম ভাঙ্গিলে রেকটাম-প্রদাহের ঠ্যালায় মোহাম্মকের পক্ষে চিত-কাইত হইয়া শয়ন করা বা¯তবিক অসম্ভব হইয়া দাঁড়াইতো। তাই পশ্চাদ্দেশের আরামের নিমিত্তে সে ঊর্ধ্বপোঁদে রেকটামের স্ফিংকস্টার পেশি চেগাইয়া পড়িয়া থাকিত। এমতাবস্থায় কেউ দেখিয়া ফেলিলে চাপা মারিত যে, সালাত আদায় করিতেছে আর এই ভঙ্গিটির নাম সিজদা। সেই হইতে মুসলমানের জন্য ঊর্ধ্বপোঁদে সিজদার প্রচলন শুরু হইয়াছে!” (নাউযুবিল্লাহ) Ñথাবা বাবা। Ñদেখুন : দৈনিক আমার দেশ, ১৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ সোমবার, ১৩ পৃষ্ঠা, ১ নং কলাম।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, “রাজীবের অবিশ্বাস্য ইসলামবিরোধী কুকর্ম পরবর্তী সময়ে ফাঁস হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আওয়ামী প্রচারণাযন্ত্র থেকে এখন দাবি করা হচ্ছে যে, তার ব্লগে হ্যাক করে শিবিরের ছেলেরা নাকি মহানবী (স.) সম্পর্কে কলমের ডগা অথবা জিহ্বাগ্রে আনার অযোগ্য এসব নোংরা লেখালেখি করেছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ক’দিন আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজীবের পক্ষাবলম্বন করে উপরোক্ত ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। ...আমি তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি, ব্লগার রাজীবের ফেসবুক পেজে যাবতীয় অশ্লীল ও ইসলামবিরোধী পোস্ট নিশ্চিতভাবে তারই দেয়া। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমার দাবির সমর্থনে মিডিয়ার সামনে যে কোনো স্থানে আমি মন্ত্রী ইনুর সঙ্গে ল্যাপটপ নিয়ে বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছি।” Ñমাহমুদুর রহমান, ‘দু’হাজার বছর পরও নিরোরা বাঁশি বাজায়’, সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, ৬ মার্চ ২০১৩ বুধবার, পৃষ্ঠা ৭।
এইসব দেশ-ধর্ম-মানবতা-বিদ্বেষী ব্লগারদের অপতৎপরতার ব্যাপারে প্রথম আলো পাথর-কঠিন নিরব। উল্টো তাদেরকে নিয়ে পত্রিকাটির অšতহীন আবেগ-বিহ্বলতা উল্লেখযোগ্য মাত্রা পেয়েছে। নিহত রাজীব ওরফে থাবাবাবা’র পক্ষে সংবাদ পরিবেশনে পত্রিকাটির নিয়মতান্ত্রিক আবেগ লক্ষ্যণীয়Ñ রিমান্ডে পাঁচ আসামির তথ্য : আরও আট ব্লগারকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল/ পৃ. ২০ (৪ মার্চ)। ওই পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কার : কিছু শিক্ষকের ছায়ায় জঙ্গি হচ্ছেন নর্থ-সাউথের ছাত্ররা/ পৃ. ২০ (৫ মার্চ)। কিন্তু রাজীবরা যে কার বা কাদের ছায়ায় কী হচ্ছে, তা জানে না দৈনিকটি।
সিদ্ধাšত
ওপরের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধাšেত আসতে পারিÑ
১. প্রথম আলো মূলত আলোর সাধনা না করে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে, বুঝে-শুনে অন্ধকার-এর চর্চা করে যাচ্ছে।
২. পত্রিকাটি এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলমান-এর ধর্ম ইসলাম ও ইসলামী কালচার-এর প্রচার, বি¯তার, উপস্থিতি কোনটিই চায় না।
৩. ইসলামী বিধান ও মূল্যবোধের ব্যাপারে অনাস্থা, বীতশ্রদ্ধা ও নেতিবাচক মানসিকতা তৈরিতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
৪. ইচ্ছা করেই আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ইসলামী দিকটি চেপে যায়।
৫. ইসলামপন্থী লেখক, জাতীয় ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিত্ব ও চেতনা-সম্বন্ধে যাতে পাঠকরা জানতে না পারে, সেজন্যে তাদের মৃত্যুসংবাদটি পর্যšত এড়িয়ে যায়।
৬. দীন-ধর্ম বাদ দিলেও যে-কোন বিধি-নীতি ও সাংবাদিকতা-নীতির বিচারেও অপরাধ, সংবাদ পরিবেশনে এমন কূট কৌশলের আশ্রয় নেয়; ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যাকে আরাধনার বিষয়ে পরিণত করে।
৭. রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সঠিক সত্য এড়িয়ে যায় এবং সঠিক তথ্য গোপন করে।
৮. উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদের শিরোনাম এমনভাবে করে, যাতে আসল সত্য ভাষার মারপ্যাঁচে চাপা পড়ে যায় এবং দোষী-নির্দোষ গুলিয়ে যায় অথবা দোষী বেঁচে গিয়ে নির্দোষ বা অপেক্ষাকৃত কমদোষী ব্যক্তি দাগী আসামী হয়ে যায়।
৯. সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং তদšত ছাড়াই রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে দোষী বানিয়ে দেয়ার হীন সাধনায় লিপ্ত পত্রিকাটি।
১০. যে সত্য তথ্য প্রতিপক্ষের পক্ষে চলে যাবে, তাকে গায়েব করে ফেলতে পটু এ পত্রিকার সংবাদ-নীতি।
১১. পত্রিকাটি বহুলপ্রচারিত সত্য নিয়েও কখনো-কখনো পাঠকের সাথে রং-তামাশার সুযোগ নেয়।
১২. এর কর্তৃপক্ষ ধর্মহীন না¯িতক ও ইসলাম-বিদ্বেষীদেরকে লালন করে।
১৩. আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিšতা-চর্চার ঠাঁই নেই পত্রিকাটিতে।
১৪. নিরূপায় না হলে এরা ইসলামী আন্দোলনগুলোর সংবাদকে পাত্তা দেয় না।
১৫. মানবতার দোহাই দিলেও মানবধর্মের চেয়ে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাই পত্রিকাটির অন্যতম আদর্শ।
১৬. অন্যায় মোটিভ অর্জনে সংখ্যালঘুকে তারা হিসেবে ব্যবহার করে। সেই হাতিয়রের এমন বিপজ্জনক ব্যবহারও তারা করে, যাতে এ দেশ, এ দেশের ৯০ শতাংশ জনগণের (মুসলমানের) চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিটি উগ্ররূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা থেকে যায়।
১৭. এ দেশের ইসলামী এবং ইসলাম পক্ষাবলম্বী নেতৃবৃন্দের ইমেজ রক্ষায় এদের কোন দায় নেই।
১৮. এদেরকে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের মুখপাত্র ভাবলে ভুল হবে; কারণ, আওয়ামীলীগের তৃণমূল ভোটাররা হয় তো জামায়াত-শিবির চায় না, কিন্তু ইসলাম চায়; নেতৃত্ববৃন্দের কে কতটুকু চায়, সেটা অবশ্য গবেষণা ও মাত্রানির্ণয়ের বিষয়। আমরা জানি না যে, প্রথম আলোর চূড়াšত মিশন কি, তবে এটা পরিষ্কার যে, এরা যা চায়, তা আওয়ামীলীগের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক সত্যের জন্য, এ দেশের সত্যপ্রেমিক ও সত্যানুসন্ধিৎসু জনতার জন্য। আর যা সত্য ও সত্যচর্চায় বিপজ্জনক, একটি কল্যাণকামী দেশের জন্য তা কিছুতেই কল্যাণকর হয় না।
১৯. প্রথম আলো এদেশের চির আপন কালচারের বিকাশ চায় না।
২০. নিজের তৎপরতা ও কর্মকাণ্ডে এটি আক্ষরিক অর্থেই একটি কুরআন-বিরোধী মিশন।
শেষকথা
প্রথম আলো এবং এই জাতীয় গণমাধ্যম নিয়ে শেষকথা নয়। যতদিন এদেশের আপামর জনতার কাছে এদের বর্ণঢ্য মুখোশের অšতরালে লুকানো রুদ্র মুখ মুক্ত করা না যাবে, ততদিন এ নিয়ে কথা বলে যেতে হবে। কারণ, পত্রিকাটি বুঝে-শুনে মিথ্যাচার করছে, পাঠকের সাথে প্রতারণা করছে এবং প্রতিহিংসার পথ উন্মুক্ত করছে। আর প্রতিহিংসা তো প্রতিহিংসাই ডেকে আনে, প্রতারণা তো প্রতারণারই জন্ম দেয়। একইভাবে মিথ্যা উস্কে দেয় মিথ্যাকে। মনীষী মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, হককথা হচ্ছে উত্তম জিহাদ (সত্যপ্রতিষ্ঠার প্রাণাšত প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম), ক্ষেত্রবিশেষে সর্বোত্তম। কুরআন বলেছে, “আল্লাহ অসত্যকে সত্য দিয়ে আঘাত করেন।” (আল-কুরআন, সূরা সাবা ৩৪:৪৮)। আল্লাহর রঙে রঙীন হয়ে অসত্যকে সত্য দিয়ে ধরাশায়ী করার সেই মোক্ষম মুহূর্তটি কি এখনো আসেনি? আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহর সেই বাণী, যেখানে আল্লাহ আশ্ব¯ত করেছেন, “কূট ষড়যন্ত্র তার উদ্যোক্তাদেরকেই বেষ্টন করে থাকে।” [সূরা ফাতির ৩৫:৪৩]। তবে সেজন্যে চাই উচিত তৎপরতা।
বিষয়: বিবিধ
২১২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন