আমার দূরন্ত শৈশব ও কৈশোরের দিনকাল (৫ম ও শেষ পর্ব)।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ১০ মে, ২০১৩, ০৪:৫৩:৩৯ বিকাল

আমি এবং আমার বড় ভাইয়া দুজনেই তখন আমাদের মা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ওই স্কুলে একেবারে প্লে গ্রুপে পড়ছি। (আমার মা জীবিত থাকা অবস্হায়)। ভাইয়ার তখন সাড়ে ছ বছর বয়স আর আমি ভাইয়ার থেকে বছর দুয়েকের ছোট ছিলাম। স্কুলে আসা যাওয়া বেশীর ভাগই ভাইয়ার সাথে হতো। মা একটু কম সময় দিতেন । আর আমি তখন আমার ভাইয়ের অন্ধ ভক্ত ছিলাম, ভাইয়া যদি দিনকে বলতো এখন রাত্র। আমি চোখ বুঝে তাই মেনে নিতাম যে কোন রকমের প্রতিবাদ ছাড়াই।



আমার ওই ছোট্র জীবনের প্রথম স্কুলের পরীক্ষা। মা আমাকে আর ভাইয়াকে বাংলা বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোতা পাখির মত মুখস্ত করিয়ে তবেই ছাড়লো। খুব ভালো পরীক্ষা হবে এই মনোভাব নিয়ে স্কুলে গেলাম ভাইয়ের সাথে। কিন্তু স্কুলে গিয়েই ঝামেলার মধ্যে পরতে বাধ্য হলাম । আমাকে আমার ভাইয়ের সাথে বসতে দিচ্ছে না স্কুলের ম্যাডামরা। কি

যন্ত্রনার মধ্যে পড়েছিরে বাবা !! শেষ অস্ত্র কান্না, সেটাকেই শেষ পর্যন্ত প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিলাম। একটা সময় এক ম্যাডাম এসে ভাইয়ের পেছনের বেন্ঞ্চে আমাকে বসিয়ে দিলেন। ঘন্টা পরতেই ম্যাডাম লেখার খাতা দিয়ে গেলেন। আমি খাতাটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি, কিছুক্ষন সময় পরে প্রশ্ন পত্র হাতে দেয়া হলো। আমি প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এক কথায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পরলাম মনে হলো জীবনে এটা এই প্রথম দেখলাম । ভাইকে জিগ্ঞাসা করলাম ভাইয়া এখন আমি কি করবো?? ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো প্রশ্নে যা আছে সব লিখে যা। ইতিমধ্যে আমাদের এক ম্যাডাম আমার কাছে এসে বললো কি ব্যাপার লিখছো না ক্যানো? আমি ম্যাডামের তাড়া খেয়ে তাড়াতাড়ি লিখতে শুরু করলাম। প্রশ্নে যা যা ছিলো ডুপ্লিকেট তাই লিখে দিয়ে ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও পরীক্ষার খাতা ম্যাডামের নিকট জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম সেদিনের মতো। বাসাতে এসে সব্বাইকে বললাম আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। এই পরীক্ষা হওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে রেজাল্ট প্রকাশিত হলো। স্কুলের ম্যাডাম প্রথমেই আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন বাংলাতে আমি বড় বড় দু,টা গোল আলু পেয়েছি।এবং আমার হাতে পুরো পরীক্ষার মার্কসীট দেয়া হলো। আমি আর ভাইয়া ভীষন ভীষন খুশী মনে স্কুল থেকে রেজাল্ট হাতে বাসাতে ফিরলাম ।

বাসাতে এসে মায়ের হাতে রেজাল্ট শীট তুলে দিয়ে খুশী মনেই বললাম জানেন আম্মু আমি না বাংলা পরীক্ষায় দুটো বড় বড় গোল আলু পেয়েছি। আমার আম্মু প্রথমে একটু রেগে গেলেন কিনা বুঝতে পারিনি। তবে একটু পরেই আমার মা খুব জোরে হেসে উঠলেন। আমার বাবাকে ডেকে বললেন দ্যাখো তোমার মেয়ে কি রেজাল্ট ই না করেছে। আজও সেদিনের সৃত্মিগুলো মনে পরলে নিজের অজান্তেই আপন মনে হেসে উঠি। কত রকমের কান্ডই না করেছি।



চিরচেনা শৈশবের মিষ্টি মধুর সৃত্মির আরেকটি সৃত্মি হলো পুকুরে সাতাঁর কাটা। প্রথম প্রথম পানিতে প্রায়শই ডুবে যেতাম। আর ভাইয়া আমাকে টেনে হিচঁরে পুকুরের পাড়ে তুলে আনতো। কখনো বা সকলের অগোচরে সাতাঁর কাটতে নামতাম এবং ওই একই ঘটনার পূনরাবৃত্বি ঘটতো। তখন চিৎকার জুরে দিতাম। তখন ভাইয়া না থাকলে অন্যকেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতো। এক সময় পানিতে সাতাঁর কাটার আগ্রহ দেখে আমার বাবা আমাকে পানিতে কি করে সাঁতার কাটতে হয় শিখিয়ে দিলেন। সেই শুরু হলো। প্রায় সময়েই হয় ছোট মামা ,ভাইয়া কখনো বা আমার শৈশবকালীন ছোট্র ছোট্র সখীরা থাকতো । প্রতিযোগিতা ও চলতো ,কে পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সবার আগে যেতে পারে। দেখা যেত এ প্রতিযোগিতায় আমি সবসময় জিততে পারতাম না। প্রায়দিনই গো,হারা হেরে যেতাম। তারপরেও চেষ্টা করতাম। একদিন ছোট মামা আমাদেরকে ভয় দেখালেন এটা বলে যে, এই পুকুরে এক কুজোঁ বুড়ি থাকে, যার কাজ হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া। শেকল দিয়ে ধরে বেধেঁ নিয়ে যায় আর ফিরে আসতে পারে না। শুনে ভাবলাম কোনদিন হয়তো বা আমাকেই ধরে বেধে নিয়ে যায় কিনা। ওখানেই আমার সাঁতার কাটার সমাপ্তি হলো। আর কখনোই আর পানিতে নেমে সাতাঁর কাটা হয়নি।

বিষয়: বিবিধ

৪৯৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File