মহিয়সী নারী হযরত আছিয়া (আঃ) (নেফারতিতি)।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ১১ জুন, ২০১৩, ১১:১৬:৫৩ সকাল



পৃথিবীর নারীকূলের মধ্যে স্বামীভক্তির জন্য মুসলিম ইতিহাসের পাতায় হযরত আছিয়া (আঃ)এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছেন । তাঁর কীর্তি, সুমহান ত্যাগ ও আদর্শ,এবং তার ইমানী দৃঢ়তা প্রকৃতপক্ষেই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সমস্ত বিশ্বের রমনীকুলের মধ্যে হযরত আছিয়ার স্হান ও মর্যাদা এক জ্যোতির্ময় নক্ষত্র স্বরূপ। লা- শরীক আল্লাহর তাওহীদ রক্ষার্থে তিনি অপরিসীম দুঃখ জ্বালা ,যন্ত্রনা ,অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে নিজের বিশ্বাসকে মিথ্যার সংস্পর্শ থেকে সযত্নে রক্ষা করে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ বিশ্বাসী হিসেবে অমর নিদর্শন স্থাপন করেছেন।

এ মহীয়সী নারী শত অত্যাচার ও নির্যাতন, লাঞ্চনা সহ্য করে নিজের সত্বাকে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে তিলে তিলে বিলীন করে দিয়েছিলেন। তাঁর পূন্যময় জীবন কাহিনী যেমন ছিলো অলোকিক, তেমনি ছিলো হৃদয়বিদারক ।

হযরত আছিয়ার জন্মকথা ও পিতৃপরিচয়ঃ-

হযরত ইসা (আঃ) এর জন্মের ১৩৬৩ বছর পূর্বে আব্বাস শহরে বনি ইসরাইল বংশে হযরত আছিয়া( আঃ)এর জন্ম হয়েছিলো। তাঁর পিতার নাম মোজাহাম। তিনি ছিলেন বনি ইসরাইল বংশের একজন সম্ভ্রান্ত ও ধনী , বিদ্বান এবং সর্বোপরি অতিশয় ধর্মপরায়ন পূন্যবান ব্যক্তি। পূন্যবতী আছিয়া(আঃ) এর পিতা মোজাহামকে সবাই অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা করতো। কারন তিনি ছিলেন নবী হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর পুত্র লেবীয়ার বংশধর । শিশুকাল থেকেই পিতা কন্যার ধর্মপরায়নতার পরিচয় পেয়ে সযত্নে বিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলেন। সুদক্ষ ও জ্ঞানী ওস্তাদ রেখে তিনি কন্যাকে ধর্মগ্রন্থ অধ্যায়ন করালেন। এবং অতি অল্প বয়সেই হযরত আছিয়া(আঃ) সর্বপ্রকার দ্বীনি কাজে পারদর্শিণী হয়ে উঠলেন এবং সে আদর্শেই নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে লাগলেন।

*এখানে আর একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় হযরত আছিয়া(আঃ) কে মিশরীয়রা তাকে নেফারতিতি নামেই চিনে। এবং এই নামেই তার সমাধিতে ফলক লাগানো রয়েছে( সমাধি বলতে সেই যুগের মিশরীয় পিরামিডের কথা নিশ্চয়ই পাঠকরা ভুলে যাননি) ।

আমরা এখানে হযরত আছিয়া (আঃ) কে একটু নেফারতিতি নামেই সম্ভোধন করছি। নির্দিষ্ট একটা বয়সে এসে নেফারতিতির ধর্মপরায়নতা, রূপ ও গুনের সংবাদ দেশের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। তখনকার দিনে মিসরের আদি অধিবাসী কিবতীগন যেমন ছিলো অজ্ঞ ও অসভ্য, তেমনি ছিলো হিংসুটে এবং অত্যাচারী। সংখ্যাগরিষ্ট ছিলো বলে তারা বনি ইসরাইল জাতিকে কখনও ভালো চোখে দেখতো না। এবং বনি ইসরাইল জাতির উপরে অত্যাচার -অবিচার চালাতো।

তৎকালীন মিসরীয় বাদশাহদের উপাধি ছিলো ---ফারাঁও বা ফিরাউন। আদিবাসী বলে কিবতীগন এক্সট্রা সুবিধা পেতো। এবং ফিরাউনের দরবারের সবচেয়ে বড় বড় পদ গুলো পাবার সুবিধা লাভ করতো এবং এ অহংকারের বশবর্তী হয়েই বনি ইসরাইলদেরকে নিতান্ত হেয় এবং ঘৃন্য বলে ধারনা করতো। সামাজিক মান মর্যাদা বনি ইসরাইলদের কিবতীদের তুলনায় প্রায় কিছুই ছিলো না। আর সে কিবতী সম্প্রদায়ের জনৈক ধনী কৃষকের পুত্র ছিলো কাবুস ওরফে দ্বিতীয় রামোসিস। কাবুস নেফারতিতির রূপ- গুনের কথা শুনে তার পাণিপ্রার্থী হলো। মোজাহাম নিজে বনি ইসরাইল বংশের লোক ছিলেন। তা সত্বেও কিবতী বংশের যুবক কাবুসকে দেখে স্বীয় কন্যার উপযুক্ত সু-পাত্র বলেই ধারনা করলেন। কিবতী সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রীতি স্থাপন করার জন্যই নেফারতিতিকে কাবুসের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে উক্ত কাবুসই স্বীয় প্রখর বুদ্ধির কারনে মিসরের বাদশাহ ফিরাউনের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলো। সুতরাং পূন্যবতী নেফারতিতির জীবন কাহিনী বর্ননা করতে হলে পাপাত্মা ফিরাউনের সম্পূর্ন কাহিনী বর্ণনা করতে হয়। ফিরাউনের লোমহর্ষক জুলুম ও নিগ্রহই নেফারতিতির জীবনের মহিমা শতগুনে বিকশিত করার পথ সুগম করেছিলো।

চলবেঃ

বিষয়: বিবিধ

৬১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File