মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)। পর্ব-৭

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০২ জুলাই, ২০১৩, ০২:৫৯:৫৯ দুপুর



শিশু মূসার জন্য ধাত্রী নিযুক্তঃ--

বাদশাহের অনুচরগন কয়েকজন ধাত্রীকে নিয়ে এল। তারা সবাই শিশু মূসাকে বুকে তুলে নিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় শিশু কারও স্তন্য পান করলো না। তা দেখে আছিয়া একটু চিন্তিত হয়ে আরও ভালো ধাত্রী অনুসন্ধান করে আনার জন্য আদেশ করলেন। এদিকে দারোয়ানের কন্যা মারিয়াম ছদ্মবেশে শিশুটির অবস্থা দেখার জন্য বেগমের মহলে এসেছিলেন। সে আছিয়ার কাছে গিয়ে বললো-বেগম সাহেবা,আমার খোঁজে একজন ভালো ধাত্রী রয়েছে। আপনি যদি অনুমতি দেন, তা হলে আমি এক্ষুনি নিয়ে আসি। শুনে আছিয়া বললেন-ধাত্রীটিকে যদি আমার পছন্দ হয়,তাহলে তাকে প্রচুর পারিশ্রমিক দেবো। মারিয়াম খুশী হয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বললো এবং তাকে নিয়ে আছিয়ার শাহী প্রাসাদে উপস্থিত হলো। এদিকে আছিয়া শিশুটির কান্ড দেখে ভাবতে লাগলেন, এ কোন সাধারন শিশু নয়, এর উপর নিশ্চয়ই দয়াময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ করুনা নিহিত রয়েছে। মারিয়ামের মা এসে আছিয়াকে ছালাম জানিয়ে দন্ডায়মান হলো। আছিয়া তার আপাদমস্তক নিরীক্ষন করে বললেন, শুনো ধাত্রী ! এ শিশুটির জন্য ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন ধাত্রী এসেছিলো, কিন্তু শিশুটি কারও স্তন্য পান করেনি। তুমি চেষ্টা করে দেখো একে স্তন্য পান করাতে পারো কিনা ! দারোয়ানের স্ত্রী শিশু মূসাকে বুকে তুলে নিতেই শিশু মূসা স্বেচ্ছায় তার স্তন্য পান করতে লাগলেন। তা দেখে হযরত আছিয়া যেমন বিস্মিতা হলেন তেমনি খুশিও হয়ে বললেন--শিশুটি স্বেচ্ছায় তোমাকে ধাত্রী মা বলে গ্রহন করেছে। সুতরাং তোমাকেই এ শিশুর ধাত্রীরূপে নিযুক্ত করলাম। আল্লাহর অপার মহিমা ,ক্ষুদ্র বুদ্ধি মানবের সাধ্য কি তাঁর কুদরত বুঝে? যে শিশুকে হত্যা করার জন্য পাপাত্মা ফেরাউন বনি ইসরাইলের লাখ লাখ শিশু হত্যা করেছে, সে শিশুই আজ আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় স্বয়ং ফেরাউনের ঘরে তার নিজ বেগমের দ্বারাই লালিত-পালিত হচ্ছে। অন্যদিকে যে মা প্রানের ভয়ে শিশুকে রক্ষা করার জন্য নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলো আল্লাহর মহিমায় সে মা ধাত্রী নিযুক্ত হলো শিশুটির লালন-পালনের জন্য।

মূসার অলৌকিকতাঃ---

ক্রমশই দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। শিশু মূসার বয়স এক বছর হলো। তার সুন্দর হাসি , আধো আধো বুলি শুনে সারা প্রাসাদের সবাই মহা খুশী। সবাই তাকে স্নেহ করে। এমনকি স্বয়ং ফেরাউনও শিশু মূসাকে কোলে নিয়ে আদর করে। আছিয়ার সাত বছর বয়স্কা একটি মেয়ে ছিলো। মেয়েটির সর্বাঙ্গ একপ্রকার কঠিন দূরারোগ্য ক্ষত ছিলো। বড় বড় চিকিৎসক নিয়োগ করা হলো, কিন্তু তার গায়ের ক্ষত একটুও আরোগ্য হয়নি। শেষ পর্যন্ত ফেরাউনের দেয়া ফলফুল আর পাতা শিকড় দ্বারাও ক্ষত আরোগ্য হয়নি। আছিয়া এটিকে আল্লাহর ইচ্ছা বলেই মেনে নিয়েছিলেন। একদিন শিশু মূসার মূখের লালা সে মেয়েটির একটি ক্ষত স্থানে লেগে গেলো। সাথে সাথে ক্ষতটি শুকিয়ে গেলো। তা দেখে আছিয়া বিস্মিতা হলেন এবং পরীক্ষা করার জন্য মূসার মুখের লালা নিয়ে মেয়েটির সর্বাঙ্গে মেখে দিলেন। এবং আল্লাহপাকের ইচ্ছায় সাথে সাথে মেয়েটির সর্বাঙ্গের ক্ষত শুকিয়ে গেলো। আছিয়া একদিন ফেরাউনকে বললেন- আমাদের পালিত পুত্রটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন লোক হবে। ফেরাউন জিজ্ঞেস করলো-তা কি করে বুঝলে? আছিয়া সব ঘটনা খুলে বলেন। শুনে ফেরাউন খুশী হয়ে ভাবলো শিশুটি হয়তো তারই মতো ক্ষমতাশালী হবে। সুতরাং তার মৃত্যুর পর হয়তো তার এ শিশু তার স্থলাভিষিক্ত হবে। তাই ফেরাউনও সেদিন থেকে শিশু মুসাকে আদর-যত্ন করতে লাগলো।

মূসার পরীক্ষাঃ--

একদিনের ঘটনা। ফেরাউন মূসাকে কোলে নিয়ে আদর করছিলো। ফেরাউন যতবারই শিশুকে চুম্বন করতে উদ্যত হচ্ছিলো, শিশুটি ততবারই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাধা দিচ্ছিলেন। অবশেষে বিরক্ত হয়ে ফেরাউনের গালে এক চড় বসিয়ে দিলেন। এতে ফেরাউন বিস্মিত হলো। একটা এক বছর বয়স্ক শিশুর চড় যে এতো শক্ত তা ধারনাও করতে পারেনি। ভীষন আঘাতে ফেরাউন অনেকক্ষন পর্যন্ত নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। এরপরে বললো- বেগম আমি বুঝতে পেরেছি এ শিশুই একদিন আমার শত্রুতে পরিনত হবে। সুতরাং একে আমি হত্যা করবো। আছিয়া সব শুনে বললেন- সামান্য দুধের শিশু, এর বুদ্ধিই বা কি, আর জ্ঞানই বা কি? আছিয়ার কথায় ফেরাউন আশ্বস্ত হলো, কিন্তু তার মনে মূসার প্রতি একটা সন্দেহ রয়েই গেলো। এরপর বালক মূসার আচার-ব্যবহার এবং লক্ষনাদি দেখে ফেরাউনের নিশ্চিত ধারনা হলো, কালক্রমে এ শিশুই তার মহাশত্রুরূপে আত্মপ্রকাশ করবে। আছিয়া নানারূপ সান্তনাবাক্যের দ্বারাই প্রকৃত ব্যাপারটি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চেষ্টা করলেও ফেরাউনের মনে একটা দুশ্চিন্তা রয়েই গেলো। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ধূর্ত হামানও বালক মূসার সর্বাঙ্গের লক্ষনাবলী এবং আচার-ব্যবহার জ্যোতিষীর বর্ণিত লক্ষনগুলোর সাথে হুবহু মিল দেখে বুঝতে পারলো এ শিশুই একদিন ফেরাউনের মহাশত্রুতে পরিনত হবে। তাই ধূর্ত হামান ফেরাউনকে বললো-বাদশাহ ! মনে হয় আপনার বেগম সাহেবার পালিত পুত্র মুসাই জ্যোতিষীর বর্ণিত সে শত্রু বালক। কাজেই একে জীবিত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়! হয়তো এ বালকই একদিন আপনার মহাশত্রুতে পরিণত হবে। সুতরাং একে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। ফেরাউন চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-তা হলে কি উপায়ে করা যায়? হামান বললো- একপাশে একখন্ড জ্বলন্ত অংগার, অন্য প্বার্শে একখন্ড স্বর্নপ্ডি রেখে শিশুটিকে মাঝখান থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। যদি সে স্বর্নপিন্ডকে ধরে ,তাহলে বুঝা যাবে এ বালকই আপনার মহাশত্রু। আর যদি জ্বলন্ত অংগার হাতে তুলে নেয় তাহলে আর ভাবনা নেই। এ শিশু কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। হামানের পরামর্শ মতোই একপাশে স্বর্নপিন্ড আর অন্য প্বার্শে জ্বলন্ত অংগার রেখে মাঝখান থেকে শিশু মূসাকে ছেড়ে দেয়া হলো। শিশু মূসা উভয় দিকে তাকিয়ে স্বর্নপিন্ডের দিকেই আকৃষ্ট হলেন। ঠিক সে মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালার আদেশে হযরত জিররাইল (আঃ) এসে শিশু মূসাকে জ্বলন্ত অংগারের দিকেই ফিরিয়ে দিলেন। মূসা এগিয়ে গিয়ে জ্বলন্ত অংগারটিই হাতে উঠিয়ে নিলেন। হাতে উত্ত্বপ্ত বোধ হওয়ায় তাড়াতাড়ি তা মুখে পুরে দিলেন। সেজন্য হযরত মূসার ডান হাত এবং জ্বিহবা পুড়ে গিয়েছিলো। তাই বড় হয়েও তিনি সুষ্পষ্টভাবে কথা বলতে পারতেন না। বালক মূসার কান্ড দেখে হামান বললো-শাহেনশাহ! মনে হয় শিশুটি খুবই অবোধ। সুতরাং এর দ্বারা আপনার কোন অনিষ্টের আশংকা নেই। শুনে ফেরাউনও নিশ্চিন্ত হলো।

চলবেঃ--

বিষয়: বিবিধ

৩৮৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File