মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)।-০৯
লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৪৪:১৬ বিকাল
সে আপনারই সৃষ্টি সামান্য মানব মাত্র। আপনার সুবিশাল রাজত্বের একটি নগন্য ধূলিকনা থেকেও অতি নগন্য, তা সত্বেও সে নিজেকে আপনার সমকক্ষ বলে দাবি করছে। আর তার অধীনস্ত প্রজাগনকে বিপথে ধাবিত করছে। প্রজাগন তার এই মহাপাপের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারছে না। তাই হে দয়াময় আল্লাহ! আমার স্বামীর এ বাসনাকে দূর করে তাকে সুমতি দান করুন। তাঁর মনের কালিমাকে দূর করে সত্যের আলোকে আলোকিত করে তুলুন। এ সময় সহসা পাপিষ্ট ফেরাউন সেখানে এসে উপস্থিত হলো। আছিয়া প্রথমে অনুচ্চ স্বরেই প্রার্থনা করছিলেন। কিন্তু ভাবাবেগে আকুল হয়ে তিনি কখন যে জোরে জোরেই বলতে শুরু করছিলেন তা আর লক্ষ্য ছিলো না। ফেরাউন আছিয়ার প্রার্থনা শুনে রাগে ফেটে পড়লো। রাগত স্বরে ফেরাউন বললো-সাবধান আছিয়া! দিন দিন তোমার স্পর্ধা বেড়েই চলেছে। আমারই অন্নে লালিত পালিত হয়ে ,আমারই ঘরে বসবাস করে তুমি মুসার প্রভূর গুনগান করছো। আর মূসার স্রষ্টার কাছে আমার ধ্বংস কামনা করছো। তোমার এ অবাধ্যতা আমি আর কখনো সহ্য করবো না। তোমাকে বারবার নিষেধ করা সত্বেও তুমি মূসার সে কথিত আর নিরাকার স্রষ্টার নাম স্মরন করছো। রাজ্যের প্রতিটি প্রজা আমাকে স্রষ্টা বলে মান্য করে। আর তুমি আমার বেগম হয়ে আমার বিরুদ্ধাচরন করছো। আমার সামনে ওই মূসার স্রষ্টার নাম যেন আর শুনতে না পাই। আছিয়া তখন বিনীত ভাবে বলেন--মাননীয় জ্ঞানী- গুনী স্বামী! আপনার মতো বুদ্ধিমান আর এ রাজ্যে কেউ নেই, তা সত্বেও আপনি কেনো অবুঝের মতো কথা বলছেন। আপনি নিজেও জানেন বিশ্ব জগতের স্রষ্টা একজন আছেন। আপনি বৃথা নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করেন কেনো? একটা পিপঁড়া যখন সৃষ্টি করার ক্ষমতা আপনার নেই, তবে কেনো নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবী করে মহাপ্রভুর কোপানলে পড়ছেন? এটা আপনার অজ্ঞতা ,না হয় আপনার আত্মপ্রবঞ্চনা। বলুন, আপনার বিবেককে ভালো করে যাচাই করে দেখুন। নিজের আত্মাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। সত্যিই কি আপনি এই বিশ্ব জগতের স্রষ্টা হবার যোগ্য? উত্তেজনা বশে আছিয়া কথাগুলো বলে ফেললেন। পাপীষ্ট ফেরাউন নির্বাক হয়ে এতক্ষন আছিয়ার কথাগুলো শুনে ক্রোধে অগ্নিমূর্তি হয়ে উঠেছিলো। গর্জে উঠে বললো-- হতভাগিনী ! আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই বিরুদ্ধে কথা বলার স্পর্ধা, আমারই কাছে কৈফিয়ত তলব করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? তোমার খেয়াল আছে কি । কার সামনে দাড়িয়ে তুমি কথা বলছো। তুমি নিশ্চয়ই জেনে রেখো, এ অবাধ্যতার পরিনাম তোমার জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। তুমি আর তোমার পালিত পুত্র মূসা দু,জনে আমার ঘরে বাস করে আমারই বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছো। আমার আদেশ অমান্য করে আমাকে অপমান করছো। এ অপমান আমি কিছুতেই সহ্য করবো না। শুধূ তুমি একা নও, তোমার পালিত পুত্র মূসা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধাচরন করতে শুরু করেছে। সুতরাং তার আর নিস্তার নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদন্ড। এ বলে তখনই কক্ষ থেকে ফেরাউন বেরিয়ে গেলো।
# মূসার পলায়নঃ--
পূন্যবতী আছিয়া বুঝলেন বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। কোনদিনই তিনি ফেরাউনের এমন অগ্নিমূর্তি দেখেননি। তিনি বুঝতে পারলেন এবার শুধু অত্যাচার করেই ক্ষান্ত হবে না। তাদের দু,জনকেই ধ্বংস করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তিনি নিজের জন্য মোটেই চিন্তিত নন। চিন্তা হচ্ছে মূসার জন্য। এ যাবত মূসাকে বহুবার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন, কিন্তু আর বুঝি কোন উপায় নেই। অবশেষে স্থির করলেন-মূসাকে রক্ষা করতে হলে গোপনে এখান থেকে সরিয়ে মূসাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। তাই খুব ভোরে তিনি মূসাকে ডেকে বলেন-বাবা মূসা! আজ তোমার জন্য এক মহা সংকট উপস্থিত হয়েছে। বাদশাহের কোপানল থেকে আর বুঝি তোমাকে রক্ষা করতে পারছি না। এবার আর সে কোন কথাই মানবে না। নাগাল পেলেই তোমাকে হত্যা করবে। তোমার কোন অমঙ্গল আমি সইতে পারবো না। তাই তোমাকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি, আর এক মুহূর্ত তুমি এখানে অবস্থান করো না! আজই এ দেশ ত্যাগ করে চলে যাও। একেবারে মিসরের সীমা অতিক্রম করে অন্যত্র চলে যাবে। তোমাকে আমি আর একমুহূর্ত এখানে থাকতে দিতে পারি না। তুমি এখনই রওয়ানা হয়ে যাও। তোমাকে বিদায় দিতে যদিও আমার কষ্ট হচ্ছে ,তবু এছাড়া উপায় নেই। যে জালিমের ভয়ে তোমার পিতামাতা কাঠের সিন্দুকে ভরে নীলনদে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, আজ সে জালিমের ভয়ে তোমাকে আমি অজানার পথে ছেড়ে দিলাম। পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালাই তোমাকে রক্ষা করবেন। যাও! বিলম্ব করো না। তোমাকে আমি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করলাম। স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আছিয়ার কথা শুনে মূসা বলেন-তুমি একি আদেশ করছো মা! তোমাকে এ কঠিন বিপদের মধ্যে ফেলে আমি একা চলে যাবো? তা হয় না মা। তোমার সন্তান তেমন ভীরু আর কাপুরুষ নয়। তোমাকে একা রেখে আমি কিছু্তেই পালিয়ে যেতে পারবো না। আছিয়া চোখের অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে বলেন- তুমি আমার বীরপুত্র , এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহর তাওহীদ রক্ষার্থে অকাতরে প্রান দিতেও তোমার দ্বিধা নেই তা আমি জানি । কিন্তু বৎস! তুমি ভূল করছো। তুমি যত বড় বীরই হও না কেনো, তুমি এখন একা। শৃঙ্খলাবদ্ধ কয়েদীর মতো। সুতরাং এখানে তোমার বীরত্ব কোন কাজে আসবে না। এমতাবস্থায় বীরত্ব প্রকাশ করতে যাওয়ার কোন লাভও নেই। কারন জালিম বাদশাহ আমাদের কাউকে রেহাই দেবে না। হয়তো কারাগারে বন্দি করে কঠোর নির্যাতন চালাবে। এবং কঠোর নির্যাতন সয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যেতে হবে বৎস! আমি মরে গেলেও দুনিয়ার কারও কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমি জানি, তোমার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিরাট একটা দায়িত্ব এবং মহান কর্তব্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। আমার আদেশ তুমি এ দেশ ছেড়ে চলে যাও। দেশ-বিদেশে আল্লাহর বানী প্রচার করে তোমার কর্তব্য সম্পাদন করো। আমি অন্তর থেকে প্রানভরে দোয়া করছি--আল্লাহর অসীম রহমত তোমার উপর নেমে আসুক। আমার জন্য চিন্তা বা দুঃখ করো না। আমার অদৃষ্টে যা আছে তাই হবে। মৃত্যুর ভয়ে ভীত নই। আমার অন্তরে শুধু একটি ভয়--মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর নামের উপর সুদৃঢ় থাকতে পারবো কিনা। একটা বুকফাটা সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল আছিয়ার অন্তর থেকে।
#ফেরাউনের প্রতিক্রিয়াঃ--
মূসাকে বিদায় দিয়ে আছিয়ার একটা শঙ্কা দূরীভূত হলো। এতদিন তিনি সবসময় একটা উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতেন, না জানি কখন কি হয়ে যায়। মূসাকে কোন অপরাধে কি দন্ড দেয়া যায় এই সুযোগ সর্বদাই শুধু ফেরাউনই নয়, পাপীষ্ট হামানও খুজঁছিলো। আর তাই মূসাকে ঘর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আছিয়ার হৃদয় যদিও ব্যথায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলো, বিদেশে তার যত কষ্টই হোক না কেনো, অন্তত প্রানের আশঙ্কা নেই। মূসা পালিত পুত্র হলেও আছিয়া তাকে গর্ভজাত পুত্রের চেয়ে অধিক স্নেহ মায়া করতেন। মূসাকে বিদায় দিয়ে দু,চোখের অশ্রু আর বাধঁ মানেনি আছিয়ার। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন--হে প্রভু ! তোমার ইচ্ছাই পূর্ন হোক। তোমার খুশীতেই আমি খুশী। আমাকে তুমি সবকিছু সহ্য করার ক্ষমতা দাও। প্রভু ! মূসাকে আমি তোমার নামেই নিরুদ্দেশে ছেড়ে দিলাম, জালেমদের অত্যাচার থেকে তুমিই তাকে রক্ষা করো।
চলবেঃ--
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন