সুখাধ্যিয়া সোনার হরিনের খোঁজে (৩য় পর্ব)।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৪ জুন, ২০১৩, ০৩:৫৯:৫১ দুপুর



কোন এক অনাকাঙ্খিত কারন বশতঃ মিসেস মিনুর ছেলের উক্ত পাত্রীর সাথে বৈবাহিক আলোচনার ওখানেই সমাপ্তি ঘটলো। এর কিছুদিনের মধ্যেই মিসেস মিনুর বড় মেয়ে জামাইয়ের ময়মানসিংহ জেলা থেকে খোদ মন্ত্রনালয়ে পোষ্টিং এর সুবাদে বড় মেয়েটি তার স্বামী সন্তানসহ ঢাকায় চলে আসলো। যদ্দিন পিত্রালয়ের কাছাকাছি বাসা না পেলো ততদিন পর্যন্ত বাবার বাসাতেই অস্থায়ী ভাবে আস্থানা গাড়তে হলো ওদেরকে । এ সুযোগকে হাত ছাড়া হতে দিলেন না মিসেস মিনু । নিজের মেয়ে এবং মেয়ে জামাইকেই পূনরায় পাত্রী খোঁজার দায়িত্ব স্বপে দিলেন। এবং নিজে একটু নিশ্চিন্ত হলেন, ভাবলেন আর যাই হোক বড় মেয়ে ও জামাইটি দুজনের উপরেই মোটামুটি চোখ বুজে ভরসা করা যায়। এটা ভেবে একটু সান্তনা পেলেন নিজ মনে।

একদিন মিসেস মিনুর বড় মেয়েটি তার বান্ধবীর কাছ থেকে একটি উত্ত্বম পাত্রীর সন্ধান খুঁজে পেলো। সুত্রমাফিক পাত্রীর বায়োডাটা সংগ্রহ করা হলে, পাত্রীর সাথে সরাসরি দেখা করলো মিসেস মিনুর বড় মেয়েটি । তো এবারে মিসেস মিনুর ছেলের মনের মতোই ধর্মভীরু ও পর্দানশীল পাত্রী। ইসলামিক রীতি অনুসারেই বোরখা এবং হিজাব পরায় অভ্যস্থ। সর্বোপরি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত । পাত্রীর উচ্চতা এবং সৌন্দর্য্য সব মিলিয়ে মোটামুটি পছন্দও হলো মিসেস মিনুর বড় মেয়ের। এবং মেয়েটির সাথে আলাপচারিতা করে, সব বিষয়েই মেয়েটিকে বেশ চৌকষ মনে হলো । অতএব সম্পর্কটা নিয়ে আর না পেছানোর কোন যুক্তিসঙ্গত কারন খুঁজে পেলো না মিসেস মিনুর বড় মেয়ে । সে খুব আনন্দিত মনেই বাসায়

ফিরে পাত্রীর সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করতেই মিসেস মিনুর ছেলেটি এবারে তার আগ্রহ প্রকাশ করলো। এই পর্যায়ে পাত্রীর ফ্যামিলির সাথে আলোচনা শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ঘটলো আবার বিপত্ত্বি । এবারে আর পাত্রের তরফ থেকে নয়। খোদ পাত্রীর তরফ থেকেই আপত্ত্বিটা চলে আসলো।

মিসেস মিনুর পূনরায় মাথায় হাত একি শুরু হলো !!!

অনুসন্ধান করে জানা গেলোঃ পাত্রের সবই ঠিক আছে, তবে পাত্রের মুখের একগাল দাড়িটাই সমস্যার মূল কারন !!! পাত্রীর ভীষন অনিহা এই দাড়িতে। আর তাই পাত্রী অমন করে

বেঁকে বসেছে। কি আর করা।

সব দেখেশুনে মিসেস মিনুর স্বামী তাদের একমাত্র ছেলেটিকে দাড়ি কেটে ফেলার হুকুম দিলেন। ছেলেটি ও রেগে মেগে বলে দিলো , মুখের দাড়ি সে অন্তত জীবন থাকতে কাটবে না। প্রয়োজন হলে সে দাড়ির জন্য তার সারাটা জীবন চির কুমার হয়েই কাটাবে তবুও সে শরিয়তের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ করবে না। পিতার মুখের উপরে কথা , এতো বড় আস্পর্ধা দেখে মিসেস মিনুর স্বামীটি ও গেলেন প্রচন্ড ক্ষেপে।

আবার শুরু হলো পিতা পুত্রের মধ্যে বাকযুদ্ধ। এবারের তর্কটা একটু বুঝি বেশীই হলো। সব দেখে শুনে মিসেস মিনুর ব্লাডপ্রেশার বেড়ে গেলো, সংগে ডায়াবেটিকস এর সমস্যার জন্য সুগারের পরিমান আরও বাড়লো। মাঝরাতে প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়লো এবং ওই রাতেই তাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হলো। বাসার সবাই মিসেস মিনুকে নিয়ে অতি ব্যস্ত হয়ে পরাতে উক্ত সমাচার ওখানেই ধামাচাপা পরলো। দিন পাঁচেক পরে হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরলো মিসেস মিনু।

কিছুদিনের মধ্যে মিসেস মিনুর মেয়ে জামাই শ্বশুরালয়ের কাছাকাছি বাসা পাওয়াতে বড় মেয়েটি তার নতুন বাসাতে চলে গেলো।

এতদিন নাতনীদের কে কাছে পেয়ে মিসেস মিনু কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। নাতনীদের আবদার মোতাবেক এটা সেটা রান্না করে খাওয়াচ্ছিলেন। সকাল বিকেলের নিয়মমাফিক পায়ে হন্টন ব্যায়ামের সঙ্গীনি ও ছিলো দুই আদরের নাতনী। ওরা চলে যাওয়াতে মিসেস মিনুর সব উৎসাহে ভাটা পরলো।

চলবেঃ

বিষয়: বিবিধ

৩৩৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File