মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) ( নেফারতিতি)-৩য় পর্ব।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ১৫ জুন, ২০১৩, ০৯:২৮:৫৬ রাত



কাবুসের ভাগ্যের পরিবর্তনঃ-

মিসরে ক্রমান্বয়ে নেমে এলো দুর্যোগের ছায়া। অবিশ্বাসী মিসরীয়দের সীমাহীন অপকর্মের সাগরে প্রবল তুফানের সুত্রপাত হলো। এ সময় মিসর রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হলে মিসর দেশে ভীষন গোলযোগ শুরু হলো। তখন মিসরের বাদশাহ কাবুসকে ডেকে এ দুর্যোগ মুহুর্তে মিসরের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করলেন। কাবুসের তো তখন এমন প্রস্তাব পেয়ে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতন অবস্থা হলো।

তার মনের এতোদিনকার লালিত বাসনা এখন সফল হতে চলেছে। তাই সে মনের নিদারুন আনন্দে এ সুযোগ গ্রহন করে নিতে বিলম্ব করলো না। কাবুস এবার নিজের হাতকে সুদৃঢ় করার জন্য বন্ধু হামানকে প্রধান নগর রক্ষকের পদে নিযুক্ত করলো। প্রধানমন্ত্রীর পদে আসিন হবার পরে সুচতুর কাবুস দেশের প্রজা সাধারনকে তার বাধ্য ও একান্ত অনুগত করে ফেললো। এমনি করে অতি অল্পদিনের মধ্যেই সারাদেশে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে গেলো এবং সে মানুষের মুখে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ালো। আর তাই প্রজাসাধারন সবাই প্রধানমন্ত্রী কাবুসের একান্ত বাধ্য ও অনুগত হয়ে গেলো। রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে কাবুসই সর্বেসর্বা হয়ে দাড়ালো। দেশের বাদশাহ পুতুলের মতো শুধু সিংহাসনে নামে মাত্র বসে থাকেন ।

কাবুস তার নিজের ইচ্ছা মতো দেশ পরিচালনা করে । কোন বিষয়ে পরামর্শের জন্যও সে তখন বাদশাহের প্রয়োজনীয়তাবোধ করে না। হামানের ভাগ্যটাও নিতান্ত খারাপ ছিলো না । সেও প্রতিটি কাজে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে সমর্থ হলো । কাবুস এজন্য তাকে খুব ভালোবাসতো । এক সময়ে মিসরের বাদশাহর মৃত্যৃ হলে কাবুস সাথে সাথেই এ সুযোগ গ্রহন করলো । বন্ধু হামানের সহযোগিতায় কাবুস দ্বিতীয় রামোসিস নাম ধারন করে মিসরের সিংহাসন অধিকার করে নিলো ।

দেশের প্রজাবৃন্দকে পূর্বেই তারঁ একান্ত অনুগত ও বাধ্য করে ফেলেছিলো বলেই কাবুসকে সিংহাসনে আসীন হতে খুব একটা বেগ হলো না। উপরন্তু কাবুসের চেয়ে সুযোগ্য লোক তৎকালীন মিসরে উল্লেখ করার মতো কেউ ছিলো না। কাবুস সিংহাসনে আরোহন করেই তার বন্ধু হামানকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করে নিলো। এরপরে দুই বন্ধু মিলে গভীরভাবে দেশের শাসনে মনোনিবেশ করলো। যে কাবুস একদিন একমুঠো খাবারের জন্য রাস্তায় উম্মাদের মতো ছুটোছুটি করতো সামান্য রোজগারের জন্য কৃষকের ক্ষেত থেকে খরমুজার ঝাঁকা মাথায় নিয়ে বাজারে যেতো, সে কাবুসই ভাগ্যবলে মিসরের ফেরাউন পদে আসীন হলো। একি কম কথা!!!!! যে হামান ছিলো একদিন চোর ডাকাতের সর্দার ,খুন রাহাজানি ছিলো যার নিত্য নৈমিত্তিক পেশা, সে পাপমতি হামান হলো আজ মিসর সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। এবারে কাবুসের অহংকার দেখে কে? সামান্য কৃষকের পুত্র আজ বিশাল এক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি।

পাপাত্বা ফেরাউনের খোদায়ী দাবিঃ-

একদিন ফেরাউন তার প্রধানমন্ত্রী হামানকে তলব করে বললো, দেখ আমাদের জীবনে কত উথ্থান পতনই না ঘটলো। শুধু মাত্র নিজের বুদ্ধিবলে আমি আজ মিসরের বাদশাহ হতে পেরেছি। জীবনে কোনদিন যা কল্পনাও করতে পারিনি তা আজ বাস্তবে পরিনত হয়েছে। বন্ধু হামান সবশুনে বললো, তুমি ঠিকই বলেছো। ছিলে কৃষকের পুত্র, দুবেলা দু,মুঠো খাবার পেট পুরে খেতে পারতে না। তোমার ভাগ্যবলে তুমি হয়েছ দেশের বাদশাহ ।আজ তোমার ইচ্ছের উপরেই নির্ভর করে সারা দেশের মানুষের ভাগ্য। সত্যিই তুমি বড়ো সৌভাগ্যবান মানুষ। ফেরাউন সব শুনে বললো, তোমার ভাগ্যটাও বা কম কিসে! ছিলে চোর, পাক্কা জুয়ারী,ভাগ্যগুনেই আজ মিশর দেশের মহামান্য ফেরাউনের প্রধানমন্ত্রী। - তখন হামান নিজ মাথা দুলিয়ে বললো,আমরা দু,জনই বড় ভাগ্যবান। তাইতো সেদিন নিজের দেশ ছেড়ে তুমি আমার কাছে এসেছিলে। আমরা দু,জনে মিলে কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আজ সে শ্রমের মর্যাদাও পেয়ে উন্নতির চরম শিখরে উঠে গেছি। ফেরাউন তখন হামানের কথা শুনে বললো। আমি আরও বড় হতে চাই,শুধু এ পর্যন্তই আমার শেষ নয়। শুনে হামান বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো আর কি থাকতে পারে চাইবার মতো!! দেশের বাদশাহ হওয়ার পর উচ্চপদ আর কি থাকতে পারে!! -এরপরে আর কি হতে চাও??

কি চাই তোমার??

পাপিষ্ট ফেরাউন তখন সগর্বে উত্তর দিলো, আমি এখন নিজেকে স্রষ্টা বলে ঘোষনা করতে চাই ----------

চলবেঃ-

বিষয়: বিবিধ

২৮২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File