মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)। পর্ব-২

লিখেছেন লিখেছেন জারা ১২ জুন, ২০১৩, ০৮:০০:৩৬ সকাল



নেফারতিতির কাহিনী লিখতে গেলে তার পাপাত্মা স্বামী ফিরাউনের সম্পর্কে কিছু আলোচনা এসে যায়।

ফিরাউনের বাল্যকালের নাম ছিলো কাবুস। কিবতী ভাষায় কাবুস শব্দের অর্থ নির্ভীক। পিতামাতার মাত্রাতিরিক্ত আদর- যত্নে লালিত পালিত হয়ে কাবুস একান্ত বাল্যকাল থেকেই নিতান্ত দুর্বৃত্ত ও পাষন্ড হয়ে উঠেছিলো। এবং শিশুকাল থেকেই তার নৈতিক অধঃপতনে এবং সীমাহীন অত্যাচারে নিরীহ গ্রামবাসীগন পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। মাতাপিতা কাবুসকে সংশোধন করার জন্য অনেক চেষ্টা চরিত্র করেছিলো, কিন্তু সবই বিফল হয়েছিলো। অবাধ্য কাবুসকে তারা কিছুতেই নিজেদের আয়ত্বাধীন করতে পারলো না। যৌবনের প্রারম্ভে কাবুস যে কত কুকাজ করেছে, কত নারীর সতীত্ব হরন করেছে এর কোন হিসেব নিকেশ নেই। মোটকথা

এমন কোন খারাপ কাজ ছিলো না যা কাবুস করতে পারতো না। আর তাই কাবুসের পিতা মাতা তার চরিত্র সংশোধনের জন্য দেশের সেরা সুন্দরী ও গুনবতী কন্যার অনুসন্ধান করছিলো । অবশেষে বনি ইসরাইল বংশের মোজাহামের কন্যা নেফারতিতির সাথে কাবুসের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিলো। কিন্তু পূন্যবতী সুন্দরী পত্নী নেফারতিতির রূপ-যৌবন , গুন গরিমা সে কলুষিত পাপাত্মাকে সংশোধন করতে পারলো না। নেফারতিতি প্রানপনে পাপাত্মা স্বামীকে সঠিক পথে আনবার অনেক চেষ্টা করেও পারলেন না । অবশেষে কাবুস পিতামাতার কঠোর শাসনে অতিষ্ট হয়ে একদিন ঘর ছেড়ে বিউশহম নগরে তার এক বন্ধুর কাছে উপস্থিত হল। সে বন্ধুটির নাম ছিলো হামান। হামানও ঠিক কাবুসের মতোই চরিত্রহীন এবং পাষন্ড ছিলো। অবশেষে একদিন দুই বন্ধু পরামর্শ করলো তারা মিশরে চলে যাবে এবং সেখান থেকে জীবন পথের অনুসন্ধান করবে। কিন্তু মিশরে এসে তাদের অবস্থা নিতান্তভাবে শোচনীয় হয়ে পড়লো। সাথে যে সামান্য অর্থ ছিলো তা অল্পদিনেই নিঃশেষ হয়ে গেল। অথচ নতুন করে রোজগারের কোন পথই খুঁজে পেল না। এমনি দুর্দশার মধ্যে দিয়ে একদিন দুই বন্ধু অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় বহু জায়গায় খোঁজ নিয়ে অবশেষে এক কৃষকের খরমুজার বাগানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে কৃষকের কাছে খাদ্য প্রার্থনা করলো। কৃষক ব্যক্তিটি ছিলো খুবই দয়ালু। আর তাই সে দয়াপরবশতঃ তাদেরকে কয়েকটি খরমুজা খেতে দিলো। ভীষন ক্ষুধায় কয়েকটি খরমুজা খেতে পেয়ে তাদের প্রান বাচঁলো। এরপরে কিছুটা শান্ত হয়ে দুইবন্ধু কৃষকের কাছে নিজেদের দূরাবস্থার কথা বর্ণনা করে তাদেরকে কোন একটা কাজ দেবার অনুরোধ

করলো। কৃষক সবশুনে তাদেরকে প্রতিদিন বাগানের খরমুজা বাজারে নিয়ে বিক্রি করার বিনিময়ে পারিশ্রমিকের প্রতিশ্রুতি দিলো। এপ্রস্তাবে তারা দুই বন্ধুই রাজি হলো। এবং খরমুজা বিক্রির বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক পেতো তাতে তাদের উভয়ের চলার মতো সংস্থান হলো।

দুই বন্ধুর মধ্যে কাবুস ছিলো যেমন তীক্ষ বুদ্ধিসম্পন্ন,তেমনি ভাগ্যটাও ছিলো সুপ্রসন্ন। একদিন কাবুস মিসরের বাদশাহর কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের দূরাবস্থার বর্ণনা করে একটি চাকুরীর আবেদন করলো। বাদশাহ তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মিসরের প্রধান গোরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক পদে নিযুক্ত করলেন। গোরস্থানের চাকুরি পেয়ে কাবুসের দিনগুলো মোটামুটি ভালোই চলতে লাগলো। কিন্তু কাবুসের বন্ধু হামান পড়লো বিপদে। বেকার হয়ে হামান দু,চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলো। তখন সে বাধ্য হয়ে রোজগারের জন্য অসৎ উপায় খুঁজে বের করলো। সে পূনরায় পূর্বের পেশা চুরি ,ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত হলো। দুই বন্ধু ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও তারা কিন্তু একই সাথে একই স্থানে বসবাস এবং আহারাদি করতো। এবং নিজেদের সুখ সুবিধার কথা ভাগাভাগি করতো। এমনি করেই তাদের দিনগুলো অতিবাহিত

হচ্ছিলো। এক সময়ে মিসরে ভীষন মহামারী দেখা দিলো। প্রত্যহ শত শত লাশ গোরস্থানে আসতে লাগলো। পাপাত্মা কাবুস অধিক আয়ের জন্য এক সুযোগ গ্রহন করলো। চালাকী করে নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি শবদেহ সমাহিত করার জন্য প্রচুর অর্থ গ্রহন করতে লাগলো। ধূর্ত কাবুস একদিন অনেক উপঢৌকন নিয়ে মিসরের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের জন্য একটি ভালো চাকুরীর নিবেদন করলো। মিসরের প্রধানমন্ত্রী তার উপঢৌকন পেয়ে তাকে প্রধান নগর রক্ষকের পদে নিযুক্ত করলো। আর তার পূর্বের চাকুরীর পদে যোগ দিলো বন্ধু হামান। হামান তখন চুরি ডাকাতি বাদ দিয়ে গোরস্থানের তত্ত্বাবধায়কের কাজ করতে লাগলো। এবং তখন থেকে দুই বন্ধুর অবস্থাই স্বচ্ছল হয়ে উঠলো। সুচতুর ও বুদ্ধিমান কাবুস নগর রক্ষকের পদে এমন কর্তব্যপরায়নতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করলো যে , তাতে সে অতি শীঘ্রই বাদশাহর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলো। তাছারা কাবুসের ভাগ্যটা ছিলো সুপ্রসন্ন। তার অসাধারন বুদ্ধিমত্তা আর কর্মকুশলতার পরিচয় পেয়ে বাদশাহ তার প্রতি অধিক আনন্দিত হয়েছিলেন।

চলবেঃ

বিষয়: বিবিধ

২৭০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File