মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)।-১০
লিখেছেন লিখেছেন জারা ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৯:০৫:১৭ রাত
এমনি করে আকুল হৃদয়ে আছিয়া পুত্র মূসার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে লাগলেন। কিন্তু মূসার নিরুদ্দেশের কথা গোপন রইলো না। গুপ্তচরদের মারফত পরদিনই মূসার দেশত্যাগের খবর ফিরাউনের কানে পৌঁছলো। ক্রোধে ফেটে পড়লো ফিরাউন। কারন আগের দিন ফিরাউন হামানের সাথে পরামর্শ করেছিলো--মূসাকে গুপ্তভাবে হত্যা করার জন্য। কারন প্রকাশ্যভাবে মূসার বিরুদ্ধে মূসার বিরুদ্ধে কোন কিছু
করার চেষ্টা করলে রাজ্য জুড়ে বিদ্রোহের আগুন ধূমায়িত হয়ে উঠবে। এতোদিনে রাজ্যের বহুলোক মূসার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলো এবং তাঁর প্রচারিত ধর্মের প্রতি প্রকাশ্যে না হলেও আন্তরিকভাবে সমর্থন করে দিয়েছিলো। যারা ফিরাউনের স্রষ্টা দাবির বিরোধী ছিলো,তারা সর্বান্তকরনে মূসার তৌহিদ বানী গ্রহন করেছিলো। শুধূ সাধারন প্রজাগনই নয়, ফিরাউনের রাজসভার বহু আমীর ওমরাহ মূসার পক্ষ অবলম্বন করেছিলো। মূসার প্রচেষ্টায় রাজ্যের অনেকেই ফিরাউনের ঘোর বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে মূসাই হচ্ছে যত অনর্থের মূল। সুতরাং এ মহাশত্রুকে যে করেই হোক ধ্বংস করতে হবে এবং তা করতে হবে লোকচক্ষুর অন্তরালে । কেউ যেন এ গুপ্তহত্যা রহস্যের কথা না জানতে পারে। পাপীষ্ট মন্ত্রী হামানের সাথে এমনিভাবে গুপ্ত পরামর্শ করে ফিরাউন স্থির করেছিলো। কিন্তু এ মূহুর্তে মূসার দেশ ত্যাগের খবর পেয়ে প্রমাদ গুনলো। শত্রু হাতের মুঠো থেকে পালিয়ে গিয়েছে। আজ হোক কাল হোক, যে কোন মুহুর্তে, যে কোন রূপে সে তার অনিষ্ট সাধন করতে চেষ্টা করবে। পাপিষ্ট হামান বললো-মূসার পলায়নের জন্য দায়ী একমাত্র আছিয়া। তিনি নিশ্চয়ই মূসার অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। তাঁর কাছ থেকেই অনুসন্ধান নিয়ে গুপ্তঘাতক দ্বারা মূসাকে ধ্বংস করা হোক। হামানের পরামর্শ অনুযায়ী ফিরাউন আছিয়ার কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-মূসা কোথায় আছে? আছিয়া ফিরাউনের চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা কতদূর গড়িয়েছে। তাই তিনি স্থির কন্ঠে বলেন- মূসা এখন কোথায় আছে , তা তো আমি জানি না। ফিরাউন ক্রোধে বললো-কেন মূসা পালিয়েছে এ খবর কি তুমি জান না? আছিয়া বললেন- হাঁ জানি। হয়তো আপনার ভয়েই সে পালিয়েছে।
--কোথায় আছে সে এখন?
--সে সংবাদ তো আমি জানিনা।
--তার গন্তব্যস্থল কোথায়?
--তাও আমি জানি না।
--সবকিছুই তুমি জান । তুমি আমার মহাশত্রুকে গোপন করে রেখেছ। বল সে কোথায় আছে? আছিয়া তেমনি শান্ত কন্ঠে বললেন--বললাম তো মূসা বর্তমানে কোথায় আছে তা আমি জানি না। আর মূসাকে আপনি শত্রু বলছেন কেন? মূসাতো আপনার রাজ্যে কেড়ে নিতে চায় না। কিংবা আপনাকে হত্যা করতে চায় না। সে চায় শুধু আপনার ভূলগুলো ভেঙ্গে দিতে। অজ্ঞানতার গর্বের অহঙ্কারে আপনি নিজেকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছেন। মূসা আপনার সে ভূল ভেঙে দিয়ে সত্যের পথে আহবান করতে চায়। শুনে ফিরাউন গর্জে উঠলো।--চুপ করো। আমাকে ছলনা করে ভুলাতে চেষ্টা করবে না। আমি কি বুঝতে পারিনি---তোমার পালিত পুত্র মূসা জ্যোতিষীর বর্ণিত সেই মহাশত্রু। আজ আমার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাড়িয়েছে, আমারই প্রান হরনকারী রূপে। আছিয়া শান্তকন্ঠে বললেন--আপনি বুদ্ধিমান হয়েও কেনো এই সামান্য কথাটি বুঝছেন না। জ্যোতিষী কি করে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারে? পৃথিবীতে কাল কি হবে, কোথায় কি ঘটবে, একমাত্র আল্লাহ পাক ব্যতীত তা কেউ জানে না। আল্লাহপাক স্বয়ং আলিমুল গায়েব। একথা শুনে ফিরাউন মহাক্রোধে গর্জে উঠলো--চুপ কর আছিয়া। এখনও সে আল্লাহর নাম আমারই সামনে উচ্চারিত হচ্ছে। তোর ধৃষ্টতা সত্যিই অমার্জনীয়। যা হোক তোকে উচিত শাস্তি দেবো। এ বলে ফিরাউন ক্রোধে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। আছিয়া হতবাক আর বিমূঢ় হয়ে চেয়ে থাকলেন।
# আছিয়ার প্রার্থনাঃ--
ষড়যন্ত্রের কথা শুনে আছিয়া মহাচিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারন শয়তান হামানের অসাধ্য কিছুই ছিলো না। মূসাকে অনুসন্ধানের জন্য যেভাবে লোক নিয়োগ করেছে, তাতে একটি পিপঁড়ারও পালিয়ে থাকার উপায় নেই। তাই আছিয়া মূসার সর্ববিধ মঙ্গলের জন্য আল্লাহর দরবারে কাতরভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন। করুনাময় ! তোমার প্রেরিত মহাপুরুষকে তুমি রক্ষা করো। তোমার সত্য দ্বীন প্রচারে তুমি তাকে সাহায্য করো। পাপীষ্ট শয়তানদের চক্রান্ত তুমি ধূলিস্যাত করো। এবং নিজ স্বামীর জন্য এই বলে দোয়া করলেন-- দয়াময় প্রভু ! তুমি আমার স্বামীকে সুমতি দান করো। হে অর্ন্তযামী মহামহিম সম্রাট! স্বামীকে আমি প্রানপেক্ষা ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। অথচ কেন তুমি তাকে এমন কুমতি দিয়েছ? আমার স্বামীর অমঙ্গল আমি চাই না। আমি চাই আমরা স্বামী- স্ত্রী মিলে প্রানভরে তোমার ইবাদত-বন্দেগী করি, তাই তোমার কাছে আমার অনুরোধ,তুমি তাকে সত্যের পথ দেখাও। তার মন থেকে পাপচিন্তা দূরীভুত করো। সত্যের আলোকে তার অন্তর আলোকিত করে দাও। তার মনের অহংকার চূর্ন-বিচূর্ন করে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করো। তাকে তুমি সৎপথ প্রদর্শন করো। আছিয়ার প্রার্থনার ভেতরেই মহাপাপী ফিরাউন এসে উপস্থিত হলো। ক্রোধে গর্জন করে বললো-আছিয়া ! তোমাকে পুনঃ পুনঃ নিষেধ করা সত্বেও তুমি আমার বিরুদ্ধাচরন করছো? তুমি কি জান না কার বিরুদ্ধে তোমার আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছো? আমার অন্নে লালিত-পালিত হয়ে আমারই ধ্বংস কামনা করছো তুমি? তোমার বহু অপরাধ ক্ষমা করেছি আমি, কিন্তু আর নয়। মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। তুমি তা লংঘন করেছ। সুতরাং এর প্রতিফল গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত হও। তোমার মতো অবাধ্য স্ত্রীকে যদি আমি উপযুক্ত শিক্ষা দিতে না পারি তাহলে সত্যিই আমি মিশর সাম্রাজ্যের ফিরাউন হওয়ার অযোগ্য। তোমাকে কারাগারে বন্দিনী করবো। যতদিন আমাকে স্রষ্টা বলে স্বীকৃতি না দেবে, ততদিন তোমাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এরপরে পাপাত্মা নিষ্ঠুর ফিরাউন আছিয়া ও তার অন্যান্য পুত্র- কন্যাকে বন্দি করে নিয়ে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করলো। বাদশাহর বেগম ও পুত্র-কন্যাকে অন্ধকার কারাগারে বন্দি করতে গিয়ে কারাগারের কর্মচারীরা বিস্ময়ে স্তম্ভিত হলো, কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে সাহস করলো না।
চলবেঃ--
বিষয়: বিবিধ
২২৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন