ইতিহাসের বিখ্যাত তাজহাট জমিদার বাড়ি।
লিখেছেন লিখেছেন জারা ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৮:০০ দুপুর
তখন আমার হ্যাসবেন্ড এর চাকুরীর সুবাদে রংপুরে বসবাস করছি।
২০০৪ এর প্রথম দিকে সম্ভবত জানুয়ারী মাসের শেষেরদিকে একসকালে আমার জামতলা মসজিদের পাশে অবস্হিত কেরানীপাড়ার বাসায় রুনা আপু, শিমু আপু,রিনা দি ( কর্মসু্এে এরা আমার হ্যাজবেন্ড এর কলিগ) এসে হাজির। আপুরা আবার আমাকে খুব ভালোবাসত। আমার এই তিন আপুই তখনও অবিবাহিত ছিলো , আমার মতো তারাও তখন আত্ত্বীয় স্বজন ছেড়ে অনেক দূরে থাকছে। সময় পেলেই সবাই মিলে বেড়াতে বের হয়ে যাই। তো ওইদিন আপুরা বাসায় এসে বললো চলো ভাবী তাজহাট জমিদার বাড়ী
দেখে আসি, বললাম আমারও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপনাদের ভাইয়াকে না বলে কি করে যাই। আপুরা ঝটপট উত্তর দিলো, ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা আগেই পারমিশন নিয়ে এসেছি। আমি তখনই আমার জামাইকে মোবাইল করে জানতে চাইলাম যাবো কিনা, ও আমাকে বললো সারাদিন একা একা বাসায় থেকে কি করবে তার থেকে বাইরে ঘুরে এসো ভালো লাগবে।
মোবাইলে কথা বলা শেষ করে যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম । এবং বাসার বাইরে এসে চারজন মিলে দু,টা রিকশায় চড়লাম।
রিকশাওয়ালাকে বলা হলো তাজহাট জমিদার বাড়ী দিকে যেতে । প্রায় আধাঘন্টা সময় লাগলো আমাদের ওখানে পৌছাতে। সিংহদরজার (এখানে মুল ফটককে সিংহ দরজা বলা হয়েছে) সামনেই রিকশাওয়ালা রিকশা থামালো বললো, ভিতরে আর যেতে পারবে না। আমরা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে পায়ে হেটে সিংহ দরজা পার হলাম। মুল বাড়ীতে ঢুকতে হলে অনেকটা পথ পার হতে হয়। এই জমিদার বাড়ীর সামনের দিকটা পুরনো ঢাকার বিখ্যাত জমিদার বাড়ী আহসান মন্জিলের আদলে তৈরী। আমরা চারজনেই সামনের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে কিছু সময় বসে থাকলাম। তারপরে রুনা আপু বললো চলো আমরা ভিতরের অংশগুলো ঘুরে দেখি। ওখানের কেয়ারটেকার কে বললে উনি ভিতরে ঢুকার জন্য দরজার তালা খুলে দিলেন। আমরা ভিতরের প্যাচানো সিড়ি বেয়ে উপরের অংশে চলে এলাম ,আমরা কয়েকটা জমিদারদের নিজস্ব কামরা দেখলাম। তাদের আলিশান বাথরুমগুলো মার্বেল পাথরের তৈরী। প্রতিটি কামরার এক একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর গঠনশৈলী অত্যন্ত সুন্দর। রয়েছে বাইজিখানা ,যেখানে নাচ গানের নিয়মিত আসর বসত। যেটা বিশাল হল রুমের সাথে যুক্ত। এই বৃহতাকার হল রুমের সাথে যুক্ত সামনের সাড়ি বাধা সিড়িগুলো। এরপরে রয়েছে মেহমানখানা। আমরা সিড়ি বেয়ে উপরের ছাদের দিকে চলে আসলাম। ছাদের বিভিন্ন অংশে ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় রুনা আপু বলল দেখো ভাবী মনে হচ্ছে আমিও সেই জমিদারকন্যা। আমরা সবাই হেসে উঠলাম আপুটার কথা শুনে। আমরা এবার ছাদ থেকে নেমে সোজা নিচের রুম গুলো দেখার জন্য চলে আসলাম। নিচের দিকে রয়েছে দাসী বাদী,চাকর নোফরদের জন্য নির্ধারিত কামরা। আর রয়েছে আন্ধার কোঠা, সম্ভবত এখানে অপরাধীদের ধরে এনে রাখা হতো। এর ভিতরে খালি চোখে কিছুই দেখা যায় না। আমরা মূল বাড়ী থেকে বের হতেই জমিদারদের রন্ধনশালা চোখে পড়লো। তারপরে কিছুটা দুরে রয়েছে পুকুর ঘাট , এই পুকুরটিতে শুধুমাএ জমিদার গিন্নি, ও জমিদার কণ্যারা ই গোসল করতে পারতো। অন্য কারও এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। আমরা এসব দেখতে দেখতে অনেকটা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। একটা সময় মনে হলো আমাদের ফিরে যেতে
হবে আপন ভুবনে।
বিষয়: বিবিধ
১৫১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন