মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) ( নেফারতিতি)। পর্ব-৬

লিখেছেন লিখেছেন জারা ২৯ জুন, ২০১৩, ০১:৫৩:৩৪ দুপুর



জ্যোতিষীর কথা শুনে পাষাণ হৃদয় ফেরাউনের বুকটা যেন কেঁপে উঠলো। আজ একি শুনছে সে? তার অধীনস্থ প্রজার ঘরে শিশুসন্তান জন্মগ্রহন করে তারই রাজ্য ধ্বংস করবে? তারই প্রাননাশের কারন হয়ে দাঁড়াবে? প্রথমে সে জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করতেই চাইলো না। কিন্তু পরক্ষনেই তার মনে হলো--জ্যোতিষীর গণনা কখনও মিথ্যা হয় না। যতবার সে ভবিষ্যদ্বানী করেছে, তার প্রতিটি কথাই অক্ষরে অক্ষরে পরিণত হয়েছে। সহসা তার মনে হলো দেশের সবাই তাকে স্রষ্টা বলে মেনে নিলেও তার নিজের স্ত্রী আছিয়া তাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করেনি। আছিয়া তো বনি ইসরাইল বংশেরই মেয়ে। তবে কি আছিয়ার গর্ভেই তার ভবিষ্যত শত্রু পয়দা হবে? কিন্তু তাই বা কেমন করে হয়? আছিয়া বনি ইসরাইলের বংশধর হলেও সে নিজে তো কিবতী বংশের লোক । সুতরাং তার ওরসে তার শত্রু জন্মগ্রহন করতে পারে না। ফেরাউনের মনোভাব উপলদ্ধি করতে পেরে পাপাত্মা হামান বললো-সে জন্য তেমন ভাবনার কি প্রয়োজন আছে বাদশাহ! আগামী একবছরের ভেতর বনি ইসরাইল বংশের যতগুলো পুত্রসন্তান জন্মগ্রহন করবে সবগুলোকে হত্যা করলে তাহলেই আপনার শত্রুও নিপাত হবে। হামানের কথা শুনে ফেরাউন খুবই আনন্দিত হলো। পরদিনই সে রাজ্যে ঘোষনা করে দিলো-বনি ইসরাইল বংশের আগামী এক বছরের ভেতর যতগুলো পুত্র-সন্তান জন্মগ্রহন করবে, ভূমিষ্ট হওয়া মাত্রই সে শিশুকে মেরে ফেলতে হবে। এ আদেশ যে অমান্য করবে, তাকে একবারে র্নিবংশ করে দেয়া হবে। ফেরাউন শুধু আদেশ জারী করেই ক্ষান্ত রইলো না। অসংখ্য ধাত্রী নিযুক্ত করে বনি ইসরাইলদের প্রত্যেকটি স্ত্রীলোককে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো এবং যে বাড়িতে গর্ভবতী মহিলা পাওয়া গেলো সে বাড়ীতে দিনরাত সবসময়ের জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করা হলো। এভাবে পাপাত্মা নরপিশাচেরা বনি ইসরাইলের লক্ষাধিক শিশুকে হত্যা করলো। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত কে বুঝতে পারে ? আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা কারও সাধ্যে কুলায় না। এমনকি জাগতিক সীমারেখাকে অতিক্রম করে আল্লাহর শাসনের বাইরে চলে যাওয়াও সম্ভবপর হয় না। ফেরাউন জ্যোতিষীর বানীর প্রতি লক্ষ্য করে, টিকে থাকার আশায় ,বাঁচার কামনাকে আরও শক্ত করে আকঁড়ে ধরলো, কিন্তু পরিণামে তারও শেষ রক্ষা আর হলো না।

# ফেরাউনের ঘরে মূসার বসবাসঃ--

এতো পাহারা সত্বেও ফেরাউনের শত্রু আপন ঘরেই লালিত পালিত হলো। ফেরাউনের দারোয়ান ছিলো বনি ইসরাইল বংশের লোক। তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলো। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে নবম মাসে তাঁর গর্ভের কোন চিহ্ন দেখা গেলো না। কিন্তু দারোয়ান দম্পতি ফেরাউনের যত প্রিয়পাত্রই হোক না কেনো , তারা ছিলো বনি ইসরাইল বংশের লোক। সুতরাং তাদের ঘরে এ পুত্র সন্তান হলে ফেরাউন তাকেও খাতির করবে না। তাই দারোয়ান দম্পতি বিশেষ চিন্তা ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিন কাটাতে লাগলো। অবশেষে আল্লাহর অসীম কুদরতে দারোয়ান দম্পতির ঘরে পূর্নিমার চাঁদের মতো একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করলো। পুত্রের মুখ দর্শনে দারোয়ান দম্পতি অত্যাধিক খুশী হলো। কিন্তু পরক্ষনেই ফেরাউনের আদেশের কথা ভেবে সকল সুখ দুশ্চিন্তায় পরিণত হলো। এমন সময় এক গায়েবী আওয়াজ আসলো !! তোমার পুত্রকে আল্লাহ নিজে রক্ষা করবেন। তোমরা শিশুটিকে সিন্দুকে ভরে নীল নদে ভাসিয়ে দাও। তারা বুঝতে পারলো এটা নিশ্চয়ই সে মহান প্রভু আল্লাহপাকের নির্দেশ। এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা মজবুত একটি সিন্দুক তৈরী করে নবজাতক পুত্রকে সিন্দুকে ভরে নীলনদে ভাসিয়ে দিলো। সিন্দুক নীল নদে ভাসতে লাগলো। দারোয়ানের স্ত্রী তার কন্যা মারিয়ামকে বললো- তুমি নদীর কিনারা দিয়ে সিন্দুকটিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাও এবং সিন্দুকটি কি অবস্থায় কোথায় যায় তা লক্ষ্য করো। আল্লাহর মহিমা কেউ বুঝতে পারলো না। সিন্দুকটি পানিতে ভাসতে ভাসতে নীলনদের তীরস্থ ফেরাউনের বাগানের ঝোপের সাথে আটকে পড়লো। সে সময় ফেরাউন ও তার স্ত্রী আছিয়া প্রাতঃভ্রমনের জন্য বাগানে এসেছিলেন। সহসা আছিয়া ভাসমান সিন্দুকটিকে দেখতে পেলেন। ।অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে আছিয়া তার কর্মচারীদের ডেকে সিন্দুকটি পানি থেকে টেনে তুলে আনতে ও সিন্দুক খুলে ভেতরে কি আছে তা দেখার আদেশ দিলেন। কিন্তু কর্মচারীরা অনেক চেষ্টা করেও সিন্দুকটি খুলতে সক্ষম হলো না। এবারে আছিয়া সিন্দুকটি ধরে একটু টান দিতেই সিন্দুকটির ডালা খুলে গেলো। আছিয়া সিন্দুকটির ভিতরে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেলেন, দেখলেন সিন্দুকটির ভিতরে চাঁদের মতো দেখতে একটি ছোট্র শিশু শুয়ে আছে এবং তারই দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আছিয়া তারাতারি শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে তার স্বামী ফেরাউনকে বলেন- দেখুন ! সিন্দুকটির ভিতরে এই শিশুটি ভেসে এসেছে। জানিনা কোন দুঃখে এর হতভাগা পিতামাতা ওকে এ অবস্থায় সিন্দুকে ভরে নীলনদে ভাসিয়ে দিয়েছে!! আহা ! কেমন সুন্দর চাঁদের মতো ! অনুমতি দিন আমি এ শিশুটিকে লালন-পালন করবো। পাপাত্মা ফেরাউন শিশুটির দিকে চেয়ে শিউরে উঠলো। তার বুকটা যেন দুরুদুরু করে উঠলো। সে ভাবতে লাগলো, এ শিশুটিই হয়তো বা জ্যোতিষীর বর্ণিত সে শিশু। সে আছিয়াকে বললো- তা হয় না! আমি এক্ষুনি এই শিশুটিকে হত্যা করবো। নিশ্চয়ই এই শিশুটি বড় হয়ে আমার মহা শত্রুতে পরিনত হবে! আছিয়া তখন তাকে বললেন- আপনি একজন মহাজ্ঞানী হয়েও একথা বলতে পারলেন? আপনার রাজত্বকালে বনি ইসরাইলদের প্রায় লক্ষাধিক শিশুকে হত্যা করেছেন। এখনও কি আপনার শত্রু শিশুটি জীবিত আছে? তাছারা যদিও ধরা যায়, এ শিশু আপনার শত্রু হবে, তাহলেও তো আপনার আশংকা সত্যিই অমূলক । কারন আপনি সুবিশাল মিসর সাম্রাজ্যের মহাপ্রতাপশালী বাদশাহ। আপনার মূখের আদেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষের শির নত করতে পারে। সেখানে একটি ক্ষুদ্র শিশু আপনার কি এমন অনিষ্ট করতে পারে? আর এ শিশুটিতো আর এখনই আপনাকে আক্রমন করবে না। যদি কোনদিন বুঝতে পারা যায় যে, সে আপনার সাথে শত্রুতা করছে তখন না হয় একটা বন্দোবস্ত হয়ত করা যাবে। আছিয়ার কথা শুনে পাপিষ্ট ফেরাউন একটু আনমনা হয়ে একান্ত অনিচ্ছা সত্বেও সম্মতি দিলো। এরপর আছিয়া শিশুটিকে নিয়ে শাহী প্রাসাদে চলে এলেন। পানিতে ভেসেছিলো বলে আছিয়া শিশুটির নাম রাখলেন, "মুসা" অর্থাৎ পানিতে ভাসমান। এরপর শিশু মুসাকে লালন-পালন করার জন্য একজন ভালো ধাত্রীর অনুসন্ধান করতে লাগলেন।

চলবেঃ--

বিষয়: বিবিধ

২১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File