মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)।পর্ব-৫
লিখেছেন লিখেছেন জারা ২০ জুন, ২০১৩, ০৪:১৬:১৯ বিকাল
# দেশবাসীর কাছে ফেরাউন স্রষ্টা বলে স্বীকৃত হলোঃ----
আইন জারী করে দেশের সর্বত্র ঘোষনা করা হলো--মিসর বাসীগন! মহামান্য বাদশাহ ফেরাউন এখন থেকে তোমাদের সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ও বিধাতা। তোমরা তাকেই স্বীকার করে পুজা করতে হবে এবং তার কাছেই নিজেদের মনোষ্কামনা ব্যক্ত করবে। তোমরা যেসব দেবদেবীর পুজা করছো তারা সবাই মহামান্য ফেরাউনের একান্ত বাধ্য এবং তার অধীনস্ত। তোমাদের সর্বপ্রধান খোদা ফেরাউন , তাদের প্রত্যেকের হাতে এক একটি বিষয়ের ক্ষমতা প্রদান করেছেন। তারা ফেরাউনের ইচ্ছেমতই তাদের কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খোদা মনে করে পুজা করবে। কিন্তু মহামান্য ফেরাউনকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা বলে স্বীকার করতে হবে এবং তার মূর্তি তৈরী করে তাকেই পুজা করতে হবে। এ কাজে যারা অগ্রসর, তারা মহামান্য ফেরাউনের আনুকল্য লাভ করবে ও মর্যাদার অধিকারী হবে। আর সর্বশক্তিমান মহামান্য ফেরাউন তাদের যাবতীয় দুঃখ - দৈন্য অভাব-অনটন ঘুচিয়ে রোগ শোক থেকে সুরক্ষা করবেন। আর যারা এ আদেশ অমান্য করবে, তাকে স্রষ্টা বলে অস্বীকার করবে তারা ফেরাউনের কাছ থেকে কোন অনুকম্পা
তো লাভ করবেই না; বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। প্রয়োজনবোধে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। এ আদেশ প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই দেশে-সর্বত্র অজ্ঞান বর্বর প্রজারা সানন্দে ফেরাউনকে স্রষ্টা বলে মেনে নিলো এবং ফেরাউনের মূর্তি তৈরী করে প্রতি ঘরে ঘরে পূজা করতে লাগলো। এভাবেই দেশের সর্বত্র ফেরাউনের খোদায়িত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। পাপাত্মা ফেরাউন এত আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার অনুগত প্রজাদেরকে যথাযথ সুবিধা প্রদান করে আরও বশীভুত করে নিলো। কিন্তু একদিকে তার মুশকিল হলো সে নিজে স্রষ্টা হয়েছে , সুতরাং তার অসাধ্য কিছুই নেই, এ বিশ্বাস তার ভক্তবৃন্দকে অর্জন করাতে হবে। তাছারা বহু কাজে সে নানাভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হতে লাগলো। নিজে স্রষ্টা হয়ে যদি কোন কাজ করতে অক্ষম হয় তাহলে বড়ই লজ্জার কথা। তাই একদিন গোপনে প্রধানমন্ত্রী হামানের সাথে এসব বিষয়ে পরামর্শ করলো ফেরাউন। হামান তাকে যুক্তি দিলো নিজে স্রষ্টা হয়ে সব শক্তির অধিকারী বলে প্রমান করতে হবে। যেমন ঝড়-বৃষ্টি আনয়ন, রোগ-শোক নিবারন ইত্যাদি কাজ গুলো তার মাধ্যেমেই সুসম্পন্ন করতে হবে। এতে ফেরাউন খুবই চিন্তিত হয়ে বললো- কিন্তু আমি এসব করার ক্ষমতা কি রাখি? কিরূপে তার সমাধান করা যায় , তার একটা বিহীত করো। হামান বললো- বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহ ব্যতীত এসব ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নয়। তার কাছেই শক্তি প্রার্থনা করা ব্যতীত তোমার আর কোন উপায় নেই। হামানের পরামর্শ মোতাবেক পাপাত্মা ফেরাউন নিতান্তই বিনয়ের সাথে আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে মোনাজাত করতে লাগলো----হে বিশ্ব জগতের মালিক -দয়ালু ও দাতা এবং ত্রিভূবনের একমাত্র প্রতিপালক! আমি জানি তুমিই এই বিশ্ব জগতের একমাত্র পালনকর্তা! তোমার ইচ্ছেমতোই ত্রিভূবনের সব সাধিত হচ্ছে। তুমি আমাকে নিতান্ত হীন অবস্থা থেকে একটা রাজ্যের প্রতাপশালী সম্রাটরূপে অধিষ্ঠিত করেছ, কিন্তু আজ আমি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি প্রভু! আমি নিজেকে বিধাতা বলে ঘোষনা করেছি সত্য কিন্তু কোন কিছু অলৌকিক কাজ করার শক্তি আমার নেই। তাই ভক্তদের কাছে আমি বড়ই লজ্জিত হচ্ছি। হে মহান প্রভু! তুমি আমাকে সে সব বিষয়ে সর্ব প্রকার ক্ষমতা প্রদান করো।
আল্লাহ তায়ালার মহিমা বোঝার সাধ্য কারও নেই। জালিম ফেরাউনের প্রার্থনা আল্লাহতায়ালা শ্রবন করলেন এবং তাকে সমস্ত অতিমানবীয় গুনের অধিকারী করলেন। এরপর থেকে নিজের ইচ্ছেমত প্রায় সব কাজই করতে সক্ষম হতো ফেরাউন। তার আদেশে নীলনদের জোয়ার-ভাটা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হতো। তার আদেশে কঠিন দুরারোগ্য রোগী মুহুর্তের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করতো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ফেরাউনকে চারশত বছরের পরমায়ু প্রদান করেছিলেন। এ সুদীর্ঘ জীবনের মধ্যে কোন রোগ-শোক তাকে আক্রমন করতে পারেনি। তার শরীর স্বাস্থ্য মজবুত চির অটুট ছিলো। গায়ের শক্তিও প্রচুর ছিলো। সর্বশরীর ছিলো লোহার মতো শক্ত। এসব ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পাপাত্মা ফেরাউন আরও দুরাচারী হয়ে উঠলো। সে দেশময় ঘোষনা করলো, আমার আদেশেই নীলনদ প্রবাহিত এবং অনুগত হয়। আমার আদেশেই জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমার দয়াতেই নীল নদের পানি প্রবাহিত হয়ে তোমাদের জন্য প্রচুর ফসলাদি উৎপন্ন হয়, কৃষিকাজ চলে। আমিই দয়া করে তোমাদের জন্য যাবতীয় সুখ-সুবিধাদি দিয়ে থাকি। আমি ইচ্ছে করলে একটি লোককে এক মুহুর্তে হত্যা করতে পারি। এতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। পক্ষান্তরে আমার ইচ্ছেতেই তোমাদের জন্য সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং আমার পুজা করা তোমাদের একান্ত প্রয়োজনীয় কর্তব্য। আমার আদেশ অমান্য করে যে ব্যক্তি আমাকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা বলে অস্বীকার করবে তার কিছুতেই নিস্তার নেই। ফেরাউনের কথা এবং কেরামতিতে মিসরের মূর্খ কিবতী সম্প্রদায় বিনাপ্রতিবাদে তাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করে তার পূজা করতে লাগলো। একমাত্র বনি ইসরাইলরা তাকে স্রষ্টা বলে মানতে পারলো না। কারন তারা এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই স্রষ্টা বলে মানেও না বা স্বীকারও করতে পারে না। বনি ইসরাইলরা তখনও অতি গোপনে তাদের পরবর্তী বংশধরদেরও বিদ্যা শিক্ষা এবং ধর্মীয় কার্যাদি শিক্ষা দিতে লাগলো । যার কারনে বনি ইসরাইল সম্প্রদায় পাপিষ্ঠ ফেরাউনের আয়ত্বের বাইরে
থাকলো। তখন তারা কিবতীদের থেকে সর্ব বিষয়েই উন্নত এবং ধর্মপরায়ন ছিলো। এবং ফেরাউনের অত্যাচার নির্যাতনে বহু সংখ্যক বনি ইসরাইল মৃত্যুমূখে পতিত হলো। দিনকে দিন ফেরাউনের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে কেউ কেউ বা দেশ ত্যাগ করে অন্য কোথাও চলে গেলো। আর বহুলোককে ফেরাউনের পাপিষ্ঠ প্রহরীরা গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে অসীম যন্ত্রনা দিতে লাগলো।
# ফেরাউন ও আছিয়ার পুনরায় মিলনঃ--------
কাবুস মিসরের ফাঁরাও পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্ত্রী আছিয়ার খোঁজ খবর নেয়ার প্রতি আগ্রহী ছিলো না। সিংহাসনে আসন গ্রহন করার পরে সে স্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো। রাজকীয় মর্যাদায় আছিয়াকে রাজপ্রাসাদে তুলে নিলো। আছিয়া যেহেতু পূন্যবতী ছিলেন তাই সে স্বামীর সেবায় আত্মনিয়োগ করলেন। স্বামীর পাপাচারে ও নিষ্ঠুর আচরনে মাঝে মাঝে তাকে ব্যথিত করলেও মনে প্রানে তিনি চেষ্টা করতেন স্বামীকে বশে এনে সুপথে যাতে আনা যায়। কিন্তু তাঁর সকল প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। কোনমতেই ফেরাউন তার কুস্বভাব পরিত্যাগ করতে সম্মত ছিলো না। সে মনে করতো যে, স্ত্রী হচ্ছে ভোগের সামগ্রী এবং অবলা তার কথায় কর্নপাত করা বোকামী ব্যতীত আর কিছুই নয়। মানবজীবনে স্ত্রী যে অর্ধাঙ্গিনীর ভূমিকা পালন করে এ সত্যটুকু উপলব্ধি করা জালিম ফেরাউনের পক্ষে মোটেই সম্ভব হয়নি। আছিয়া কখনও ফেরাউনের অবিচার দেখে জোর প্রতিবাদ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতেন, কিন্তু পাপিষ্ট ফেরাউন স্ত্রীর কথায় মোটেই কর্ণপাত করতো না; বরং রক্তলোলুপ দৃষ্টিতে এমন ভাব করতো, যার দরুন আছিয়ার পক্ষে স্বীয় সংকল্প পরিত্যাগ করা ছাড়া গত্যান্তর থাকতো না। তাদের জীবনে এমন এক পর্যায়ের সূচনা হলো যে, কেউই একে অন্যকে মনে প্রানে গ্রহন ও বরন করে নিতে পারলো না। তাদের জীবন পথ পরষ্পর ভিন্নমূখী দু,টি স্রোতধারার মতো বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে লাগলো। ফেরাউনের পূন্যবতী স্ত্রী আছিয়া ছিলেন বনি ইসরাইল বংশের মহিলা। তিনি যেমন ছিলেন সুশিক্ষিতা তেমনি ধার্মিক মহিলা। তিনি সবসময় এক আল্লাহর ইবাদত করতেন এবং তারঁ প্রতি সবিশেষ অনুগত ছিলেন। তাই নিজের স্বামী ফেরাউনকে আছিয়া খোদা বলে স্বীকার করে নিলেন না। পরষ্পর বিপরীতধর্মী দু,টি মানুষের প্রনয় সুত্রে বন্ধন হলেও মনের বাঁধন হলো না। কারন ফেরাউন ছিলো মহাপাপী, অহংকারী ও মানুষরূপী শয়তান। অন্যদিকে আছিয়া ছিলেন পূন্যবতী। জালিম ফেরাউনের কু-মতি আর অহংকার দেখে পুন্যবতী আছিয়া দুঃখিত ও আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি বুঝতে পারলেন -----তার স্বামীর উপর অচিরেই আল্লাহর গজব নেমে আসবে। তাই তিনি ভাবতে লাগলেন, যেমন করেই হোক , স্বামীকে এই পাপের পথ থেকে ফেরাতেই হবে। তিনি দিন-রাত চিন্তাভাবনা করতে লাগলেন কি করে তাকে এ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তাই তিনি একদিন ফেরাউনকে নম্রকন্ঠে বললেন--আপনি আমার পরম হিতাকাঙ্খী । আপনার চরন তলেই আমার স্হান। অন্যদিকে আপনি মহাজ্ঞানী , ভাগ্যবান ও বুদ্ধিমান। সুতরাং আপনাকে উপদেশ দেয়ার মতো চেষ্টা করা নিশ্চয়ই আমার ধৃষ্টতা। তবু আপনাকে আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই। যদি আপনি অভয় দেন....। ফেরাউন বললো--সেকি! তুমি আমার মহিয়সী ,তুমি কেন আমার সাথে কথা বলতে সঙ্কুচিত হচ্ছো? বল যা বলার তুমি র্নিভয়ে বলো।
তখন আছিয়া বললেন--আপনি নিজের অসাধারন বুদ্ধি এবং ভাগ্যের বলে আজ মিসর সাম্রাজ্যের মহাপ্রতাপাম্বিত ফেরাউন পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অগনিত মনিমানিক্য, হীরা-জহরত আর অপরিসীম ধন-সম্পদের মালিক আপনি । লক্ষ লক্ষ সৈন্য সামন্ত, শত শত দাস-দাসী আপনার আদেশের অপেক্ষায়
সর্বদা ব্যস্ত থাকে। দেশের প্রতিটি প্রজারা আপনাকে যেমন ভয় করে তেমনি শ্রদ্ধাও করে। আপনার স্ত্রী, আপনার সন্তান ও কর্মচারীরা সবাই আপনার অনুগত ও বাধ্য । সুতরাং আপনার মতো সুখী লোক আর কেউ নেই। শুনে ফেরাউন বললো--তুমি ঠিকই বলেছ! আমার মত সুখ আর কারো নেই। কিন্তু তবু আমি সন্তষ্ট নই। আমি চাই সমস্ত পৃথিবীর বাদশাহ হতে! আছিয়া খুশী হওয়ার ভান করে বলেন--চেষ্টা করলে অবশ্যই আপনি তা হতে পারেন। সে বুদ্ধি ও ভাগ্য আপনার আছে। সারা পৃথিবী জয় করে দ্বিগ্বিজয়ী নামে পরিচিত হওয়া অবশ্যই কোন অন্যায় কথা নয়। আমি মনে করি আপনি তাতে সক্ষম। কিন্তু আপনি যে একটি ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছেন তা একবার ভেবে দেখার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। ফেরাউন এক মুহুর্ত চিন্তা করে বললো-- তোমার কথা আমি বুঝতে পারিনি। তুমি কি বলতে চাও সুষ্পষ্ট করে বলো।
আছিয়া একমুহুর্ত চিন্তা করে বললো--আপনি মহাজ্ঞানী। তাই নিশ্চয়ই জানেন, এ আসমান যমীন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত,বন-জঙ্গল,মানব-দানব, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ প্রতিটি বস্তুই যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই সর্বশক্তিমান আল্লাহ। ফেরাউন বললো আমি জানি আছিয়া! আল্লাহ তায়ালাই এ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা । আছিয়া তখন বললেন--তাহলে আমরা আল্লাহর সৃষ্ট বান্দা হয়ে কেন তাঁর অবাধ্যতা করবো? মানুষকে আল্লাহ সব কিছুর হেকমত দিয়েছেন, ইচ্ছা করলে তিনি তা কেড়েও নিতে পারেন। সুতরাং মানুষ যত বড় শক্তিশালী আর ক্ষমতাশালীই হোক না কেনো আল্লাহর কাছে তার শক্তি আর ক্ষমতা অতি নগন্য। আল্লাহ মানুষকে যতটুকু শক্তি দিয়েছেন, ঠিক ততটুকু শক্তিই সে খাটাতে সক্ষম হয়। সুতরাং মানুষের উচিত , সে স্রষ্টা হওয়ার দাবি না করা। তাছাড়া মানুষ মাত্রই মরনশীল। যত সুদীর্ঘ পরমায়ুই সে লাভ করুক না কেন, একদিন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেই। আর সে মৃত্যুর সাথে সাথে তার শক্তি ,ক্ষমতা, শান-শওকত সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ চিরকাল আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তিনি সর্বশক্তিমান। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আল্লাহর সমকক্ষ হওয়ার দাবী মানুষের পক্ষে শোভা পায় না। আপনি আপনার পক্ষে অসম্ভব ও ভূল আশাটি পরিত্যাগ করুন এবং মহাপ্রতাপাম্বিত আল্লাহ তায়ালাকে মেনে চলুন। তাঁর উপর ইমান আনয়ন করুন।
ফেরাউন পূন্যবতী আছিয়ার কথা শুনে যেমন বিস্মিত হলো তেমনি রাগাম্বিতও হলো। সে ভাবতে লাগলো---রাজ্যের প্রতিটি প্রজা তাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করে নিয়েছে, অথচ তার স্ত্রী তাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করছে না। তাই সে অত্যন্ত রাগাম্বিত হয়ে বললো--শুন আছিয়া! তুমি আমার জীবন সঙ্গীনি, তোমার মুখ থেকে এমন অবাধ্যতামূলক কথা আমি আশা করি না। কোথায় তুমি আমার হয়ে আর দশজনকে আমার বাধ্য করাবে, তা না করে তুমি নিজেই আমার অবাধ্যতা প্রকাশ করছো। যা হোক, তুমি ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যাও। আর কখনও এমন অন্যায় অনুরোধ আমাকে করবে না! রাজ্যের প্রতিটি প্রজা আমাকে নির্বিবাদে স্রষ্টা বলে মেনে নিয়েছে। আমি আশা করবো, তুমিও আমাকে তেমনি স্রষ্টা বলে মেনে নিবে এবং আমার আনুগত্য করবে। আছিয়া বুঝতে পারলেন, ফেরাউনকে সহজে সৎপথে আনা যাবে না। হিতে বিপরীত হবে। তাই তিনি গোপনে গোপনে আল্লাহর ইবাদত করতে লাগলেন এবং সময় ও সুবিধামত জালিম স্বামীকে নানাভাবে সৎপরামর্শ দিতে লাগলেন।
# অদ্ভুত এক ভবিষ্যদ্বানী
একদিন ফেরাউন তার রাজসভায় পাত্র-মিত্র সহ সিংহাসনে আসীন। এমন সময় রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ট জ্যোতিষী এসে উপস্থিত হয়ে ফেরাউনকে বললো--মহামান্য বাদশাহ ! আমি রাজ্যের ভবিষ্যত গণনা করে আপনাকে জানাতে এসেছি কিন্তু তা বলতে সাহস হচ্ছে না। ফেরাউন অভয় দিয়ে বললো--তুমি নির্ভেয়ে বর্ণনা করো। জ্যোতিষী বললো--বাদশাহ! আকাশে একটি নতুন নক্ষত্র উদিত হয়েছে। আমি গননা করে জানতে পারলাম---আগামী এক বছরের ভেতর আপনার রাজ্যে বনি ইসরাইল বংশে এক শিশু জন্মগ্রহন করবে। উত্তরকালে সে শিশুই হবে সাম্রাজ্যের ধ্বংসের কারণ এবং আপনার জীবনের মহাশত্রু।
চলবেঃ---
বিষয়: বিবিধ
৪৮০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন