সারা দেশে
লিখেছেন লিখেছেন পর ব্লগ ০৩ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৩২:৩৭ বিকাল
গণহত্যার নিষ্ঠুর ঘটনায় সারাদেশ বিক্ষুব্ধ। গতকাল নতুন করে আরও ৪ জনকে হত্যা ও আহত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দু’দিনে সারাদেশে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১। সংঘর্ষ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কমপক্ষে ১০টি জেলার ২৫টি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবনসহ বেশ কয়েকটি জেলা এখন বিক্ষুব্ধ জনতার নিয়ন্ত্রণে। ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালীতে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আজ অর্ধদিবস হরতাল ডাকা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ সরকারি দলের সৃষ্ট ত্রাসে সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহতের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল নিহতদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজাও হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদী জনতা গতকালও ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। রেললাইন উপড়ে ফেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাটে সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গতকাল ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর একজন ইমামকে হত্যা করেছে।
গত দু’দিনে গণহত্যার শিকার হয়েছেন ঢাকায় ৩ জন, সাতক্ষীরায় ১৩ জন জামায়াত শিবির কর্মী ও এক ছাত্রলীগ কর্মীসহ মোট ১৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭, রংপুরে ৭, গাইবান্ধায় তিন পুলিশ, তিন জামায়াত কর্মী ও এক আওয়ামী লীগ কর্মীসহ মোট ৮ জন, নোয়াখালীতে ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩,
কক্সবাজারে ৩, দিনাজপুরে ১, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক পুলিশ কনস্টেলবসহ ২, বাঁশখালীতে ১, চট্টগ্রামে ১, নাটোরে ১, সিরাজগঞ্জে ২, মৌলভীবাজারে ১ ও বগুড়ায় ১ জন, রাজশাহীর চারঘাটে ১ জন।
জানা গেছে, গতকাল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নূরুন্নবী নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সে সংখ্যালঘু জনৈক নারু বাবুর বাড়িতে আগুন দিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দোষারোপ করে। এ নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনির শিকার হয়ে মারা যায় সে। একই এলাকায় বৃহস্পতিবার জনতার হামলায় আহত পুলিশ কনস্টেবল তোজাম্মেল গতকাল সকালে রংপুর মেডিকেলে মারা গেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নিহত হয়েছেন আবদুর রহিম নামে এক জামায়াত কর্মী। নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে র্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছেন কোরবান আলী নামে এক শিবির কর্মী। সেখানে আরও ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগাছা, সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, রাজশাহীর বাঘা, কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুরসহ ৬ উপজেলা, সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
সারাদেশ থেকে আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সোনাইমুড়ীতে র্যাবের গুলিতে নিহত ১ : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক ভাংচুর, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় র্যাবের গুলিতে ১ শিবিরকর্মী নিহত ও ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। নিহতের নাম কোরবান আলী। এ ঘটনায় জেলা জামায়াত শনিবার নোয়াখালীতে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর থেকে নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়কের নতুনবাজার বাইপাস চৌরাস্তা, বগাদিয়া, দীঘিরজান, নদনা বাংলা বাজার জয়াগসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছের গুড়ি, বিদ্যুতের খাম্বা ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় বাস, ট্রাক, মেক্সি, অটোরিকশাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় শত শত যাত্রী ও মালবাহী পরিবহন আটকা পড়ে। দূরপাল্লার হাজার হাজার যাত্রী ব্যাপক দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। র্যাবের গুলিতে মহিলাসহ ৫ জন গুলি বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ মুটুবি গ্রামের কোরবান আলী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিবিরকর্মীরা উপজেলা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এ সময় বিক্ষুব্ধরা উপজেলা সমাজ সেবা, মত্স্য, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস, এমপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও কর্মচারীদের ডর্মেটরি ভাংচুর করে। এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তিনটি ধান মাড়াই কল ও একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত আরও ১ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে আরও একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বৃহস্পতিবার গুলিতে নিহত জামায়াত কর্মী নাসির উদ্দিনের গায়েবানা জানাজার নামাজ ফকিরপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের সহিংসতার জের ধরে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে শিবগঞ্জের শাহবাজপুর এলাকায় আওয়ামীলীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সংঘর্ষে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ সময় শাহাবাজপুরসহ এর আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে নামো ধোবড়া এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুর রহিম (৪৩) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। সে মাওলানা সাঈদীর ভক্ত ছিলো বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। সংঘর্ষে সাংবাদিক নুরতাজ আলমসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ- সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কের কানসাট থেকে সোনামসজিদ পর্যন্ত একাধিক স্থানে জামায়াত-শবির কর্মীরা সড়ক কেটে খাদ সৃষ্টি ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছে। সোনামসজিদ স্থল বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই কারণে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের কাজও বন্ধ আছে।
বৃহস্পতিবার গুলিতে এক জামায়াত কর্মী নিহত হওয়ার পর জেলা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শুক্রবার জেলা শহরের কোনো সহিংসতা ঘটেনি। তবে গুলিতে নিহত জামায়াতকর্মী নাসির উদ্দিনের গায়েবানা জানাজা শুক্রবার দুপুরে ফকিরপাড়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় জেলা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা আমির রফিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি লতিফুর রহমান, শিবির সভাপতি শফিক এনায়েতুল্লাহ বক্তব্য রাখেন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
গাইবান্ধায় আরও এক পুলিশসহ ২ জনের মৃত্যু : ১৪৪ ধারা : বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে গতকাল এক আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আরও এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে জেলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ৮।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের জের দরে গতকাল জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নে বংশারহাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই সময় লাঠির আঘাতে আওয়ামী সমর্থক নুরুন্নবী (৩০) বিক্ষুব্ধ জনতার লাঠির আঘাতে ঘটনা স্থলেই মারা গেছে। বতিবার রাতে জনৈক নারু বাবুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নুরুন্নবীর সঙ্গে স্থানীয় জামায়াত - শিবিরের লোকদের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে এ সংঘর্ষ বাধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে বৃহস্পতিবার রাতে নারু বাবুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জামায়াত শিবিরকে দায়ী করেছে। এছাড়া সংঘর্ষে সালাম, রফিক ও মমিনসহ ৫ জন আহত হয়েছে। বেলা ২টার দিকে আওয়ামী সমর্থকরা বামনডাঙা- সুন্দরগঞ্জ সড়কের ছাইতান তলায় বেশ কিছু দোকানপাট ভাংচুর করে। এ সময় একটি মাদরাসাও ভাংচুর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীা।
অপর দিকে বৃহস্পতিবার বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় গুরুতর আহত পুলিশ কনস্টেবল তোজাম্মেল হোসেন গতকাল ভোর রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে গত দুইদিনে সুন্দরগঞ্জে ৪ জন পুলিশ নিহত হলো।
এ ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকলেও বেশি বিশৃংখলা চলছে ইউনিয়ন গ্রাম পর্যাযে। গ্রাম পর্যায়ের সংঘর্ষ থেমে থেমে চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা সহসায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
সাতক্ষীরায় শোকের মাতম : আজ অর্ধ দিবস হরতাল : সাতক্ষীরায় সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হওয়ার পর পুরো জেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের ১১ জন ও ছাত্রলীগ ১ জন ও দুইজন সাধারণ নাগরিক। পুলিশ বলছে নিহতের সংখ্যা ৭ জন। এছাড়াও প্রায় ১০ জন এখন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। শোক আর ক্ষোভ নিয়েই নিহতদের জানাজা ও দাফনসম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবারে এখন চলছে শুধু কান্না আর শোকের মাতম। স্বজনদের দাবি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। সাতক্ষীরায় আজ অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে স্থানীয় জামায়াত। নিহতদের দাফনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বজনরা। গতকাল দুপুরে জানাজা নামাজ শেষে নিহতদের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি বৈঠক করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন।
এনএসআই এর সহকারী পরিচালক এমদাদ হোসেন, ডিএসবি’র কনস্টেবল রিয়াজ, আর্মড পুলিশ সদস্য ফরিদ ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাতেই সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনিতে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবত্ থাকবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানিয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় নতুন করে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
নোয়াখালীতে সড়ক অবরোধ : শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ঢাকা-চাটখিল মহাসড়কে গাছ, বিদ্যুতের খাম্বা ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গেলে উপজেলার বগাদিয়া নামক স্থানে পিকেটারদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ এবং বিজিবি কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ ও আরটিভি নোয়াখালী প্রতিনিধি মনির হোসেনসহ অন্তত ২১ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনাইমুড়ীসহ পুরো জেলাতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার হরতাল শেষ হলে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে কোনো যান চলাচল করেনি এবং শুক্রবার ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কে কোনো ভারী যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিশেষ কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ফায়ারিং আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনী জামে মসজিদের সামনে থেকে জামায়াত বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি চৌমুহনী প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বিক্ষুব্ধরা ঢাকা-সোনাপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষুব্ধরা ৬-৭টি গাড়ি ও দুটি ব্যাংকের গ্লাস ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর কিছুক্ষণ পর চৌমুহনী পাবলিক হল থেকে সশস্ত্র আওয়ামী লীগকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে শিবিরের মিছিলের দিকে অগ্রসর হয়ে চৌমুহনী কাচারিবাড়ী মসজিদ এলাকায় পৌঁছলে বেগমগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে বারণ করলে তারা পিছু হটে। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগকর্মীরা সংগঠিত হয়ে লাঠিসোটা রডসহ দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে পূর্ব বাজারে যায়। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা ধাওয়া করলে শিবিরকর্মীরা সড়ক থেকে সরে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগকর্মীরা ইসলামী ব্যাংকের চৌমুহনী শাখা ও ব্যাংক রোড শাখাসহ দুটি ব্যাংকে হামলা ও ভাংচুর করে।
এদিকে খবর পেয়ে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্য ও বিজিবি সদস্যর্যা ঘটানস্থলে যান। ব্যাব ও বিজিবি আসার আগে শিবিরকর্মীরা সড়ক থেকে চলে যান। তবে এ সময় আওয়ামী লীগকর্মী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেই সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে কয়েক রাউন্ড গুলি ফায়ারিং করেন। এ সময় বেগমগঞ্জ থানার ওসি র্যাব সদস্যদের গুলি করতে বারণ করেন।
মিঠাপুকুরে নিহত সাতজনের দাফন সম্পন্ন : শোকের মাতম চলছে রংপুরের মিঠাপুকুরে। একই উপজেলার ৭টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় মিঠাপুকুরের আকাশ-বাতাস এখন শোকে স্তব্ধ। নিথর-নিস্তব্ধ হয়েছে মানুষ। প্রতিবাদে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। গতকাল তাদের সবার জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে গতকাল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মিঠাপুকুর উপজেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। তার মা বার বার বুক চাপড়িয়ে আর্তনাদ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন। কখনও কখনও জ্ঞানই ফিরছে না তার। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মশিউর ছিলেন ওই এলাকার মধ্যে সবচাইতে ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র। মশিউরের বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, তার ছেলের কোনো অন্যায় ছিল না। তারা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।
রংপুর পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক জানান, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি কাজ করছে।
সুন্দরগঞ্জে নিহতদের জানাজা সম্পন্ন : গাইবান্ধা পুলিশ লাইন্সে গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের দাঙ্গায় নিহত তিন পুলিশদের গার্ড অব অনারসহ জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জুমার নামাজ বাদ জানাজা শেষে পুলিশ কনস্টেবল বাবলু মিয়াকে বগুড়া জেলার সোনাতলা ঠাকুরবাড়ি এবং নাজিমউদ্দিনকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। হজরত আলী ও তোফাজ্জলের লাশ হাসপাতাল থেকেই তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া জামায়াত কর্মী ও আ’লীগ কর্মীরও জানাজা শেষে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
চিরির বন্দরে দাফন সম্পন্ন ও ১৪৪ ধারা : দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে রাণীরবন্দরে জামায়াত-শিবিরের ওপর বিজিবির অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত জামায়াতকর্মী ফয়েজউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২/৩ হাজার লোকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাড়িতে খাওয়ার সময় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। রাণীরবন্দরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন গতকাল দুপুরে ১৪৪ ধারা জারি করে। সমগ্র দিনাজপুরে পরিবহন বন্ধ ছিল। দিনাজপুর শহরসহ পাড়া-মহল্লায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঢাকার সঙ্গে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুপুর আড়াইটায় নিহত জামায়াতকর্মী ফয়েজউদ্দিনের জানাজা রাণীরবন্দর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন সাবেক এমপি আলহাজ আখতারুজ্জামান মিয়া, উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ও নশরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর-এ-আলম সিদ্দিকী নয়ন, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আফতাবউদ্দিন মোল্লা, জামায়াতের উপজেলা আমির লুত্ফর রহমান শাহ্, সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, নশরতপুর জামায়াতের সভাপতি মকবুল হোসাইন মুন্সি প্রমুখ। গুলিতে নিহত ফয়েজউদ্দিনের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না।
বাঘায় দাফন সম্পন্ন ও ১৪৪ ধারা : রাজশাহীর বাঘায় আ’লীগ-জামায়াত-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাজশাহী ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কোরআন ও ক্যাডেট মাদরাসার অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলামকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আ.লীগ। ওই ঘটনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ সাত জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করে। বাঘা থানার আমিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে নিজ বাড়ি উপজেলার বাজুবাঘার আহমদপুর গ্রামে যান। নিহতের বাবার নাম উমর আলী। বাঘা বাজারে আ.লীগ কর্মীরা তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয়। তিনি এক বছর আগে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী নাজমা বেগম স্বামীর মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। মা রিজিয়া বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না।
বাঘা থানার ওসি হামিদুর রশীদ জানান, জামায়াতের সাত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি মৌলানা আবদুল লতিফ, রোকন সেকেন্দার আলী, শিবির কর্মী রেজাউল করিম, রাশেদুল ইসলাম, মামুন হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও শামিম রেজা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বলেন, নাশকতা ঠেকাতে ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে লাগাতার হরতালের আল্টিমেটাম : সাঈদীর ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে গতকাল জামায়াত-শিবিরের উদ্যোগে থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোতোয়ালি থানা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে নগর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো এবং সরকার নির্দেশিত রায় এদেশের জনগণ মানে না। সরকার কর্তৃক পরিচালিত শাহবাগ আন্দোলনের নামে চাপ প্রয়োগ করে আদালতকে প্রভাবিত করে ঘোষিত রায় এদেশের ১৬ কোটি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
অপরদিকে হালিশহর থানা সাঈদী মুক্তি পরিষদ নগরীর নয়াবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশ শেষে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সি শোর সার্ভিসিং সেন্টারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামালখান ও এনায়েত বাজার, কাজীর দেউড়ীসহ বিভিন্নস্থানে মিছিল হয়েছে।
বান্দরবনে সড়ক অবরোধ : সাঈদীর রায়ের পর থেকে গতকাল শুক্রবার দিনভর বান্দরবান কেরানীহাট সড়কে সাধারণ জনতা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। গতকাল সকাল থেকে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। এলাকার লোকজন জানান, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের কেরাণীহাট, দস্তিরহাট, বাজালিয়া, হলুদিয়া, বুড়ির দোকানসহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে বড় বড় গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে বান্দরবান থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে রাস্তার গাছ সরালেও আবারও জনতা রাস্তায় গাছ ফেলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। বান্দরবান শহরের সব জুমার নামাজে মুসল্লি ও ইমামরা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্য কান্না করে দোয়া করেন। যানচলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবানে বিপুল পরিমাণ বেড়াতে আসা পর্যটক আটকা পড়েছে। তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ও দেশব্যাপী খারাপ পরিস্থিতির কারণে চ্যানেল আই ও জেলা পরিষদ যৌথভাবে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী লোকজ মেলা স্থগিত করা হয়েছে।
ঝিনাইদহে হেলিকপ্টারে ৬ পুলিশ ঢাকায় : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জামায়াত কর্মীদের হামলায় আহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীরা শহরের আল-আমিন বস্ত্রালয় ও একটি হোটেলসহ কয়কটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ব্যাপক লুটপাট করে। এরপর ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একের পর এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে কোট চাঁদপুর শহরের আলামপুর ব্রিজঘাট এলাকায় জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের সময় খোয়া যাওয়া ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের পর থেকে পুলিশ অস্ত্র হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখলেও শুক্রবার সকালে এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে প্রায় সব উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের সময় আমাদের কিছু অস্ত্র হারিয়ে যায়। তবে কিভাবে অস্ত্রগুলো খোয়া গেছে তা বলেনি পুলিশ। হামলায় আহত কোট চাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির উদ্দীন মোল্লাসহ পুলিশের ১২ সদস্যের মধ্যে আহত এএসআই আজম মাহমুদ, বাবুল আখতার, সেকেন্দার আলী, শহিদুল ইসলাম, মকবুল হোসেন ও খয়বর হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যশোর সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে বিশেষ হেলিকপ্টারে তাদের ঢাকায় সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মিরেরশ্বরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ : সাঈদী ভক্তদের সড়ক অবরোধের কারণে মিরেরশ্বরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। সাঈদীর রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করলে দু’দিকে শত শত গাড়ি আটকাপড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে মহাসড়কের সিটি গেট থেকে মিরসরাই উপজেলা বারইয়ার হাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
জামায়াত-শিবিবের সঙ্গে সাধারণ মানুষ মহাসড়কে গাড়ি ভাংচুর, ব্যারিকেড ও অগ্নিসংযোগ করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুরু হয় তীব্র যানজট। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে ওয়াপদা গেটে একটি কভার্ডভ্যানে এবং এর ঘণ্টাখানেক পর বাইপাস এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে শিবির কর্মীরা। প্রায় আধাঘণ্টা পর সিরাজ ভুঁইয়ার রাস্তার মাথা ও উপজেলা সদরে আবারও ২টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় সাঈদী ভক্তরা। ফলে সিটি গেট থেকে মিরসরাই উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকাপড়ে হাজার হাজার গাড়ি। যানবাহনের চালকরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে গাড়ি ভাংচুর ও ব্যারিকেড দিলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
লোহাগাড়ায় সড়ক অবরোধ অব্যাহত : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাস্তায় নামা জনতা ঘরে ফেরেনি এখনও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সব সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে রাখায় এখনও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল। গতকাল বাদ জুমা লোহাগাড়ার প্রায় সব মসজিদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মুসল্লিরা। মহাসড়কে পদুয়া বাজার থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত ৫০ হাত পর পর কাঠ ও টায়ার জ্বালিয়ে এবং পিলার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে অবরোধ করে রেখেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকেই আধুনগর বাজার এলাকায় কয়েক হাজার গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, রিকশা কিংবা বাইসাইকেলও চলতে দিচ্ছে না বিক্ষোভকারীরা। বিকাল চারটার দিকে আধুনগরের হাতিয়ার পুল এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ ও বিজিবি।
গতকাল বাদ জুমা লোহাগাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বটতলী মোটরস্ট্যান্ড প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়। এছাড়া বৃহস্পতিবার লোহাগাড়ায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত ও গনপিটুনিতে এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যুতে এখনও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আাাবেদীন জনু কোম্পানির গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর মেয়ের শ্বশুর বাড়ির তথা মোস্তফা গ্রুপের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
গুলি উপেক্ষা করে সাতকানিয়ায় মহাসড়ক দখল : সাঈদীর ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল সড়ক অবরোধ চলছে সাতকানিয়ায়। অবরোধ তুলে নিতে র্যাব ও পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও বিজিবির টহল সত্ত্বেও অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরানো যায়নি। বিক্ষোভকারীরা ৫০-১০০ ফুট দূরত্বে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে গাছের গুঁড়ি দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে রেখেছে। গতকাল জুমার নামাজের সময় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মিলে বড় বড় মসজিদ ঘিরে রাখলেও বিক্ষুব্ধ জনতা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিকাল পাঁচটার দিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে সড়কের দু’দিক থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে মিছিল করতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় র্যাব-পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। তবে তত্ক্ষণিক হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সেখানে পুলিশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) নাজমুল আলম। এ সময় সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। বিভিন্ন যানবাহনে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ ও র্যাব তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ডে তিন গাড়িতে আগুন : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গতকাল হামলা চালিয়ে আরও তিনটি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভাংচুর করেছে অর্ধশত যানবাহন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির রায় হওয়ায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গত দু’দিনে ৫টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। আর ভাংচুর করে শতাধিক গাড়ি। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীন ইমরান জানান, গতকাল সকাল সাড়ে দশটার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড-ওয়াপদা গেটে একটি কভার্ডভ্যানে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এর ঘণ্টাখানেক পর সীতাকুণ্ড-সদরের বাইপাস এলাকায় আরও দুটি ট্রাকে আগুন দেয় তারা। কভার্ডভ্যানে আগুন দেয়ার পর শিবিরকর্মীরা এলাকাটি ঘেরাও করে রাখে এবং ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়। পরে পুলিশ এসে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণপাড়ায় মূর্তি ভাংচুর : কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার উত্তর চান্দলা গ্রামে গত বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় শিব মন্দিরের শীতলা দেবীর একটি প্রতিমা (মূর্তি) ভাংচুরের অভিযোগে স্থানীয় ইকবাল হোসেন নামে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় প্রকাশ হওয়ার পর ইকবাল হোসেন বিক্ষুব্ধ হন। সে কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের উত্তর চান্দলা বাজার এলাকায় একটি মাইক্রোবাস ও একটি অটোবাইকের কাচ ভাংচুর করে।
নরসিংদীতে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত : জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংর্ঘষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজের পর ঘোড়াদীয়া এলাকার শ্মশানঘাট মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে তারা লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সংর্ঘষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ৩ পথচারীকে জামাত সন্দেহে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আধাঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সদর থানা পুলিশে ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান ও সেকেন্ড অফিসার আশ্রাফসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এতে জামায়াত-শিবিরের আরও ২০ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় জামাত সন্দেহে তিন পথচারীকে আটক করে পুলিশ। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ১৪৪ ধারা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরসহ ৬ উপজেলায় প্রশাসন গতকাল বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে। দৌলতপুর থানার ওসি জানান, সাঈদীর রায় হওয়ার জামায়াত-শিবির দেশের অন্যান্য স্থানের মতো উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে আশঙ্কায় দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মন্ডল গতকাল বেলা ২টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেন। এ কারণে উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করে একের অধিক কোনো ব্যক্তিকে এক স্থানে জমায়েত না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পীরগাছায় ১৪৪ ধারা : রংপুরের পীরগাছায় গতকাল সকাল থেকে র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা সদরে মিছিল, মিটিং ও সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুরো উপজেলাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল শুরু : ফেনীতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা লাইন উপড়ে ফেলায় মহানগর গোধূলির ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। সেটি মেরামত করে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ গতকাল সকাল ১১টার দিকে ফের চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি ফেনীর খাজুরিয়া এলাকায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়। সাঈদীর ফাঁসির রায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা লাইন উপড়ে ফেলার জন্য পেজ প্লেট খুলে নেয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্টেশনমাস্টার মাহবুবুর রহমান জানান।
চৌদ্দগ্রামে রেলমন্ত্রীর গাড়িতে ইট নিক্ষেপ : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গতকাল সন্ধ্যায় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫-১৬টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক দেড়কোটা বাজারে একটি জনসভা শেষ করে মুন্সীরহাট-নবগ্রাম রোডে কুমিল্লায় ফিরছিলেন। পথে বারাইশ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে হঠাত্ মন্ত্রীর গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িটি ঘিরে ফেলে।
অপরদিকে মাগরিবের আগে ১০-১৫ জনের একদল যুবক সাঈদীর মুক্তির দাবিতে মিছিল করে ১৫-১৬টি গাড়ির বাস ভাংচুর করে। এ সময় তারা একটি সুতাবাহী ট্রাকে (চট্টগ্রাম-ড-১২৬) আগুন লাগিয়ে দেয়। মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজট।
লালমনিরহাটে রেল যোগাযোগ বন্ধ : জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সাঈদী ভক্তরা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার রইচবাগ এলাকায় রেললাইন উপড়ে ফেলে। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই রুটে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। এতে ওই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, শিবিরকর্মীরা আদিতমারীতে রেললাইন উপড়ে ফেলায় লালমনিরহাট-পাটগ্রাম রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
দাউদকান্দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ : গতকাল জুমার নামাজের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলায় শহীদনগরের জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে তুলে দেয়। দাউদকান্দি থানা ওসি তদন্ত নাছির উদ্দিন বলেন, জমায়েত-শিবিরের কর্মীরা উপজেলার শহীদনগরে এসে জড়ো হয়ে মহাসড়কে গাড়ি ভাংচুর ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
রাজনগরে শিবিরকর্মী গ্রেফতার : ভোরে অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে এক শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সে রজনগর উপজেলার খাড়পাড়া গ্রামের বয়তুল খানের ছেলে মুহিদুর রহমান খান। আরও কয়েকজন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আড়াইহাজারে গ্রেফতার ৩ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবির মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে জামায়াত আবার জড়ো হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও ফাঁকা গুলি করে। এতে মিছিলটি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ কাজল, শাহ আলম ও নুরু মিয়া নামের তিনজনকে আটক করে।
বিয়ানীবাজারে ৭ জন আটক : বিয়ানীবাজারে জানাজায় যাওয়ার পথে জামায়াত-শিবিরের ৭ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে পৌরশহরের শহীদটিলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তারা এ সময় বড়লেখায় জানাজায় যাচ্ছিলেন।
উল্লাপাড়ায় ১৪৪ ধারা জারি : ভোর ৬টা থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরশহরের বগুড়া-নগরবাসী মহাসড়কে শ্রীকোলা বাসস্ট্যান্ড ও বাখুঁয়া ওয়াপদা মোড় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আলম এ আদেশ জারি করেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবত্ থাকবে বলে জানানো হয়।
তাড়াশে ১৪৪ ধারা জারি : তাড়াশ উপজেলার ৫টি পয়েন্টে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে বিষয়টি মাইকযোগে প্রচার করা হয়। এছাড়া বেলকুচি উপজেলা ১৪৪ ধারা জারির পর রাতেই তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিক জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
রায়গঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি : নাশকতা এড়াতে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রায়গঞ্জ ইউএনও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ নির্দেশ জারি করেন। নির্দেশে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি তত্পরতা ও নাশকতারোধে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ ধারা বলবত্ থাকবে।
কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় দু’ঘণ্টা বন্ধ : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় তিনটি রেল সেতুর কাঠের স্লিপারে ক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীদের অগ্নিসংযোগে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ভানুগাছ রেলস্টেশনের অদূরে ধলাই রেল সেতু ও সাড়ে ৯টায় মাগুরছড়া রেল সেতুতে এবং রাত ১০টায় কুলাউড়া উপজেলার ছকাপন রেল সেতুর কাঠের স্লিপারে আগুন দেয় তারা।
কক্সবাজারে আহত আরও একজনের মৃত্যু : সাঈদীর ফাঁসির রায়কে ঘিরে কক্সবাজার ক্ষোভে উত্তাল রয়েছে। পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ঠেকাতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে চকরিয়ায় ছাত্রলীগের গুলিতে আহত দোকান কর্মচারী আকতার কামাল সাগর (২০) শুক্রবার বিকালে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া রশিদের নগর এলাকার আবুল কালাম সওদাগরের ছেলে। তিনি চকরিয়া স্টেশনে সাবেক পৌর কাউন্সিলর নুরুল আমিনের দোকানে চাকরি করতেন।
সংশ্লিষ্ট ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষকালে ছাত্রলীগের দুষ্কৃতকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি করে। এ নিয়ে দুদিনে কক্সবাজারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনজনে। জেলা জামায়াতে ইসলামী আমির মুহাম্মদ শাহজাহান এই মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিকদের।
পেকুয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা ও জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। চকরিয়া স্টেশনে বিক্ষুব্ধ জনতা দুটি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করলে পুলিশ জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এই ঘটনায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চকরিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত্ কুমার বড়ুয়াও রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে নিহতদের জানাজায় জনতার ঢল : সাঈদীকে দেয়া ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে নিহতদের জানাজায় জনতার ঢল নামে। গতকাল বিকালে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এলাকায় পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিকাল ৫টায় গড়েয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ ময়দানে এক এক করে নিহতদের লাশ জানাজার জন্য আনা হয়। কিন্তু জনতা বাড়তে থাকলে সেখানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে। সেখানে হাজার হাজার মুসল্লিদের অংশগ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল হাকিম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, বীরগঞ্জ পৌর মেয়র মাওলানা মো. হানিফ, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক চৌধুরী মহেবুল্লাহ আবু নুর, দিনাজপুর শহর শিবিরের সভাপতি মতিউর রহমান, ঠাকুরগাঁও সদর থানা জামায়াতের আমির শামসুজ্জামান দুলাল প্রমুখ। এ সময় বক্তারা বলেন, মাওলানা সাঈদীর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এ রায় প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। জানাজা শেষে জামায়াত আজ শনিবার ঠাকুরগাঁও জেলায় অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করে। জেলা বিএনপি এ হরতালে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। এদিকে শহরে জেলা বিএনপি এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে মাইক বের করলে পুলিশ মাইকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
চকরিয়ায় মিছিলে গুলি : বিক্ষুব্ধ জনতা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল করে পৌরশহর চিরিঙ্গা-সোসাইটি এলাকায় অবরোধকালে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় পৌরশহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশ মিছিল লক্ষ করে গুলি করলে জসিম, আবদুর রহিম, সাইফুল, আবু তাহের, মুজিব, আবদুল্লাহ, মুবিন, ইলাহী পিয়ম, হোছাইন মিয়াসহ ২০ জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ৯ জনকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল, পরে অবস্থার অবনতি হলে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে আটক করেছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় শহরে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন।
মিছিলকারীরা পূবালী ব্যাংক ও ওয়ালটন শোরুমসহ তিনটি শোরুম ও উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর করেন। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, এসময় তার কার্যালয় থেকে দুটি টেলিভিশন ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
বিষয়: রাজনীতি
১১৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন