ছোট্র তুবাই এর গল্প....
লিখেছেন লিখেছেন জারা ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:৫৫:৪৩ দুপুর
পাহাড়ী ঝর্ণার কলকল ছলাৎ ছলাৎ পানির রিনিঝিনি মনোরম শব্দে গভীর ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠলো ছোট্র মুরগীর ছানাটা। সে গতকাল পথ ভুলে এই গভীর গহীন জঙ্গলে ঢুঁকে পড়েছিলো। যখন সে বুঝতে পারলো যে, সে পথ ভুলে অন্য পথে চলে এসেছে, তখন তার আর কিছুই করার ছিলো না। কোথায় তার মা ,কোথায় গেলো তার বাদবাকী ভাইবোন গুলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে। একসময় তার প্রচন্ড বেগে কান্না চলে আসলো। মনের দুঃখে সে কাদঁতে শুরু করলো । কাদঁতে কাদঁতেই সে ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়েছিলো।
মিষ্টি মধুর সুন্দর এক অভাবনীয় সকালের চমৎকার দৃশ্যগুলো চোখ মেলে দেখে গতকাল রাতে নিজেকে হাঁরানোর ব্যাপারটি ছোট্র মুরগীর ছানাটি প্রায় ভুলেই গেছিলো। ও হ্যা বলতে ভুলেই গেছি, মুরগীর ছানাটির নাম হচ্ছে তুবাই। দুবাই থেকে তুবাই কি চমৎকার নাম তাই না। তুবাই ঘুম থেকে জেগেই প্রথমে গিয়ে ঝড়নার পানিতে মুখ চোখ ধুয়ে নিলো। এরপরে সকালে ব্রেকফাস্ট করার পালা। এই গহীণ জঙ্গলে তুবাই কোথায় পাবে ব্রেকফাস্ট।
তুবাই ছিলো ভীষন বুদ্ধিমাণ। তার বাবা মোরগ সর্দার দুবাই থেকে গান শোনার জন্য মিউজিক সিস্টেম ও হেড ফোন নিয়ে এসেছিলো গত বছর। সেই হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতেই তো তুবাই গতকাল এই গভীর জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিলো , আর তাই তো এতো বিপত্ত্বি। যে যাই বলুক না কেনো ! যতদোষ এই
হেডফোনটির, তুবাই সম্পূর্ন নির্দোষ। না হেডফোনটি থেকে গান শুনতো , না তুবাই হারিয়ে যেতো। একপর্যায়ে তুবাই হেডফোনটি কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে খাবার খুজঁতে শুরু করলো। গুড়ি গুড়ি ছোট্র পোকামাকড় ও বন্য সর্ষে দিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট তো কোনমতে সারলো তুবাই।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তুবাইকে একটু অলসতায় পেয়ে বসলো এবং সে এক দৃষ্টিতে বুনো পাহাড়ী ঝর্ণার মেয়েলী গলার কল কল খল খল শব্দ শুনতে শুনতে ও দেখতে দেখতে তার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো । কোথায় যে হারিয়ে গেছে তার মা। মা কে ছাড়া একটুও ভালো লাগছে না তুবাই এর। গতকাল বরং বারবারই তুবাই এর মা তুবাইকে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে নিষেধ করে দিয়েছিলো। বলেছিলো তুবাই বাবা ওভাবে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেসনি, শেষে আমার কথা শুনতে পাবিনি বাছা। যেই কথা সেই কাজ। মায়ের অবাধ্য হতে গিয়ে কি বিপদেই না পড়েছে তুবাই।
ঝড়নার পাশে এমনসময় চলে আসলো এক বিশাল আকারের হাতি ! সে তার বিশালকায় শুড় দিয়ে গড়গড় করে ঝড়নার পানি খেয়ে নিচ্ছে। ওমা তুবাই এর তো হাতিটাকে দেখেই ভয়ে জমে একেবারে ফ্রিজ হয়ে যাওয়ার পালা। তার মা অবশ্য একবার তাদের কে হাতির গপ্প শুনিয়েছিলো। কিন্তু সচক্ষে তুবাই এর এই জীবনে প্রথম হাতি দর্শন হলো। তুবাই এর তো ভয়ে বুকটা ধুক পুক ধুক পুক করছে। আরেকটু হলেই মরে যায় আর কি।
তুবাই এবার বাড়ীর দিকে যাত্রা শুরু করলো। কিন্তু কোন পথ দিয়ে যে বাড়ী যেতে হয় , তাই সে জানে না। পুনরায় সে কাদঁতে শুরু করলো। কাদঁতে কাদঁতেই সে পথ চলতে থাকলো। পথিমধ্যে দেখা হলো ময়ূর পক্ষীর সঙ্গে । ময়ূর পক্ষী তার কান্নার কারন জানতে চাইলে সে তার হারিয়ে যাওয়ার বৃত্ত্বান্ত আদ্যপান্ত বর্ণনা করলো। ময়ুর পক্ষী সব শুনে তাকে অভয় দিয়ে বললো যে, তাকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
এদিকে তুবাই এর বাবা মা তুবাইকে হারিয়ে বেদনায় মুষঢ়ে পড়লো। তুবাই এর বাবা আর দেরী না করে রিকশায় চেপে মাইক নিয়ে তুবাইএর হারিয়ে যাওয়ার সংবাদ প্রচার করতে শুরু করলো। আর সাথে সাথে পুরস্কার সরূপ যে তুবাইকে ফিরিয়ে দিতে পারবে তাকে একখানা সদ্য নতুন দুবাই থেকে আনা ল্যাপটপ কম্পিউটার উপহার দেয়া হবে। পাহাড়ের অলিতে গলিতে এই সংবাদ প্রচার হতে হতে এক সময় ময়ূর পক্ষী শুনতে পেলো তুবাই এর নিখোঁজ সংবাদ প্রচারের বিষয়টি।
ময়ূর পক্ষী আর একমূহুর্ত দেরী না করে তুবাই কে তার পিঠে শক্ত হয়ে বসে থাকার পরামর্শ দিলো। এবং ময়ূরপক্ষীটি উড়াল দিয়ে তুবাইএর বাবার রিকশার পাশে এসে বসে পড়লো। তুবাই এর বাবা ময়ূর পক্ষীকে দেখে প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলো, পরে তুবাইকে ময়ূর পক্ষীর পিঠে বসে থাকতে দেখে অত্যন্ত খুশী হয়ে তুবাইকে কোলে তুলে নিলো । এবং ময়ূর পক্ষীকে কৃতজ্ঞতা জানালো ও তাকে কথামত ল্যাপটপ খানা উপহার দিলো।
এদিকে তুবাই কে ফিরে পেয়ে তার বাবা -মা ও ভাইবোনদের মুখে হাসি আর ধরে না। তারা সকলে মিলে তুবাইকে নিয়ে মহাআনন্দে মেতে উঠলো।
বিষয়: বিবিধ
২২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন